সরকারের মদদে টিভিতে প্রচারিত অমিত ছিলো ফেইক অমিত; ষড়যন্ত্র ফাঁস
লিখেছেন লিখেছেন
কথার_খই ১৩ জানুয়ারি, ২০১৫, ০১:০৮:১০ রাত
সরকারের মদদে টিভিতে প্রচারিত অমিত বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করেছেন কিনা তা নিয়ে এখন দেশে পাল্টা পল্টি রাজনীতি চলছে। বিএনপির
দাবি অমিত শাহ ফোন করেছেন আর আওয়ামীলীগ ও তাদের মিডিয়ার দাবি তিনি খালেদা জিয়াকে ফোন করেননি। আওয়ামীলীগ তাদের মালিকানাধীন টেলিভিশন নিয়ে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে এক প্রকার প্রকাশ্য যুদ্ধে নেমেছে। খালেদা জিয়াকে জাতির কাছে ছোট করতে চরম মিথ্যাচারের আশ্রয় নিচ্ছে আওয়ামীলীগ। আর তাদের সহযোগিতা করছে এই সরকারের সময় লাইসেন্স পাওয়া টেলিভিশনগুলো।
শেখ হাসিনা ৫ জানুয়ারির অবৈধ নির্বাচনের পর মেয়েদের মুসলমানির উপর একটি কনফারেন্সে যোগ দিতে যুক্তরাজ্যে সফর করেন। সেই সময় বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনার নামে টুইস্ট করেছেন জাতির সাথে তিনি। এরপর জাতিসংঘের মহাসচিবের সাথেও আলোচনার বিষয় নিয়েও টুইস্ট করেছেন হাসিনা। এটা পরে বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর দফতর ও জাতিসংঘের মহাসচিবের দফতর বাংলাদেশ সরকারের মিথ্যাচারের প্রতিবাদ করে তাদের ওয়েভ সাইটে তথ্য প্রকাশ করেন। এবং দুটি দফতর বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে ডেকে সর্তক করে দেন। তখন টেলিভিশনগুলো কি ফোনালাপ বা ঐ দফতরের প্রতিবাদ নিউজে প্রকাশ করেছিলো?
এর আগে হাসিনার সাউথ সাউথ পুরস্কার নিয়ে যখন সন্দেহ তৈরি হলো এবং সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি উঠে আসলো যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ঐ প্রতিষ্ঠান কোনো পুরস্কার দেয়নি তখন কিন্তু এই টেলিভিশনগুলো সত্য উতঘাটনে এমন করে মাঠে নামেনি। সাউথ সাউথ পুরস্কারের আয়োজকরা যখন তাদের ওয়েভ সাইটে প্রকাশ্যে জানিয়ে দিলো যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তারা কোনো পুরস্কার দেয়নি তখন এই সংবাদটি প্রচারেরও প্রয়োজন মনে করেনি আজকে খালেদা জিয়া- অমিত শাহ ফোনালাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামা মিডিয়াগুলো। কিন্তু কেনো?
এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে পাওয়া গেলো ভয়াবহ মিথ্যাচারের রাজনৈতিক নোংরা খেলার তথ্য। বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়াকে চরম শত্রুও কখনো তার কথা বা বক্তব্য কিংবা বিরোধীমতের বিরুদ্ধে অশোভন আচরনের অভিযোগ তুলতে পারেনি। সেখানে এত বড় মিথ্যা কী খালেদা জিয়া বলতে পারেন? এমন প্রশ্ন করা হলো আওয়ামীলীগের এক সিনিয়র নেতার কাছে। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানালেন, আওয়ামীলীগ বহুদিন ধরে একটি রাস্তা খুজঁছিলো খালেদা জিয়াকে বিপদে ফেলতে যার জন্য অনেক শক্তি অর্থ ও মেধা ব্যয় করতে হয়েছে এই দলটিকে। খালেদা জিয়াকে অবশ্যই অমিত শাহ ফোন করেছেন বলে আমার ধারনা। তাহলে মিডিয়াতে যে অমিত শাহ বললেন তিনি কথা বলেননি সবকিছু ফেইক? এ প্রশ্নের উত্তরে ঐ নেতা বলেন, আমাকে আপনি বলেন, মিডিয়াতে যে অমিতের টেলিফোন ভয়েজ শুনেছেন তা যে সত্যিকারের অমিত তার গ্যারান্টি কী?
