What's new

Old Bangla Photos

.
পলাশীর পরে


পলাশী যুদ্ধের প্রহসনমূলক নাটক শেষ হতে না হতেই লুণ্ঠিত হল মুর্শিদাবাদের রাজকোষ। সে সময় রাজকোষে কি পরিমাণ সম্পদ ছিল? মুর্শিদকুলী খাঁর শাসনকাল থেকে দীর্ঘ ৫৫ বছরের সঞ্চয় একত্রিত হয়ে নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার কোষাগারে পূর্ণিয়া যুদ্ধের পর সঞ্চিত ছিল সার্জন ফোর্থের প্রদত্ত হিসেব মতে মণিমুক্তা হিরা জহরতের মূল্য বাদ দিয়ে, তৎকালীন মুদ্রায় ৬৮ কোটি টাকা [S. C. Hill. Bengal in 1757-67, P.108] যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজেটের সাথে তুলনীয়।’ পলাশীর নাটক শেষ করে সিরাজ-উদ্দৌলারই দীওয়ান রামচাঁদ বাবু মুনশী নবকিষেণ, লর্ড ক্লাইভ ও মীরজাফরকে নিয়ে নবাবের কোষাগারে হাজির হন বিত্ত-সম্পদ লুট করার জন্য। দীওয়ান বাবুর তালিকার সাথে মিলিয়ে প্রাপ্ত সম্পদ তারা ভাগ বাঁটোয়ারা করে নেন। সিরাজউদ্দৌলার প্রাসাদে ও অন্দরমহলে রক্ষিত সম্পদ ভাগ করে নেন দীওয়ান রামচাঁদ, মুনশী নবকিষেণ, মীর জাফর আলী খান ও আমীর বেগ খান। (সিয়ারে মতাযেলি, ২য় খণ্ড (অনুবাদ) পৃ-২৩)

মুর্শিদাবাদের রাজকোষ থেকে পাওয়া গেল পনের লক্ষ পাউন্ড অর্থাৎ ৩০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ। ক্ষতিপূরণ হিসেবে বৃটিশ নৌবাহিনী এবং স্থল বাহিনীর ৬জন সদস্যকে দিতে হল ৮কোটি টাকা। সিলেক্ট কমিটির ৬ জন সদস্যকে দিতে হল ৯ লক্ষ পাউন্ড (১৮ কোটি টাকা), ক্লাইভ তার নিজের জন্য আদায় করলেন ২ লক্ষ চৌত্রিশ হাজার পাউন্ড (প্রায় ৩ কোটি টাকা), কাউন্সিল মেম্বাররা পেলেন এক থেকে দেড় কোটি টাকা করে। এছাড়াও উৎকোচ, নিপীড়ন এবং আরো বিবিধ নীতি বহির্ভূত ঘৃণিত পন্থায় এ দেশের সম্পদ লুট করেছে বৃটিশ বেনিয়ারা। সিরাজের পতনের পর নবাবের শূন্য আসনটি কোম্পানীর অর্থোপার্জনের উৎসে পরিণত হয়। শিখণ্ডি নবাবী কেনাবেচার মধ্য দিয়ে কোম্পানীর নতুন ধরনের তেজারতি শুরু হয়।

কোম্পানী এবং তাদের কর্মচারীগণ যাকে খুশী তাকে নবাবের পদে অধিষ্ঠিত করতে পারতো এবং যাকে খুশী তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতো। ১৭৫৭ থেকে ১৭৬৫ সাল পর্যন্ত মাত্র আট-ন’ বছরে এ ব্যাপারে কোম্পানী ও তার দেশী বিদেশী কর্মচারীদের পকেটে যায় কমপক্ষে ৬২,৬১,১৬৫ পাউন্ড। প্রত্যেক নবাব কোম্পানীকে বিভিন্ন বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা দানের পরও বহু মূল্যবান উপঢৌকনাদি দিয়ে সন্তুষ্ট রাখতো। (বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস, আব্বাস আলী খান, পৃ.-৯৫)
মীরজাফর ক্ষমতায় আরোহণ করে টের পেলেন যে, তিনি প্রকৃতপক্ষে বাংলার নবাব নন, শিখণ্ডি মাত্র। বলতে গেলে তিনি বৃটিশদের অর্থোপার্জন এবং শোষণের যন্ত্র। সিরাজের প্রধান সেনাপতি থাকা অবস্থায় তিনি যে মর্যাদা এবং প্রতিপত্তির প্রতীক ছিলেন আজ নবাবীর আসনে অধিষ্ঠিত হয়েও তাকে কোম্পানীর সাধারণ কর্মচারীদের তোষামোদ করে চলতে হচ্ছে। তাদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য উৎকোচ উপঢৌকন হিসেবে তাকে লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করতে হয়েছে। কিন্তু তবু কোম্পানীর ক্ষুধা মেটান সম্ভব হয়নি। রাজকোষের সমস্ত ভাণ্ডার উজার করে দিয়েও তিনি তার ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি। ষড়যন্ত্রের শুরুতে তিনি ভেবেছিলেন ব্রাহ্মণ্যবাদী চক্র এবং ইংরেজ বণিকদের সহযোগিতা নিয়ে তিনিই হবেন উপমহাদেশের সবেচেয়ে শক্তিশালী নবাব। নবাবীর নেশায় তিনি এত উন্মত্ত মাতাল ছিলেন যে, ষড়যন্ত্রের গভীরে আর এক ষড়যন্ত্রকে আমলে আনতে পারেননি। কিন্তু নবাবের পতনের পর যখন দেখলো শক্তির সব সূত্রগুলো ছিন্ন ভিন্ন, সব অমাত্যবর্গ উগ্র লালসা নিয়ে ক্লাইভের তোষামোদে ব্যস্ত, দেখলেন কোম্পানীর কর্মকর্তাদের দাপট, দেখলেন রাজকোষের নির্মম লুণ্ঠন এবং লোপাট হতে দেখলেন নগর জনপদগুলো। বাংলার নবাব হয়ে তাকে দেখতে হল সবকিছু নীরবে, নিরুপায় হয়ে। দুর্বিষহ মনে হলেও কোম্পানীর সব অপকর্মকে সমর্থন দিতে হল হাসি মুখে। ক্লাইভের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহসটুকুও তার অবশিষ্ট রইল না। সিরাজের পতনের সাথে সাথেই বাংলার মুসলমান হয়ে পড়ল অভিভাবকহীন। বাংলার মুসলমানদের জীবন-জীবিকা এবং অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দের সব উৎসমুখগুলোতে আগুন জ্বলে উঠল। একের পর এক ধনী গরীব নির্বিশেষে বাংলার সব মুসলমান এগিয়ে চলল ধ্বংসের কিনারে।

মীরজাফর নিজেকে শেষ অবধি কি চিনতে পেরেছেন? পারলেও তার ফেরার পথ খোলা ছিল না। অবজ্ঞা, অপমান আর ঘাত প্রতিঘাত নির্দেশ খবরদারীর দুর্বিপাকে পড়ে স্বপ্ন আর সম্মোহনের ঘোর কাটতে খুব বেশী দেরী হয়নি তার। দেরী হয়নি তার নিজেকে চিনতে। নবাবীর মোড়কে ঢাকা বেনিয়া চক্রের শিখণ্ডী বৈতো তিনি আর কিছু নন। উচ্চাভিলাষ চরিতার্থের জন্য তার ব্যক্তিসত্তা বিক্রি হয়েছে অনেক আগে।
সিরাজের শোণিত-সিক্ত বাংলার মসনদ পরিণত হল তেজারতের পণ্যে। ক্লাইভের অর্থের তৃষ্ণা মেটাতে ব্যর্থ হয়ে মীর জাফর অসহিষ্ণু এবং মরিয়া হয়ে উঠলেন ইংরেজদের লালসার দোহন থেকে নিজেকে বাঁচাতে চাইলেন। একারণে তিনি ওলন্দাজদের সাহায্য নিয়ে ইংরেজদের দেশছাড়া করার এক কর্মসূচী গ্রহণ করেন। আর এ কারণেই নবাবের নাটমঞ্চ থেকে বিদায় নিতে হল মীর জাফরকে। তাকে পদচ্যুত করে কোলকাতায় নজরবন্দী করে রাখা হল। এর পর কোম্পানীকে টাকা উৎকোচ দিয়ে গ্রীনরুম থেকে মঞ্চে উপস্থিত হলেন মীর কাসিম। মীর কাসিম শুধুমাত্র মঞ্চাভিনয়ে সীমাবদ্ধ রইলেন না। সত্যিকার নবাব হবার চেষ্টা করলেন। নাটমঞ্চ থেকে রণাঙ্গনের রক্তাক্ত পথ বেছে নিলেন বাংলার ভাগ্য ফেরানোর জন্য। সাতটি রক্তাক্ত যুদ্ধের মুখোমুখি হয়ে তার অতীত গুনাহর কাফফারা আদায় করেছেন তিনি। শেষ অবধি বিচ্ছিন্ন শক্তি সমূহের সব সূত্র একই গ্রন্থিতে বাধার চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হলেন। সব সময় পঞ্চম বাহিনী গাদ্দারদের প্রেতাত্মা তাকে তাড়িয়ে নিয়ে ফিরেছে। গিরিয়ালা, উদয়নালা এবং বক্সারের প্রতিরোধ যুদ্ধে পরাজিত হয়ে তাকে বাংলার মাটি ছেড়ে নিরুদ্দেশ যাত্রা করতে হয়। অবশেষে অনাহারে অর্ধাহারে ধুঁকে ধুঁকে নিরাশ্রয় মীর কাশিম দিল্লীর রাজপথে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তখন বাংলার অবস্থা কি?

অবশেষে কোম্পানীর ছোট বড় সব কর্মচারী এবং তাদের দলগত চক্র শোষণ লুণ্ঠনের দুঃসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সমগ্র বাংলাব্যাপী। আর মুসলমানদের উচ্চবিত্ত আমীর ওমরাহর দল শিখণ্ডী নবাব হবার অভিলাষে তাদের সম্পদ উজাড় করে ইংরেজদের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠে এবং বৃটিশদের অর্থতৃষ্ণা মেটাতে থাকে। মীর কাশিম একই উদ্দেশ্যে ২ লক্ষ পাউন্ড (৪ কোটি টাকা) বর্তমান মুদ্রামানে ৮ হাজার কোটি টাকা কোম্পানীর হাতে তুলে দেন। মীরজাফরের পুত্রও কোম্পানীকে দেয় ১ লক্ষ ৪৯ হাজার পাউন্ড অর্থাৎ ৩ কোটি টাকা, বর্তমান মুদ্রামানে ৬ হাজার কোটি টাকা।
ওদিকে বাংলার জনপদ তার জেল্লা হারিয়ে নৈরাশ্য, হতাশা এবং বিশৃংখলার দিকে ধাপে ধাপে এগুতে থাকে। ক্লাইভের স্বীকৃতি থেকে তৎকালীন পরিস্থিতি কিছুটা অনুধাবন করা যায়। ক্লাইভের ভাষায়- “আমি কেবল স্বীকার করতে পারি, এমন অরাজকতা বিশৃংখলা, উৎকোচ গ্রহণ, দুর্নীতি ও বলপূর্বক ধনাপহরণের পাশব চিত্র বাংলা ছাড়া অন্য কোথাও দৃষ্ট হয়নি।” অথচ নির্লজ্জ ক্লাইভই এ শোষণযজ্ঞের প্রধান পুরোহিত ছিলেন। (মধ্যবিত্ত সমাজের বিকাশ সংস্কৃতির রূপান্তর, আব্দুল ওয়াদুদ, পৃ.- ৬০-৬২)

ব্রিটিশ আমলে বাংলার অর্থনীতি মানেই হলো- সুপরিকল্পিত শোষণের মর্মভেদী ইতিহাস। ঐতিহাসিকরা মোটামুটি হিসেব করে বলেছেন, ১৭৫৭ থেকে ১৭৮০ পর্যন্ত মাত্র তেইশ বছরে বাংলা থেকে ইংল্যান্ডে চালান গেছে প্রায় তিন কোটি আশি লক্ষ পাউন্ড অর্থাৎ সমকালীন মূল্যের ষাট কোটি টাকা। কিন্তু ১৯০০ সালের মূল্যমানের তিনশো কোটি টাকা। (বর্তমান মুদ্রামানে ১ লক্ষ ২০ হাজার কোটি টাকা)। ( Miller quoted by Misra. P-15.)

পলাশী যুদ্ধের প্রাক্কালে ষড়যন্ত্রকারী দল কি মহামূল্য দিয়ে ব্রিটিশ রাজদণ্ড এ দেশবাসীর জন্য ক্রয় করেছিল, তার সঠিক খতিয়ান আজও নির্ণীত হয়নি, হওয়া সম্ভব নয়। কারণ কেবল অলিখিত বিবরণ অর্থ সাগরপারে চালান হয়ে গেছে, কিভাবে তার পরিমাপ করা যাবে? (বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস, আব্বাস আলী খান, পৃ-৯৫)
একটা স্বপ্নের ঘোর ছিল মীরজাফরের। তিনি নিজেকে ভেবেছিলেন সিরাজ বিরোধী চক্রের মহানায়ক। সিরাজের পতনের অর্থ তিনিই বাংলা বিহার উড়িষ্যার মহান অধিপতি। তিনি জানতেন, দুঃসাহস আর দৃঢ়তা নিয়ে সিরাজ দাঁড়িয়েছিলেন চোরাবালির উপরে। আর এ চোরাবালি সৃষ্টির নায়কেরা তারই সহযোগী। তাদের পছন্দসই, তাদেরই মনোনীত নবাব তিনি। তিনি ভেবেছিলেন জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ, উঁমিচাদ, নন্দকুমার প্রমুখ অসংখ্য হিন্দু অমাত্যবর্গ এবং মীর কাসিমের পতনের পর পুনরায় মীর জাফরকে পুতুল নবাব হিসেবে ক্ষমতায় বসানো হলো। এবার কিন্তু মীর জাফরকে নির্দেশ দেয়া হল সেনাবাহিনী ভেঙ্গে দেয়ার জন্য। কোম্পানীর নির্দেশকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা শিখণ্ডী নবাবের ছিল না। বাধ্য হয়ে তিনি ৮০ হাজার সৈন্যকে বরখাস্ত করলেন। এর আগে মীর কাসিমের ৪০ হাজার সৈন্য ছত্র-ভঙ্গ হয়ে পড়েছিল। মোটের উপর পলাশীর প্রহসনমূলক যুদ্ধ নাটকের পর থেকে সেনাবাহিনীর দেড়লক্ষাধিক সৈন্য এবং এ বিভাগের সাথে সংশ্লিষ্ট ৫০ হাজার কর্মচারী চাকুরীচ্যুত হল। এদের সবাই ছিল মুসলমান। এর ফলে বাংলার অসংখ্য মুসলিম পরিবার এগিয়ে চললো বেকারত্ব এবং দারিদ্র্যের দুঃসহ অবস্থার দিকেও, শুরু হল সুবাহ বাংলার মুসলমানদের অর্থনৈতিক বিপর্যয়।
হান্টার (১৮৭১ সালে) বলেন, জীবিকার্জনের সূত্রগুলির প্রথমটি হচ্ছে সেনাবাহিনী। সেখানে মুসলমানদের প্রবেশাধিকার রুদ্ধ হয়ে যায়। কোন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান আর আমাদের সেনাবাহিনীতে প্রবেশ করতে পারতো না। যদিও কদাচিৎ আমাদের সামরিক প্রয়োজনের জন্যে তাদেরকে কোন স্থান দেয়া হতো, তার দ্বারা তার অর্থোপার্জনের কোন সুযোগই থাকতো না।

ষড়যন্ত্রকারীদের পরিণতি

নিউটনের তৃতীয় সূত্রে বলা হয়েছে, প্রত্যেক ক্রিয়ার সমমুখী ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এটা শুধু মাত্র বস্তুর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এমনটি নয়। রাজনীতি অর্থনীতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে সমান প্রতিক্রিয়া, তা না হলে গাদ্দারদের এমন মর্মান্তিক পরিণতি হবে কেন? সিরাজ উৎখাতে পলাশী ষড়যন্ত্রে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল ইতিহাসে অমোঘ নিয়মে তাদেরও হয়েছিল মর্মান্তিক পরিণতি। কাউকে পাগল হতে হয়েছিল, কারো হয়েছিল অপঘাতে মৃত্যু। কাউকে নির্মম অপমৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হয়েছিল। সবার ভাগ্যে জুটেছিল কোন না কোন ভয়াবহ পরিণতি। নীচে কতিপয় মুখচেনা মুখ্য ষড়যন্ত্রকারীদের পরিণতি তুলে ধরা হল।

