Catastrophe is looming... Rohingyas are about to be drawn in the sea...May Almighty save these unfortunate souls. Amen
আর্তনাদ আহাজারিতে বাংলাদেশে প্রবেশে মরিয়া মুসলমানরা
আরাকানে হত্যা নির্যাতনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুঃসহ জীবন
আকিয়াবে রাখাইন বৌদ্ধদের লাগিয়ে দেয়া আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে মুসলমানদের ঘরবাড়ি। শহীদ হওয়া মুসলমান নারীর লাশ পড়ে আছে। রাস্তায় অপেক্ষারত শরণার্থীরা -সংগ্রাম
0প্রাচীনতম মসজিদের ইমামসহ ৩ শতাধিক নিহত0নাফে ভাসছে অগণিত রোহিঙ্গার লাশ0সীমান্তে কড়া পাহারায় বিজিবি0রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে জাতিসংঘের আহবান \ বাংলাদেশের অসম্মতি0
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নৃশংসতার শিকার মুসলমান নারী-পুরুষ ও শিশুদের আশ্রয় দেবে না বাংলাদেশ। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়ার। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করতে দেবে না বাংলাদেশ সরকার। এর আগে রাখাইন রাজ্যে মুসলমানদের ওপর হামলা শুরু হলে ৬টি লোক ভর্তি নৌকা ফিরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের বর্ডারগার্ড বিজিবি।
মিয়ানমারের আরকান প্রদেশে লোমহর্ষক অত্যাচারে মানবতা বিপন্ন হতে চলেছে রোহিঙ্গা মুসলিমদের। সেদেশের সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর চালানো হচ্ছে ভয়াবহ নির্যাতন। তাদের আহাজারি ও আর্তনাদে আরাকানের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। কান্নার রোল পড়েছে মা-শিশু, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, কিশোর-কিশোরী, স্বজন-প্রতিবেশিসহ সর্বত্র। অব্যাহত অমানবিক নিষণে আরাকানের আকিয়াব বিমানবন্দর সংলগ্ন প্রাচীনতম শফি খাঁন জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা জিয়াউল হকসহ নিহত হয়েছে ৩শতাধিক রোহিঙ্গা মুসলমান। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত নির্ণয়ক নাফ নদীতে ভাসছে অগণিত রোহিঙ্গার লাশ। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ও বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে নাফ নদী থেকে ওয়ালিদং সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারিতে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় রয়েছে বিজিবি জওয়ান দল।
কামাল হোসেন আজাদ/শাহজালাল শাহেদ, কক্সবাজার থেকে জানান : তুমব্রু সীমান্ত এলাকা থেকে সোমবার দুপুর আড়াইটায় একদল রোহিঙ্গা সীমান্তের কাঁটা তারের বেড়া পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করলে বিজিবি সদস্যরা তাদের কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকিয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমারের মংডু, আকিয়াব, বুচিডং ও কেয়ত্তর শহরে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা দিনরাত বাড়িতে অবস্থান করছে। কোন মতেই তাদেরকে বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছে না মিয়ানমারের আইন প্রয়োগকারী সদস্যরা। তবে রোহিঙ্গারা সেদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নির্যাতনের কথা বলে এদেশে পালিয়ে আসার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। তাদের দাবি সেদেশের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ উচ্ছৃক্মখল মগ, চাকমা ইত্যাদি সম্প্রদায়ের লোকেরা মুসলমানদের শত শত বাড়িঘর ও বেশ কিছু মসজিদে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এছাড়াও শত শত মুসলমানের মৃত দেহ মাথা ন্যাড়া করে মংডুর তিনমাইল-চারমাইল, বাঘঘোনা, বুমু পাড়া, নূরুল্লাপাড়া, হাইচচুরাতা, কাইন্দাপাড়া, সিকদারপাড়া, নলবনিয়া ও কালা ব্রিজ এলাকায় পুঁতে রেখে ওরা রাখাইনদের লাশ বলে প্রচার করছে।
সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনকালে বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় শত শত লোকজন মারা যাওয়ার পর সেদেশের সরকার সীমান্ত রক্ষী নাসাকা বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি পুরো সীমান্ত জুড়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। সীমান্তে পরিস্থিতি উত্তেজনাকর না হলেও রাখাইনদের ধরিয়ে দেয়া আগুণে পুড়ে গিয়ে অসংখ্য বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা মানবেতর জীবনযাপন করছে। পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিলেও দিনের বেলায় বাড়ি থেকে বের হতে পারছে না। মিয়ানমার থেকে নির্ভরযোগ্য সুত্রে জানা গেছে, আকিয়াব শহরের ওয়ার্লেসপাড়া, জাইল্যা পাড়া, রোহিঙ্গা পাড়া, নাজিরপাড়া, কাহারীপাড়া, মংডুর শহরের চারকোপা, চারমাইল, তিনমাইল, ছনখোলা পাড়া, আশিখ্যাপাড়া, খাইন্দা পাড়া, বোমোপাড়া, কোনারপাড়া, কাদিরপাড়া, নুরুল্লাহ পাড়া, বাঘঘোনা গ্রামে রোববার ভোররাতে নাসাকা ও পুলিশ সদস্যরা ব্যাপক হারে গুলীবর্ষণ করলে বহু লোকজন আহত হয়েছে। মংডু শহর থেকে মোবাইল ফোনে মিয়ানমারের এক নাগরিক সাংবাদিকদের জানান, গত (১১জুন
সোমবার সকালে সেনাবাহিনীর গুলীতে জাহাজকাটা গ্রামে দুইজন রোহিঙ্গা যুবক নিহত হয়েছে। বর্তমানে সেদেশের সরকার নাসাকা বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে প্রত্যাহার করে নিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে। সে আরো জানায়, ৪টি বোট নিয়ে প্রায় সাত শতাধিক রোহিঙ্গা সেন্টমার্টিন সাগর পথ দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তারা বোট নিয়ে নাফ নদীতে ভাসছে। ওই বোটে বেশ কিছু গুলীবিদ্ধ ও মারপিটে আহত রোহিঙ্গা রয়েছে বলে সূত্রটি দাবি করেন। সোমবার তুমব্রু সীমান্ত এলাকা দিয়ে দুপুর আড়াইটায় ভাজাবনিয়া গ্রামের ওপারে জিরো পয়েন্ট এলাকা দিয়ে দুইজন মিয়ানমার নাসাকা বাহিনীর সদস্যকে মোটর সাইকেল যোগে সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করতে দেখা গেছে। ওই সময় তুমব্রু সীমান্ত এলাকার ওপারে নাসাকা বাহিনীর ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা দিয়ে কাঁটা তারের বেড়া পেরিয়ে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা এপারে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করলে তুমব্রু বিজিবির সদস্যরা তাদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সফল হয়। বিজিবি সদস্য রাজ্জাক জানান, মিয়ানমারের এমন পরিস্থিতিতে ওপারে বসবাসরত মুসলমানদের বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছে না বলে শোনা যাচ্ছে। বর্তমানে ওপারে সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত বলে জানান। সীমান্তের টহলরত অবস্থায় বিজিবি সদস্য ওয়াদুদ জানান, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার নাসাকা বাহিনীর সদস্যরা সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট দিয়ে যাতে এদেশে অনুপ্রবেশ করতে না পারে সেজন্য তারা কঠোর অবস্থানে রয়েছে। যার ফলে তুমব্রু সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করা মোটেও সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার ১৭ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল খালেকুজ্জামান পিএসসি সারাদিন তুমব্রু ঘুমধুম সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করে সীমান্তের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, কোনমতেই রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবে না। এজন্য সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টগুলোতে বিজিবির সদস্যদের কঠোর সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। তারা দল বেঁধে রাতে দিনে সীমান্ত পাহারা দিয়ে যাচ্ছে। এদিকে গত কয়েকদিন ধরে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে অতিরিক্ত পুলিশ, বিজিবি ও আনসার বাহিনী নিয়োজিত রয়েছে। যার ফলে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে কোন ধরনের অপতৎপরতা চালাতে পারছে না বলে তিনি দাবি করেন। ক্যাম্প ইনচার্জ জালাল উদ্দিন জানান, কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। অপর একটি সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারে গত ৪দিন ধরে আরকান রাজ্যের কিছু কিছু এলাকায় সংঘাত কমলেও মংন্ডু-আকিয়াব শহরের পার্শববর্তী এলাকায় সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর রাখাইনরা চোরাগোপ্তা হামলা, বসতবাড়ি, ধর্মীয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটাচ্ছে। অব্যাহত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় নাফনদী ও বঙ্গোপসাগরে জেলেদের মাছ শিকার বন্ধ ও দু'দেশের সীমান্ত বাণিজ্য মুখ থুবড়ে