বৃদ্ধা সৈয়দুন্নেছা আর কত শোক সইবেন। মাত্র এক বছর আগে তিনি স্বামী হারিয়েছেন। এবার আদরের ছেলে আবিদুর রহমানকে হারালেন। পরিবারের সবচেয়ে ছোট ছেলেটিকে ঘিরেই স্বপ্ন ছিল সৈয়দুন্নেছা ও পুরো পরিবারের।
আদরের আবিদুর গতকাল শনিবার দুপুরে ঠিকই বাড়ি ফিরেছেন। তাঁর প্রাণহীন দেহ দেখে সৈয়দুন্নেছা মূর্ছা গেলেন। গড়াগড়ি খেলেন মাটিতে। যখনই জ্ঞান ফেরে তখনই ‘ফুতরে ফুতরে (পুত্র
’ বলে চিৎকার করছেন। এভাবে সৈয়দুন্নেছাসহ স্বজন-প্রতিবেশীদের চোখের জলে ভেসে গেছে চকরিয়ার বড়ইছড়ির প্রয়াত নুরুল কবির চৌধুরী বাড়িটি।
আবিদের বাবার নামেই এই বাড়ি। চার বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট আবিদ। তিন বছর আগে অনেক স্বপ্ন নিয়ে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের দন্ত বিভাগে ভর্তি করিয়েছিল পরিবারটি। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হলো। আবিদকে চকরিয়ার পারিবারিক কবরস্থানে গতকাল দাফন করা হয়।
নৃশংসতা: জানা যায়, গত বুধবার দুপুরে আবিদকে দুই দফা মারধর করা হয়। তাঁকে প্রথমে মারা হয় কলেজের ছাত্র সংসদ কার্যালয়ে। পরে আহত অবস্থায় তিনি নিজের থাকার জায়গা প্রধান ছাত্রাবাসে গিয়ে আশ্রয় নেন। কিন্তু ছাত্রলীগের কর্মীরা সেখানে গিয়েও তাঁকে মারধর করেন।
নিহত আবিদের দুলাভাই মো. সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, তারা দুই দফা মারধরের পরও আবিদকে হাসপাতালে ভর্তি হতে দেয়নি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে বেলা দুইটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত প্রধান ছাত্রাবাসের ক্যানটিন কক্ষে বসিয়ে রাখা হয়। রাত সাড়ে নয়টায় কিছু ছেলে গুরুতর আহত অবস্থায় আবিদকে কিছু ওষুধপত্র দিয়ে চকবাজারে বড় ভাইয়ের বাসায় রেখে যায়। কোথাও যাতে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া না হয় সেই হুমকিও দিয়ে যায় ওই ছেলেরা।
আবিদের স্বজনেরা জানান, ওই রাতে আবিদের অবস্থার অবনতি হয়। এ কারণে ভয়ভীতি উপেক্ষা করে তাঁকে নিয়ে প্রথমে একুশে হাসপাতাল এবং পরে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু রোগীর অবস্থা গুরুতর থাকায় কেউ ভর্তি করাতে রাজি হলো না। পরে সার্জিস্কোপে ভর্তি করানো হয়। পরদিন বৃহস্পতিবার হাসপাতালের অধ্যক্ষের সহায়তায় তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়।
স্বজন ও সহপাঠীরা জানান, হাসপাতালে ভর্তির পর ছাত্রলীগের নেতা হিমেল, সংসদের সহসভাপতি (ভিপি
মফিজুর রহমান জুম্মানরা সেখানে যান। কিন্তু পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
মো. সোহেল জানান, ‘জুম্মান, হিমেলরা আবিদকে মেরেছে। আমরা মামলা করব। এই সরকারের আমলে না হলেও হয়তো ভবিষ্যতে কোনো সরকারের আমলে বিচার পাই কি না দেখি।’
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে মফিজুর রহমানকে ফোন করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
Prothom Alo : ২৩-১০-২০১১