মিরন
মিরন ছিলেন পলাশী ষড়যন্ত্রের অন্যতম নায়ক। তার পুরো নাম মীর মুহাম্মদ সাদেক আলি খান। তিনি মীরজাফরের জ্যেষ্ঠ পুত্র। আলীবর্দী খানের ভগ্নী শাহ খানমের গর্ভে তাঁর জন্ম হয়েছিল। এই সূত্রে মিরন ছিলেন আলিবর্দীর বোনপো। অত্যন্ত দুর্বৃত্ত, নৃশংস ও হীনচেতা এবং সিরাজ হত্যাকাণ্ডের মূল নায়ক মিরন। আমিনা বেগম, ঘষেটি বেগম হত্যার নায়কও তিনি। লুৎফুন্নিসার লাঞ্ছনার কারণও মিরন। মীর্জা মেহেদীকেও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছিলেন তিনি। এই মিরনকে হত্যা করে ইংরেজদের নির্দেশে মেজর ওয়ালস। তবে তার এই মৃত্যু ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্যে ইংরেজরা মিথ্যা গল্প বানিয়েছিল। তারা বলেছে, মিরন বিহারে শাহজাদা আলি গওহারের (পরে বাদশাহ শাহ আলম) সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে পথের মধ্যে বজ্রাঘাতে নিহত হন। ইংরেজরা বলেছে, বজ্রপাতের ফলে তাঁবুতে আগুন ধরে যায় এবং তাতেই তিনি নিহত হন। ফরাসী সেনাপতি লরিস্টনের ঔবধহ-খধি ঘটনাকে অস্বীকার করেছেন। বরং এই মত পোষণ করেন যে, মিরনকে আততায়ীর দ্বারা হত্যা করা হয়েছিল।

মুহাম্মদীবেগ
মুহাম্মদীবেগ ৩ জুলাই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। নবাব সিরাজ এ সময় তার কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাননি। তিনি কেবল তার কাছে থেকে দু’রাকাত নামাজ পড়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু কুখ্যাত মুহাম্মদীবেগ নবাব সিরাজকে সে সুযোগ প্রত্যাখ্যান করার পরপরই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। পরবর্তী পর্যায়ে মুহাম্মদী বেগের মস্তিস্ক বিকৃতি ঘটে, এমতবস্থায় সে বিনা কারণে কূপে ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃত্যুবরণ করেছিল। এই মুহাম্মদীবেগ সিরাজউদ্দৌলার পিতা ও মাতামহীর অন্নে প্রতিপালিত হয়। আলীবর্দীর বেগম একটি অনাথ কুমারীর সাথে তার বিয়ে দিয়েছিলেন।

মীরজাফর
পলাশী ষড়যন্ত্রের অন্যতম প্রধান নায়ক ছিলেন মীরজাফর আলি খান। তিনি পবিত্র কোরআন মাথায় রেখে নবাব সিরাজের সামনে তাঁর পাশে থাকবেন বলে অঙ্গীকার করার পরও বেঈমানী করেছিলেন। প্রকৃত পক্ষে ষড়যন্ত্রের মধ্যমণি ছিলেন জগৎশেঠ মীর জাফর নয়। তিনি ছিলেন ষড়যন্ত্রের শিখণ্ডি। মীরজাফরের মৃত্যু হয় অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে। তিনি দুরারোগ্য কুষ্ঠব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। নিখিলনাথ রায় লিখেছেন, ক্রমে অন্তিম সময় উপস্থিত হইলে, হিজরী ১১৭৮ অব্দের ১৪ই শাবান (১৭৬৫ সালের জানুয়ারী মাসে) বৃহস্পতিবার তিনি কুষ্ঠরোগে ৭৪ বৎসর বয়সে পরলোকগত হন। তাঁহার মৃত্যুর পূর্বে নন্দকুমার কিরীটেশ্বরীর চরণামৃত আনাইয়া তাহার মুখে প্রদান করাইয়াছিলেন এবং তাহার তাহাই শেষ জলপান।’

জগৎশেঠ মহাতাপচাঁদ এবং মহারাজা স্বরূপচাঁদ
পলাশী বিপর্যয়ের নীল নক্সা তিনিই প্রণয়ন করেন সিরাজের সাথে ইংরেজদের সংঘাত এবং তার বিপর্যয় পর্যন্ত সব কিছুর মধ্যমনি ছিলেন তিনি- আলীবর্দী খাঁর শাসনামলেই জগৎশেঠের সাথে ইংরেজদের সম্পর্ক গভীর ছিল। নবাব সিরাজ ক্ষমতায় এলে এই গভীরতা আরো বৃদ্ধি পেলো এবং তা ষড়যন্ত্রে রূপ নিলো। পলাশী বিপর্যয়ের পর জগৎশেঠ রাজকোষ লুণ্ঠনে অংশ নেন। নিখিলনাথ রায় লিখেছেন- ইহার পর ক্রমে ইংরেজদিগের সহিত মীর কাসেমের বিবাদ গুরুতর হইয়া উঠিলে, নবাব কাটোয়া গিরিয়া, উধুয়ানালা প্রভৃতি স্থানে পরাজিত হইয়া মুঙ্গেরে জগৎশেঠ মহাতাপচাঁদকে অত্যুচ্চ দুর্গশিখর হইতে গঙ্গারগর্ভে নিক্ষেপ কর হয়। মহারাজা স্বরূপচাঁদও ঐ সাথে ইহজীবনের লীলা শেষ করিতে বাধ্য হন।

রবার্ট ক্লাইভ
নবাব সিরাজ বিরোধী ষড়যন্ত্রের অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন রবার্ট ক্লাইভ। ক্লাইভ খুব অল্প বয়সে ভারতে আসেন। প্রথমে তিনি একটি ইংরেজ বাণিজ্য কেন্দ্রের গুদামের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। বিরক্তিকর এই কাজটিতে ক্লাইভ মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না। এ সময় জীবনের প্রতি তার বিতৃষ্ণা ও হতাশা জন্মে। তিনি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেন। তিনি রিভলভার দিয়ে নিজের কপালের দিকে লক্ষ্য করে পর পর তিনটি গুলী ছোঁড়েন। কিন্তু গুলী থাকা অবস্থাতেই গুলী রিভলবার থেকে বের হয়নি। পরে তিনি ভাবলেন ঈশ্বর হয়ত তাকে দিয়ে বড় কোন কাজ সম্পাদন করবেন বলেই এভাবে তিনি তাঁকে বাঁচালেন। পরবর্তীতে দ্রুত তিনি ক্ষমতার শিখরে উঠতে শুরু করেন। পরিশেষে পলাশী ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি কোটি টাকার মালিক হন। ইংরেজেরা তাকে ‘প্লাসি হিরো’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। তিনি দেশে ফিরে গিয়ে একদিন বিনা কারণে বাথরুমে ঢুকে নিজের গলায় নিজের হাতেই ক্ষুর চালিয়ে আত্মহত্যা করেন।

ইয়ার লতিফ খান
পলাশী ষড়যন্ত্রের শুরুতে ষড়যন্ত্রকারীরা ইয়ার লতিফ খানকে ক্ষমতার মসনদে বসাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এক্ষেত্রে মীর জাফরের নাম উচ্চারিত হয়। ইয়ার লতিফ খান ছিলেন নবাব সিরাজের একজন সেনাপতি। তিনি এই ষড়যন্ত্রের সাথে গভীরভাবে যুক্ত ছিলেন এবং যুদ্ধের মাঠে তার বাহিনী মীর জাফর, রায় দুর্লভের বাহিনীর ন্যায় ছবির মতো দাঁড়িয়েছিলো। তার সম্পর্কে জানা যায়, তিনি যুদ্ধের পর অকস্মাৎ নিরুদ্দিষ্ট হয়ে যান। অনেকের ধারণা, তাকে কে বা কারা গোপনে হত্যা করেছিল। (মুসলিম আমলে বাংলার শাসনকর্তা, আসকার ইবনে শাইখ, পরিশিষ্ট)

মহারাজা নন্দকুমার
মহারাজা নন্দকুমার এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন। মুর্শিদাবাদ কাহিনী গ্রন্থে নিখিলনাথ রায় লিখেছেন- নন্দকুমার অনেক বিবেচনার পর সিরাজের ভবিষ্যৎ বাস্তবিকই ঘোরতর অন্ধকার দেখিয়া, ইংরেজদিগের সহিত বন্ধুত্ব স্থাপনের ইচ্ছা করিলেন। ইংরেজ ঐতিহাসিকগণ বলিয়া থাকেন যে, ইংরেজরা সেই সময়ে উমিচাঁদকে দিয়া নন্দকুমারকে ১২ হাজার টাকা প্রদান করিয়াছিলেন। পলাশী ষড়যন্ত্রের পর নন্দকুমারকে মীরজাফর স্বীয় দেওয়ান নিযুক্ত করে সব সময় তাকে নিজের কাছে রাখতেন। মীরজাফর তার শেষ জীবনে যাবতীয় কাজকর্ম নন্দকুমারের পরামর্শানুসারে করতেন। তার অন্তিম শয্যায় নন্দকুমারই তার মুখে কিরীটেশ্বরীর চরণামৃত তুলে দিয়েছিলেন। তহবিল তছরূপ ও অন্যান্য অভিযোগের প্রেক্ষিতে আদালত মহারাজা নন্দকুমারের প্রাণ দণ্ডের আদেশ প্রদান করে।

রায় দুর্লভ
রায় দুর্লভ ছিলেন নবাবের একজন সেনাপতি। তিনিও মীরজাফরের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। যুদ্ধকালে তিনি এবং তার বাহিনী মীরজাফররের সাথে যুক্ত হন এবং সেখানেই তার মৃত্যু ঘটে।

উমিচাঁদ
ক্লাইভ কর্তৃক উমিচাঁদ প্রতারিত হয়েছিলেন। ইয়ার লতিফ খান ছিলেন উমিচাঁদের মনোনীত প্রার্থী। কিন্তু যখন অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীরা এ ক্ষেত্রে মীরজাফরের নাম ঘোষণা করলেন, তখন উমিচাঁদ বেঁকে বসলেন এবং বললেন, আপনাদের প্রস্তাব মানতে পারি এক শর্তে, তা হলো যুদ্ধের পর নবাবের রাজকোষের ৫ ভাগ সম্পদ আমাকে দিতে হবে। ক্লাইভ তার প্রস্তাব মানলেন বটে কিন্তু যুদ্ধের পরে তাকে তা দেয়া হয়নি। যদিও এ ব্যাপারে একটি মিথ্যা চুক্তি হয়েছিল। ওয়াটস রমণী সেজে মীর জাফরের বাড়িতে গিয়ে লাল ও সাদা কাগজে দুটি চুক্তিতে তার সই করান। লাল কাগজের চুক্তিতে বলা হয়েছে, নবাবের কোষাগারের পাঁচ শতাংশ উমিচাঁদের প্রাপ্য হবে। এটি ছিল নিছক প্রবঞ্চনামাত্র। যাতে করে উমিচাঁদের মুখ বন্ধ থাকে। যুদ্ধের পর ক্লাইভ তাকে সরাসরি বলেন, আপনাকে কিছু দিতে পারবো না। এ কথা শুনে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। এবং স্মৃতিভ্রংশ উন্মাদ অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে ঘুরতে তার মৃত্যু ঘটে।

রাজা রাজবল্লভ
ষড়যন্ত্রকারী রাজা রাজবল্লভের মৃত্যুও মর্মান্তিকভাবে ঘটেছিল। জানা যায়, রাজা রাজবল্লভের কীর্তিনাশ করেই পদ্মা হয় কীর্তিনাশা।

দানিশ শাহ বা দানা শাহ
দানিশ শাহ সম্পর্কে বিতর্ক রয়েছে। অনেকে বলেছেন, এই দানেশ শাহ নবাব সিরাজকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন। অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় লিখেছেন, দানিশাহ ফকির মোটেই জীবিত ছিলেন না। আসকার ইবনে শাইখ তাঁর মুসলিম আমলে বাংলার শাসন কর্তা গ্রন্থে লিখেছেন’ বিষাক্ত সর্প দংশনে দানিশ শাহর মৃত্যু ঘটেছিল।

ওয়াটস
ওয়াটস এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি রমণী সেজে মীর জাফরের বাড়িতে গিয়ে চুক্তিতে মীরজাফরের স্বাক্ষর এনেছিল। যুদ্ধের পর কোম্পানীর কাজ থেকে বরখাস্ত হয়ে মনের দুঃখে ও অনুশোচনায় বিলাতেই অকস্মাৎ মৃত্যুমুখে পতিত হন।

স্ক্রাফটন
ষড়যন্ত্রের পিছনে স্ক্রাফটনও বিশেষভাবে কাজ করেছিলেন। জানা যায়, বাংলার বিপুল সম্পদ লুণ্ঠন করে বিলেতে যাওয়ার সময় জাহাজডুবিতে তার অকালমৃত্যু ঘটে।

ওয়াটসন
যড়যন্ত্রকারী ওয়াটসন ক্রমাগত ভগ্নস্বাস্থ্য হলে কোন ওষুধেই ফল না পেয়ে কলকাতাতেই করুণ মৃত্যুর মুখোমুখি হন।

মীর কাশিম
মীরজাফরের ভাই রাজমহলের ফৌজদার মীর দাউদের নির্দেশে মীর কাশিম নবাব সিরাজের খবর পেয়ে ভগবানগোলার ঘাট থেকে তাকে বেঁধে এনেছিলেন মুর্শিদাবাদে। পরে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তিনি নবাব হন এবং এ সময় ইংরেজদের সাথে তার বিরোধ বাঁধে ও কয়েকটি যুদ্ধে পরাজিত হন। পরে ইংরেজদের ভয়ে হীনবেশে পালিয়ে যান এবং রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ান।। অবশেষে অজ্ঞাতনামা হয়ে দিল্লীতে তার করুণ মৃত্যু ঘটে। মৃতের শিয়রে পড়ে থাকা একটা পোটলায় পাওয়া যায় নবাব হিসেবে ব্যবহৃত মীর কাশেমের চাপকান। এ থেকেই জানা যায় মৃত ব্যক্তি বাংলার ভূতপূর্ব নবাব মীর কাশিম আলী খান।

এই ভাবেই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা পলাশী যুদ্ধের কিছুকালের মধ্যেই বিভিন্ন পন্থায় মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুমুখে পতিত হন। পলাশী ষড়যন্ত্রকারীদের ওপরে আল্লাহর গজব নাজিল হয়েছিল বলেই অনেকের ধারণা। আসলে এইসব ঘটনা থেকেই আমাদের অনেক কিছু শেখার বিষয় রয়েছে। (লেখাটি ডঃ মুহাম্মদ ফজলুল হক রচিত ‘বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ’ প্রকাশিতব্য গ্রন্থ থেকে)
 
.
পলাশী নাটকের গ্রীণরুমে

ডক্টর মোহর আলী লিখেছেন- দুই অপশক্তি অতি সন্তর্পণে এক অভিন্ন লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলে। উভয় দলের উদ্দেশ্যের ভিন্নতা থাকা সত্বেও তাদের লক্ষ্য ছিল এক। সেটা হলো সিরাজের পতন অনিবার্য করে তোলা। একটির উদ্দেশ্য ছিল শোষণ লুণ্ঠনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সাফল্যকে চূড়ান্ত করার জন্য ঔপনিবেশিক প্রভুত্বকে প্রতিষ্ঠিত করা। অন্যটির উদ্দেশ্য ছিল সিরাজের পতন ঘটিয়ে মুসলমানদের বিনাশ করে হিন্দুরাজ প্রতিষ্ঠা করা। তাদের একটা সহজ হিসেব ছিল মুসলমানরা ভারত বর্ষের যেখানেই প্রবেশ করেছে সেখানকার মাটি ও মানুষের সাথে একাকার হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের শিকড় অনেক গভীরে প্রথিত হয়ে যায়। এজন্য তাদের উৎখাত করা বর্ণ হিন্দুদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। এ কারণে তারা ভাবতে শুরু করল ইংরেজদের সাহায্য সহযোগিতায় মুসলমানদের পতন সম্ভব হলে কালক্রমে বৃটিশদের বিতাড়িত করা তাদের জন্য কঠিন হবে না। কেননা সাতসমুদ্র তের নদীর ওপার থেকে ভারতে তাদের প্রাধান্য বজায় রাখা বৃটিশদের পক্ষে অসম্ভব হওয়াই স্বাভাবিক। উভয় পক্ষই তাদের আপাত লক্ষ্য অর্জনের জন্য অভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। প্রথম বর্ণবাদী হিন্দুচক্র এবং বৃটিশ বেনিয়া নিজেদের মধ্যে সখ্যতা বৃদ্ধির প্রয়াস নেয় এবং নিজেদের কৌশল সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় করে। এই সাথে বিভিন্নভাবে গুজব ছড়িয়ে নবাবের চরিত্র হননের উদ্যোগ নেয়। সার্বিকভাবে নবাবের ছিদ্রান্বেষণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে উভয় পক্ষ।