পড়েছে। ব্যবসায়িক কারণে দু'দেশে আটকে যাওয়া লোকজনের বেশীরভাগ দেশে ফিরে আসলে ও আতংকে সে দেশের লোকজন ফিরতে চাইছে না। এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থামানোর জন্য প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সেনা প্রধান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উভয়কে শান্ত থাকার পরামর্শ ও অমান্যকারীদের কঠোর হস্তে দমনের ঘোষণা দেয়। এরপরও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের অবনতি হওয়ায় নাসাকার বেপরোয়া গুলীতে নতুন করে ৩ রাখাইনসহ ৫জন নিহত হয়েছে। বিকাল থেকে গণহারে মুসলিমদের গ্রেফতার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ।
সূত্র আরো জানায়, গত (১১জুন
সোমবার সকাল ৯টার দিকে দাঙ্গারোধে নিয়োজিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর রসদ বোঝাই ২টি হেলিকপ্টার মংডুটাউনশীপে অবতরণের পর চলে যাওয়ার সাথে সাথে একদল উচ্ছৃংখল রাখাইন পার্শ্ববর্তী রাসিদং, বুমেপাড়া, খাইরীপাড়ায় মুসলিমদের ১৪/১৫টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। মুসলিম যুবকেরা নেভাতে গেলে নাসাকাবাহিনী কারফিউ ভঙ্গ করায় এলোপাতাড়ি গুলীবর্ষণ করে। এতে ৩ রাখাইন ও ২মুসলিমসহ ৫জন নিহত হয়। এ খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়ায় আবারো নতুন করে উত্তেজিত হয়ে আকিয়াবের পাশ্ববর্তী এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সংঘবদ্ধ রাখাইনরা বিভিন্ন মুসলিম গ্রামে হামলা ও জ্বালিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। উল্লেখ্য মিয়ানমার সরকার এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাকে পুঁজি করে কোন বিশেষ মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছে কিনা মাথায় রেখে কঠোর হস্তে দমনের ঘোষণা দেয়ায় বলীবাজার থেকে মংডু-আকিয়াবের প্রধান সড়ক ও স্পর্শকাতর স্থানে সেনাটহল জোরদার করেছে। এর মধ্যে কর্তব্যরত কতিপয় সেনা সদস্যের মৌন সম্মতিতে মুসলমানদের ওপর হামলা চালাতে মরিয়া রাখাইন উগ্রপন্থীদের কারণে সংখ্যালঘু মুসলিমরা অসহায় হয়ে পড়েছে। নাফপুরা এলাকায় মুসলিমরা নামাজ পড়তে মসজিদে সমবেত হলে নাসাকাবাহিনী ৪ রাউন্ড ফাঁকাগুলী বর্ষণ করলে মুসল্লিরা পালিয়ে যায়। এসব অঞ্চলে খাদ্য,চিকিৎসা সংকট ও নিরাপত্তাহীনতায় মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। গত ২দিনে পরিস্থিতি সেনা হস্তক্ষেপে কিছুটা কমলেও মুসলিমদের বিভিন্ন গ্রামে থেমে থেমে মুসলিম অধ্যুষিত মংডু শহরে মুসলমানদের মার্কেট ও আবাসিক ভবন সমূহে লুটপাট,অগ্নি সংযোগ ও চোরাগোপ্তা হামলা অব্যাহত রয়েছে। নিরুপায় হয়ে গত ১০জুন রাত হতে রোহিঙ্গারা নৌকা-ট্রলারে করে প্রাণ রক্ষার্থে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত ও উপকূলীয় এলাকা দিয়ে ১০/১২টি নৌকা এবং ট্রলারে করে অনুপ্রবেশের জোর তৎপরতা চালালেও সীমান্তরক্ষী বিজিবি, কোস্টগার্ড এবং আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার বাঁধার মুখে ৮টি রোহিঙ্গা বোঝাই বোট ঢুকতে পারেনি। নিরুপায় হয়ে সাগরে ভাসমান রয়েছে । খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে ভাসমান ট্রলারে ৮জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ১১জুন ভোররাতে নাসাকাবাহিনীর ধাওয়া খেয়ে ৪টি রোহিঙ্গা বোঝাই বোট ডুবির ঘটনাও ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শী জেলেরা জানান, সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরে ৫/৬টি লাশ ভাসতে দেখেছে বলে জানায়। বিশ্বস্ত সুত্রসহ প্রাপ্ত খবরে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়। আন্তর্জাতিক চক্রান্তের শিকার মিয়ানমারের মুসলিম ও রাজনৈতিক নেতবৃন্দ রাখাইনদের চোরাগোপ্তা হামলা-লাশগুম করা বন্ধ, জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ বিতরণ, মানবিক বিপর্যয় রোধে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ ও সহায়তা কামনা করেছে আরাকানের মুসলিম রোহিঙ্গারা।