ঢাকা, শুক্রবার | নভেম্বর ১১, ২০১৬ | ২৭ কার্তিক ১৪২৩
সম্পাদকীয়
কৌশলগত ইস্যু
বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দরের ভূরাজনীতি
ওয়েড শেফার্ড | ২১:০৪:০০ মিনিট, নভেম্বর ১১, ২০১৬
বাংলাদেশের গভীর সমুদ্রবন্দরের ভূরাজনীতি
বাংলাদেশের এখন প্রয়োজন একটি গভীর সমুদ্রবন্দর। দেশটির অর্থনীতি বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি। এ বছর প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ অতিক্রম করবে। একুশ শতকের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর একটি বাংলাদেশের অর্থনীতি, যা মূলত ‘নেক্সট ১১’ নামে পরিচিত (সূত্র: গোল্ডম্যান স্যাকস)। তৈরি পোশাক খাতে দ্বিতীয় বৃহত্তম শক্তি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের রফতানি খাতের প্রবৃদ্ধির হার অবাক করার মতো এবং ধারণা করা হচ্ছে ২০২১ সাল নাগাদ রফতানি আয় প্রতি বছর ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এত সম্ভাবনার দেশে এখনো পর্যাপ্ত সামুদ্রিক অবকাঠামো নেই।
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হয়ে গেলেও কোনো স্বাধীন সরকার নতুন সমুদ্রবন্দর নিয়ে পরিকল্পনা করেনি। চট্টগ্রাম ও মংলায় বিদ্যমান দুটি সমুদ্রবন্দর দিয়ে প্রতি বছর বাংলাদেশ ৬০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য করছে। কিন্তু দুটি সমুদ্রবন্দরই বড় মাদার ভেসেল প্রবেশের অনুপযোগী। পণ্য খালাসের জন্য ছোট ছোট লাইটারেজ জাহাজ ব্যবহার করা হয়, যা শুধু আমদানি-রফতানি ব্যয় বাড়ায়। এছাড়া পণ্য খালাসের আগে বহির্নোঙরে অপেক্ষার জন্য প্রতিদিন অতিরিক্ত ১৫ হাজার ডলার গুনতে হয়, যা বন্দর দুটিকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলক বাজার থেকে পুরোপুরি ছিটকে ফেলছে।
যদিও সমস্যার সমাধান হয়েছে কিন্তু তা বাংলাদেশের জন্য আরেক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন নয় যে হাতে খুব বেশি উপায় নেই, বিনিয়োগকারীর অভাব অথবা আন্তর্জাতিক মহলের সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টা ঠিক তার উল্টো। এমন অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, বাংলাদেশ বুঝতে পারছে না কোন মিত্র দেশকে গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির কাজটা দেবে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ভূরাজনৈতিক অচলাবস্থার সম্মুখীন। চুক্তি করছে এবং তা বাতিল করছে, আরেকটি পক্ষের সঙ্গে চুক্তি করছে। পরিণামে তা চীন, ভারত ও জাপানকে বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরিতে একটি চরম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন করেছে।
বাংলাদেশ ছোট দেশ কিন্তু এর ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় এটি ভারতের পার্শ্ববর্তী এবং একই সঙ্গে ভারত মহাসাগরের কোলঘেঁষে অবস্থিত। পৃথিবীর ২৫ শতাংশ ভূমি, জীবাশ্ম জ্বালানির ৪০ শতাংশ গ্যাস ও তেল, পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যা এই ভারত মহাসাগর অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এ অঞ্চলে পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ শিপিং লাইন অবস্থিত এবং এই শিপিং লাইনে পূর্ব এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অপরিশোধিত তেল পরিবহন করা হয়। ঢাকা এখনো এ বিষয়ে অত্যন্ত নমনীয় আচরণ করছে, অনেকটাই মাটির বলের মতো। তাই পূর্ব ও পশ্চিমের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো চাইছে এই নমনীয় অবস্থাকে তাদের পক্ষে নিয়ে এ অঞ্চলে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে। সেক্ষেত্রে কেউই চাইছে না এ সুযোগ হাতছাড়া করতে। বাংলাদেশ এ অঞ্চলে রাজনৈতিকভাবে সহনশীল রাষ্ট্রগুলোর অন্যতম এবং শক্তিশালী কূটনৈতিক নীতির মাধ্যমে একই সঙ্গে ভারত, চীন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাক্রমশালী দেশগুলোর সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছে।