তৎকালীন বাংলার পরিস্থিতির উপর আলোচনা রাখতে গিয়ে প্রফেসর এমাজউদ্দিন লিখেছেন- তৎকালীন সামাজিক পরিবেশও ছিল ষড়যন্ত্রের উপযোগী। তপনমোহন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “পশ্চিমবঙ্গে তখন বীরভূম ছাড়া আর সব বড় বড় জায়গাতেই হিন্দু জমিদার ছিল প্রতিষ্ঠিত। প্রকাশ্যে না হলেও ভিতরে ভিতরে প্রায় সব জমিদারই এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রধান নদীয়ার রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র রায়। বর্ধমানের রাজার পরই ধনে মানে কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নাম। বাংলার মহাজনদের মাথা জগৎশেঠদের বাড়ীর কর্তা মহাতাব চাঁদ। জগৎশেঠরা জৈন সম্প্রদায়ের লোক হলেও অনেকদিন ধরে বাংলায় পুরুষানুক্রমে থাকায় তাঁরা হিন্দু সমাজেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কর্মচারীদের পাণ্ডা হলেন রায় দুর্লভ রাম।... হুগলীতে রইলো নন্দকুমার।” জগৎশেঠ এবং উমিচাঁদের আশ্রিত ইয়ার লতিফ খাঁ আর একজন ষড়যন্ত্রকারী। সবার শীর্ষে ছিলেন আলীবর্দী খাঁর এক বৈমাত্রেয় ভগ্নীর স্বামী মীর জাফর আলী খাঁ। নবাব হবার বাসনা তার অনেক দিনের। বর্গীয় হাঙ্গামার সময় আলীবর্দী খাঁকে হত্যা করিয়ে বাংলার নবাবী গ্রহণের আকাঙ্খা তাঁর ছিল। শেষ পর্যন্ত সে চেষ্টা ফলবতী হয়নি। সিরাজউদ্দৌলা নবাব হলে জগৎশেঠ শওকত জঙ্গের সাথে মিলে ষড়যন্ত্রের আর এক গ্রন্থি রচনা করেন। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। এবারে জগৎশেঠ, ইয়ার লতিফ খাঁ, উমিচাঁদের সহযোগী হিসেবে মাঠে নামেন। সিরাজের সমর্থকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সেনা নায়ক মোহন লাল এবং মীর মদন বা মীর মর্দান (২৩ জুনের পূর্বে বাংলার ‘মুক্তির চুক্তি’ নামে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় মীর জাফর এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সাথে। অক্ষয় কুমার মৈত্রের রচিত মীর কাসিম গ্রন্থের ২২৩-২৪ পৃষ্ঠায় ১২ দফার এই চুক্তির বিবরণ রয়েছে। মীর জাফরের স্বাক্ষরে চুক্তিতে বলা হয় : ‘আমি আল্লাহর নামেও আল্লাহর রাসূলের নামে প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমার জীবনকালে আমি এই চুক্তিপত্রের শর্তবলী মানিয়া চলিব।’
আগে উল্লেখ করেছি ভারতের মারখাওয়া ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তি মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে কিভাবে সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী হচ্ছিল কিভাবে তারা তাদের লক্ষ্যের দিকে সন্তর্পণে এগুচ্ছিল সেটা সমকালীন প্রতিষ্ঠিত শাসকরা আঁচ করতে পারেনি। কারণ ব্রাহ্মণ্যবাদী কুচক্রীদের তোষামোদিতে সম্মোহিত হয়ে ছিল তারা। কিন্তু তৎকালীন পরিস্থিতি সংক্রান্ত গভীর উপলব্ধি ছিল বৃটিশদের। ১৭৫৪ সালে জনৈক ইংরেজ স্কটের পত্র থেকে সেটা জানা যায়। হিন্দু জমিদারদের মনোভাব সম্পর্কে তিনি লিখেন- ‘হিন্দু রাজা ও জমিদাররা মুসলিম শাসকদের প্রতি সর্বদা হিংসাত্মক ও বিদ্রোহী মনোভাব পোষণ করেন। গোপনে তারা মুসলিম শাসনের হাত থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে।’

একই সময় কোম্পানীর একজন মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ার তার বৃটিশ কর্তৃপক্ষের নিকট একটি রিপোর্ট পেশ করেন। তাতে তিনি লিখেছিলেন- ‘যদি ইউরোপীয় সেনাবাহিনী তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির লক্ষ্যে সঠিকভাবে হিন্দুদের উৎসাহিত করতে পারে তবে হিন্দুরা অবশ্যই যোগ দিবে তাদের সাথে, উমি চাঁদ ও তাদের সহযোগী হিন্দুরাজা ও সৈন্য বাহিনীর উপর যাদের আধিপত্য কাজ করছে তাদেরও টানা যাবে এ ষড়যন্ত্রে।’ কে কে দত্তের আলীবর্দী এন্ড ‘হিজ টাইম’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে- ‘১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংসহাসন চ্যুত করার ষড়যন্ত্র পাকিয়ে তুলেছিল হিন্দু জমিদার ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের জীবনী লেখক রাজীব লোচন লিখেছেন- ‘হিন্দু জমিদার ও প্রধানগণ সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন। [কে, কে. দত্ত. আলীবর্দী এন্ড হিজ টাইম, পৃঃ ১১৮]

পলাশী যুদ্ধের প্রাক্কালে ক্লাইভের সাথে বর্ধমান, দিনাজপুর ও নদীয়ার জমিদারদের পত্র যোগাযোগ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ মেলে যে, অগ্রিম আনুগত্য প্রকাশ করে তারা ক্লাইভকে যুদ্ধযাত্রার দাওয়াত জানান [শিরীন আক্তার]। নদীয়া, বর্ধমান, বিষ্ণুপুর, মেদিনীপুর, দিনাজপুর, বীরভূমের রাজা-মহারাজারা মুর্শিদাবাদ সমবেত হয়ে দেওয়ান-ই-সুবা মহারাজা মহেন্দ্রের কাছে অনেকগুলো দাবী পেশ করেন- তাদের ক্রমবর্ধিষ্ণু দাবী মিটাতে নবাব অপারগ হলে জগৎ শেঠের পরামর্শে তারা মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নেতৃত্বে-এক বৈঠকে মিলিত হয়ে সিরাজদ্দৌলাকে উৎখাতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সভার পক্ষে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র কোলকাতায় মিঃ ড্রেকের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার আহবান জানান এবং সর্বমুখী সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন। (Ierrititial Aristocracy of Bangla the Naelia Raj : C.R. 1872 1.V., 107-110.) সুবে বাংলার কুলিন বর্ণহিন্দু রাজা-মহারাজারা আলাবর্দীকে দিয়ে নবাব সরফরাজকে উচ্ছেদ করে যেরূপ ফায়দা হাসিল করেন, নবাব আলীবর্দীর মৃত্যু মুহূর্তেও তেমনি দেওয়ান রাজবল্লভের নেতৃত্বে তাদের একদল সিরাজের বড় খালা ঘষেটি বেগমকে উস্কানি দিয়ে, সসৈন্যে সাথে করে নিয়ে মুর্শিদাবাদ আক্রমণের জন্য নগরীর দ্বারপ্রান্তে হাজির করেন। সিরাজউদ্দৌলা তাঁর খালার মন জয় করে তার সমর্থন পেয়ে যাওয়ায় দিশেহারা দেওয়ান রাজবল্লভ নিজ পুত্র কৃষ্ণবল্লভকে দিয়ে নবাবের ঢাকাস্থ যাবতীয় অর্থবৃত্ত সম্পদ-সম্ভার কোলকাতায় ইংরেজদের আশ্রয়ে পাচার করে দেন। অন্যদিকে সিরাজের খালাতো ভাই পুর্নিয়ার গভর্নর শওকত জংকেও শ্যামসুন্দর বাবুরাই উস্কানি দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অবতীর্ণ করেন।

ইংরেজদের সাথে বিরোধের সূচনা
আসকার ইবনে শাইখ লিখেছেন- নবাব আলীবর্দী খানের শাসনামলে (১৭৪০-৫৬) ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভকে হিসাবপত্র নিরীক্ষণের জন্য কাগজপত্রসহ মুর্শিদাবাদ তলব করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে তহবিল তসরুফের প্রামাণ্য অভিযোগ ছিল। কিন্তু হিসাব পরীক্ষার পূর্বেই তিনি কাশিম বাজারে কুঠির প্রধান উইলিয়াম ওয়াটসের নিকট তাঁর পুত্র ও পরিজনের আশ্রয় প্রার্থনা করেন। রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণ দাস বা কৃষ্ণবল্লভ ৫৩,০০০০০ টাকা মূল্যের নগদ অর্থ ও সোনা রূপাসহ কলকাতায় আশ্রিত হন। এই কৃষ্ণবল্লভকে প্রত্যার্পণের জন্য নবাব দরবার হতে বার বার নির্দেশ ও তাগিদ দেয়া সত্বেও কোম্পানীর গভর্নর রজার ড্রেক তা পালন করতে অস্বীকার করেন। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ১৭৫৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে। নবাবের নিষেধ সত্বেও ইংরেজরা তাদের ফোর্ট উইলিয়াম (কলকাতায়) দুর্গটিকে সামরিক সাজে সজ্জিত করে তুলতে শুরু করে। বৃদ্ধ নবাব আলীবর্দী এ দুটি ঘটনার ‘প্রতিকার করে যেতে পারেননি।

নবাবী লাভ করেই সিরাজউদ্দৌলা কৃষ্ণবল্লভকে প্রত্যার্পণ করতে গভর্নর ড্রেককে এবং দুর্গ দেয়াল ভেঙ্গে পরিখা বন্ধ করে দিতে ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলকে নির্দেশ দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে নারায়ণ সিংহ নামক একজন বিশ্বস্ত দূতকে ইংরেজদের মনোভাব যাচাই করার জন্য কলকাতা পাঠালেন। কিন্তু ইংরেজরা নারায়ণ সিংহকে অপমান করে কলকাতা হতে তাড়িয়ে দেয়। নবাব আবার অন্যতম ব্যাংক ব্যবসায়ী খাজা ওয়াজিদকে একই উদ্দেশ্যে কলকাতা পাঠান। পরপর চার বার তিনি কলকাতা যান, কিন্তু ইংরেজরা তার সঙ্গেও সংযত আচরণ বা আপোষমূলক মনোভাব প্রদর্শন কোনটিই করেনি।
এভাবে নবাবের আন্তরিক সদিচ্ছা ব্যর্থ হবার ফলে তিনি দুর্লভরাম ও হুকুম বেগকে কাশিম বাজার কুঠি অবরোধের নির্দেশ দিলেন। মির মোহাম্মদ জো খান হুগলীতে জাহাজ নির্গমনের পথ রোধ করলেন এবং নবাবের উপস্থিতিতে কাশিম বাজারের পতন ঘটল। কুঠি প্রধান ওয়াট্স্ এবং কলেটকে সঙ্গে নিয়ে নবাব কলকাতার দিকে অগ্রসর হলেন। কাশিম বাজার অবরোধ ও পতনের মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে ইংরেজদের উপর চাপ সৃষ্টি করাই নবাবের উদ্দেশ্য ছিল। পরবর্তী ঘটনায় তার প্রমাণ মিলে। খাজা ওয়াজিদের মিশন ব্যর্থ হবার পর উর্মিচাঁদ ও শ্রীবাবু নামক জনৈক ব্যবসায়ী সমঝোতার প্রস্তাব দেন। মীমাংসায় আসার জন্য নবাবের নিকট একজন দূত পাঠাতে ড্রেককে অনুরোধ করে পত্র লেখেন উইলিয়াম ওয়াটস্ ও কলেট। এ পত্র পাঠান হয় ওলন্দাজ এজেন্ট বিসডোমের মাধ্যমে। ড্রেক তাও রক্ষা করেননি। অবশেষে ফরাসী দেশীয় ম্যাকুইস দ্যা সেন্ট জ্যাকুইস এর মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানো হয় কোলকাতায়। উত্তরে উদ্যত রজার ড্রেক প্রস্তাবকারীকে পক্ষ পরিবর্তনের উপদেশ দেন।
সুতরাং অনিবার্য হয়ে উঠল সংঘাত। ১৭৫৬ সালে ১৩ই জুন নবাব ফোর্ট উইলিয়মে পৌঁছান এবং যথারীতি কোলকাতা অবরুদ্ধ হয় ১৯ জুন। নাটকের উদ্ধৃত অহংকারী নায়ক রজার ড্রেক সঙ্গী মিনকিন, ম্যাকেট ও গ্রান্টসহ সগৌরবে পিছন দিকে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। সংগে সংগে ইংরেজ শিবিরে পলায়ন প্রক্রিয়া দ্রুত সংক্রমিত হয়ে পড়ে। এক ঘণ্টার মধ্যে ইংরেজদের সকল জাহাজ পলাতকদের নিয়ে ভাটির পথে পাড়ি জমায়...। ... ড্রেক ও অন্যান্যদের পলায়নের পর ফোর্ট উইলিয়ামের মাত্র আটজন যুদ্ধ পরিষদের সদস্য অবশিষ্ট রইল। তাদের মধ্যে হলওয়েল রজার ড্রেকের স্থলবর্তী গভর্নর নিয়োজিত হলেন। হলওয়েল পলায়নের কোন নৌকার অভাবেই কলকাতায় থেকে যেতে বাধ্য হন এবং তিনিই পরবর্তীকালে তথাকথিত কাল্পনিক অন্ধকুপ হত্যার গল্প কাহিনীর জন্ম দান করেন। হলওয়েল গভর্নর হয়ে এক দুপুর টিকে ছিলেন; তার পর আত্মসমর্পন ভিন্ন কিছুই আর তাঁর করবার রইল না। ২০ জুন বিকেল চারটায় কলকাতার পতন ঘটে।

১৭ জুলাই বন্দীদের নবাবের সামনে হাজির করা হয়। অন্যদিকে কাশিমবাজার ও কলকাতার পতন সংবাদ পর পর মাদ্রাজ পৌঁছে। ফলে প্রথমে মেজর কিলপেট্রিক-এর নেতৃত্বে দুটি জাহাজ এবং পরে রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে- প্রচুর সৈন্য, গোলাবারুদ ও সাজ-সরঞ্জামসহ বারটি জাহাজ পাঠান হয় বাংলায়। এই অভিযানের প্রধান দুটি উদ্দেশ্য নির্ধারিত হয়;

ক. নবাবের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে কোম্পানীর ইচ্ছানুরূপ ক্ষমতা পরিবর্তন।
খ. কোম্পানীর প্রতিদ্বন্দ্বী ফরাসীদের চন্দন নগর হতে উৎখাত। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলকে লিখিত মাদ্রাজের সেন্ট জর্জ কাউন্সিলের লিখিত পত্রে (১৩ অক্টোবর ১৭৫৬) ‘The sword should go hand in hand with the pen’ উপদেশের সঙ্গে সঙ্গে নবাবের বিরুদ্ধে যে কোন স্বার্থান্বেষী মহলের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করতে এবং ফরাসীদের চন্দন নগর হতে বিতাড়নের নির্দেশও দেয়া হয়।
২৫ ডিসেম্বর ফুলতা পৌঁছেই ক্লাইভ ও ওয়াট্সন ‘কলমের সঙ্গে সঙ্গে তরবারির মহড়া শুরু করেন। ৩০ ডিসেম্বর তাঁরা বজবজ দখল করেন এবং ২ জানুয়ারী (১৭৫৭) কলকাতা পুনরুদ্ধার করে ড্রেক ও তাঁর কাউন্সিল সদস্যদের ফোর্ট উইলিয়ামে প্রতিষ্ঠিত করেন। এই বিজয়ের গৌরবে ইংরেজেরা ৩ জানুযায়ী নবাব ও তাঁর দেশবাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসে। হুগলী শহরটি ব্যাপকভাবে লুণ্ঠিত হয় এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। সেদিনই নবাব তাঁর এক ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে হুগলীর উত্তরে পৌঁছেন। ইংরেজরা ফিরে যায় কলকাতা। ফরাসী ও ওলন্দাজেরা নবাব ও ইংরেজদের বিবাদে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ইংরেজেরা তাদের কাউকে বিশ্বাস না করে এবার খাজা ওয়াজিদের মাধ্যমে তাদের দাবীর কথা জানিয়ে দেয় ২২ জানুয়ারী। বলা হয়, কাশিমবাজার ও কলকাতা দখলের ক্ষতিপূরণ, ১৭১৭ সালের ফরমানানুযায়ী সকল সুবিধা, কলকাতায় সামরিক দুর্গ নির্মাণের অনুমতি এবং কোম্পানীর নিজস্ব মুদ্রা তৈরীর অধিকার দিতে হবে।