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর বাংলাদেশের সরকারকে আহবান জানিয়েছে, দেশটি যেনো মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়। এর আগে মিয়ানমারে মুসলমান এবং বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে চলমান সহিংসতার জের ধরে পালিয়ে আসা কমপক্ষে ৬টি নৌকাভর্তি শরণার্থীকে সীমান্ত দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি ক্রেইগ স্যান্ডার্স জানিয়েছেন, দুই সীমান্তেই নিজ নিজ দেশের বাহিনী নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। অল্পসংখ্যক শরণার্থীই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে পারছে। তিনি বলেন, আমরা অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছি, তারা যেনো যতটা সম্ভব সীমান্ত শিথিল রাখে। আশ্রয়প্রার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়। বিশেষ করে সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসতে গিয়ে যারা আহত হয়েছে। খবর বিবিসি, বিডিনিউজ ও বার্তা২৪ ডেস্ক
বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী মিয়ানমারের আরাকান প্রদেশে (রাখাইন
সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক সহিংসতার ঘটনা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ' করছে এবং নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে' বলেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার একথা বলা হয়েছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত সরকার আরাকান প্রদেশে রোববার রাত থেকে সামরিক আইন জারির পর সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী প্রদেশটি থেকে পালিয়ে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা নৌকায় ও ট্রলারে করে সাগর পাড়ি দিয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ ও সংলগ্ন এলাকায় আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছে। সোমবার সকাল থেকে তিনশ'র বেশি নারী ও শিশু শরণার্থীকে তাদের নৌযানসহ মিয়ানমারের দিকে ফিরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশী সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিবি। তাছাড়া কক্সবাজারের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেশ কিছু শরণার্থীকে আটক করেছে পুলিশ। টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে সব ধরনের আমদানি রফতানি বন্ধ রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে দেয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া মিয়ানমারের রাজ্য রাখাইনে অনাকাঙ্ক্ষিত সন্ত্রাসের ফলে বেশকিছু প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষতি হয়েছে। মিয়ানমার এই ঘটনাটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে যে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তাকে বাংলাদেশ সমর্থন করে।
মিয়ানমারে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করতে দেবে না বাংলাদেশ সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আকস্মিক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেন, এটা আমাদের স্বার্থ নয় যে, মিয়ানমার থেকে নতুন করে শরণার্থী আসুক। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দিতে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর বাংলাদেশ সরকারকে আহবান জানানোর খবরের প্রেক্ষিতে এ কথা বললেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে ইউএনএইচসিআর থেকে এ ধরনের কোনো আহবান আসেনি বলে দাবি করেন দীপু মনি। বিবিসি বাংলা জানিয়েছিল, মিয়ানমারে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দিতে সরকারকে আহবান জানিয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের নতুন করে অনুপ্রবেশ না করতে দেয়ার কারণ সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক শরণার্থী আছে। অবৈধভাবেও অনেকে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব এমনিতেই বেশি। মিয়ানমারের শরণার্থীদের অনুপ্রবেশের ফলে সামাজিক, পরিবেশগত ও আইনশৃক্মখলা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশের মিয়ানমারে যেসব শরণার্থী আছে তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে উল্টো আলোচনা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশ উদ্বেগের কারণ আছে কিনা জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশি দেশ। সেখানে কোনো উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হলে তা আমাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়ায়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এ বিষয়ে বাংলাদেশে মিয়ানমারের দূতাবাস প্রধানের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক মহা পরিচালক আলোচনা করেছেন।
