bangladesh purchased around 2 billion dollar weapons in last 4 years
১৫০০০ কোটি টাকার অস্ত্র-সরঞ্জাম ক্রয়
সাবেক সোভিয়েত রাজ্য বেলারুশের সঙ্গে সামরিক সরঞ্জাম কেনা ও প্রযুক্তি বিনিময়ের চুক্তি করেছে সরকার। গত ৮ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেলারুশ সফরের সময় দুই পক্ষের মধ্যে এ-সংক্রান্ত চুক্তি হয় বলে জানা যায়। তবে সরকারিভাবে এসব চুক্তির কথা স্বীকার করা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে চার বছরে সামরিক খাতে কেনাকাটার জন্য এ ধরনের অনেক চুক্তি করা হলেও তা কখনো প্রকাশ করা হয়নি। এ সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান
জন্য ১৫ হাজার ১০৪ কোটি টাকার অস্ত্র, গোলাবারুদসহ বিভিন্ন ধরনের সামরিক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়ার সঙ্গে আট হাজার কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনার চুক্তি হয়েছে। এর বাইরে আরও প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনার প্রক্রিয়া চলছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
গত চার বছরে কেনা সামরিক সরঞ্জামের মধ্যে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান, যুদ্ধজাহাজ, সামরিক হেলিকপ্টার, সাঁজোয়া যান, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিভিন্ন ধরনের রাডার উল্লেখযোগ্য।
সশস্ত্র বাহিনীর কেনাকাটার ব্যাপারে জানতে চেয়ে প্রথম আলোর পক্ষ থেকে গত ১ মার্চ আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর
মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের কাছে লিখিতভাবে তথ্য চাওয়া হয়। জবাবে আইএসপিআর থেকে ২৫ মার্চ লিখিতভাবে জানানো হয়, বিষয়টি জাতীয় নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট হওয়ায় উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়।
এর আগে গত বছরের ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ভাষণে তিন বাহিনীর জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার তথ্য জানান। এ বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি সামরিক সরঞ্জাম কেনার কথা জানান।
সামরিক খাতের এই কেনাকাটা নিয়ে একাধিক সামরিক বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তাঁরা প্রথম আলোকে বলেন, বাহিনী থাকলে সরঞ্জাম কিনতেই হবে। আমাদের প্রতিরক্ষা-নীতি হবে আত্মরক্ষামূলক। তবে সম্ভাব্য আক্রমণকারী আঘাত হানার পরে আমরা প্রত্যাঘাত করব, নাকি আগেভাগেই হামলা চালিয়ে তাকে অকার্যকর করে দেব, সেটা ঠিক করতে হবে।
অবসরে যাওয়া একজন পদস্থ সেনা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সাড়ে চার বছরে সরকার যেসব কেনাকাটা করেছে, তাতে কিছু ব্যক্তির আশা-আকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন ঘটছে। প্রতিরক্ষা নীতি না থাকায় এসব কেনাকাটা সমন্বিতভাবে হয়নি। তিনি বলেন, এ জন্য কোনো দিকনির্দেশনা থাকলে তা প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে বা সংসদে অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে তার কিছুই করা হয়নি। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে গ্রহণযোগ্য প্রতিরক্ষানীতি না করে আধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার কথা বলে একেক সময়ে সরকারের ইচ্ছানুযায়ী কেনাকাটা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। পাশাপাশি এ ধরনের কেনাকাটায় স্বচ্ছতাও জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশে প্রতিরক্ষা খাতে সক্ষমতা বাড়ানো উচিত। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করা দরকার। তবে রাশিয়া থেকে যে চড়া সুদে ঋণ নেওয়া হয়েছে, সেটা না করলেই ভালো হতো। এর আগে এত চড়া সুদে কখনো ঋণ নেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। এই ঋণের অর্থ তো সাধারণ মানুষের পকেট থেকেই যাবে।