ওয়ান বেল্ট অ্যান্ড ওয়ান রোড উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য— চীন তার বাণিজ্যপথ সুরক্ষিত রাখতে চায় এবং বাংলাদেশ তার মেরিটাইম এজেন্ডার অন্যতম। চীন সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চাইছে, যাকে একুশ শতকের ‘মেরিটাইম সিল্করোড’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে। এ নেটওয়ার্কের আওতায় তাদের নিজস্ব সমুদ্রবন্দর থাকছে এবং এর সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার বন্দর যুক্ত হয়ে তা ভারত মহাসাগর, আফ্রিকার পূর্ব উপকূল ও ভূমধ্যসাগর হয়ে গ্রিস পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। চীন এটাকে শুধু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য বললেও উল্লিখিত অঞ্চলের অনেকেই একে সামরিক হুমকি হিসেবেই দেখছে। পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান বুজ এলেন হ্যামিল্টন ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রণয়নকৃত একটি প্রতিবেদনে এ শঙ্কা তুলে ধরে। প্রতিবেদনে চীনের এ পরিকল্পনাকে ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
ভূরাজনৈতিক অবস্থান পাকাপোক্ত করতে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশগুলো বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে বড় অংকের সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসছে। এমনকি কূটনৈতিক সাহায্য প্রদানেও তাদের আগ্রহের কমতি নেই। তাদের এত উদারতার পেছনে একমাত্র কারণ বাংলাদেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর। গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির সম্ভাব্য স্থান হিসেবে চারটি স্থানকে নির্বাচন করা হয়েছে, সেগুলো হলো— চট্টগ্রাম, সোনাদিয়া, মাতারবাড়ী ও পায়রা।
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর, যা কর্ণফুলী নদী থেকে বঙ্গোপসাগরের উত্তরপূর্ব বাঁকে অবস্থিত। এটি একসময় প্রাচীন মেরিটাইম সিল্করোডের অংশ ছিল। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের যে ইতিহাস, যার শুরু খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকে। চীনা পর্যটক মংক সুয়াচেন এবং ইবনে বতুতা এ বন্দর ও অঞ্চল সম্পর্কে লিখেছেন, যার প্রমাণ আমরা আজো পাই।
বন্দরের এক উন্নয়ন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এ বন্দরে পুরো দেশের ৯৮ শতাংশ কনটেইনার কার্গো ও ৯২ শতাংশ কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়। সুতরাং এ পরিসংখ্যান থেকে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ বন্দরের গুরুত্ব কতটুকু। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর অচল হয়ে যাওয়া মানে দেশের অর্থনীতি অচল হয়ে যাওয়া।
বাংলাদেশের ৯২ শতাংশ সমুদ্রবাহিত পণ্য হ্যান্ডলিং হওয়া মানে ৩০ মিলিয়ন টন কার্গো এবং ১ দশমিক ৮ মিলিয়ন টিইইউ (টুয়েন্টি-ফুট ইকুইভেলেন্ট ইউনিট) কার্গো। এ সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। প্রতি বছর ১৪-১৫ শতাংশ হারে এ পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ বাড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৮ সাল নাগাদ চট্টগ্রাম বন্দরের ধারণক্ষমতাকে তা অতিক্রম করবে।
এ বন্দরের গভীরতা মাত্র ৯ দশমিক ২ মিটার, যা যেকোনো আধুনিক কনটেইনারবাহী জাহাজের জন্য অপ্রতুল। সে কারণে এ বন্দরে পণ্য খালাসের ব্যয় এবং সময় অনেক বেশি লাগে। কনটেইনারবাহী জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের জন্য আবার ছোট ছোট জাহাজের সাহায্য নিতে হয়। এ সমস্যার সমাধানে পতেঙ্গায় ১ হাজার ২০০ একর দ্বীপের ওপর সমুদ্রবন্দর তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের আদলে। এ বন্দরের নামকরণ করা হবে ‘বে টার্মিনাল’; যা আদতে গভীর সমুদ্রবন্দর নয়। এ বন্দরের গভীরতা হবে ১৩ মিটার। কিন্তু গভীর সমুদ্রবন্দরের গভীরতা অবশ্যই ১৫ মিটার হতে হবে।