??????? ????? ????????? ???????? ?????????? ????? ???? | The Daily Sangram
জাতিসঙ্ঘের আহ্বানে রোহিঙ্গা শরণার্থী নেবে না বাংলাদেশ
নয়া দিগন্ত ডেস্ক
মিয়ানমারের আরাকান ও মংডুতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের গ্রহণে জাতিসঙ্ঘের আহ্বানে সাড়া দেবে না বাংলাদেশ। এসব রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারে চলমান সহিংসতায় আতঙ্কিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করলে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী (বিজিবি
তাদের বাধা দেয়ার প্রেক্ষাপটে এ আহ্বান জানায় জাতিসঙ্ঘ। এই আহ্বানের পর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি তাৎক্ষণিকভাবে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, মিয়ানমারে সহিংসতার পরিপ্রেেিত পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেবে না সরকার। সীমান্ত এলাকায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থেকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ অভিমুখী স্রোত ঠেকাতে মিয়ানমার সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছে সরকার। বাংলাদেশ আশা করে যে মিয়ানমার সরকার সর্বোত্তম পদ্ধতিতে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সম্ভব স্বল্পতম সময়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য জাতিসঙ্ঘের আহ্বানের কথা স্বীকার করেননি।
জাতিসঙ্ঘের আহ্বান : বাংলাদেশে ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিনিধি ক্রেইগ স্যান্ডার্সের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর। তিনি বলেন, দুটি দেশই নিজ নিজ সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। ফলে অল্পসংখ্যক শরণার্থীই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে পেরেছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের কাছে আবেদন জানাচ্ছি যে, তারা যতটা সম্ভব সীমান্তে নিরাপত্তাব্যবস্থা যেন শিথিল রাখে। শরণার্থীদের যেন প্রবেশ করতে দেয়। বিশেষ করে যারা সহিংসতায় আহত হয়েছে তাদের। তিনি বলেন, সীমান্তের ঘটনাবলি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। উদ্বাস্তুবাহী নৌকাগুলো ফেরত পাঠানোর ঘটনায় আমরা চিন্তিত।
রোহিঙ্গাদের ঢুকতে দেবে না সরকার : আমাদের কূটনৈতিক প্রতিবেদক জানিয়েছেন, গতকাল তাৎক্ষণিকভাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, মিয়ানমারে সহিংসতার পরিপ্রেেিত পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেবে না সরকার। সীমান্ত এলাকায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে সতর্ক থেকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাখাইন প্রদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ অভিমুখী স্রোত ঠেকাতে মিয়ানমার সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখেছে সরকার। বাংলাদেশ আশা করে যে মিয়ানমার সরকার সর্বোত্তম পদ্ধতিতে পরিস্থিতি মোকাবেলা করে সম্ভব স্বল্পতম সময়ে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে নতুন করে শরণার্থী আসা বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকূল নয়। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে অনেক শরণার্থী আছে। অবৈধভাবেও অনেকে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব এমনিতেই বেশি। মিয়ানমারের শরণার্থীদের অনুপ্রবেশের ফলে বাংলাদেশের সমাজ, পরিবেশ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। মিয়ানমারের যেসব শরণার্থী আছে বাংলাদেশ তাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে আলোচনা চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের রাখাইন (আরাকান
প্রদেশে সহিংসতার ঘটনায় সরকারের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ আছে কি না জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, মিয়ানমার আমাদের প্রতিবেশী দেশ। সেখানে কোনো উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তা আমাদেরও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