যত কেনাকাটা: অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০১২-১৩ অর্থবছরএই চার বছরে তিন বাহিনীর জন্য ১৮৮ কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ১৫ হাজার ১০৪ কোটি টাকার সামরিক সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কেনা হয়েছে সেনাবাহিনীর জন্য। এ বাহিনীর জন্য চার বছরে পাঁচ হাজার ৪০৭ কোটি ২৭ লাখ টাকার সরঞ্জাম কেনা হয়েছে। নৌবাহিনীর জন্য চার হাজার ৯৭৫ কোটি ৪৯ লাখ ও বিমানবাহিনীর জন্য চার হাজার ৭২২ কোটি ১৩ লাখ টাকার সরঞ্জাম কেনা হয়।
এসব কেনাকাটার বাইরে রাশিয়া থেকে ঋণ নিয়ে আট হাজার কোটি টাকার ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, সাঁজোয়া যান (এপিসি
, পন্টুন সেতু, প্রশিক্ষণ বিমান, সামরিক হেলিকপ্টারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০ কিস্তিতে ১০ বছর ধরে বার্ষিক ৪ শতাংশ সুদে এ ঋণের অর্থ পরিশোধ করা হবে। এ চুক্তির আওতায় অস্ত্র ও সরঞ্জাম কেনা হবে ২০১৭ সালের মধ্যে।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সামরিক বাহিনীর উন্নয়নের নামে ২২৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া আরও প্রায় ১০০ কোটি ডলার খরচ করে সম্পূর্ণ তৈরি অবস্থায় দুটি ডুবো যুদ্ধজাহাজ (সাবমেরিন
কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায় কুতুবদিয়া চ্যানেলের পাশে সাবমেরিন ঘাঁটি করার জন্য জমি বরাদ্দের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
এবারের বাজেটে সামরিক খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৪ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। এর আগের বছর ছিল ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা।
সেনাবাহিনী: বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেনাবাহিনীর ২৬০টি সাঁজোয়া যান, ১৮টি সামরিক উদ্ধার যান, ১৫টি এপিসি অ্যাম্বুলেন্স, ৪৪টি তৃতীয় প্রজন্মের ট্যাংক, দুটি হেলিকপ্টার, ১৮টি স্বয়ংক্রিয় কামান ও সামরিক রাডার কেনা হয়।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৭৯ কোটি ৮২ লাখ টাকায় জাপান থেকে কেনা হয় ১৮৪টি তিন টনের ট্রাক। পরের বছর রাশিয়া থেকে কেনা হয় ১২০টি সাঁজোয়া যান (আরমার্ড পার্সোনাল ক্যারিয়ারএপিসি
, ১০টি সামরিক উদ্ধার যান (আরমার্ড রিকভারি ভেহিকেলএআরভি
ও ১০টি এপিসি অ্যাম্বুলেন্স। কেনা এসব সরঞ্জামের দাম ৫১০ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে চীন থেকে কেনা হয় এক হাজার ২০১ কোটি ৮১ লাখ টাকায় এমবিটি ২০০০ মডেলের ৪৪টি চতুর্থ প্রজন্মের ট্যাংক ও তিনটি সামরিক উদ্ধার যান। ফ্রান্সের তৈরি ইউরোকপ্টার ব্র্যান্ডের দুটি হেলিকপ্টার কেনা হয় ১৭৯ কোটি ৪২ লাখ টাকায়। ওই বছর চীন থেকে রাডার কেনা হয় ১৩৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা খরচ করে। পরের বছর সার্বিয়া থেকে ১৮টি স্বয়ংক্রিয় কামান (সেলফ-প্রোপেলড গানএসপিগান
কেনা হয় ৫৪১ কোটি ৩৪ লাখ টাকায়। রাশিয়া থেকে ২২২ কোটি সাত লাখ টাকায় কেনা হয় ১১৩টি ট্যাংক বিধ্বংসী সরঞ্জাম। একই বছর রাশিয়া থেকে ৬৫১ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় কেনা হয় ১৪০টি সাঁজোয়া যান, পাঁচটি উদ্ধার যান ও পাঁচটি এপিসি অ্যাম্বুলেন্স।
সূত্র জানায়, এ ছাড়া সেনাবাহিনীর জন্য আরও দুটি বিমান, তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্তকরণ রাডার, কিছু বেতার সম্প্রচারকেন্দ্র, মাল্টিপল লঞ্চ রকেট সিস্টেম, বেশ কিছু ট্যাংকবিধ্বংসী অস্ত্র, স্বল্প পাল্লার ট্যাংকবিধ্বংসী গাইডেড উইপন, এপিসিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কেনার সরকারি সিদ্ধান্ত রয়েছে।