২০১০ সালে চীন বাংলাদেশকে চট্টগ্রাম বন্দরের আয়তন বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নে সব ধরনের সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছিল। চীন তখন বাংলাদেশকে ৯ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রস্তাব করেছিল। বাংলাদেশের তত্কালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছিলেন, ‘চীন আমাদের চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে সম্মত হলে তা আমাদের জন্য বিশেষ অর্জন হবে। আমরা চাই গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির মাধ্যমে একে আঞ্চলিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে দেখতে।’
এ পরিকল্পনা চীনকে আরো উচ্চাকাঙ্ক্ষী করে তোলে। তারা ইউনান প্রদেশ থেকে বাংলাদেশের অভ্যন্তর দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত করিডোরের পরিকল্পনা করে। এ পরিকল্পনা সরাসরি এ এলাকার সমুদ্র অঞ্চলে তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে এবং এক্ষেত্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ মিয়ানমারকে পাশ কাটিয়ে তারা সেটা করতে পারবে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এ পরিকল্পনাকে চীনের ‘পার্ল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে তা একটি বিপজ্জনক অবস্থায় ফেলে দেবে বলে তারা বলেছেন। চীনকে এ সুযোগ না দিলেও ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ভারতকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
সোনাদিয়া: চট্টগ্রাম বন্দরের সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখে চীন আরেকটি বন্দরের পরিকল্পনা তখন দিয়েছিল এবং এজন্য তারা পুরোপুরিভাবে প্রস্তুত ছিল। এর কয়েক বছর পর ২০০৯ সালে জাপানের একটি জরিপ দল গভীর সমুদ্রবন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাই করে এবং কক্সবাজারের অদূরে সোনাদিয়া নামক একটি দ্বীপ নির্বাচন করে। জরিপে দেখানো হয়, গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে যে গভীরতা দরকার, তা এ দ্বীপের আছে। চীন আবারো তাদের আগ্রহ প্রকাশ করে এবং সম্পূর্ণ অর্থায়ন করতে প্রস্তুত আছে বলে জানায়।
চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সহায়ক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির জন্য কারিগরি সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দেয়। একই প্রতিষ্ঠান কলম্বো পোর্ট সিটি তৈরির কাজ করছে। বাংলাদেশ বন্দর তৈরির কাজে এ প্রতিষ্ঠানকে সবুজ সংকেত দিয়েও রেখেছিল। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় অনেকেই ধরে নিয়েছিল চীনের সঙ্গে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর হবে। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।
চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়ায় ধারণা করা হয়, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপে তখন বাংলাদেশ এ চুক্তি স্বাক্ষর করেনি। চীন বাংলাদেশ ব্যতীত শ্রীলংকা, পাকিস্তান, মালদ্বীপ ও মিয়ানমারে বন্দর নির্মাণ এবং পরিচালনা করছে। বাংলাদেশে বন্দর নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পেলে ভারতের চারদিকে চীনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতো।
ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের রিসার্চ ফেলো শহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে যে কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিদ্যমান, তা ভারতের একেবারেই অপছন্দ। ভারতের মূল যে জায়গাটায় আপত্তি তা হলো— পাকিস্তান ও চীনের মধ্যকার ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোড এবং পাকিস্তান চীন করিডোর।’
তবে অনেকটা সময় নীরব থাকার পর ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরের পরিকল্পনা বাতিল করে। এ বিষয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়ায় ইন্দ্রানি বাগচি একটি বিশ্লেষণে লিখেছিলেন, ‘সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরের পরিকল্পনা বাতিল করাটা ছিল কৌশলগত সিদ্ধান্ত, যেখানে ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের বড় ভূমিকা ছিল।’
