BanglaBhoot
RETIRED TTA
- Joined
- Apr 8, 2007
- Messages
- 8,839
- Reaction score
- 5
- Country
- Location
ভারতের পদতলে জাতীয় স্বার্থ
Amar Desh = October 24, 2013
দিল্লিকেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ এবং একতরফা বন্ধুত্ব গড়তে গিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ ভারতের পদতলে ঠেলে দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মধ্যে ফেলে ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যুক্ত করা হয়েছে বাংলাদেশকে। গত ৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭ রাজ্যের বিদ্রোহ দমনে সর্বাত্মক সহযোগিতা, ফ্রি ট্রানজিট, বাংলাদেশের জন্য ধ্বংসাত্মক টিপাইমুখ প্রকল্পের অনুমোদন, সুন্দরবনের জন্য সর্বনাশা রামপাল বিদ্যুেকন্দ্রের অনুমোদন, বন্দর সুবিধাসহ ভারতের দীর্ঘদিনের দাবিগুলো একে একে পূরণ করেছে। দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে হলেও ভারতের স্বার্থ রক্ষা করতে হবেএই নীতিই মূলত ৫ বছর ধরে বাস্তবায়ন করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। ভারতের জন্য ট্রানজিট সুবিধা নিশ্চিত করতে ফেনী নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ করার মতো আত্মঘাতী জঘন্য কাজও করেছে সরকার। সীমান্ত হত্যা অব্যাহত রেখেছে ভারত। বর্তমান সরকারের মেয়াদে প্রায় ৫শ নিরীহ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে ভারত। কিশোরী ফেলানী হত্যার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ করার পরও সীমান্ত হত্যা বা ফেলানী হত্যার ব্যাপারে কোনো ধরনের প্রতিবাদ করেনি আওয়ামী লীগ সরকার। অনেক ক্ষেত্রে সীমান্ত হত্যার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন সরকারের কর্তাব্যক্তিরা। ফেলানী হত্যার বিচারের নামে যে তামাশা হয়েছে, তার বিরুদ্ধেও মুখ খোলেনি সরকার। ভারতের পক্ষ থেকে তিস্তা চুক্তি সই এবং সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়নে বার বার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। তিস্তা চুক্তি সই এবং সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন যে হচ্ছে না, তা এখন নিশ্চিত। এরপরও আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছেএই চুক্তি হবে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময়ে ৫০ দফার যৌথ ঘোষণাপত্র সইয়ের মাধ্যমে মূলত বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে ভারতের কাছে বিকিয়ে দেয়া হয়েছে।
ওই ঘোষণাপত্রে ট্রানজিট সুবিধা, বন্দর ব্যবহার, আশুগঞ্জ নৌবন্দরকে পোর্ট অব কল হিসেবে ঘোষণা দেয়া, সন্ত্রাস দমনে (ভারতের বিদ্রোহ দমন সহায়তা, টিপাইমুখ প্রকল্পে সম্মতি দেয়াসহ ভারতের দীর্ঘদিনের চাহিদাগুলো পূরণের জন্য সুনির্দিষ্টভাবে অঙ্গীকার করা হয়। এগুলো একে একে বাস্তবায়ন করে চলেছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার।
অন্যদিকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ, তিস্তা চুক্তি সই, সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়নসহ বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোর ব্যাপারে কেবল আশ্বাস দেয়া হয় ওই ঘোষণাপত্রে। ওইসব আশ্বাস যে মিথ্যা আশ্বাস ছিল, তা এখন প্রমাণিত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময়ে সীমান্তে সন্ত্রাস দমন এবং মাদক চোরাচালান রোধে ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী দুদেশের মধ্যে ৩টি চুক্তি সই হয়। আসলে ওই চুক্তির মোড়কে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ৭ রাজ্যে বিদ্রোহ দমনে সম্পৃক্ত করা হয় বাংলাদেশকে। ওই ৩টি চুক্তির ব্যাপারে সংসদে বা অন্য কোথাও কোনো ধরনের আলোচনা করেনি আওয়ামী লীগ সরকার। এমনকি কেউ জানে না ওই চুক্তিতে কী আছে। প্রধানমন্ত্রী দিল্লি থেকে দেশে ফেরার পর চুক্তি সম্পর্কে তত্কালীন পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস শুধু বলেছিলেন, এই চুক্তির আওতায় দুদেশের গোয়েন্দা সদস্যদের সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এর বাইরে এখন পর্যন্ত আর কোনো কিছু জানানো হয়নি। তবে কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ওই চুক্তির ফলে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অবাধে বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম চালানোর সুযোগ পেয়েছে এবং তারা তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। উলফা চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াসহ আরও অনেককে বাংলাদেশ থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা না হলেও ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বার বার বলা হয়েছে, ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী তাদের গ্রেফতার করেছে। ভারতের বিদ্রোহ দমনে যুক্ত হওয়ার ফলে বাংলাদেশ বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে বলে মনে করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে ভারতকে ফ্রি ট্রানজিট দেয়ার যাবতীয় আয়োজন সম্পন্ন করেছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রানজিটের নামে বর্তমান সরকার আসলে ভারতকে করিডোর দিচ্ছে। এরই মধ্যে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফ্রি নৌ-ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে সরকার। এছাড়া কখনও বিদ্যুেকন্দ্রের জন্য ভারী যন্ত্রপাতি পাঠানো, আবার কখনও মিথ্যা মানবিক কারণ উল্লেখ করে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় পণ্য পাঠানোর মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিকভাবে ভারত স্থল ট্রানজিট সুবিধা ভোগ করছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে তত্পর হয়ে ওঠে। ট্রানজিটের ব্যাপারে সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে বাংলাদেশের স্বার্থের সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান নিয়ে সরকার ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে। এমনকি কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই ভারত এই ট্রানজিট সুবিধা পাচ্ছে।
ট্রানজিটের ব্যাপারে ভারতের চেয়ে বাংলাদেশ সরকারকেই সব সময় বেশি আগ্রহী মনে হয়েছে। ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে তত্কালীন ভারতীয় হাইকমিশনার রঞ্জিত মিত্র বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডে ভারত সরকার বাংলাদেশকে ট্রানজিট ফি দিতে রাজি আছে। এর মাত্র কয়েকদিন পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ঘোষণা দিলেন, ভারতের কাছে ট্রানজিট ফি চাওয়া হবে অসম্মান। ওই সময় প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী ঘোষণা দিলেন, ভারতকে ট্রানজিট দিতে কোনো চুক্তি সইয়ের প্রয়োজন নেই। চুক্তি ছাড়াই ভারতকে ট্রানজটি সুবিধা দেয়া হবে। ট্রানজিটের ব্যাপারে সরকার একটি কোর কমিটি গঠন করেছিল। ওই কমিটি ট্রানজিটের জন্য কাস্টমস সার্ভিস ফি, রাস্তা মেরামত ফি, নিরাপত্তা ফি, বায়ু ও শব্দদূষণ ফি, বিদেশি যানবাহন প্রবেশ ফি নেয়ার সুপারিশ করেছিল। নিজের গড়া ওই কমিটির সুপারিশও প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার। ট্রানজিট দেয়ার জন্য যে ধরনের অবকাঠামো প্রয়োজন, তা না থাকা সত্ত্বেও ভারতকে এই ট্রানজিট সুবিধা দিয়েছে সরকার। বাংলাদেশের ক্ষতির ব্যাপারে সরকারের কোনো ধরনের মাথাব্যথা নেই। ট্রানজিট নিয়ে সরকার জনগণের সঙ্গে রীতিমত প্রতারণা করেছে। নৌ-প্রটোকলের আওতায় পরীক্ষামূলক ট্রানজিটের নামে স্থায়ী ট্রানজিট দেয়া হয়েছে ভারতকে। ২০১১ সালের মার্চ মাসে পরীক্ষামূলক ট্রানজিটের নামে কোনো ধরনের ফি ছাড়াই ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুেকন্দ্রের জন্য ৮ হাজার টন ভারী যন্ত্রপাতি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পরিবহনের সুযোগ দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। ৯০টি কন্টেইনারে এসব ভারী যন্ত্রপাতি আশুগঞ্জ বন্দর হয়ে ত্রিপুরায় যায়। ওই একই প্রক্রিয়ায় ২০১১ সালের ডিসেম্বর মাসে ৩৫০ টন পণ্য, ৯০০ টন টিন, ৬২১ টন লোহা এবং ৩০০ টন সিমেন্ট তৈরির কেমিক্যাল বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পরিবহন করে ভারত। ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে একই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ৩ হাজার ২২৫ টন কয়লা ও সিমেন্টের রাসায়নিক পণ্য যায় পূর্ব ভারতে। ট্রানজিটের উপযুক্ত অবকাঠামো না থাকার পরও ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেয়ার ফলে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বাংলাদেশের। ভারতীয় পণ্য বিশেষ করে ভারী যন্ত্রপাতি পরিবহনের ফলে বাংলাদেশের রাস্তাঘাট ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। পরিবেশ বিপর্যয়কর ট্রানজিটের জন্য তিতাসসহ ১৮টি নদী ও খালে বাঁধ দিয়ে বন্ধ করার মতো আত্মঘাতী কাজ করেছে সরকার। তিতাস নদীতে বাঁধ দেয়ার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদের মুখে ভারতীয় পণ্য আর যাবে না বলে ঘোষণা দেয় সরকার। তবে অনেকটা গোপনে আবারও ভারতকে পণ্য পরিবহনের অনুমতি দিয়েছে এ সরকার। মিথ্যা মানবিক কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ত্রিপুরায় ১০ হাজার টন খাদ্যশস্য পরিবহনের অনুমতি দেয়া হয়েছে ভারতকে। এছাড়া আরও ৩০ হাজার টন পণ্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে আসামে নেয়ার অনুমতিও পাচ্ছে ভারত। ভারতের জন্য ট্রানজিট সুবিধা আরও সহজতর করতে আশুগঞ্জ বন্দরের উন্নয়নের জন্য ২৪৫ কোটি টাকার প্রকল্পও চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
সীমান্ত হত্যাকে একপ্রকার বৈধতা দিয়ে দিয়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন, সীমান্ত হত্যা দুদেশের সম্পর্কের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বার বার সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যাপারে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছেন। আইন ও সালিশ কেন্দ্র, অধিকারসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী গত ৫ বছরে প্রায় ৫০০ নিরীহ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। নির্যাতনের শিকার হয়েছে অসংখ্য মানুষ। ভারতীয় বাহিনী গুলি করে বাংলাদেশীদের মারলেও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি গুলি ছোড়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিজিবিকে এখন একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। ফিলিস্তিন-ইসরাইল সীমান্তের পরই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক সীমান্ত হিসেবে বিশ্বে আজ পরিচিত। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়া চীন, পাকিস্তান, নেপাল ও ভুটানের সীমান্ত রয়েছে। তবে একমাত্র বাংলাদেশ সীমান্তেই ভারত নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সবচেয়ে জঘন্য এবং আলোচিত ঘটনা হলো সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যাকাণ্ড। ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানীকে বিএসএফ সদস্যরা গুলি করে মেরে কাঁটাতারের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। ওই জঘন্য ঘটনার বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এমনকি ভারতের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। অন্যদিকে ওই নিষ্ঠুর বর্বরতার প্রতিবাদ না জানিয়ে বরং সীমান্ত হত্যাকে বৈধতা দেয় আওয়ামী লীগ সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর ফেলানীকে ভারতের নাগরিক হিসেবে প্রচার করেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ওই ঘটনার পর বলেন, সীমান্তে অতীতেও হত্যা হয়েছে, এখনও হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, সীমান্ত হত্যা দুদেশের সম্পর্কের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না। এরপর দেশে এবং দেশের বাইরে শুরু হয় ব্যাপক প্রতিবাদ। ওই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে ফেলানী হত্যার ৮ দিন পর একটি লোক দেখানো প্রতিবাদ জানায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারত সরকারও ঘোষণা দেয়, ফেলানী হত্যার তদন্ত ও বিচার হবে।