নৌবাহিনী: সরকারের চার বছরে নৌবাহিনীতে ১৬টি নতুন জাহাজ যুক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১১টি কেনা হয়েছে আর চীনের সহায়তায় খুলনা শিপইয়ার্ডে তৈরি করা হচ্ছে ছোট আকারের পাঁচটি জাহাজ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইতালি থেকে ১৬৩ কোটি টাকায় কেনা হয় দুটি মেরিটাইম হেলিকপ্টার। একই দেশ থেকে ১৪১ কোটি টাকায় কেনা হয় এমকে-১ ক্ষেপণাস্ত্র। পরের বছর ৮৩৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় চীন থেকে দুটি বড় টহল জাহাজ (এলপিসি
ও পাঁচটি ছোট টহল জাহাজ কেনা হয়। ১৩৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকায় যুক্তরাজ্য থেকে কেনা হয় দুটি জাহাজ ও একটি জরিপ জাহাজ। এ ছাড়া ৩০২ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় চীন থেকে ৫০টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১৫৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় কেনা হয় রাডার যন্ত্রপাতি। ২০১০-১১ অর্থবছরে নৌবাহিনীর জন্য জার্মানি থেকে আনা হয় ডরনিয়ার ব্র্যান্ডের দুটি মেরিটাইম এয়ারক্রাফট। এর দাম ২৪১ কোটি ৩৮ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। গত ৩ জুন নৌবাহিনীর প্রধান কুর্মিটোলায় বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটিতে এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ওই বছর এক হাজার ৬৫৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকায় চীন থেকে কেনা হয় আরও দুটি যুদ্ধজাহাজ। এ বছর ৬৫২ কোটি টাকায় কেনা হয় আরও দুটি ফ্রিগেট।
কেনাকাটায় স্বচ্ছতার ব্যাপারে জানতে চাইলে নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব গত ৩ জুন সাংবাদিকদের বলেন, নৌবাহিনীর কেনাকাটায় সব সময় স্বচ্ছতা ছিল। কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি।
বিমানবাহিনী: ২০০৯-১০ অর্থবছরে বিমানবাহিনীর জন্য ৩৩২ কোটি টাকায় চীন থেকে কেনা হয় স্বল্পপাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা পদ্ধতি (এসএইচওআরএডি
। এফ-৭ বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের সুবিধা স্থাপনে খরচ করা হয় ২০৪ কোটি টাকা। এ সময় এফ-৭ বিমানের জন্য চীন থেকে এবং মিগ-২৯ বিমানের জন্য রাশিয়া থেকে ক্ষেপণাস্ত্র কেনার জন্য খরচ করা হয় ২৭২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে এক হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা দিয়ে কেনা হয় চতুর্থ প্রজন্মের ১৬টি যুদ্ধবিমান এফ-৭ বিজি১ এবং ৩৪৫ কোটি টাকায় রাশিয়ার তৈরি এমআই-১৭১এসএইচ হেলিকপ্টার। ৯ এপ্রিল এগুলো বিমানবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের বছর চারটি মিগ-২৯-এর রক্ষণাবেক্ষণে খরচ করা হয় ১১৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ ছাড়া চীন থেকে বিমান প্রতিরক্ষা রাডার কেনায় খরচ করা হয় আরও ২১৫ কোটি আট লাখ টাকা।
প্রতিরক্ষানীতি নেই: সামরিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, দেশে কোনো প্রতিরক্ষানীতি নেই। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে প্রতিরক্ষানীতি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর থেমে যায়। বর্তমান সরকারের আমলেও প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংসদীয় কমিটিতে এ নিয়ে শুধু আলোচনাই হয়েছে। তবে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য ফোর্সেস গোল-২০৩০ নামে পাঁচ বছর মেয়াদি চার ধাপের একটি পরিকল্পনা নেয় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। প্রথম ধাপে ২০১১ থেকে ২০১৫, দ্বিতীয় ধাপ ২০১৬ থেকে ২০২০, তৃতীয় ধাপ ২০২১ থেকে ২০২৫ এবং চতুর্থ ধাপ ২০২৬ থেকে ২০৩০ সালে বাস্তবায়িত হবে। প্রধানমন্ত্রী এতে অনুমোদনও দিয়েছেন। বর্তমান সরকারের আমলে যেসব কেনাকাটা হচ্ছে, তা প্রথম ধাপের অংশ বলে জানা গেছে।