মাতারবাড়ী: সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প বাতিলের অন্যতম কারণ বাংলাদেশ সম্প্রতি জাপানের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে, যেখানে অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম প্রধান মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্প। মাতারবাড়ীর অবস্থান সোনাদিয়া থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে।
জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের পাশাপাশি বন্দরে গ্যাস টার্মিনাল, চারটি ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুেকন্দ্র, রেললাইন, মহাসড়ক ও ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমের প্যাকেজ প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। মাস্টারপ্ল্যানে বন্দরের অবকাঠামো কয়লা আমদানির জন্য প্রস্তুত করা হবে, যা দেশের দক্ষিণপূর্ব অঞ্চলের একটি সম্পূর্ণ শিল্পাঞ্চলকে বিদ্যুত্ সরবরাহ করতে পারবে।
জাইকা যে ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব করেছে, তার মধ্যে ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পের জন্য ধরা হয়েছে। ঋণ পরিশোধের সুদের হার শূন্য দশমিক ১ শতাংশ হিসেবে ৩০ বছরে পরিশোধের সময়সীমা ধরা হয়েছে এবং ১০ বছর অন্তর্বর্তীকালীন সময় প্রস্তাব করা হয়েছে।
পায়রা: চীনের জন্য এটা অনেকটাই শোকের পুরস্কার এবং জাপান অবশ্যই এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশ পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রস্তাব করেছে, যা বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত।
এ সমুদ্রবন্দরে পিপিপির আওতায় অর্থায়ন করার প্রস্তাব করা হয়, যা মূলত চীনের পক্ষ থেকে করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে অনেকটাই মনে হচ্ছিল চীন প্রকল্পটি পেতে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই জাপান, ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি।
এবার একটা বড় কূটনৈতিক পদক্ষেপ ভারতের পক্ষ থেকে দেখা যায়। তারা সরাসরি এ প্রকল্পে অর্থায়ন করতে আগ্রহ প্রকাশ করে, যা আগে শুধু চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে চীনকে বাধা দেয়া থেকে একেবারেই ভিন্ন। তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও কূটনৈতিক পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশ পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরকে বহুজাতিক বন্দর হিসেবে গড়ে তুলতে যায়, যেখানে অনেক দেশ বিনিয়োগ করতে পারে এবং এ প্রকল্পে ভারত ছাড়াও ১০টি দেশ আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তাদের বিনিয়োগের পরিমাণ ১৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ মুহূর্তে চীনের একা একটি গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরিতে বিনিয়োগ করার সুযোগ একেবারেই দেখা যাচ্ছে না।
শহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘বাংলাদেশের রাজনীতি সবসময় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বাংলাদেশ এককভাবে চীনের সঙ্গে এ ধরনের বড় প্রকল্পে যেতে পারবে না। সে কারণে চীনের সিল্করুট এবং ওয়ান বেল্ট, ওয়ান রোডের যে স্বপ্ন তা বাস্তবায়ন হবে না।’ বাংলাদেশ যদিও সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাইছে এবং ভূরাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করতে প্রভাবশালী দেশগুলোর মধ্যে একটা ভারসাম্য আনতে চাইছে। কিন্তু এ মুহূর্তে বাংলাদেশ এমন একটা অবস্থানে আছে, যেখানে ভুল করার সুযোগ নেই এবং ভূরাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও ঘোস্ট সিটিজ অব চায়না বইয়ের রচয়িতা
ডিপ্লোম্যাট থেকে ভাষান্তর মুহাম্মাদ হাসান রাহফি
http://bonikbarta.com/news/2016-11-11/94459/বাংলাদেশের-গভীর-সমুদ্রবন্দরের-ভূরাজনীতি--/