রাখাইন প্রদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সাথে পররাষ্ট্র সচিব ও দণি-পূর্ব এশিয়াবিষয়ক মহাপরিচালক আলোচনা করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাস সে দেশের কর্তৃপরে সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কক্সবাজার ও বান্দরবান সীমান্ত এলাকায় বিজিবির টহল জোরদার করা হয়েছে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঢুকতে দিতে জাতিসঙ্ঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর
বাংলাদেশ সরকারকে কোনো আহ্বান জানিয়ে কি না জানতে চাওয়া হলে ইউএনএইচসিআর থেকে এ ধরনের কোনো অনুরোধ আসেনি বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্র মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলির ওপর নজর রেখে সহিংসতায় জীবন ও সম্পদহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে। রাখাইনে অস্থিরতা দূর করার জন্য মিয়ানমার সরকারের নেয়া পদক্ষেপকে বাংলাদেশ সাধুবাদ জানায়। রাখাইনে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে মিয়ানমার সরকার ও জনগণের পাশে থাকার জন্য বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে এতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের সফর বিনিময় উভয় দেশের জনগণের স্বার্থে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করার ইচ্ছারই প্রতিফলন।
কূটনৈতিক আলোচনায় সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে : এ দিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেছেন, মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়ে কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। যেসব রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে তাদের চিকিৎসাসহ অন্যান্য সহযোগিতা করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে আরো বলেন, মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়ে সতর্কদৃষ্টি ও পর্যবেণ করা হচ্ছে।
রাখাইন প্রদেশের মংডু জেলায় ইসলাম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গা ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইনদের মধ্যে গত শুক্রবার দাঙ্গা শুরু হয়। এ সহিংসতার জের ধরে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করার সময় সোমবার রোহিঙ্গাদের বহনকারী বেশ কয়েকটি নৌকা ফিরিয়ে দেয় সীমান্তরী বাহিনী বিজিবি।
২৬ হাজার নিবন্ধিত শরণার্থী : মিয়ানমারে দমন-পীড়নের কারণে ১৯৭৮ সাল থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে এখনো প্রায় ২৬ হাজার নিবন্ধিত মিয়ানমার নাগরিক টেকনাফের শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে। এর বাইরেও বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে।
বাংলাদেশের প থেকে বারবার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার দাবি জানানো হলেও তাতে খুব একটা সাড়া দেয়নি মিয়ানমার। বাংলাদেশের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে নিবন্ধিত উদ্বাস্তুদের মধ্যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফিরিয়ে নিতে সম্মতিপত্র দিলেও শরণার্থীরা আশ্রয়শিবির ছেড়ে যেতে রাজি হয়নি। অনেক এনজিও সরকারের বিধিবদ্ধ নিয়মনীতি ভঙ্গ করে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করছে বলে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রোহিঙ্গাদের সহায়তা করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ
প্রকল্প প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছে সরকার। ইউএনএইচসিআর-এর কারণে বাংলাদেশের পক্ষে শরণার্থীদের জোর করে ফেরত পাঠানোও সম্ভব হচ্ছে না।
নিজ দেশে পরবাসী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী : উদ্ভাসিত হাসিতে সমর্থকদের কাছ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণ করছেন অং সান সু চি। কয়েক দশক ধরে স্বৈরশাসনে জর্জরিত মিয়ানমারে তাকে গণতন্ত্রের প্রতীক বিবেচনা করা হয়। ওই হাস্যোজ্জ্বল সময়েই কয়েকজন সু চিকে মিয়ানমারের সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নগুলোর একটি জিজ্ঞাসা করলেন। তারা জানতে চেয়েছিলেন রোহিঙ্গা সমস্যা তিনি কিভাবে মোকাবেলা করবেন?
তিনি বললেন, ‘রোহিঙ্গা? তারা আবার কারা?’
