consider this article too
16 Jul, 2014
আরিফুজ্জামান তুহিন
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নিবেদিত প্রাণ সংগঠক আরিফ বুলবুল একটি স্টাটাস দিয়েছেন তার ফেসবুকে। সেটা হলো ‘দক্ষিণ তালপট্টি তো পানিতে তলিয়ে গেছে, ওটা নাই বলে যারা আনন্দ করছেন, তাঁদের একটা সুসংবাদ দেই। ওই জায়গায় ভারত ২০০৬ সালে ১০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত পেয়েছে।’
স্টাটাসটি তিনি ব্লগার পিনাকি ভট্টাচার্য্য'র ফেসবুক স্টাটাস থেকে কপি মেরেছেন। ১০০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস দুই গাড়ি বা দুই লাখ গাড়ি খিরসাপাতি আম না যে, আপনি বিষয়টি ওভারলুক করবেন।
একশ ট্রিলিয়ন গ্যাস মানে বাংলাদেশের ১২৫ বছরের জ্বালানি। সো, পরিস্থিতি যদি এরকম স্থানে যায় তাহলে সেটা ভীষণ ব্যাপার। কিন্তু যারাই হাইডো কার্বন নিয়ে আমপারা লেভেলের পড়াশুনা আছে তারাই মানবেন যে, দেড় বর্গ কিলোমিটারের একটি হারিয়ে যাওয়া তালপট্টি বা নিউমুর নামক স্থানে ১০০ টিসিএফ কেন ১ টিসিএফ গ্যাস পাওয়াই বিরাট ব্যাপার।
এ বিষয়টি নিয়ে জামাত, বিএনপি এবং কিছু না-বুঝ প্রগতিশীল বন্ধুরাও হাউকাউ করছেন। এ কারণে মনে হলো বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার।
ভূমিকার পরিবর্তে নিজের অবস্থান ঘোষণা দেই। তাহলো, বাংলাদেশে হাসিনা অথবা খালেদা যিনিই ক্ষমতায় থাকেন তাতে দেশের স্থলভাগ ও জলভাগে যে সম্পদ পাওয়া যাবে তার মালিকানা কিন্তু আমাদের হবে না। ফলে এই গ্যাস পাওয়ার মধ্যে ব্যবধান খুব বেশি না।
বরং এরকম গ্যাস পেলে তা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কনকো-ফিলিপসই শুধু নয় তাবত সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর কোম্পানি ছুটে আসবে। এমন সব শর্তে তাদেরকে এসব ব্লকগুলো ছেড়ে দেওয়া হবে তাতে বাংলাদেশের গ্যাস বিদেশীদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক বাজার দরে কিনতে হবে। এবার বলেন, গ্যাস পেলেই বা আমাদের লাভ কি? সে আলোচনা অন্য সময় করা যাবে।
বিলম্বিত বোধের উদয় ভারতীয় মিডিয়ার
রায়ে কিন্তু স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, ভারতের যে বিচারপতি শ্রী নিবাস রাও এই বিচার প্রক্রিয়ায় ছিলেন, তিনি এই রায়ের ব্যাপারে আপত্তি দিয়েছেন। তার বক্তব্য ভারতের হার হয়েছে এ কারণে তিনি নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে রেখেছেন।
ভারতের মিডিয়াগুলোর দিকে চোখ রাখুন। প্রথম তিন চারদিনের মধ্যে তারা চুপ। যেনো হজম করতে সময় লেগেছে বাংলাদেশের কাছে হারটা। এ সময় তাদের টেলিগ্রাফ পত্রিকা তো লিখেছে, বাংলাদেশের কাছে ভারতের বিশাল হার। পশ্চিমবঙ্গের সমান জলরাশি পেয়েছে বাংলাদেশ।
এরপর মিডিয়া আস্তে আস্তে ঘুরে দাঁড়িয়ে ব্যাটল শুরু করেছে। রায়ে বাংলাদেশের হার না জয় সে আলোচনায় আমি যাচ্ছি না। আমার পয়েন্ট বা ফোকাস লাইন হলো তালপট্টিতে ১০০ টিসিএফ গ্যাসের খবরকে নানান এঙ্গেলে বিশ্লেষণ করে দেখানো।
রায়ের পর অষ্টম দিন আজ। এখন পর্যন্ত ভারতীয় সরকার কিন্তু কোন মতামত দেয়নি। তারা বলছে যে, তারা পর্যালোচনা করে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। ওরে বাবা, ভারতের এতোবড় জয় হলো, ১০০ টিসিএফ গ্যাস পেয়ে গেলো কিন্তু তারা খুশি না? ব্যাপারটি মাথার ওপর দিয়ে গেল আর কি!