তবে ভারত শেষ পর্যন্ত বিচারের নামে একটি তামাশা করেছে। গত ১৩ আগস্ট ফেলানী হত্যার বিচার কাজ শুরু হয়। গত ৬ সেপ্টেম্বর মামলার রায়ে ফেলানীর হত্যাকারী বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে নির্দোষ ঘোষণা করা হয়। এ রায়ের পর বাংলাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। দেশি-বিদেশি, এমনকি ভারতের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের পক্ষ থেকেও নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানানো হয়। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বিচারের নামে তামাশা করেছে, প্রতারণা করেছে গোটা জাতির সঙ্গে। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা হলো, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এ ব্যাপারে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়াই ব্যক্ত করেনি। ফেলানীর পক্ষে মামলাকারী দুজন ভারতীয় মানবাধিকার সংগঠক ওই রায়ের পর বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তাদের ভিসা দেয়নি। এই তামাশার বিচারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদের মুখে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ ফেলানী হত্যার পুনর্বিচারের কথা বলেছে। তবে এখন কেউই বিশ্বাস করে না যে, ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে।
বাংলাদেশের জন্য মরণ ফাঁদ হিসেবে চিহ্নিত টিপাইমুখ পানিবিদ্যুত্ প্রকল্পেরও অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বোরাক নদের অববাহিকায় বাঁধ দিয়ে এই পানিবিদ্যুত্ কেন্দ্র তৈরি হবে। পরিবেশবিদ এবং বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের অন্তত তিন কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ছাড়াও ভারতেও এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত তৈরি হয়েছে। তারপরও কোনো ধরনের সমীক্ষা ছাড়াই এ প্রকল্পের জন্য অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরের সময় এ প্রকল্পের ব্যাপারে সম্মতি দিয়ে আসেন। এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত থাকায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ঘোষণা দেন বাংলাদেশের ক্ষতি হয় টিপাইমুখ প্রকল্পে এমন কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে না। পরে দুদেশের পক্ষ থেকে একটি সমীক্ষার কথাও বলা হয়। যৌথ সমীক্ষার নামে যা করা হয়েছে, তা রীতিমত জালিয়াতি। ২০১২ সালে ২৬ থেকে ২৯ আগস্ট যৌথ নদী কমিশনের সদস্য মীর সাজ্জাদ হোসেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদল যৌথ সমীক্ষা কাজ সম্পন্ন করতে ভারত সফর করে। ওই প্রতিনিধিদল টিপাইমুখ এলাকা পরিদর্শন না করে দিল্লি ঘুরে ঢাকায় ফিরে আসে। অর্থাত্ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে দিল্লির বাইরেই যেতে দেয়া হয়নি। টিপাইমুখ ও বোরাক অববাহিকা পরিদর্শন না করে যৌথ সমীক্ষার কাজ সম্পন্ন করার বিষয়টি রীতিমত হাস্যকর। ভারতের অনেক পরিবেশবিদ এ প্রকল্পের বিপক্ষে অবস্থান নিলেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী একাধিকবার বলেছেনটিপাইমুখ প্রকল্পে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না। উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে ভারত সরকার টিপাইমুখ প্রকল্পটি হাতে নেয়।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যে ইস্যু দুটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে, তা হলো তিস্তা চুক্তি সই ও সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন। তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত প্রটোকল নিয়ে ভারত এবং বাংলাদেশের উভয় সরকারই বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে রীতিমত প্রতারণা করেছে। গত পাঁচ বছর ধরেই একের পর এক মিথ্যাচার করা হয়েছে তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন নিয়ে। তিস্তা চুক্তি সই ও সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন হবেএই প্রতিশ্রুতিতেই বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সব দাবিই একে একে পূরণ করেছে। সরকারের মেয়াদ শেষে এটা এখন নিশ্চিত যে, তিস্তা চুক্তি সই ও সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ২০১০ সালের জানুয়ারিতে দিল্লি সফর শেষে ঢাকায় ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঘোষণা দেন, খুব শিগগিরই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি ও সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন হবে। তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে দুদেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ঢাকায় আসার আগে দুদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে দুদেশ একমত হয়েছে। তবে মনমোহন সিং ঢাকায় রওনা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে ভারতের পররাষ্ট্র দফতর থেকে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হয়, এ সফরে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর আপত্তির কারণেই তখন তিস্তা চুক্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই ঘোষণার পরও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বলেন, মনমোহন সিংয়ের সফরেই তিস্তা চুক্তি সই হবে। এরপর তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আরও কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বার বার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে বলা হয়এ সরকারের মেয়াদেই তিস্তা চুক্তি সই হবে। গত মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের একটি কর্মসূচি থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করা হয়েছে। কারণ সরকার এখন নিশ্চিত, তাদের এই মেয়াদে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা নেই। গত কয়েক সপ্তাহ আগে বিষয়টি পরোক্ষভাবে স্বীকার করে এক সংবাদ সম্মেলনে ডা. দীপু মনি বলেন, তিস্তা চুক্তি হবে। তবে কখন হবেতা জানা নেই। এর আগে একবার তিনি বলেছিলেন, আমি গণক নই যে, চুক্তির দিনক্ষণ বলে দিতে পারব। তিস্তা চুক্তির মতো একই ভাগ্য বরণ করেছে সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়নের বিষয়টিও। ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব স্বাক্ষরিত সীমান্ত প্রটোকলটি ভারত এখনও সমর্থন করেনি। যদিও বাংলাদেশ তখনই এটি অনুসমর্থন করে। সীমান্ত প্রটোকল অনুসমর্থনের জন্য বিলটি ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন ইউপিএ সরকার সংসদেই তুলতে পারেনি। বিরোধী দল বিজেপির আপত্তির কারণেই এটি সম্ভব হচ্ছে না বলে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়নের জন্য ভারতের বিরোধী দলের সমর্থন পেতে কূটনৈতিক রীতিনীতি ভঙ্গ করে ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক এ করিম উগ্র হিন্দুবাদী নেতা ও গুজরাটে মুসলিম নিধনের মূল হোতা নরেন্দ্র মোদীর দারস্থ পর্যন্ত হয়েছেন। তাতেও কোনো ফল হয়নি। যেমন ফল হয়নি তিস্তার ব্যাপারে মমতা ব্যানার্জীর সহায়তা চেয়েও।
তিস্তা চুক্তি ও সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন না হলেও শেষ মুহূর্তে এসে বাংলাদেশের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে সুন্দরবন ধ্বংসকারী এবং পরিবেশ বিপর্যয়কারী হিসেবে চিহ্নিত রামপাল বিদ্যুেকন্দ্রের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিবেশবিদ, রাজনৈতিক নেতা ও সুশীল সমাজের সদস্যসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুত্ প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ২২ অক্টোবর এই বিদ্যুেকন্দ্র উদ্বোধনের কথা থাকলেও প্রধানমন্ত্রী সেই কাজটি সেরেছেন গত ৫ অক্টোবর। বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুেকন্দ্রের উদ্বোধন করেন কুষ্টিয়ায় বসে। এ এক নজিরবিহীন ঘটনা। এই বিদ্যুত্ প্রকল্পটি ভারতের জনগণ তাদের নিজেদের দেশেই করতে দেয়নি। কারণ ওই বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ হলে ভারতীয় অংশের সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। অথচ সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে এই বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। পরিবেশবিদদের মতে, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুন্দরবন বিরান ভূমিতে পরিণত হবে। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জীববৈচিত্র্য। ভারতের স্বার্থের জন্য দেশের জন্য আত্মঘাতী হলেও তা থেকে পিছপা হচ্ছে না বর্তমান সরকার। গত ৫ বছরে সরকারের প্রতিটি পদক্ষেপ সেই স্বাক্ষরই বহন করে।
??????? ????? ????? ???????