কোলকাতার সাংবাদিক সুরজিত জানান, আমরা জেনেছি অমিত শাহ ফোন করেছেন। এবং আনন্দবাজারসহ দিল্লির কয়েকটি কাগজে এই নিয়ে সংবাদ প্রকাশ পেয়েছে। সুরজিত বলেন, এনডিটিবির এক সাংবাদিক তাকে জানিয়েছে, খালেদা জিয়া ও অমিতের মধ্যে ৯ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড কথা হয়েছে বলে বিজেপির মিডিয়া উইং তাকে জানিয়েছে।
প্রথম আলোর এক সিনিয়র সাংবাদিক জানান, তিনি নিজে ফোন করে টেলিফিানের বিষয়টি কনফার্ম হয়েছেন। কিন্তু সম্পাদক মতিউর রহমানের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে তিনি বলেন এটা এখন প্রকাশের সময় নয়। এখন ডিজিএফআই নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যম চলছে। এই নিউজ প্রচার করলে আবার কোনো বিপদে ফেলে দেবে সরকার। আপাততো চুপ থাকি পরে দেখা যাবে।
যে ৭১ টিভি সবার আগে খালেদা জিয়াকে মিথ্যাবাদী প্রমাণে মাঠে নেমেছে সেই টিভির সিনিয়র সাংবাদিক শামিম আল আমিন লন্ডনে থাকা এক সাংবাদিককে জানিয়েছেন টেলিভিশনে প্রচারিত অমিত হলো মিডিয়া ট্রায়ালের অমিত। এই অমিতের কোনো অস্তিত্ব নেই। এটা সরকারের পুরস্কারের আশায় ৭১ এর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্লান এটি। সে নাম না বললেও ধারনা করা হচ্ছে সেই ব্যক্তিটি মোজাম্মেল বাবু। ৭১ টিভির আরেক রিপোর্টার মহিম মিজান জানান, প্রথমে এ্যাসাইনমেনটি তাকে দেয়া হয়েছিলো কিন্তু কি কারনে পরে ফারজানা রুপাকে দেয়া হলো তা তিনি পরে বুঝতে পেরেছেন। মহিম বলেন, ৭১ টিভি আসলে সরকারের হয়ে বিরোধীদলের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জে নেমেছে। তিনি আগে দিগন্ত টিভিতে ছিলেন বলে তাকে আওয়ামীলীগ প্রমাণের জন্য অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিতে হচ্ছে। ৭১ টিভি তাকে জামায়াতি মনে করে বলে তাকে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।
মজার বিষয় ৭১ টিভিতে ভয়েজ দেয়া অমিতের ভয়েজের সাথে টুয়েন্টিফোর টেলিভিশনের ভয়েজের মধ্যে অনেক পার্থক্য লক্ষ করা গেছে। অমিত শাহ‘র কন্ঠ হলে দু রকম শোনার কোনো কারণ নেই। আবার নির্বাচনে গণসংযোগে টিভিতে দেখানো অমিতের কন্ঠের সাথে বাংলাদেশে ফোনে যে কন্ঠ ব্যবহার করা হয়েছে তার সাথে কোনো মিল নেই। তাহলে বলা যায় এটি বানোয়াট ও মিথ্যা অমিতের কন্ঠ।
বিএনপির স্থায়ীকমিটির এক নেতার কাছে জানতে চাওয়া হয় যদি অমিত শাহ খালেদা জিয়াকে ফোন করে থাকেন তাহলে সেই বিষয়টি নিয়ে এত আলোচনা ও সমালোচনা হলেও কেনো ভারত সরকার কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না। উত্তরে বলেন, ভারত সরকার যে এর উত্তর দেয়নি আপনি কি করে বলছেন? ভারত সরকার কী দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে বলে আসবেন আমরা প্রতিবাদ পাঠিয়েছি? ঐ নেতা বলেন, আপনারা খেয়াল করেছেন এখন মঈন উদ্দিন ফখরুদ্দিনের চেয়েও বেশি মিডিয়া কন্ট্রোল করছে এই সরকার। কেবল তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারের কারনে একুশে টিভিকে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আওয়ামীলীগের খুব ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি হলেও ছাড় পায়নি এর মালিক আব্দৃস সালাম। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। এর পর সরকারের নির্দেশর বাইরে কোনো টিভি বা সংবাদপত্র কিছু প্রকাশ করতে পারবে? খালেদা জিযার কোনো নিউজ কী এখন আপনারা লাইভ সম্প্রচার করতে পারছেন? সারাদেশে আন্দোলনের কোনো সংবাদটি আনসেন্সর প্রচার করতে পারছেন? কি ঘটছে দেশে আপনারা কী জানাতে পারছেন? অবরোধের সঠিক চি্ত্র কী আপনারা দেখাতে পারছেন? ভারতের প্রতিবাদ সরকারের কাছে আসবে কিন্তু সরকার যদি তা প্রচার না করে জাতি জানবে কি করে?