বৃটিশদের ঔদ্ধত্য ও আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের ফলে নওয়াব দারুণভাবে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ হন। ওদিকে শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভীর আমন্ত্রণে আফগান বীর ভারতবর্ষে আগমন করেন মূলত মারাঠা ঔদ্ধত্য গুড়িয়ে দেয়ার জন্য। তার আক্রমণের লক্ষ্য সুবাহ বাংলা ছিল না। কিন্তু দরবারের কুচক্রী সৃষ্ট আহমদ শাহ আবদালীর বাংলা আক্রমণ সংক্রান্ত গুজব নতুন আশঙ্কার জন্ম দেয়। এ আশঙ্কা নবাবকে অনেকটা হত বিহবল করে ফেলে। উদ্বিগ্ন নবাব আবদালীর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেন। সে সময় ইংরেজদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ্য আচরণ নবাবের কাছে গৌণ বলে অনুভূত হয়। নবাব ইংরেজদের সাথে আপোষের কথা ভাবতে থাকেন, এই কারণে যেন আবদালীর আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে মনযোগী হতে পারেন। ওদিকে নবাবের উপর চূড়ান্ত আঘাত হানার উদ্দেশে নবাব বিরোধী ষড়যন্ত্র পোক্ত হওয়ার জন্য ইংরেজদেরও সময়ের প্রয়োজন ছিল। উভয়ের প্রয়োজনে ১৭৫৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী নবাব ও ইংরেজদের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই সন্ধির পর নবাব আফগান আক্রমণ প্রতিরোধে মনোযোগী হলেন। এই অবকাশে ইংরেজরা একদিকে নবাবের পারিষদবর্গ ও সেনানায়কদের প্রলুব্ধ ও প্রভাবিত করার সুযোগ পেল এবং অন্যদিকে ফরাসীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ল সম্ভাব্য বিপর্যয় নাটকের দৃশ্য থেকে ফরাসীদের বিদায় করার জন্য। বাংলার প্রেক্ষিত নয় আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সামনে এনে ইঙ্গ ফরাসী যুদ্ধের দোহাই পেড়ে ইংরেজরা ১৪ মার্চ ফরাসী অধ্যুষিত চন্দন নগর অবরোধ করে।

(১৭৫৭) চন্দন নগর অবরোধের সংবাদ পেয়ে নবাব দুর্লভরাম ও নন্দকুমারকে আবার ফরাসীদের সাহায্যের জন্য পাঠান। ইংরেজদের দেয়া ঘুষে এবারও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। ২৩ মার্চ চন্দন নগরের পতন ঘটে। ফরাসীরা বাংলায় তাদের সবগুলো কুঠি ইংরেজদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। তাদের কিছু সৈন্য কাশিম বাজারে পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করে, কিছু প্রাণ দেয়, কিছু বন্দী হয়। ইংরেজদের পক্ষে যুদ্ধ করে নিহত দেশীয় সিপাহীদের ইংরেজ সেবার নিদর্শন স্বরূপ জনপ্রতি দশ টাকা করে পুরস্কার দেয়া হয়।

ডক্টর মোহর আলী লিখেছেন- ‘ইংরেজদের চন্দন নগর আক্রমণের প্রাক্কালে নবাব তাদের প্রতিরোধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন, কিন্তু বিপুল পরিমাণ ঘুষের বিনিময়ে প্রতিরোধ বাহিনীর নেতা নন্দকুমার বিশ্বাসঘাতকতা করেন এবং রায় দুর্লভ রাম ইংরেজদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণে সিরাজকে বাধা দিতে থাকেন। ক্ষমতা লাভের ছয় মাসের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল পরিপক্ক হয়ে ওঠে। এই লোকগুলোর সহযোগিতায় ক্লাইভ খুব সহজেই নবাব প্রশাসনকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিকল করে ফেলেন এবং নবাবের গোপন কাগজ ও চিঠিপত্র হস্তগত করেন। নবাব এসব ষড়যন্ত্রের সবকিছু জানতে পারেন। কিন্তু ব্যাপক বিস্তৃত এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তখন তাঁর কিছুই করার ছিলো না। কারণ, তিনি কাউকেই বিশ্বাসযোগ্য বিবেচনা করতে পারেননি।’ প্রফেসর আব্দুর রহিম লিখেছেন, ২৩ এপ্রিল (১৭৫৭) ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কোলকাতা কাউন্সিল নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসন চ্যুত করার জন্য একটি প্রস্তাব পাস করে। হিল লিখেছেন যে, ক্লাইভ উমিচাঁদকে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করেন।’

অন্যদিকে ডক্টর মোহর আলী- ১৭৫৭ সালের পয়লা মে অনুষ্ঠিত ফোর্ট উইলিয়াম সিলেক্ট কমিটির বিবরণ দিয়ে লিখেছেন- ‘সিরাজকে উৎখাতের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের হীন পকিল্পনার পক্ষে যে সকল যুক্তি দাঁড় করায় তা হচ্ছে-
(ক) সিরাজ অসৎ এবং ইংরেজদের নির্যাতনকারী।
(খ) তিনি ফরাসীদের সঙ্গে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, যার অর্থ হচ্ছে ইংরেজদের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ এবং
(গ) সিরাজ বাঙ্গালীদের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছেন- যার ফলে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সহজেই ঘটতে পারে।

এই পরিকল্পনা গ্রহণের পর মুর্শিদাবাদের অদূরে পলাশী প্রান্তরে ক্লাইভ তাঁর সৈন্য সমাবেশ শুরু করেন। মীর জাফর ও দুর্লভ রামের নেতৃত্বে নবাব ১৫,০০০ হাজার সৈন্যের এক বাহিনী প্রেরণ করেন। এদিকে মুর্শিদাবাদের ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটস তখনই যুদ্ধ না বাঁধিয়ে সৈন্য প্রত্যাহার করে কলকাতায় সুযোগের প্রতীক্ষা করতে ক্লাইভকে উপদেশ দেন। ক্লাইভ তা মেনে নেন এবং নবাবকেও তাঁর সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। ইংরেজদের আচরণ নবাবের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে; তিনি তাঁর বাহিনী অপসারণের নির্দেশ দিলেন। ক্লাইভ তাঁদের আচরণের সততার প্রতি নবাবের সন্দেহ দূর করার জন্য এক কুটচাল চালেন। মারাঠাদের লিখা এক চিঠি দিয়ে তিনি স্ক্রেফ্টনকে মুর্শিদাবাদ পাঠান। এ চিঠিতে ইংরেজ ও মারাঠাদের মধ্যে বাংলাকে ভাগ করে নেবার প্রস্তাব ছিল। এবার নবাব ইংরেজদের বিশ্বাস করলেন এবং তার বাহিনীকে মুর্শিদাবাদ ফিরে আসার নির্দেশ দিলেন।

‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাঁহার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথা জানিতে পারেন। তিনি মীর জাফরকে প্রধান সেনাপতির পদ হইতে অপসারিত করেন এবং আবদুল হাদী খানকে সে পদে নিয়োগ করেন। আবদুল হাদী ও মীর মদন মীর জাফরকে ধ্বংস করিবার জন্য নবাবকে পরামর্শ দেন। কিন্তু জগৎশেঠ ও অন্যান্য বিশ্বাসঘাতক উপদেষ্টাগণ নবাবকে পরামর্শ দেন যে, ইংরেজদের বিরুদ্ধে শক্তিবৃদ্ধির জন্য মীর জাফরের সহযোগিতা লাভ করা নবাবের পক্ষে সুবিবেচনার কাজ হইবে। নবাব তাহাদের উপদেশ গ্রহণ করেন। তিনি মীর জাফরের বাড়ীতে গিয়ে নবাব আলীবর্দীর নামে তাঁহার নিকট ইংরেজদের বিরুদ্ধে সাহায্যের জন্য মর্মস্পশী আবেদন জানান। পবিত্র কুরআন হাতে লইয়া মীর জাফর এই সময় অঙ্গীকার করেন যে, তিনি নবাবের জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবেন। (প্রফেসর আব্দুর রহিম)

সাময়িক পদচ্যুতির অপমানে মীর জাফর দারুণভাবে প্রতিহিংসা পরায়ণ ও ক্রোধান্ধ হয়ে উঠলেন। সিরাজের আশু পতন অনিবার্য করে তোলার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নিলেন। মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করার জন্য বার বার ক্লাইভের নিকট বার্তা প্রেরণ করে তাগাদা দিতে থাকেন। এমন মাহেন্দ্রক্ষণের প্রতীক্ষায় ছিলেন ক্লাইভ। এই সুযোগে তিনি আরো অতিরিক্ত শর্ত যুক্ত করলেন। পরিণতির কথা না ভেবেই মীর জাফর সব দাবী অকপটে মেনে নিলেন। জগৎশেঠের প্রোথিত বিষাক্ত বীজ অঙ্কুর থেকে বৃক্ষে পরিণত হল, অতঃপর মহীরুহে। ম্লেচ্ছ যবন মুসলিম শাসনের অবসান ঘটিয়ে নব উত্থান সম্ভাবনায় ব্রাহ্মণ্যবাদীরা উদ্বেলিত হয়ে উঠল।

‘অতঃপর ষড়যন্ত্রকারীগণ জগৎশেঠের বাড়িতে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, রায়দুর্লভ, মীর জাফর, রাজবল্লভ এবং আরও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এই বৈঠকে যোগ দেন। ইংরাজ কোম্পানীর এজেন্ট ওয়াটস মহিলাদের মত পর্দা-ঘেরা পাল্কিতে জগৎশেঠের বাড়িতে আসেন। এই বৈঠকে সিরাজউদ্দৌলাকে সরাইয়া মীর জাফরকে বাংলার মসনদে বসাইবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ওয়াটস এই কাজে ইংরেজদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। ইহার পর কোম্পানীর প্রধানগণ চুক্তিপত্রের খসড়া প্রস্তুত করেন এবং ১৯মে ইহাতে দস্তখত করেন। মীর জাফরসহ ৪ জন চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। চুক্তির শর্তানুযায়ী ইংরাজদের সৈন্য সাহায্যের বিনিময়ে মীর জাফর তাহাদিগকে কয়েকটি বাণিজ্য-সুবিধা দিতে স্বীকার করেন। তাহা ছাড়া তিনি ইংরেজ সৈন্যদের ব্যয়ভার বহন করিতে এবং কোম্পানীকে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ দুই কোটি টাকা দিতে সম্মত হন। নবাবের কোষাগার হইতে উমিচাঁদকে ২০ লক্ষ টাকা দেওয়া হইবে বলিয়া বলা হয়। উমিচাঁদকে প্রতারিত করিবার জন্য ক্লাইভ চুক্তিপত্রের দুইটি খসড়া প্রস্তুত করেন। আসল খসড়ায় উমিচাঁদকে টাকা দেয়ার শর্তের উল্লেখ করা হয় নাই। নকল খসড়ায় এই শর্তটি লিখিত হয়। ইহার দস্তখতগুলি সবই ক্লাইভ জাল করিয়াছিলেন। রায়দুর্লভকেও লুটের মালের কিয়দংশ দেওয়া হইবে বলিয়া প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। (প্রফেসর আব্দুর রহিম)

৪ জুনের স্বাক্ষরিত চুক্তিটি ছিল নিম্নরূপ :
“আমি আল্লাহর নামে ও আল্লাহর রাসূলের নামে প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে, আমার জীবনকালে আমি এই চুক্তিপত্রের শর্তাবলী মানিয়া চলিব।
ধারা-১ :নবাব সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে শান্তিচুক্তির যেসব ধারায় সম্মতি দান করিয়াছি, আমি সেসব ধারা মানিয়া চলিতে সম্মত হইলাম।
ধারা-২ :ইংরেজদের দুশমন আমারও দুশমন, তাহারা ভারতবাসী হোক অথবা ইউরোপীয়।
ধারা-৩ :জাতিসমূহের স্বর্গ বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় ফরাসীদের সকল সম্পত্তি এবং ফ্যাক্টরীগুলো ইংজেরদের দখলে থাকিবে এবং কখনো তাহাদিগকে (ফরাসীদেরকে) ওই তিনটি প্রদেশে আর কোন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করিতে দিব না।
ধারা-৪ :নবাব সিরাজ কর্তৃক কলিকাতা দখল ও লুণ্ঠনের ফলে ইংরেজ কোম্পানী যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হইয়াছে তাহার বিবেচনায় এবং তন্নিমিত্ত মোতায়েনকৃত সেনাবাহিনীর জন্য ব্যয় নির্বাহ বাবদ আমি তাহাদিগকে এক ক্রোর তঙ্কা প্রদান করিব।
ধারা-৫ :কলিকাতার ইংরেজ অধিবাসীদের মালামাল লূণ্ঠনের জন্য আমি তাহাদিগকে পঞ্চাশ লক্ষ তঙ্কা প্রদান করিতে সম্মত হইলাম।
ধারা-৬ :কলিকাতার জেন্টু (হিন্দু), মূর (মুসলমান) এবং অন্যান্য অধিবাসীকে প্রদান করা হইবে বিশ লক্ষ তঙ্কা। (ইংরেজরা হিন্দুদেরকে জেন্টু’ এবং মুসলমানাদের ‘মূর’ ও ‘মেহোমেটান’ বলে চিহ্নিত করতো)
ধারা-৭ :কলিকাতার আর্মেনীয় অধিবাসীদের মালামাল লুণ্ঠনের জন্য তাহাদিগকে প্রদান করা হইবে সাত লক্ষ তঙ্কা। ইংরেজ, জেন্টু, মূর এবং কলিকাতার অন্যান্য অধিবাসীকে প্রদেয় তঙ্কার বিতরণভার ন্যস্ত রহিল এডমিরাল ওয়াটসন, কর্নেল ক্লাইভ, রজার ড্রেক, উইলিয়াম ওয়াটস, জেমস কিলপ্যাট্রিক এবং রিচার্ড বীচার মহোদয়গণের উপর। তাঁহারা নিজেদের বিবেচনায় যাহার যেমন প্রাপ্য তাহা প্রদান করিবেন।
ধারা-৮ :কলিকাতার বর্ডার বেষ্টনকারী মারাঠা ডিচের মধ্যে পড়িয়াছে কতিপয় জমিদারের কিছু জমি; ওই জমি ছাড়াও আমি মারাঠা ডিচের বাইরে ৬০০ গজ ইংরেজ কোম্পানীকে দান করিব।
ধারা-৯ :কল্পি পর্যন্ত কলিকাতার দক্ষিণস্থ সব জমি ইংরেজ কোম্পানীর জমিদারীর অধীনে থাকিবে এবং তাহাতে অবস্থিত যাবতীয় অফিসাদি কোম্পানীর আইনগত অধিকারে থাকিব।
ধারা-১০ : আমি যখনই কোম্পানীর সাহায্য দাবি করিব, তখনই তাহাদের বাহিনীর যাবতীয় খরচ বহনে বাধ্য থাকিব।
ধারা-১১ : হুগলীর সন্নিকটে গঙ্গা নদীর নিকটে আমি কোন নতুন দুর্গ নির্মাণ করিব না।
ধারা-১২ : তিনটি প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হইবামাত্র আমি উপরিউক্ত সকল তঙ্কা বিশ্বস্তভাবে পরিশোধ করিব।

২৩ জুন ১৭৫৭ মীর জাফরের সাময়িক পদচ্যুতির মাত্র একমাসের ব্যবধানে সমাগত হল সিরাজের অন্তিম পর্ব। পলাশীতে সৈন্য সমাবেশ হল নবাব এবং ক্লাইভ উভয় পক্ষের। নবাবের পক্ষে সৈন্য সংখ্যা ৫০ হাজার, এর মধ্যে পদাতিক ৩৫ হাজার অশ্বারোহী ১৫ হাজার। ক্লাইভের পক্ষে ছিল মাত্র ৩ হাজার দেশী বিদেশী সম্মিলিত ভাবে।
২৩ জুনের পূর্বে বাংলার মুক্তি চুক্তি নামে ১২ দফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় মীর জাফর ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মধ্যে, তাতে মীরজাফরের পক্ষ থেকে বলা হয় : আমি আল্লাহর নামেও আল্লাহর রাসূলের নামে প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমার জীবনকালে আমি এই চুক্তিপত্র মানিয়া চলিব।

এই মুক্তির চুক্তি মীর জাফর সত্যি আক্ষরিকভাবে অনুসরণ করেছিলেন। প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব নিয়ে তিনি রনাঙ্গনে ছবির মত দাঁড়িয়ে ছিলেন। দাঁড়িয়েছিল তার বাহিনী। তিনি প্রধান সেনাপতি হয়ে নবাবের পতন উপভোগ করলেন প্রাণভরে। মুর্শিদাবাদের পতন হল। পুনরুদ্ধারের আশায় নবাব ছুটে চললেন বিহারে তার অনুগত বাহিনীর নিকট। তার আশা পূর্ণ হলো না। পথে গ্রেপ্তার হলেন। মীরজাফর তনয় মিরন তাকে নির্মমভাবে হত্যা করল। তার রক্তপাতের মধ্য দিয়ে সমগ্র সুবাহ বাংলার স্বাধীনতা ১৯০ বছরের জন্য মহাকালের অন্ধকারে হারিয়ে গেল। সমগ্র জাতি শৃংখলিত হল ঔপনিবেশিক অক্টোপাসে। সে ইতিহাসও অতি মর্মান্তিক। ব্রাহ্মণ্যবাদী চক্রের ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। সিরাজের পতনের মধ্যে তারা দেখতে পেল তাদের উত্থান সম্ভাবনা।


Do you want to know about the origin of durga puja. Just click the following:
Durga Puja - Wikipedia, the free encyclopedia


Origin of the autumnal ceremony 'Sharadiya'
undefined
Old painting of Durga Puja in Kolkata at Shobhabazar Rajbari

The actual worship of the Goddess Durga as stipulated by the Hindu
scriptures falls in the month of Chaitra, which roughly overlaps with
March or April. This ceremony is however not observed by many and is
restricted to a handful in the state of West Bengal.