কতটা যৌক্তিক: প্রতিরক্ষানীতি না থাকার পরও বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে এত বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে সামরিক সরঞ্জাম কেনা কতটুকু যৌক্তিক? সাবেক সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ এ প্রশ্নের জবাবে প্রথম আলোকে বলেন, আমরা কী কিনব, তা নির্ভর করবে আমাদের প্রতিরক্ষানীতির ওপর। তবে কেনাকাটার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা অবশ্যই থাকতে হবে, যাতে এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে। নিজেদের নিরাপদ রাখতে হলে প্রতিরক্ষার জন্য ব্যয় করতে হবে। এর প্রয়োজন আছে।
দেশে কোনো প্রতিরক্ষানীতি নেই। তার পরও কোন উদ্দেশ্য সামনে রেখে এ ধরনের কেনাকাটা হচ্ছে? জানতে চাইলে প্রতিরক্ষাবিষয়ক সংসদীয় কমিটির প্রধান ইদ্রিস আলী প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিরক্ষানীতি না থাকলেও প্রতিটি বাহিনীতে নিজস্ব কার্য পদ্ধতি আছে, আছে ফোর্সেস গোল। সেই লক্ষ্য নিয়েও কেনাকাটা হচ্ছে। এই ১৫ হাজার কোটি টাকার কেনাকাটায় স্বচ্ছতা ছিল বলে মনে করেন কি নাএ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী তার চাহিদা অনুসারেই কেনাকাটা করে থাকে। এ ক্ষেত্রে যদি কোনো অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, তবেই সংসদীয় কমিটি হস্তক্ষেপ করতে পারে।
তবে রাশিয়ার সঙ্গে আট হাজার কোটি টাকার সামরিক সরঞ্জাম কেনার চুক্তির পর গত ২১ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও
আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক বলেন, সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অস্বচ্ছতার অবকাশ নেই। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের মতামত নেওয়া হচ্ছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এয়ার কমোডর (অব.) ইসফাক ইলাহী চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, একটি বাহিনী থাকলে তার সক্ষমতা থাকতেই হবে। না হলে বাহিনী রেখে লাভ কী? সক্ষমতার জন্য দরকার সামরিক সরঞ্জাম। তবে এসব সরঞ্জামের দাম অনেক বেশি, যা সাধারণ মানুষ চিন্তাও করতে পারে না। তবে দাম যাই হোক না কেন, কেনাকাটা অবশ্যই স্বচ্ছ হওয়া চাই, যাতে মানুষের কোনো সন্দেহ না থাকে।
গত ২৯ জানুয়ারি লন্ডনে প্রকাশিত দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআই
এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সামরিক খাতে বাংলাদেশের দুর্নীতির ঝুঁকি রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা-সম্পর্কিত গোপন বিষয়গুলো সম্পর্কে সংসদে যেমন কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয় না, তেমনি নিরাপত্তা খাতের বার্ষিক হিসাবের নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়েও কোনো বিতর্কের প্রমাণ মেলে না।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সেনাবাহিনীর একাংশের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি
গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশের সময় টিআইবির চেয়ারম্যান সুলতানা কামাল বলেছিলেন, সামরিক খাতের কেনাকাটা নিয়ে কোনো তথ্য জনগণের কাছে প্রকাশ করা হয় না। এ ক্ষেত্রে স্বচ্ছতারও অভাব রয়েছে। এ নিয়ে সংসদেও কখনো কোনো আলোচনা করা হয় না।