ভারতে গ্যাসের রিজার্ভ কত
পিনাকি ভট্টাচার্য দাবি করছেন তালপট্রিতে ১০০ টিসিএফ গ্যাসের মজুদ আছে। এই মজুদ হলো দেশটির সর্ববৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র কৃষ্ণা গোধাবেরী মজুদের দ্বিগুন। এখন অংকটা কিন্তু তিনি সোজা করে দিলেন। তা হলো, তার দেওয়া লিংক বলছে, ভারতের সর্ববৃহ গ্যাসক্ষেত্র কৃষ্ণা গোধাবেরীর মজুদ তাহলে ৫০ টিসিএফ, তো হিসেবে সহজ দ্বিগুন করে দিন, তালপট্টির রিজার্ভ হিসেব মিলে যাবে, এটা ১০০ টিসিএফ হয়ে যাবে। এসব তথ্য তিনি পেয়েছেন ফাস্টপোর্ট
click here নামের একটি ভারতীয় পোর্টাল থেকে।
ফাস্ট পোর্ট কেন এ নিউজ করেছে সেই অনুসন্ধানে যাবার আগে আমরা অনুসন্ধান করে দেখবো কৃষ্ণা গোধাবেরির মজুদ কত, তাহলে সেই মজুদকে আমরা দুই দিয়ে গুন করে দেখলেইতো নিউমুর দ্বীপ আমাদের ভাষায় তালপট্টিতে কত গ্যাস আছে সেই মজুদ বের করা যাবে (আদৌ যদি সেখানে গ্যাস থেকে থাকে)।
ভারত সরকার ২০ বছর আগে গ্যাসের সর্বশেষ মজুদ নির্ধারণ করেছিলো। ফলে ২০০৬ সালে গ্যাস পেয়েছে কিন্তু তা রির্জাভের মধ্যে যায়নি তা হতে পারে না। সর্বশেষ গত জুনে ভারতের জ্বালানি মন্ত্রী গ্যাসের রির্জাভ কত পরিমাণ আছে তা ঠিক করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
click here
সর্বশেষ ২০১৪ সালের ২৮ জুন তাদের মজুদ সম্পর্কে একটি তথ্য প্রকাশ করেছে। সেই তথ্য অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে, দেশটির মোট মজুদ ৪৭ টিসিএফ এবং দেশটির সব থেকে বড় গ্যাসক্ষেত্র কৃষ্ণা গোধাবেরির মজুদ সম্পর্কে বলা হয়েছে ১০.৩০ টিসিএফ। এখন যদি আমরা কৃষ্ণা গোধাবেরির ১০.৩০ টিসিএফকে দুই দিয়ে গুন করি তাহলে তা দাড়াবে ২০.৬০ টিসিএফ। ফাস্টপোর্টের বক্তব্য অনুযায়ী যদি তালপট্টিতে গ্যাস কৃষ্ণা গোধাবেরির (১০.৩০ টিসিএফ) দ্বিগুন হয় তাহলে তার পরিমান দাড়াবে ২০.৬০ টিসিএফ।
আরো সুনির্দিষ্ট করে বললে এটা বলা যায় যে, নিউমুর বা তালপট্টিতে আদৌ গ্যাস আছে কিনা এ সংক্রান্ত কোন তথ্য উপাত্ত এ পর্যন্ত দেয়নি ভারত সরকার ও দেশটির গণমাধ্যম। যখন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যেকার বিরোধ মিমাংসা হয়েছে তার অন্তত চার দিন পর তাদের একটি পোর্টাল দাবি করছে যে, ভারত সেখানে ১০০ টিসিএফ গ্যাস পেয়েছে।
ফাস্টপোর্টের খবরটি এনডিটিভিও প্রকাশ করেছে। কিন্তু এনডিটিভি গ্যাসের রিজার্ভের অংকটি বলেনি। এনডিটিভি বলেছে, কৃষ্ণাগোধাবেরির দ্বিগুন। আর কথিত ভারতীয় ডিফেন্স ফোরাম (এটা ভারত থেকে চালানো হয় না) ফাস্টপোর্টের নিউজটি হুবহু কপি এন্ড পেস্ট করেছে। আর এসব লিংকই জামাত-বিএনপি অনলাইনে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
সারা এশিয়াতে প্রমাণিত মজুদ ও সম্ভাব্য মজুদ মিলিয়ে গ্যাস থাকতে পারে ১৩৪.৬ টিসিএফ। এর মধ্যে বাংলাদেশের ৩২.১ টিসিএফ, ভারতে আছে ৪৭ টিসিএফ, বাকিটা শ্রীলংকা, পাকিস্তান ও মিয়ানমারে; এটা বলছে আমিরকা।
ভারতীয় গণমাধ্যম অবশ্য বলছে তাদের রির্জাভ আছে ৩৮ টিসিএফ।
click here