ফোনের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় এসএ টিভির এনসিএ কর্মকর্তার কাছে। তিনি বলেন আমরা বহু চেষ্টা করেও বিজেপি সভাপতির সাথে কথা বলতে পারিনি। টানা ২ দিন চেষ্টার পর বিজেপির এক অফিস কর্মকর্তা জানান, স্যার অনেক ব্যস্ত আছেন। তাহলে ৭১ ও টুয়েন্টিফোর টিভি কি করে কথা বললো? এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন বুলশিট। বাংলাদেশের মত একটি ছোট দেশের টিভি রিপোর্টার ফোন দিবেন আর তিনি সরাসরি ফোন ধরবেন এটা পাগলও বিশ্বাস করবে? তার কী কোনো পিএস নেই। যে দলটি ক্ষমতায় তার প্রধানের নাম্বার একজন রিপোর্টারের কাছে দিয়ে দিবে একজন রাষ্ট্রদূত? এটাও বিশ্বাস করতে হবে?
ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সিনিয়র এক সাংবাদিক জানান দুটি টিভিতে প্রচারের পর আমাদের উপরও চাপ আসে অমিত শাহর বক্তব্য প্রচারের জন্য। আমরা বহু চেষ্টা করে তার সাথে কথা বলতে পারিনি। তাহলে ঐ দুটি টিভি কী করে কথা বললো অমিত শাহর সাথে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন বিষয়টি আমার বোধগম্য্য নয়। অফ দ্যা রেকোর্ডে বলতে পারি এটা ফেইক অমিত হতে পারে। কারণ এই টিভিগুলোর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করার মত আর কেউ নেই। এটা হয়তো সরকারের শায় আছে বলেই সম্ভব।
নাগরিকরা বলছেন, বিজেপি প্রেসিডেন্ট এর সাথে খালেদা জিয়ার কথোপকথনে আওয়ামীলীগের অস্বস্তি প্রমাণ করছে দলটি ভারতের উপর কতটা নির্ভরশীল। আর এ কারণে যেভাবেই হোক অমিত শাহের সাথে খালেদা জিয়ার কোন কথা হয়নি এরকমটি প্রমাণ করতে এমবেডেড সাংবাদিকদের দিয়ে একটি নির্জলা মিথ্যা নাটক সাজিয়েছে সরকার। আনন্দবাজারসহ ভারতের বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম যে সংবাদটি গুরুত্বের সাথে পরিবেশন করেছে সেটিকে ফেইক ভয়েজের মাধ্যমে মিথ্যা প্রমাণ করে বাহ্যিকভাবে আওয়ামীলীগ তাদের পাশে ভারত রয়েছে প্রমাণের চেষ্টা করলেও ভিতরে ভিতরে দলটি বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে।
আমার দেশের একজন সিনিয়র সাংবাদিক বলেন, বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধীজোট আওয়ামীলীগের মতো ভারতের প্রেসক্রিপশনে বা মদদে চলে না। দলটি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রথম রাষ্ট্রপতি যিনি বাংলাদেশকে বিদেশি প্রেসক্রিপশনে না চালিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী চেতনায় দেশকে পরিচালনা করেছেন। অমিত শাহকে নিয়ে বিএনপি কোন মিথ্যাচারের প্রশ্নই উঠে না। কারণ দলটি ভারতঘেঁষা দল নয়। আর বিরোধীজোটের অধিকাংশ দলই ভারতবিদ্বেষী। ভারতকে নিয়ে রাজনীতি বিএনপি নয় আওয়ামীলীগ করে।
বিজেপি সভাপতি বিএনপি নেত্রীকে ফোন করেছেন এ সংবাদে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ভেঙে পরতে পারে এরকম আতঙ্ক থেকেও শেখ হাসিনা দলীয় মিডিয়াকর্মীদের দিয়ে এমন মিথ্যাচার করতে পারেন বলে মন্তব্য করেন পুলিশের এক সাবেক কর্মকর্তা।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েব সাইটে দেয়া যে বক্তব্যকে ঘিরে তারেক রহমানের উপদেষ্টা হুমায়ূন কবিরকে নিয়ে আওয়ামীলীগ মিথ্যাচার করছে তার প্রতিবাদ জানিয়েছে যুক্তরাজ্য বিএনপি। তারা বলছেন, হুমায়ূন কবির দীর্ঘ একবছর ধরে বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। তাকে জড়ানোটা আওয়ামীলীগের আরেকটি মিথ্যাচার।
বিস্তারিত
সরকারের মদদে টিভিতে প্রচারিত অমিত ছিলো ফেইক অমিত; ষড়যন্ত্র ফাঁস