The more popular form, which is also known as Sharadiya (Autumnal)
Durga Puja, is celebrated later in the year with the dates falling
either in September or October. Since the Goddess is invoked at the
wrong time, it is called "Akaal Bodhon" in Bengali.

While the most recent revival of the Autumnal worship of Goddess Durga
can be traced to revivalist tendencies in the early freedom movement
in Bengal, the first such Puja was organised by Raja Nabakrishna Deb
of the Shobhabazar Rajbari of Calcutta in honour of Lord Clive in the
year 1757. The puja was organised because Clive wished to pay thanks
for his victory in the Battle of Plassey. He was unable to do so in a
Church because the only church in Calcutta at that time was destroyed
by Siraj-ud-Daulah. Indeed many wealthy mercantile and Zamindar
families in Bengal made British Officers of the East India Company
guests of honour in the Pujas. The hosts vied with one another in
arranging the most sumptuous fares, decorations and entertainment for
their guests. This was deemed necessary since the Company was in
charge of a large part of India including Bengal after the battles of
Plassey and Buxar.[13]




If the above information is correct what will you say? I can conclude
the following that: Durga Puja is the marking ceremony of the defeat
of the Great son of our soil Shiraz Ud Daola and us by the
collaborators of the nation. What a shame! How can the defeat of a
nation be a part of religion? Shame! Shame! Shame! Raja Naba Krishna
Deb was a bustard of the nation who was in the administration of
Shiraz Ud Daola, but worked for British as a pet dog of the British.
He is the pioneer of Sharadiya Durga Puja to praise the animal British
as pet dog, bustard of the nation. If the true history is addressed to
the nation, the collaborators must be
vanquished from history. You can check the validity of my information.


Second point: Origin of Bashanti Durga Puja:

It is also the story of the collaborators. In this case,
Kangshanarayan( another bustard of the nation) play the role.
Kangshanarayan was in the administration of our the Great Sultan of
Independent Sultanate of Banglastan Munim Khan( great patriotic
soldier of the Bengali nation). Bustard Kangshanarayan worked for the
Animal Mughal to remove the independent Sultanate of the Greater
Bangladesh in 1576 in Rajmahal( Now it is in India) as a pet dog of
Mughal. He was a betrayer and bustard of the nation. With the Mughal
help he introduced the Bashanti Durga Puja as the marking ceremony of
the destruction of Independent Sultanate of Greater Bangladesh. Shame!
Shame! Bashanti Durga Puja is the marking ceremony of the defeat of
the Great son of our soil Munim Khan and us by the collaborators of
the nation. What a shame! How can the defeat of a nation be a part of
religion?

You can check the validity of my information. If the true history is
addressed to the nation, the collaborators must be
vanquished from history.



Please, know the true history. Hate the collaborators of the nation
who also played with the religious matters of the nation and made the
religious matters as so funny!


I hope everybody will understand the true history of the nation. Thus
our two great sons of our soil Sultan Munim Khan and Nabob Shiraz Ud
Daola will get some peace in mind by thinking that their sons are
recognizing their great sacrifices to the nation which are the source
of the inspirations for our independent existence.


Good luck.

---------- Post added at 03:01 PM ---------- Previous post was at 02:59 PM ----------

পলাশী নাটকের গ্রীণরুমে

ডক্টর মোহর আলী লিখেছেন- দুই অপশক্তি অতি সন্তর্পণে এক অভিন্ন লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে চলে। উভয় দলের উদ্দেশ্যের ভিন্নতা থাকা সত্বেও তাদের লক্ষ্য ছিল এক। সেটা হলো সিরাজের পতন অনিবার্য করে তোলা। একটির উদ্দেশ্য ছিল শোষণ লুণ্ঠনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সাফল্যকে চূড়ান্ত করার জন্য ঔপনিবেশিক প্রভুত্বকে প্রতিষ্ঠিত করা। অন্যটির উদ্দেশ্য ছিল সিরাজের পতন ঘটিয়ে মুসলমানদের বিনাশ করে হিন্দুরাজ প্রতিষ্ঠা করা। তাদের একটা সহজ হিসেব ছিল মুসলমানরা ভারত বর্ষের যেখানেই প্রবেশ করেছে সেখানকার মাটি ও মানুষের সাথে একাকার হয়ে যাওয়ার কারণে তাদের শিকড় অনেক গভীরে প্রথিত হয়ে যায়। এজন্য তাদের উৎখাত করা বর্ণ হিন্দুদের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। এ কারণে তারা ভাবতে শুরু করল ইংরেজদের সাহায্য সহযোগিতায় মুসলমানদের পতন সম্ভব হলে কালক্রমে বৃটিশদের বিতাড়িত করা তাদের জন্য কঠিন হবে না। কেননা সাতসমুদ্র তের নদীর ওপার থেকে ভারতে তাদের প্রাধান্য বজায় রাখা বৃটিশদের পক্ষে অসম্ভব হওয়াই স্বাভাবিক। উভয় পক্ষই তাদের আপাত লক্ষ্য অর্জনের জন্য অভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। প্রথম বর্ণবাদী হিন্দুচক্র এবং বৃটিশ বেনিয়া নিজেদের মধ্যে সখ্যতা বৃদ্ধির প্রয়াস নেয় এবং নিজেদের কৌশল সংক্রান্ত তথ্য বিনিময় করে। এই সাথে বিভিন্নভাবে গুজব ছড়িয়ে নবাবের চরিত্র হননের উদ্যোগ নেয়। সার্বিকভাবে নবাবের ছিদ্রান্বেষণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে উভয় পক্ষ।

তৎকালীন বাংলার পরিস্থিতির উপর আলোচনা রাখতে গিয়ে প্রফেসর এমাজউদ্দিন লিখেছেন- তৎকালীন সামাজিক পরিবেশও ছিল ষড়যন্ত্রের উপযোগী। তপনমোহন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “পশ্চিমবঙ্গে তখন বীরভূম ছাড়া আর সব বড় বড় জায়গাতেই হিন্দু জমিদার ছিল প্রতিষ্ঠিত। প্রকাশ্যে না হলেও ভিতরে ভিতরে প্রায় সব জমিদারই এই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রধান নদীয়ার রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র রায়। বর্ধমানের রাজার পরই ধনে মানে কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নাম। বাংলার মহাজনদের মাথা জগৎশেঠদের বাড়ীর কর্তা মহাতাব চাঁদ। জগৎশেঠরা জৈন সম্প্রদায়ের লোক হলেও অনেকদিন ধরে বাংলায় পুরুষানুক্রমে থাকায় তাঁরা হিন্দু সমাজেরই অন্তর্ভুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কর্মচারীদের পাণ্ডা হলেন রায় দুর্লভ রাম।... হুগলীতে রইলো নন্দকুমার।” জগৎশেঠ এবং উমিচাঁদের আশ্রিত ইয়ার লতিফ খাঁ আর একজন ষড়যন্ত্রকারী। সবার শীর্ষে ছিলেন আলীবর্দী খাঁর এক বৈমাত্রেয় ভগ্নীর স্বামী মীর জাফর আলী খাঁ। নবাব হবার বাসনা তার অনেক দিনের। বর্গীয় হাঙ্গামার সময় আলীবর্দী খাঁকে হত্যা করিয়ে বাংলার নবাবী গ্রহণের আকাঙ্খা তাঁর ছিল। শেষ পর্যন্ত সে চেষ্টা ফলবতী হয়নি। সিরাজউদ্দৌলা নবাব হলে জগৎশেঠ শওকত জঙ্গের সাথে মিলে ষড়যন্ত্রের আর এক গ্রন্থি রচনা করেন। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। এবারে জগৎশেঠ, ইয়ার লতিফ খাঁ, উমিচাঁদের সহযোগী হিসেবে মাঠে নামেন। সিরাজের সমর্থকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন সেনা নায়ক মোহন লাল এবং মীর মদন বা মীর মর্দান (২৩ জুনের পূর্বে বাংলার ‘মুক্তির চুক্তি’ নামে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় মীর জাফর এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর সাথে। অক্ষয় কুমার মৈত্রের রচিত মীর কাসিম গ্রন্থের ২২৩-২৪ পৃষ্ঠায় ১২ দফার এই চুক্তির বিবরণ রয়েছে। মীর জাফরের স্বাক্ষরে চুক্তিতে বলা হয় : ‘আমি আল্লাহর নামেও আল্লাহর রাসূলের নামে প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমার জীবনকালে আমি এই চুক্তিপত্রের শর্তবলী মানিয়া চলিব।’
আগে উল্লেখ করেছি ভারতের মারখাওয়া ব্রাহ্মণ্যবাদী শক্তি মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে কিভাবে সংঘবদ্ধ ও শক্তিশালী হচ্ছিল কিভাবে তারা তাদের লক্ষ্যের দিকে সন্তর্পণে এগুচ্ছিল সেটা সমকালীন প্রতিষ্ঠিত শাসকরা আঁচ করতে পারেনি। কারণ ব্রাহ্মণ্যবাদী কুচক্রীদের তোষামোদিতে সম্মোহিত হয়ে ছিল তারা। কিন্তু তৎকালীন পরিস্থিতি সংক্রান্ত গভীর উপলব্ধি ছিল বৃটিশদের। ১৭৫৪ সালে জনৈক ইংরেজ স্কটের পত্র থেকে সেটা জানা যায়। হিন্দু জমিদারদের মনোভাব সম্পর্কে তিনি লিখেন- ‘হিন্দু রাজা ও জমিদাররা মুসলিম শাসকদের প্রতি সর্বদা হিংসাত্মক ও বিদ্রোহী মনোভাব পোষণ করেন। গোপনে তারা মুসলিম শাসনের হাত থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে।’

একই সময় কোম্পানীর একজন মিলিটারী ইঞ্জিনিয়ার তার বৃটিশ কর্তৃপক্ষের নিকট একটি রিপোর্ট পেশ করেন। তাতে তিনি লিখেছিলেন- ‘যদি ইউরোপীয় সেনাবাহিনী তাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধির লক্ষ্যে সঠিকভাবে হিন্দুদের উৎসাহিত করতে পারে তবে হিন্দুরা অবশ্যই যোগ দিবে তাদের সাথে, উমি চাঁদ ও তাদের সহযোগী হিন্দুরাজা ও সৈন্য বাহিনীর উপর যাদের আধিপত্য কাজ করছে তাদেরও টানা যাবে এ ষড়যন্ত্রে।’ কে কে দত্তের আলীবর্দী এন্ড ‘হিজ টাইম’ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে- ‘১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংসহাসন চ্যুত করার ষড়যন্ত্র পাকিয়ে তুলেছিল হিন্দু জমিদার ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের জীবনী লেখক রাজীব লোচন লিখেছেন- ‘হিন্দু জমিদার ও প্রধানগণ সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন। [কে, কে. দত্ত. আলীবর্দী এন্ড হিজ টাইম, পৃঃ ১১৮]

পলাশী যুদ্ধের প্রাক্কালে ক্লাইভের সাথে বর্ধমান, দিনাজপুর ও নদীয়ার জমিদারদের পত্র যোগাযোগ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ মেলে যে, অগ্রিম আনুগত্য প্রকাশ করে তারা ক্লাইভকে যুদ্ধযাত্রার দাওয়াত জানান [শিরীন আক্তার]। নদীয়া, বর্ধমান, বিষ্ণুপুর, মেদিনীপুর, দিনাজপুর, বীরভূমের রাজা-মহারাজারা মুর্শিদাবাদ সমবেত হয়ে দেওয়ান-ই-সুবা মহারাজা মহেন্দ্রের কাছে অনেকগুলো দাবী পেশ করেন- তাদের ক্রমবর্ধিষ্ণু দাবী মিটাতে নবাব অপারগ হলে জগৎ শেঠের পরামর্শে তারা মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নেতৃত্বে-এক বৈঠকে মিলিত হয়ে সিরাজদ্দৌলাকে উৎখাতের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সভার পক্ষে মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র কোলকাতায় মিঃ ড্রেকের সাথে সাক্ষাৎ করে তাকে নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার আহবান জানান এবং সর্বমুখী সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন। (Ierrititial Aristocracy of Bangla the Naelia Raj : C.R. 1872 1.V., 107-110.) সুবে বাংলার কুলিন বর্ণহিন্দু রাজা-মহারাজারা আলাবর্দীকে দিয়ে নবাব সরফরাজকে উচ্ছেদ করে যেরূপ ফায়দা হাসিল করেন, নবাব আলীবর্দীর মৃত্যু মুহূর্তেও তেমনি দেওয়ান রাজবল্লভের নেতৃত্বে তাদের একদল সিরাজের বড় খালা ঘষেটি বেগমকে উস্কানি দিয়ে, সসৈন্যে সাথে করে নিয়ে মুর্শিদাবাদ আক্রমণের জন্য নগরীর দ্বারপ্রান্তে হাজির করেন। সিরাজউদ্দৌলা তাঁর খালার মন জয় করে তার সমর্থন পেয়ে যাওয়ায় দিশেহারা দেওয়ান রাজবল্লভ নিজ পুত্র কৃষ্ণবল্লভকে দিয়ে নবাবের ঢাকাস্থ যাবতীয় অর্থবৃত্ত সম্পদ-সম্ভার কোলকাতায় ইংরেজদের আশ্রয়ে পাচার করে দেন। অন্যদিকে সিরাজের খালাতো ভাই পুর্নিয়ার গভর্নর শওকত জংকেও শ্যামসুন্দর বাবুরাই উস্কানি দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে অবতীর্ণ করেন।

ইংরেজদের সাথে বিরোধের সূচনা
আসকার ইবনে শাইখ লিখেছেন- নবাব আলীবর্দী খানের শাসনামলে (১৭৪০-৫৬) ঢাকার দেওয়ান রাজবল্লভকে হিসাবপত্র নিরীক্ষণের জন্য কাগজপত্রসহ মুর্শিদাবাদ তলব করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে তহবিল তসরুফের প্রামাণ্য অভিযোগ ছিল। কিন্তু হিসাব পরীক্ষার পূর্বেই তিনি কাশিম বাজারে কুঠির প্রধান উইলিয়াম ওয়াটসের নিকট তাঁর পুত্র ও পরিজনের আশ্রয় প্রার্থনা করেন। রাজবল্লভের পুত্র কৃষ্ণ দাস বা কৃষ্ণবল্লভ ৫৩,০০০০০ টাকা মূল্যের নগদ অর্থ ও সোনা রূপাসহ কলকাতায় আশ্রিত হন। এই কৃষ্ণবল্লভকে প্রত্যার্পণের জন্য নবাব দরবার হতে বার বার নির্দেশ ও তাগিদ দেয়া সত্বেও কোম্পানীর গভর্নর রজার ড্রেক তা পালন করতে অস্বীকার করেন। দ্বিতীয় ঘটনাটি ঘটে ১৭৫৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে। নবাবের নিষেধ সত্বেও ইংরেজরা তাদের ফোর্ট উইলিয়াম (কলকাতায়) দুর্গটিকে সামরিক সাজে সজ্জিত করে তুলতে শুরু করে। বৃদ্ধ নবাব আলীবর্দী এ দুটি ঘটনার ‘প্রতিকার করে যেতে পারেননি।