একটা সাধারণ জ্ঞান জানাই মগজবাজারের ভক্তদের। কৃষ্ণাগোধাবেরির বেসিনের আয়তন হলো ৫০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। আর সেখানে রিজার্ভ ১০.৩ টিসিএফ। আর আমাদের সাথে ভারতের বিরোধ ছিলো ২৫ হাজার ৬০২ বর্গ কিলোমিটার নিয়ে। এখন বলুন ১০০ টিসিএফ গ্যাস আমরা কোথায় রাখবো?
খনিজ সম্পদকে মিডিয়া কিভাবে দেখে
ভারত ১০০ টিসিএফের একটি মজুদ ২০০৬ সালে আবিস্কার করেছে আর এই ব্যাপারটি দেশটির গণমাধ্যম চেপে রেখেছে এটা শুধু পাগল ও শিশুরাই বিশ্বাস করবে।
খনিজ সম্পদ বিশেষত হাইডো কার্বন জাতীয় কোন আবিস্কারকে গণমাধ্যম অনেক বড় সংবাদ হিসেবে গণ্য করে থাকে। যে কোন প্রতিবেদন থেকে একটি গ্যাসক্ষেত্র বা তেলক্ষেত্রের আবিস্কারকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে তারা ছাপায়।
ভারতের ‘বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড’
click hereপত্রিকা আমাদের জানাচ্ছে দেশটির কাশ্মির সীমান্তের হিমালয়ে তেল পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এটা পত্রিকাটিকে বলেছে দেশটির তেল গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান ওএনজিসি। তারা মনে করছে, যেহেতু কাশ্মিরের পাকিস্তান অংশে তেল পাওয়া গেছে তাতে ভারতের অংশেও পাওয়া যাবে।
উপরের শব্দগুলো একটু মন দিয়ে দয়া করে আবার পড়ুন। তেল পাওয়ার কোন নিশ্চিত খবর ওএনজিসি ভারতকে দিতে পারেনি। কিন্তু যেহেতু পাকিস্তান পেয়েছে সীমান্তের ওপারে এ কারণে ভারত অংশেও তেল পাওয়া যাবে।
একবার ভাবুন, ১০০ টিসিএফ গ্যাস পাওয়ার খবর তাহলে কতভাবে, কি কি পদ্ধতিতে তারা বলতো। ২০০৬ সালের আবিস্কার। কিন্তু দেশটির কোন সরকারি কর্মকর্তা বা মন্ত্রীর কোন ভাষ্য নেই।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম খনিজ সম্পদ প্রাপ্তির খবরকে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে থাকে। গত ২৫ জুন সচিবালয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে আমরা চারজন রিপোর্টার (ডেইলি সানের শামীম জাহাঙ্গীর, বাংলানিউজ২৪.কমের সিরাজুল ইসলাম, দৈনিক আমাদের সময়ের লুৎফর রহমান কাকন ও আমি) আটকে ধরি।
তার কারণ হচ্ছে এর আগে কনকো-ফিলিপসের প্রতিনিধি দল প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে গেছেন। আমরা প্রতিমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করি, কনকো-ফিলিপস কি বলে গেলো। প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আমাদের জানান, যে কনকো-ফিলিপস ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে ৭ টিসিএফ গ্যাস পেয়েছে এটা আমাদের জানিয়েছে। তবে কিছু শর্ত নিয়ে তারা আলাপ করতে চায়।
click here
এ প্রতিবেদনটি পরের দিন কালের কণ্ঠ সহ অন্যান্য পত্রিকা লিড আইটেম করে। প্রথম আলো যেহেতু ওখানে উপস্থিত ছিলো না সে কারণে নিউজটি ধরতে পারেনি, তারা দুইদিন পরে ভিন্ন অ্যাঙ্গেলে রিপোর্টটি করে। কিন্তু প্রত্যেকের রিপোর্টে সরকারের দায়িত্বশীল প্রতিনিধি, হয় প্রতিমন্ত্রী নতুবা পেট্টোবাংলার চেয়ারম্যানের বক্তব্য ছিলো।