বিবিসির ভাষায় ‘বিশ্বের অন্যতম নির্যাতিত সংখ্যালঘু’ গ্রুপ রোহিঙ্গাদের খবর খুব কমই প্রকাশিত হয়। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাখাইনের এই বিস্মৃতপ্রায় মুসলিম জনগোষ্ঠী কয়েক শত বছর ধরে সেখানে বাস করছেন। তারা মূলত মৎস্যজীবী ও চাষি। কয়েক দশক ধরে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এসব লোককে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করছে। মিয়ানমার তাদের সব ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে আসছে, এমনকি তাদের নাগরিকত্বও স্বীকার করছে না। তারা ‘রাষ্ট্রহীন মুসলিম সংখ্যালঘু’। একসময়ে বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ ও মার্জিত এই জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজ ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হতে চলেছে। নিজ দেশেই তারা এখন পরবাসী হয়ে পড়েছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী রাখাইন ও মগ সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের জমিজমা দখল করে নিচ্ছে।
মিয়ানমার এবং বিদেশে স্বীকৃতিহীন রোহিঙ্গাদের ওপর এই নির্যাতন দেশটির গণতন্ত্র নিয়ে যে আশাবাদের সঞ্চার হয়েছে, সেটার ওপর বড় ধরনের আঘাত বলে বিবেচিত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। ২০ লাখেরও কম। কিন্তু সমাজের প্রতিটি পর্যায়ের লোকজন, বর্ণ-গোত্র-ধর্ম নির্বিশেষে সব জনগোষ্ঠীকে সঙ্গে না নিলে গণতন্ত্র সুসংহত হতে পারে না।
মিয়ানমারে অনেক ুদ্র জাতিগোষ্ঠী সামরিক সরকারের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের সমস্যা সবচেয়ে মারাত্মক। তারা মূলত অস্তিত্বের সঙ্কটেই পড়েছে। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের শরণার্থী শিবিরগুলোতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের করুণ অবস্থার খবর মিডিয়ায় মাঝে মধ্যে প্রকাশিত হলেও তারা কেন এই দুর্দশায় পড়েছে, সেটা প্রায় চেপেই যাওয়া হয়, তারা যে দেশে আগ্রাসী নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, সে বলতে গেলে কেউই মুখ খোলেন না।
মিয়ানমার সরকার তাদের মুসলিম পরিচিতি ও গোষ্ঠীগতভাবে নন-মিয়ানমার হওয়ার কারণে তাদেরকে মিয়ানমারের বাইরে রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছে। সরকার তাদেরকে ‘অবৈধ বাঙালি অভিবাসী’ হিসেবে অভিহিত করে রোহিঙ্গা সংস্কৃতি ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে।
কারা রোহিঙ্গা? : মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব স্বীকার না করলেও ইতিহাস কিন্তু তাদের পক্ষেই। মধ্যযুগে আরাকান রাজ্য ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ একটি জনপদ। রাষ্ট্রীয় ও জনজীবনে ইসলাম ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। আরাকানের রাজধানী মরাক উ আন্তর্জাতিক নগরী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিল। জনৈক পর্তুগিজ পাদরি নগরীটিকে ‘দ্বিতীয় ভেনিস’ হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। ওই সময়ে পর্যটকদের অনেকেই শহরটিকে আমস্টারডার ও লন্ডনের সাথে তুলনা করতেন।
সুখী সমৃদ্ধ এই জনপদটির ওপর দুর্যোগ নেমে আসে ১৭৮৪ সালে বার্মার (বর্তমান মিয়ানমার
রাজা বোদাপায়ার অভিযানে। তখন থেকেই চলছে নির্যাতন। আরাকানবাসীর অনেককে দাস হিসেবে অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছিল, অনেককে পুড়িয়ে মারা হয়।