নবাবী লাভ করেই সিরাজউদ্দৌলা কৃষ্ণবল্লভকে প্রত্যার্পণ করতে গভর্নর ড্রেককে এবং দুর্গ দেয়াল ভেঙ্গে পরিখা বন্ধ করে দিতে ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলকে নির্দেশ দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে নারায়ণ সিংহ নামক একজন বিশ্বস্ত দূতকে ইংরেজদের মনোভাব যাচাই করার জন্য কলকাতা পাঠালেন। কিন্তু ইংরেজরা নারায়ণ সিংহকে অপমান করে কলকাতা হতে তাড়িয়ে দেয়। নবাব আবার অন্যতম ব্যাংক ব্যবসায়ী খাজা ওয়াজিদকে একই উদ্দেশ্যে কলকাতা পাঠান। পরপর চার বার তিনি কলকাতা যান, কিন্তু ইংরেজরা তার সঙ্গেও সংযত আচরণ বা আপোষমূলক মনোভাব প্রদর্শন কোনটিই করেনি।
এভাবে নবাবের আন্তরিক সদিচ্ছা ব্যর্থ হবার ফলে তিনি দুর্লভরাম ও হুকুম বেগকে কাশিম বাজার কুঠি অবরোধের নির্দেশ দিলেন। মির মোহাম্মদ জো খান হুগলীতে জাহাজ নির্গমনের পথ রোধ করলেন এবং নবাবের উপস্থিতিতে কাশিম বাজারের পতন ঘটল। কুঠি প্রধান ওয়াট্স্ এবং কলেটকে সঙ্গে নিয়ে নবাব কলকাতার দিকে অগ্রসর হলেন। কাশিম বাজার অবরোধ ও পতনের মাধ্যমে সমঝোতায় আসতে ইংরেজদের উপর চাপ সৃষ্টি করাই নবাবের উদ্দেশ্য ছিল। পরবর্তী ঘটনায় তার প্রমাণ মিলে। খাজা ওয়াজিদের মিশন ব্যর্থ হবার পর উর্মিচাঁদ ও শ্রীবাবু নামক জনৈক ব্যবসায়ী সমঝোতার প্রস্তাব দেন। মীমাংসায় আসার জন্য নবাবের নিকট একজন দূত পাঠাতে ড্রেককে অনুরোধ করে পত্র লেখেন উইলিয়াম ওয়াটস্ ও কলেট। এ পত্র পাঠান হয় ওলন্দাজ এজেন্ট বিসডোমের মাধ্যমে। ড্রেক তাও রক্ষা করেননি। অবশেষে ফরাসী দেশীয় ম্যাকুইস দ্যা সেন্ট জ্যাকুইস এর মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব পাঠানো হয় কোলকাতায়। উত্তরে উদ্যত রজার ড্রেক প্রস্তাবকারীকে পক্ষ পরিবর্তনের উপদেশ দেন।
সুতরাং অনিবার্য হয়ে উঠল সংঘাত। ১৭৫৬ সালে ১৩ই জুন নবাব ফোর্ট উইলিয়মে পৌঁছান এবং যথারীতি কোলকাতা অবরুদ্ধ হয় ১৯ জুন। নাটকের উদ্ধৃত অহংকারী নায়ক রজার ড্রেক সঙ্গী মিনকিন, ম্যাকেট ও গ্রান্টসহ সগৌরবে পিছন দিকে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। সংগে সংগে ইংরেজ শিবিরে পলায়ন প্রক্রিয়া দ্রুত সংক্রমিত হয়ে পড়ে। এক ঘণ্টার মধ্যে ইংরেজদের সকল জাহাজ পলাতকদের নিয়ে ভাটির পথে পাড়ি জমায়...। ... ড্রেক ও অন্যান্যদের পলায়নের পর ফোর্ট উইলিয়ামের মাত্র আটজন যুদ্ধ পরিষদের সদস্য অবশিষ্ট রইল। তাদের মধ্যে হলওয়েল রজার ড্রেকের স্থলবর্তী গভর্নর নিয়োজিত হলেন। হলওয়েল পলায়নের কোন নৌকার অভাবেই কলকাতায় থেকে যেতে বাধ্য হন এবং তিনিই পরবর্তীকালে তথাকথিত কাল্পনিক অন্ধকুপ হত্যার গল্প কাহিনীর জন্ম দান করেন। হলওয়েল গভর্নর হয়ে এক দুপুর টিকে ছিলেন; তার পর আত্মসমর্পন ভিন্ন কিছুই আর তাঁর করবার রইল না। ২০ জুন বিকেল চারটায় কলকাতার পতন ঘটে।

১৭ জুলাই বন্দীদের নবাবের সামনে হাজির করা হয়। অন্যদিকে কাশিমবাজার ও কলকাতার পতন সংবাদ পর পর মাদ্রাজ পৌঁছে। ফলে প্রথমে মেজর কিলপেট্রিক-এর নেতৃত্বে দুটি জাহাজ এবং পরে রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে- প্রচুর সৈন্য, গোলাবারুদ ও সাজ-সরঞ্জামসহ বারটি জাহাজ পাঠান হয় বাংলায়। এই অভিযানের প্রধান দুটি উদ্দেশ্য নির্ধারিত হয়;

ক. নবাবের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান ঘটিয়ে কোম্পানীর ইচ্ছানুরূপ ক্ষমতা পরিবর্তন।
খ. কোম্পানীর প্রতিদ্বন্দ্বী ফরাসীদের চন্দন নগর হতে উৎখাত। কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলকে লিখিত মাদ্রাজের সেন্ট জর্জ কাউন্সিলের লিখিত পত্রে (১৩ অক্টোবর ১৭৫৬) ‘The sword should go hand in hand with the pen’ উপদেশের সঙ্গে সঙ্গে নবাবের বিরুদ্ধে যে কোন স্বার্থান্বেষী মহলের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করতে এবং ফরাসীদের চন্দন নগর হতে বিতাড়নের নির্দেশও দেয়া হয়।
২৫ ডিসেম্বর ফুলতা পৌঁছেই ক্লাইভ ও ওয়াট্সন ‘কলমের সঙ্গে সঙ্গে তরবারির মহড়া শুরু করেন। ৩০ ডিসেম্বর তাঁরা বজবজ দখল করেন এবং ২ জানুয়ারী (১৭৫৭) কলকাতা পুনরুদ্ধার করে ড্রেক ও তাঁর কাউন্সিল সদস্যদের ফোর্ট উইলিয়ামে প্রতিষ্ঠিত করেন। এই বিজয়ের গৌরবে ইংরেজেরা ৩ জানুযায়ী নবাব ও তাঁর দেশবাসীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসে। হুগলী শহরটি ব্যাপকভাবে লুণ্ঠিত হয় এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলে তারা আগুন ধরিয়ে দেয়। সেদিনই নবাব তাঁর এক ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে হুগলীর উত্তরে পৌঁছেন। ইংরেজরা ফিরে যায় কলকাতা। ফরাসী ও ওলন্দাজেরা নবাব ও ইংরেজদের বিবাদে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ইংরেজেরা তাদের কাউকে বিশ্বাস না করে এবার খাজা ওয়াজিদের মাধ্যমে তাদের দাবীর কথা জানিয়ে দেয় ২২ জানুয়ারী। বলা হয়, কাশিমবাজার ও কলকাতা দখলের ক্ষতিপূরণ, ১৭১৭ সালের ফরমানানুযায়ী সকল সুবিধা, কলকাতায় সামরিক দুর্গ নির্মাণের অনুমতি এবং কোম্পানীর নিজস্ব মুদ্রা তৈরীর অধিকার দিতে হবে।

বৃটিশদের ঔদ্ধত্য ও আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের ফলে নওয়াব দারুণভাবে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ হন। ওদিকে শাহ ওয়ালীউল্লাহ দেহলভীর আমন্ত্রণে আফগান বীর ভারতবর্ষে আগমন করেন মূলত মারাঠা ঔদ্ধত্য গুড়িয়ে দেয়ার জন্য। তার আক্রমণের লক্ষ্য সুবাহ বাংলা ছিল না। কিন্তু দরবারের কুচক্রী সৃষ্ট আহমদ শাহ আবদালীর বাংলা আক্রমণ সংক্রান্ত গুজব নতুন আশঙ্কার জন্ম দেয়। এ আশঙ্কা নবাবকে অনেকটা হত বিহবল করে ফেলে। উদ্বিগ্ন নবাব আবদালীর আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠেন। সে সময় ইংরেজদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ্য আচরণ নবাবের কাছে গৌণ বলে অনুভূত হয়। নবাব ইংরেজদের সাথে আপোষের কথা ভাবতে থাকেন, এই কারণে যেন আবদালীর আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধে মনযোগী হতে পারেন। ওদিকে নবাবের উপর চূড়ান্ত আঘাত হানার উদ্দেশে নবাব বিরোধী ষড়যন্ত্র পোক্ত হওয়ার জন্য ইংরেজদেরও সময়ের প্রয়োজন ছিল। উভয়ের প্রয়োজনে ১৭৫৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী নবাব ও ইংরেজদের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এই সন্ধির পর নবাব আফগান আক্রমণ প্রতিরোধে মনোযোগী হলেন। এই অবকাশে ইংরেজরা একদিকে নবাবের পারিষদবর্গ ও সেনানায়কদের প্রলুব্ধ ও প্রভাবিত করার সুযোগ পেল এবং অন্যদিকে ফরাসীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ল সম্ভাব্য বিপর্যয় নাটকের দৃশ্য থেকে ফরাসীদের বিদায় করার জন্য। বাংলার প্রেক্ষিত নয় আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি সামনে এনে ইঙ্গ ফরাসী যুদ্ধের দোহাই পেড়ে ইংরেজরা ১৪ মার্চ ফরাসী অধ্যুষিত চন্দন নগর অবরোধ করে।

(১৭৫৭) চন্দন নগর অবরোধের সংবাদ পেয়ে নবাব দুর্লভরাম ও নন্দকুমারকে আবার ফরাসীদের সাহায্যের জন্য পাঠান। ইংরেজদের দেয়া ঘুষে এবারও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। ২৩ মার্চ চন্দন নগরের পতন ঘটে। ফরাসীরা বাংলায় তাদের সবগুলো কুঠি ইংরেজদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। তাদের কিছু সৈন্য কাশিম বাজারে পালিয়ে গিয়ে আত্মরক্ষা করে, কিছু প্রাণ দেয়, কিছু বন্দী হয়। ইংরেজদের পক্ষে যুদ্ধ করে নিহত দেশীয় সিপাহীদের ইংরেজ সেবার নিদর্শন স্বরূপ জনপ্রতি দশ টাকা করে পুরস্কার দেয়া হয়।

ডক্টর মোহর আলী লিখেছেন- ‘ইংরেজদের চন্দন নগর আক্রমণের প্রাক্কালে নবাব তাদের প্রতিরোধে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিলেন, কিন্তু বিপুল পরিমাণ ঘুষের বিনিময়ে প্রতিরোধ বাহিনীর নেতা নন্দকুমার বিশ্বাসঘাতকতা করেন এবং রায় দুর্লভ রাম ইংরেজদের বিরুদ্ধে কঠোর নীতি গ্রহণে সিরাজকে বাধা দিতে থাকেন। ক্ষমতা লাভের ছয় মাসের মধ্যেই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল পরিপক্ক হয়ে ওঠে। এই লোকগুলোর সহযোগিতায় ক্লাইভ খুব সহজেই নবাব প্রশাসনকে প্রায় সম্পূর্ণভাবে বিকল করে ফেলেন এবং নবাবের গোপন কাগজ ও চিঠিপত্র হস্তগত করেন। নবাব এসব ষড়যন্ত্রের সবকিছু জানতে পারেন। কিন্তু ব্যাপক বিস্তৃত এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে তখন তাঁর কিছুই করার ছিলো না। কারণ, তিনি কাউকেই বিশ্বাসযোগ্য বিবেচনা করতে পারেননি।’ প্রফেসর আব্দুর রহিম লিখেছেন, ২৩ এপ্রিল (১৭৫৭) ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কোলকাতা কাউন্সিল নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসন চ্যুত করার জন্য একটি প্রস্তাব পাস করে। হিল লিখেছেন যে, ক্লাইভ উমিচাঁদকে নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করেন।’

অন্যদিকে ডক্টর মোহর আলী- ১৭৫৭ সালের পয়লা মে অনুষ্ঠিত ফোর্ট উইলিয়াম সিলেক্ট কমিটির বিবরণ দিয়ে লিখেছেন- ‘সিরাজকে উৎখাতের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের হীন পকিল্পনার পক্ষে যে সকল যুক্তি দাঁড় করায় তা হচ্ছে-
(ক) সিরাজ অসৎ এবং ইংরেজদের নির্যাতনকারী।
(খ) তিনি ফরাসীদের সঙ্গে গোপন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, যার অর্থ হচ্ছে ইংরেজদের সঙ্গে চুক্তিভঙ্গ এবং
(গ) সিরাজ বাঙ্গালীদের কাছে তাঁর জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছেন- যার ফলে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন সহজেই ঘটতে পারে।

এই পরিকল্পনা গ্রহণের পর মুর্শিদাবাদের অদূরে পলাশী প্রান্তরে ক্লাইভ তাঁর সৈন্য সমাবেশ শুরু করেন। মীর জাফর ও দুর্লভ রামের নেতৃত্বে নবাব ১৫,০০০ হাজার সৈন্যের এক বাহিনী প্রেরণ করেন। এদিকে মুর্শিদাবাদের ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটস তখনই যুদ্ধ না বাঁধিয়ে সৈন্য প্রত্যাহার করে কলকাতায় সুযোগের প্রতীক্ষা করতে ক্লাইভকে উপদেশ দেন। ক্লাইভ তা মেনে নেন এবং নবাবকেও তাঁর সৈন্য প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। ইংরেজদের আচরণ নবাবের মনে সন্দেহের সৃষ্টি করে; তিনি তাঁর বাহিনী অপসারণের নির্দেশ দিলেন। ক্লাইভ তাঁদের আচরণের সততার প্রতি নবাবের সন্দেহ দূর করার জন্য এক কুটচাল চালেন। মারাঠাদের লিখা এক চিঠি দিয়ে তিনি স্ক্রেফ্টনকে মুর্শিদাবাদ পাঠান। এ চিঠিতে ইংরেজ ও মারাঠাদের মধ্যে বাংলাকে ভাগ করে নেবার প্রস্তাব ছিল। এবার নবাব ইংরেজদের বিশ্বাস করলেন এবং তার বাহিনীকে মুর্শিদাবাদ ফিরে আসার নির্দেশ দিলেন।

‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাঁহার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথা জানিতে পারেন। তিনি মীর জাফরকে প্রধান সেনাপতির পদ হইতে অপসারিত করেন এবং আবদুল হাদী খানকে সে পদে নিয়োগ করেন। আবদুল হাদী ও মীর মদন মীর জাফরকে ধ্বংস করিবার জন্য নবাবকে পরামর্শ দেন। কিন্তু জগৎশেঠ ও অন্যান্য বিশ্বাসঘাতক উপদেষ্টাগণ নবাবকে পরামর্শ দেন যে, ইংরেজদের বিরুদ্ধে শক্তিবৃদ্ধির জন্য মীর জাফরের সহযোগিতা লাভ করা নবাবের পক্ষে সুবিবেচনার কাজ হইবে। নবাব তাহাদের উপদেশ গ্রহণ করেন। তিনি মীর জাফরের বাড়ীতে গিয়ে নবাব আলীবর্দীর নামে তাঁহার নিকট ইংরেজদের বিরুদ্ধে সাহায্যের জন্য মর্মস্পশী আবেদন জানান। পবিত্র কুরআন হাতে লইয়া মীর জাফর এই সময় অঙ্গীকার করেন যে, তিনি নবাবের জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিবেন। (প্রফেসর আব্দুর রহিম)