১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইনের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানের পরে ‘মিয়ানমারকরণ’ নীতি গ্রহণ করা হয় এবং বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী লোকদের বিশুদ্ধতার ওপর জোর দেয়া হয়। রোহিঙ্গাদের মুসলিম এবং অ-মিয়ানমার হিসেবে চিহ্নিত করে নাগরিকত্ব নাকচ করে দেয়া হয়। তারপর জান্তা ১৯৮২ সালে নাগরিকত্ব আইন পাসের মাধ্যমে কার্যত তাদের বৈধভাবে বসবাসের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়।
নাগরিকত্ব হারিয়ে রোহিঙ্গারা পড়েন মারাত্মক প্রতিকূল অবস্থায়। তাদেরকে না তাদের নিজেদের জমিতে বা সম্পত্তিতে অধিকার দেয়া হয়, না তাদের পাশের গ্রামে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়। তাদের শিক্ষা এমনকি বিয়ে করার অধিকারও কেড়ে নেয়া হয়েছে। সেই সাথে আধুনিক যুগের দাসত্বও বরণ করতে বাধ্য হয়েছে তারা। বিভিন্ন অবকাঠামোগত প্রকল্পে তাদের বাধ্যতামূলক শ্রম দিতে বাধ্য করা হয়।
১৯৭৮ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে প্রথম বড় ধরনের গোষ্ঠী নির্মূল অভিযান শুরু হয়। অপারেশন নাগা মিন (অপারেশন কিং ড্রাগন
নামে ওই কার্যক্রমে ‘অবৈধ অভিবাসী’দের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেয়া হয়। ওই সময়ে রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন নেমে আসে। তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয়, মসজিদগুলো গুঁড়িয়ে দেয়া হয়, অনেকে ধর্ষণের শিকার হয়। ওই সহিংসতার সময়ে প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। পরে তাদের অনেককে ফিরিয়ে নেয়া হলেও দেশে ফিরে তারা আরো নির্যাতন, ধর্ষণ, কারাদণ্ড ও মৃত্যুর কবলে পড়ে।
১৯৯১ সালে শুরু হয় দ্বিতীয় অভিযান। একই উদ্দেশ্যে পরিচালিত ওই অভিযানের সময়ে দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পাড়ি দেয়।
ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন এনজিওর হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে তিন লাখ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু রয়েছে। এদের মাত্র ৩৫ হাজার উদ্বাস্তু শিবিরগুলোতে নিবন্ধিত এবং বিভিন্ন এনজিও থেকে সামান্য সাহায্য পেয়ে থাকে। বাকিরা খাদ্য ও চিকিৎসার কোনো সুযোগ পায় না। তারা না খেয়ে ধুঁকে ধুঁকে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হচ্ছে। নিজ দেশে সুবিধা করতে না পেরে রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়া, সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতেও ছুটছে। কিন্তু সেখানেও তারা সহজে যেতে পারে না। প্রায়ই ট্রলারডুবির শিকার হতে হয় তাদের।
এবারের নৃশংসতা শুরু হয়েছে এক বৌদ্ধ নারীর ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগকে কেন্দ্র করে। তিন রোহিঙ্গা ওই নারীকে হত্যা করেছে বলে প্রচার করা হয়। তবে পরে জানা যায়, ওই ঘটনার সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। কিন্তু হামলা চালানোর জন্য একদল লোক মুখিয়ে ছিল। তারা এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিধনযজ্ঞ শুরু করে। হত্যা, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া, মসজিদ গুঁড়িয়ে দেয়াসহ নানাভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন চালানো শুরু হয়।
এ অবস্থা থেকে তাদের কি মুক্তির কোনো পথ নেই? সেই পথ দেখাতে পারেন আং সান সু চি। তাদেরকে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে নিয়ে তিনি সুখী-সমৃদ্ধ মিয়ানমার গড়ার কাজ শুরু করতে পারেন। ৩ জুন রোহিঙ্গাবিরোধী হত্যাকাণ্ড শুরু হলে তিনি বৌদ্ধদের সংযত থাকার আহ্বান জানালেও এ ঘটনার সাথে নিজেকে খুব বেশি সম্পৃক্ত করতে চাচ্ছেন না।
à¦à¦¾à¦¤à¦¿à¦¸à¦à§à¦à§à¦° à¦à¦¹à§à¦¬à¦¾à¦¨à§ রà§à¦¹à¦¿à¦à§à¦à¦¾ শরণারà§à¦¥à§ নà§à¦¬à§ না বাà¦à¦²à¦¾à¦¦à§à¦¶ :: নà§à¦¾à¦¦à¦¿à¦à¦¨à§à¦¤