সাময়িক পদচ্যুতির অপমানে মীর জাফর দারুণভাবে প্রতিহিংসা পরায়ণ ও ক্রোধান্ধ হয়ে উঠলেন। সিরাজের আশু পতন অনিবার্য করে তোলার জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নিলেন। মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করার জন্য বার বার ক্লাইভের নিকট বার্তা প্রেরণ করে তাগাদা দিতে থাকেন। এমন মাহেন্দ্রক্ষণের প্রতীক্ষায় ছিলেন ক্লাইভ। এই সুযোগে তিনি আরো অতিরিক্ত শর্ত যুক্ত করলেন। পরিণতির কথা না ভেবেই মীর জাফর সব দাবী অকপটে মেনে নিলেন। জগৎশেঠের প্রোথিত বিষাক্ত বীজ অঙ্কুর থেকে বৃক্ষে পরিণত হল, অতঃপর মহীরুহে। ম্লেচ্ছ যবন মুসলিম শাসনের অবসান ঘটিয়ে নব উত্থান সম্ভাবনায় ব্রাহ্মণ্যবাদীরা উদ্বেলিত হয়ে উঠল।

‘অতঃপর ষড়যন্ত্রকারীগণ জগৎশেঠের বাড়িতে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। জগৎশেঠ, উমিচাঁদ, রায়দুর্লভ, মীর জাফর, রাজবল্লভ এবং আরও কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি এই বৈঠকে যোগ দেন। ইংরাজ কোম্পানীর এজেন্ট ওয়াটস মহিলাদের মত পর্দা-ঘেরা পাল্কিতে জগৎশেঠের বাড়িতে আসেন। এই বৈঠকে সিরাজউদ্দৌলাকে সরাইয়া মীর জাফরকে বাংলার মসনদে বসাইবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ওয়াটস এই কাজে ইংরেজদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। ইহার পর কোম্পানীর প্রধানগণ চুক্তিপত্রের খসড়া প্রস্তুত করেন এবং ১৯মে ইহাতে দস্তখত করেন। মীর জাফরসহ ৪ জন চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন। চুক্তির শর্তানুযায়ী ইংরাজদের সৈন্য সাহায্যের বিনিময়ে মীর জাফর তাহাদিগকে কয়েকটি বাণিজ্য-সুবিধা দিতে স্বীকার করেন। তাহা ছাড়া তিনি ইংরেজ সৈন্যদের ব্যয়ভার বহন করিতে এবং কোম্পানীকে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ দুই কোটি টাকা দিতে সম্মত হন। নবাবের কোষাগার হইতে উমিচাঁদকে ২০ লক্ষ টাকা দেওয়া হইবে বলিয়া বলা হয়। উমিচাঁদকে প্রতারিত করিবার জন্য ক্লাইভ চুক্তিপত্রের দুইটি খসড়া প্রস্তুত করেন। আসল খসড়ায় উমিচাঁদকে টাকা দেয়ার শর্তের উল্লেখ করা হয় নাই। নকল খসড়ায় এই শর্তটি লিখিত হয়। ইহার দস্তখতগুলি সবই ক্লাইভ জাল করিয়াছিলেন। রায়দুর্লভকেও লুটের মালের কিয়দংশ দেওয়া হইবে বলিয়া প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। (প্রফেসর আব্দুর রহিম)

৪ জুনের স্বাক্ষরিত চুক্তিটি ছিল নিম্নরূপ :
“আমি আল্লাহর নামে ও আল্লাহর রাসূলের নামে প্রতিজ্ঞা করিতেছি যে, আমার জীবনকালে আমি এই চুক্তিপত্রের শর্তাবলী মানিয়া চলিব।
ধারা-১ :নবাব সিরাজউদ্দৌলার সঙ্গে শান্তিচুক্তির যেসব ধারায় সম্মতি দান করিয়াছি, আমি সেসব ধারা মানিয়া চলিতে সম্মত হইলাম।
ধারা-২ :ইংরেজদের দুশমন আমারও দুশমন, তাহারা ভারতবাসী হোক অথবা ইউরোপীয়।
ধারা-৩ :জাতিসমূহের স্বর্গ বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় ফরাসীদের সকল সম্পত্তি এবং ফ্যাক্টরীগুলো ইংজেরদের দখলে থাকিবে এবং কখনো তাহাদিগকে (ফরাসীদেরকে) ওই তিনটি প্রদেশে আর কোন স্থাপনা প্রতিষ্ঠা করিতে দিব না।
ধারা-৪ :নবাব সিরাজ কর্তৃক কলিকাতা দখল ও লুণ্ঠনের ফলে ইংরেজ কোম্পানী যেসব ক্ষতির সম্মুখীন হইয়াছে তাহার বিবেচনায় এবং তন্নিমিত্ত মোতায়েনকৃত সেনাবাহিনীর জন্য ব্যয় নির্বাহ বাবদ আমি তাহাদিগকে এক ক্রোর তঙ্কা প্রদান করিব।
ধারা-৫ :কলিকাতার ইংরেজ অধিবাসীদের মালামাল লূণ্ঠনের জন্য আমি তাহাদিগকে পঞ্চাশ লক্ষ তঙ্কা প্রদান করিতে সম্মত হইলাম।
ধারা-৬ :কলিকাতার জেন্টু (হিন্দু), মূর (মুসলমান) এবং অন্যান্য অধিবাসীকে প্রদান করা হইবে বিশ লক্ষ তঙ্কা। (ইংরেজরা হিন্দুদেরকে জেন্টু’ এবং মুসলমানাদের ‘মূর’ ও ‘মেহোমেটান’ বলে চিহ্নিত করতো)
ধারা-৭ :কলিকাতার আর্মেনীয় অধিবাসীদের মালামাল লুণ্ঠনের জন্য তাহাদিগকে প্রদান করা হইবে সাত লক্ষ তঙ্কা। ইংরেজ, জেন্টু, মূর এবং কলিকাতার অন্যান্য অধিবাসীকে প্রদেয় তঙ্কার বিতরণভার ন্যস্ত রহিল এডমিরাল ওয়াটসন, কর্নেল ক্লাইভ, রজার ড্রেক, উইলিয়াম ওয়াটস, জেমস কিলপ্যাট্রিক এবং রিচার্ড বীচার মহোদয়গণের উপর। তাঁহারা নিজেদের বিবেচনায় যাহার যেমন প্রাপ্য তাহা প্রদান করিবেন।
ধারা-৮ :কলিকাতার বর্ডার বেষ্টনকারী মারাঠা ডিচের মধ্যে পড়িয়াছে কতিপয় জমিদারের কিছু জমি; ওই জমি ছাড়াও আমি মারাঠা ডিচের বাইরে ৬০০ গজ ইংরেজ কোম্পানীকে দান করিব।
ধারা-৯ :কল্পি পর্যন্ত কলিকাতার দক্ষিণস্থ সব জমি ইংরেজ কোম্পানীর জমিদারীর অধীনে থাকিবে এবং তাহাতে অবস্থিত যাবতীয় অফিসাদি কোম্পানীর আইনগত অধিকারে থাকিব।
ধারা-১০ : আমি যখনই কোম্পানীর সাহায্য দাবি করিব, তখনই তাহাদের বাহিনীর যাবতীয় খরচ বহনে বাধ্য থাকিব।
ধারা-১১ : হুগলীর সন্নিকটে গঙ্গা নদীর নিকটে আমি কোন নতুন দুর্গ নির্মাণ করিব না।
ধারা-১২ : তিনটি প্রদেশের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হইবামাত্র আমি উপরিউক্ত সকল তঙ্কা বিশ্বস্তভাবে পরিশোধ করিব।

২৩ জুন ১৭৫৭ মীর জাফরের সাময়িক পদচ্যুতির মাত্র একমাসের ব্যবধানে সমাগত হল সিরাজের অন্তিম পর্ব। পলাশীতে সৈন্য সমাবেশ হল নবাব এবং ক্লাইভ উভয় পক্ষের। নবাবের পক্ষে সৈন্য সংখ্যা ৫০ হাজার, এর মধ্যে পদাতিক ৩৫ হাজার অশ্বারোহী ১৫ হাজার। ক্লাইভের পক্ষে ছিল মাত্র ৩ হাজার দেশী বিদেশী সম্মিলিত ভাবে।
২৩ জুনের পূর্বে বাংলার মুক্তি চুক্তি নামে ১২ দফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় মীর জাফর ও ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মধ্যে, তাতে মীরজাফরের পক্ষ থেকে বলা হয় : আমি আল্লাহর নামেও আল্লাহর রাসূলের নামে প্রতিজ্ঞা করছি যে, আমার জীবনকালে আমি এই চুক্তিপত্র মানিয়া চলিব।

এই মুক্তির চুক্তি মীর জাফর সত্যি আক্ষরিকভাবে অনুসরণ করেছিলেন। প্রধান সেনাপতির দায়িত্ব নিয়ে তিনি রনাঙ্গনে ছবির মত দাঁড়িয়ে ছিলেন। দাঁড়িয়েছিল তার বাহিনী। তিনি প্রধান সেনাপতি হয়ে নবাবের পতন উপভোগ করলেন প্রাণভরে। মুর্শিদাবাদের পতন হল। পুনরুদ্ধারের আশায় নবাব ছুটে চললেন বিহারে তার অনুগত বাহিনীর নিকট। তার আশা পূর্ণ হলো না। পথে গ্রেপ্তার হলেন। মীরজাফর তনয় মিরন তাকে নির্মমভাবে হত্যা করল। তার রক্তপাতের মধ্য দিয়ে সমগ্র সুবাহ বাংলার স্বাধীনতা ১৯০ বছরের জন্য মহাকালের অন্ধকারে হারিয়ে গেল। সমগ্র জাতি শৃংখলিত হল ঔপনিবেশিক অক্টোপাসে। সে ইতিহাসও অতি মর্মান্তিক। ব্রাহ্মণ্যবাদী চক্রের ঘরে ঘরে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল। সিরাজের পতনের মধ্যে তারা দেখতে পেল তাদের উত্থান সম্ভাবনা।


Do you want to know about the origin of durga puja. Just click the following:
Durga Puja - Wikipedia, the free encyclopedia


Origin of the autumnal ceremony 'Sharadiya'
undefined
Old painting of Durga Puja in Kolkata at Shobhabazar Rajbari

The actual worship of the Goddess Durga as stipulated by the Hindu
scriptures falls in the month of Chaitra, which roughly overlaps with
March or April. This ceremony is however not observed by many and is
restricted to a handful in the state of West Bengal.

The more popular form, which is also known as Sharadiya (Autumnal)
Durga Puja, is celebrated later in the year with the dates falling
either in September or October. Since the Goddess is invoked at the
wrong time, it is called "Akaal Bodhon" in Bengali.

While the most recent revival of the Autumnal worship of Goddess Durga
can be traced to revivalist tendencies in the early freedom movement
in Bengal, the first such Puja was organised by Raja Nabakrishna Deb
of the Shobhabazar Rajbari of Calcutta in honour of Lord Clive in the
year 1757. The puja was organised because Clive wished to pay thanks
for his victory in the Battle of Plassey. He was unable to do so in a
Church because the only church in Calcutta at that time was destroyed
by Siraj-ud-Daulah. Indeed many wealthy mercantile and Zamindar
families in Bengal made British Officers of the East India Company
guests of honour in the Pujas. The hosts vied with one another in
arranging the most sumptuous fares, decorations and entertainment for
their guests. This was deemed necessary since the Company was in
charge of a large part of India including Bengal after the battles of
Plassey and Buxar.[13]




If the above information is correct what will you say? I can conclude
the following that: Durga Puja is the marking ceremony of the defeat
of the Great son of our soil Shiraz Ud Daola and us by the
collaborators of the nation. What a shame! How can the defeat of a
nation be a part of religion? Shame! Shame! Shame! Raja Naba Krishna
Deb was a bastard of the nation who was in the administration of
Shiraz Ud Daola, but worked for British as a pet dog of the British.
He is the pioneer of Sharadiya Durga Puja to praise the animal British
as pet dog, bustard of the nation. If the true history is addressed to
the nation, the collaborators must be
vanquished from history. You can check the validity of my information.


Second point: Origin of Bashanti Durga Puja:

It is also the story of the collaborators. In this case,
Kangshanarayan( another bastard of the nation) play the role.
Kangshanarayan was in the administration of our the Great Sultan of
Independent Sultanate of Banglastan Munim Khan( great patriotic
soldier of the Bengali nation). Bastard Kangshanarayan worked for the
Animal Mughal to remove the independent Sultanate of the Greater
Bangladesh in 1576 in Rajmahal( Now it is in India) as a pet dog of
Mughal. He was a betrayer and bastard of the nation. With the Mughal
help he introduced the Bashanti Durga Puja as the marking ceremony of
the destruction of Independent Sultanate of Greater Bangladesh. Shame!
Shame! Bashanti Durga Puja is the marking ceremony of the defeat of
the Great son of our soil Munim Khan and us by the collaborators of
the nation. What a shame! How can the defeat of a nation be a part of
religion?

You can check the validity of my information. If the true history is
addressed to the nation, the collaborators must be
vanquished from history.



Please, know the true history. Hate the collaborators of the nation
who also played with the religious matters of the nation and made the
religious matters as so funny!


I hope everybody will understand the true history of the nation. Thus
our two great sons of our soil Sultan Munim Khan and Nabob Shiraz Ud
Daola will get some peace in mind by thinking that their sons are
recognizing their great sacrifices to the nation which are the source
of the inspirations for our independent existence.


Good luck.
 
.
Do you want to know about the origin of durga puja. Just click the following:
Durga Puja - Wikipedia, the free encyclopedia


Origin of the autumnal ceremony 'Sharadiya'
undefined
Old painting of Durga Puja in Kolkata at Shobhabazar Rajbari

The actual worship of the Goddess Durga as stipulated by the Hindu
scriptures falls in the month of Chaitra, which roughly overlaps with
March or April. This ceremony is however not observed by many and is
restricted to a handful in the state of West Bengal.

The more popular form, which is also known as Sharadiya (Autumnal)
Durga Puja, is celebrated later in the year with the dates falling
either in September or October. Since the Goddess is invoked at the
wrong time, it is called "Akaal Bodhon" in Bengali.

While the most recent revival of the Autumnal worship of Goddess Durga
can be traced to revivalist tendencies in the early freedom movement
in Bengal, the first such Puja was organised by Raja Nabakrishna Deb
of the Shobhabazar Rajbari of Calcutta in honour of Lord Clive in the
year 1757. The puja was organised because Clive wished to pay thanks
for his victory in the Battle of Plassey. He was unable to do so in a
Church because the only church in Calcutta at that time was destroyed
by Siraj-ud-Daulah. Indeed many wealthy mercantile and Zamindar
families in Bengal made British Officers of the East India Company
guests of honour in the Pujas. The hosts vied with one another in
arranging the most sumptuous fares, decorations and entertainment for
their guests. This was deemed necessary since the Company was in
charge of a large part of India including Bengal after the battles of
Plassey and Buxar.[13]




If the above information is correct what will you say? I can conclude
the following that: Durga Puja is the marking ceremony of the defeat
of the Great son of our soil Shiraz Ud Daola and us by the
collaborators of the nation. What a shame! How can the defeat of a
nation be a part of religion? Shame! Shame! Shame! Raja Naba Krishna
Deb was a bustard of the nation who was in the administration of
Shiraz Ud Daola, but worked for British as a pet dog of the British.
He is the pioneer of Sharadiya Durga Puja to praise the animal British
as pet dog, bustard of the nation. If the true history is addressed to
the nation, the collaborators must be
vanquished from history. You can check the validity of my information.


Second point: Origin of Bashanti Durga Puja:

It is also the story of the collaborators. In this case,
Kangshanarayan( another bustard of the nation) play the role.
Kangshanarayan was in the administration of our the Great Sultan of
Independent Sultanate of Banglastan Munim Khan( great patriotic
soldier of the Bengali nation). Bustard Kangshanarayan worked for the
Animal Mughal to remove the independent Sultanate of the Greater
Bangladesh in 1576 in Rajmahal( Now it is in India) as a pet dog of
Mughal. He was a betrayer and bustard of the nation. With the Mughal
help he introduced the Bashanti Durga Puja as the marking ceremony of
the destruction of Independent Sultanate of Greater Bangladesh. Shame!
Shame! Bashanti Durga Puja is the marking ceremony of the defeat of
the Great son of our soil Munim Khan and us by the collaborators of
the nation. What a shame! How can the defeat of a nation be a part of
religion?

You can check the validity of my information. If the true history is
addressed to the nation, the collaborators must be
vanquished from history.



Please, know the true history. Hate the collaborators of the nation
who also played with the religious matters of the nation and made the
religious matters as so funny!


I hope everybody will understand the true history of the nation. Thus
our two great sons of our soil Sultan Munim Khan and Nabob Shiraz Ud
Daola will get some peace in mind by thinking that their sons are
recognizing their great sacrifices to the nation which are the source
of the inspirations for our independent existence.


Good luck.

---------- Post added at 03:01 PM ---------- Previous post was at 02:59 PM ----------




Do you want to know about the origin of durga puja. Just click the following:
Durga Puja - Wikipedia, the free encyclopedia


Origin of the autumnal ceremony 'Sharadiya'
undefined
Old painting of Durga Puja in Kolkata at Shobhabazar Rajbari

The actual worship of the Goddess Durga as stipulated by the Hindu
scriptures falls in the month of Chaitra, which roughly overlaps with
March or April. This ceremony is however not observed by many and is
restricted to a handful in the state of West Bengal.

The more popular form, which is also known as Sharadiya (Autumnal)
Durga Puja, is celebrated later in the year with the dates falling
either in September or October. Since the Goddess is invoked at the
wrong time, it is called "Akaal Bodhon" in Bengali.

While the most recent revival of the Autumnal worship of Goddess Durga
can be traced to revivalist tendencies in the early freedom movement
in Bengal, the first such Puja was organised by Raja Nabakrishna Deb
of the Shobhabazar Rajbari of Calcutta in honour of Lord Clive in the
year 1757. The puja was organised because Clive wished to pay thanks
for his victory in the Battle of Plassey. He was unable to do so in a
Church because the only church in Calcutta at that time was destroyed
by Siraj-ud-Daulah. Indeed many wealthy mercantile and Zamindar
families in Bengal made British Officers of the East India Company
guests of honour in the Pujas. The hosts vied with one another in
arranging the most sumptuous fares, decorations and entertainment for
their guests. This was deemed necessary since the Company was in
charge of a large part of India including Bengal after the battles of
Plassey and Buxar.[13]




If the above information is correct what will you say? I can conclude
the following that: Durga Puja is the marking ceremony of the defeat
of the Great son of our soil Shiraz Ud Daola and us by the
collaborators of the nation. What a shame! How can the defeat of a
nation be a part of religion? Shame! Shame! Shame! Raja Naba Krishna
Deb was a bastard of the nation who was in the administration of
Shiraz Ud Daola, but worked for British as a pet dog of the British.
He is the pioneer of Sharadiya Durga Puja to praise the animal British
as pet dog, bustard of the nation. If the true history is addressed to
the nation, the collaborators must be
vanquished from history. You can check the validity of my information.


Second point: Origin of Bashanti Durga Puja:

It is also the story of the collaborators. In this case,
Kangshanarayan( another bastard of the nation) play the role.
Kangshanarayan was in the administration of our the Great Sultan of
Independent Sultanate of Banglastan Munim Khan( great patriotic
soldier of the Bengali nation). Bastard Kangshanarayan worked for the
Animal Mughal to remove the independent Sultanate of the Greater
Bangladesh in 1576 in Rajmahal( Now it is in India) as a pet dog of
Mughal. He was a betrayer and bastard of the nation. With the Mughal
help he introduced the Bashanti Durga Puja as the marking ceremony of
the destruction of Independent Sultanate of Greater Bangladesh. Shame!
Shame! Bashanti Durga Puja is the marking ceremony of the defeat of
the Great son of our soil Munim Khan and us by the collaborators of
the nation. What a shame! How can the defeat of a nation be a part of
religion?

You can check the validity of my information. If the true history is
addressed to the nation, the collaborators must be
vanquished from history.



Please, know the true history. Hate the collaborators of the nation
who also played with the religious matters of the nation and made the
religious matters as so funny!


I hope everybody will understand the true history of the nation. Thus
our two great sons of our soil Sultan Munim Khan and Nabob Shiraz Ud
Daola will get some peace in mind by thinking that their sons are
recognizing their great sacrifices to the nation which are the source
of the inspirations for our independent existence.


Good luck.


First you troll about bengalis being dravidians, now you are trolling about durga puja.


Durga is mentioned in the Ramayana and Mahabharata, epic and Puranic texts, and she is mentioned by name in Vedic literature. Durga puja is not limited to north india but south india observe durga puja as well. Durga puja has a long history dating to times before the palas.

Please shakib, if you nothing to contribute, please dont troll and spread lies
 
.
By the way how come munim khan and shiraj are sons of bengal?? They arent bengali, aryan or dravidian
 
.
First you troll about bengalis being dravidians, now you are trolling about durga puja.


Durga is mentioned in the Ramayana and Mahabharata, epic and Puranic texts, and she is mentioned by name in Vedic literature. Durga puja is not limited to north india but south india observe durga puja as well. Durga puja has a long history dating to times before the palas.

Please shakib, if you nothing to contribute, please dont troll and spread lies


Truth is sometime bitter. I haven't trolled anything. I have mentioned the Wikipedia. Wikipedia is not created by me. I have found this information in numerous books. You can't hide the truth. Origin of Sharadiya Durga Puja is related with the defeat of Shiraz Ud Daola and Palasi. It is true and part of history. You can't hide the truth. At first check the history and fact not the illusion. I have mentioned that part of history for understanding the nature of Aryan human cluster(the betrayer). You can check the internet. Truth will not be in hide. Truth is sometime tragic. Shame on betrayer!!!!!!!!!!
 
.
Truth is sometime bitter. I haven't trolled anything. I have mentioned the Wikipedia. Wikipedia is not created by me. I have found this information in numerous books. You can't hide the truth. Origin of Sharadiya Durga Puja is related with the defeat of Shiraz Ud Daola and Palasi. It is true and part of history. You can't hide the truth. At first check the history and fact not the illusion. I have mentioned that part of history for understanding the nature of Aryan human cluster(the betrayer). You can check the internet. Truth will not be in hide. Truth is sometime tragic. Shame on betrayer!!!!!!!!!!

So in the Durga puja,

Ram means - Mir Jafar?
Durga is - Robert Clive?
Dravid Rabon - Siraj --- Oops he is not Dravid?

Where is Honuman Ji - Jagat Shet? He looks like honuman though.
 
.
By the way how come munim khan and shiraj are sons of bengal?? They arent bengali, aryan or dravidian


Hey, all living beings of this territory be united with your own beliefs, work with unity and pray to free the territory. Don’t betray each other because it is your own territory whatever your religion and color. You are product of this soil whatever what is source of your precursor sperm and ovum. Don’t betray the own soil. You should make it free from evils for you. Don’t invite enemy. You should know the enemy and fight against them with the help of all living organisms of your territory. You should love them all because all of them are created from same lands and same preparations. Never kill anyone of your territory or never help other to kill your territory members. Beliefs may be different but origin is same soil. Love your origin and keep it up as it is own your origin. Don’t love other country or other aggressor as those are enemies and keep free the territory from enemies. Build your nation as your own home and love all members as your own.

This is the definition of Nationality by me. Shiraz Ud Daola fulfilled all the basic requirements. He was born in this territory. He was grown up by feeding the water,fruits,vegetables and food grains of the territory. He is of course an inspiration to stand against evil. He could get easily manage the British by ignoring the rights of the local people. He is of course our brother, a patriotic soldier. I have said some different ethnic people are mixed with our great Dravidian Nation. Shiraz's ancestor was like that. You should know that there was tendency in every Islamic Sultanate that the ruler should be from Syeed origin. For this reason, those families are allowed to be chairperson of the state. Shiraz's grandfather was allowed for the same reason.

But Shiraz is the product of the soil of Bangladesh like me. He is the great patriotic leader of the nation. He is not an Aryan. He was of Arab origin. His grandfather's origin was Arab. In fact all people' s origin is Adam. Aryans don't believe that.

But the ethnicity of Shiraz does not indicate of the Bangladeshi origin. It is very negligible. The skin of Dravidian is not totally black, it is medium chocolate to brownish which is differentiable.


Durga Puja origin is related to Old Bangla Photos as it is tragically related to the sufferings of the great Bangladeshi Dravidian Nation after the war of Palashi.


About ten million people were sensibly killed in 1772 sensibly by the British with the help of Aryan Society by making artificial famine after the war of Palashi which is related to the origin of Durga Puja which is associated with this thread. Munim Khan is of course the product of this soil and the great patriotic leader of the Nation.


Shiraz and Munim are of course the product of our soil like me and all Bangladeshis, fighter against the cruel Aryan cluster.

Dravidian root is the main contributor which is retaining the matrix of our great Bangladeshi Nation. We, the Dravidian Bangladeshis have given shelter to many central Asian Muslim people. But the Dravidian root is the main. We are the modern Dravidian Bangladeshi Nation.

We are modern Shiraz, modern Munim or modern Vashani, Mujib or Zia. Fighters to destroy the tricks of aggressors to our Great Bangladeshi Nation, continua-tor of the ancient Dravidian Nation. We are the modern Wari Bateswareerian , modern Bangladeshi.
 
.
Truth is sometime bitter. I haven't trolled anything. I have mentioned the Wikipedia. Wikipedia is not created by me. I have found this information in numerous books. You can't hide the truth. Origin of Sharadiya Durga Puja is related with the defeat of Shiraz Ud Daola and Palasi. It is true and part of history. You can't hide the truth. At first check the history and fact not the illusion. I have mentioned that part of history for understanding the nature of Aryan human cluster(the betrayer). You can check the internet. Truth will not be in hide. Truth is sometime tragic. Shame on betrayer!!!!!!!!!!

You do know that wikipedia is not reliable as it can be edited by anyone. How about you read some Mahabharat or ramayana, which by the way is older then the sultanate and the mughals, then get back to me. You are just twisting the truth.
 
.
Hey, all living beings of this territory be united with your own beliefs, work with unity and pray to free the territory. Don’t betray each other because it is your own territory whatever your religion and color. You are product of this soil whatever what is source of your precursor sperm and ovum. Don’t betray the own soil. You should make it free from evils for you. Don’t invite enemy. You should know the enemy and fight against them with the help of all living organisms of your territory. You should love them all because all of them are created from same lands and same preparations. Never kill anyone of your territory or never help other to kill your territory members. Beliefs may be different but origin is same soil. Love your origin and keep it up as it is own your origin. Don’t love other country or other aggressor as those are enemies and keep free the territory from enemies. Build your nation as your own home and love all members as your own.

This is the definition of Nationality by me. Shiraz Ud Daola fulfilled all the basic requirements. He was born in this territory. He was grown up by feeding the water,fruits,vegetables and food grains of the territory. He is of course an inspiration to stand against evil. He could get easily manage the British by ignoring the rights of the local people. He is of course our brother, a patriotic soldier. I have said some different ethnic people are mixed with our great Dravidian Nation. Shiraz's ancestor was like that. You should know that there was tendency in every Islamic Sultanate that the ruler should be from Syeed origin. For this reason, those families are allowed to be chairperson of the state. Shiraz's grandfather was allowed for the same reason.

But Shiraz is the product of the soil of Bangladesh like me. He is the great patriotic leader of the nation. He is not an Aryan. He was of Arab origin. His grandfather's origin was Arab. In fact all people' s origin is Adam. Aryans don't believe that.

But the ethnicity of Shiraz does not indicate of the Bangladeshi origin. It is very negligible. The skin of Dravidian is not totally black, it is medium chocolate to brownish which is differentiable.


Durga Puja origin is related to Old Bangla Photos as it is tragically related to the sufferings of the great Bangladeshi Dravidian Nation after the war of Palashi.


About ten million people were sensibly killed in 1772 sensibly by the British with the help of Aryan Society by making artificial famine after the war of Palashi which is related to the origin of Durga Puja which is associated with this thread. Munim Khan is of course the product of this soil and the great patriotic leader of the Nation.


Shiraz and Munim are of course the product of our soil like me and all Bangladeshis, fighter against the cruel Aryan cluster.

Dravidian root is the main contributor which is retaining the matrix of our great Bangladeshi Nation. We, the Dravidian Bangladeshis have given shelter to many central Asian Muslim people. But the Dravidian root is the main. We are the modern Dravidian Bangladeshi Nation.

We are modern Shiraz, modern Munim or modern Vashani, Mujib or Zia. Fighters to destroy the tricks of aggressors to our Great Bangladeshi Nation, continua-tor of the ancient Dravidian Nation. We are the modern Wari Bateswareerian , modern Bangladeshi.

You do know that the "second generation" Aryans did fulfil those requirements by your standards

Secondly accept the arabs as sons of soils but not aryans, the real bengalis??

Lastly central asian people were the desendents of aryans
 
.
So in the Durga puja,

Ram means - Mir Jafar?
Durga is - Robert Clive?
Dravid Rabon - Siraj --- Oops he is not Dravid?

Where is Honuman Ji - Jagat Shet? He looks like honuman though.


You are mixing Ram, Rabon, Honuman with the Durga Puja. Those are not part of Durga Puja. Those are the part of the Ramayan,


Here in Durga Puja:


Mr. Robert Clive= The powers combined Durga( Though Clive is male)
Shiraj Ud Daola= The cruel king Mahishashore( Though we all the Bangladeshis want to be patriotic like the brave son of this territory Shiraj Ud Daola)
There are some collaborators which assisted to kill the Shiraj by the great Mr. Robert Clive.

This was initiated to give serious pain to the hearts of the great ancient Bangladeshi Nation. Please, search the internet and you will get the details.

Shame on Betrayers and Collaborators.
 
.
You do know that wikipedia is not reliable as it can be edited by anyone. How about you read some Mahabharat or ramayana, which by the way is older then the sultanate and the mughals, then get back to me. You are just twisting the truth.

Nothing is being twisted. I have numerous references. You can get several reference from the internet and you should learn the true history.

Brother, truth is not always sweeter. It is sometime of shame and bitter also. We should learn all the history to know the situation.
 
.
You are mixing Ram, Rabon, Honuman with the Durga Puja. Those are not part of Durga Puja. Those are the part of the Ramayan,


Here in Durga Puja:


Mr. Robert Clive= The powers combined Durga( Though Clive is male)
Shiraj Ud Daola= The cruel king Mahishashore( Though we all the Bangladeshis want to be patriotic like the brave son of this territory Shiraj Ud Daola)
There are some collaborators which assisted to kill the Shiraj by the great Mr. Robert Clive.

This was initiated to give serious pain to the hearts of the great ancient Bangladeshi Nation. Please, search the internet and you will get the details.

Shame on Betrayers and Collaborators.

Here is the part you left out.

It has been said that the Lord Ram before going on a war with the ten headed demon ‘Ravana’ did "chandi-puja and invoked the blessings of Durga so that he could become invincible. Durga, the Goddess of power then divulged the secret to Ram how he could kill Ravana.
 
.
The same page of the wiki says, Durga puja was held way back the event of the Calcutta Rajbari which was the act of one or few individual.

I dont see any problem with the puja as it did exist in this land before clive ever set foot here
'

History

A considerable literature exists around Durga in the Bengali language and its early forms, including avnirnaya (11th century), Durgabhaktitarangini by Vidyapati (a famous Maithili poet of 14th century), etc. Durga Puja was popular in Bengal in the medieval period, and records show that it was being held in the courts of Rajshahi (16th century) and Nadia district (18th century). It was during the 18th century, however, that the worship of Durga became popular among the landed aristrocacy of Bengal, the Zamindars. Prominent Pujas were conducted by the landed zamindars and jagirdars, being enriched by emerging British rule, including Raja Nabakrishna Deb, of Shobhabajar, who initiated an elaborate Puja at his residence. Many of these old puja exist to this day. Interestingly the oldest such Puja to be conducted at the same venue is located in Rameswarpur, Orissa, where it has been continuing for the last four centuries since the Ghosh Mahashays from Kotarang near Howrah migrated there as a part of Todarmal's contingent during Akbar's rule. Today, the culture of Durga Puja has shifted from the princely houses to Sarbojanin (literally, "involving all") forms. The first such puja was held at Guptipara - it was called barowari (baro meaning twelve and yar meaning friends)


Image of Durga in an early 19th century lithogragh.Today's Puja, however, goes far beyond religion. In fact, visiting the pandals recent years, one can only say that Durgapuja is the largest outdoor art festival on earth. In the 1990s, a preponderance of architectural models came up on the pandal exteriors, but today the art motif extends to elaborate interiors, executed by trained artists, with consistent stylistic elements, carefully executed and bearing the name of the artist.

The sculpture of the idol itself has evolved. The worship always depicts Durga with her four children, and occasionally two attendant deities and some banana-tree figures. In the olden days, all five idols would be depicted in a single frame, traditionally called pata. Since the 1980s however, the trend is to depict each idol separately.


The bolded part is really disturbing. It proves again that british rule was just a blessing for Hindu Oligarch of Bengal.
 
.
Nothing is being twisted. I have numerous references. You can get several reference from the internet and you should learn the true history.

Brother, truth is not always sweeter. It is sometime of shame and bitter also. We should learn all the history to know the situation.

Was the puja celebrated after the war? YES.

Was the puja celebrated only cause of the war?NO.

Was there Durga Puja before The War? YES

But you are twisting the facts to say that the puja was created just cause of the war.
 
.
Back
Top Bottom