কিন্তু ফাস্টপোর্টের রিপোর্টটি দেখলে গণমাধ্যমের কর্মী হিসেবে এটি স্রেফ একটি গায়েবি নিউজ হিসেবেই ধরে নিবো। এতো বড় গ্যাসক্ষেত্র ভারতে পাওয়া গেলো কিন্তু দেশটির কোন কর্মকর্তা বা মন্ত্রীর বক্তব্য নেই বা যারা আবিস্কার করলো তাদের কারোরই বক্তব্য নেই। এমন কী এই বিশাল গ্যাস কারা কিভাবে আবিস্কার করলো তার কথাও সেই প্রতিবেদনে নেই।
ফলে এই নিউজটিকে আমি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মিডিয়া কূটনীতির একটি চাপ হিসেবেই দেখবো। যতক্ষণ না পর্যন্ত ভারত সরকার বলছে ১০০ টিসিএফ গ্যাসের কথা।
আর একটা তথ্য শেয়ার করে এই বক্তব্যটি শেষ করবো। কোথাও তেল গ্যাস আছে এটা জানার পদ্ধতি হলো টু ডি বা থ্রি ডি সার্ভে করা। এটা করতে আকাশ থেকে বিমান ও জলপথে জাহাজ লাগে। এক দুইদিনের ব্যাপার না। দিনের পর দিন এটা করতে হয়।
এখন প্রশ্ন হলো টুডি বা থ্রিডি কারা করবে? হয় আপনি বিদেশী কম্পানির কাছে ব্লক আকারে ছেড়ে দিবেন তারা করবে, না হয় দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব কোম্পানি করবে। যেই করুক আপনাকে পিএসসি করতে হবে। এখন পাশের একটি দেশ পিএসসি করলো আপনারা কেউ জানলেন না, গোপনে করে ফেললো? আসুন সবাই একটি হাসি।
আমাদের দেশে যখন পিএসসি হয় তার পরেরদিন পত্রিকাগুলো খুলে দেখেন এটা প্রধান খবর হিসেবে আসে। ডকুমেন্ট থেকে যায়। আর ওরা করলো কেউ জানলো না। করে থাকলে ওখানে কার সাথে পিএসসি করা হয়েছে তা যদি একটু খুলে বলেন জামাত-বিএনপির লোকজন তাহলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হয়।
আর তা না হলে রাতের আঁধারে এলিয়েনরা এসে সেখানে টু ডি ও থ্রি ডি করে যেসব তথ্য উপাত্ত পেয়েছে তা ভারতকে দিয়েছে। সেই গায়েবি তথ্য দেখে তারা বলতে পারছে যে সেখানে ১০০ টিসিএফ গ্যাস ছিলো।
প্রধানমন্ত্রী ঠিক বলেননি
ভারতের সঙ্গে সমুদ্রজয়ের পেছনে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সরকার গঠন প্রভাব রেখেছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যদি জয়ী হতে না পারতাম, তাহলে ভারতের কাছ থেকে সমুদ্রসীমা আনতে পারতাম কি না সন্দেহ। কারণ অতীতের কোনো সরকার এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর এ তথ্য ভুল। এ কারণে যে নেদারল্যান্ডসের হেগে স্থায়ী সালিসি আদালতের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিরোধ মামলার শুনানি শেষ হয়েছিল ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর। এরপর সেটি ছিল রায়ের অপেক্ষায়।
ফলে ৫ জানুয়ারি নির্বাচিত সরকারের কিছুই করার ছিল না এই রায়ের বিষয়ে। একই সঙ্গে অতীতের কোনো সরকার ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে উদ্যোগ নেয়নি- এমন বক্তব্যও যথার্থ নয়। কারণ এ বিষয়ে বেশ আগে থেকেই কাজ করছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
২০০৩ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে কারিগরি পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছিল। এরপর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেও তৎকালীন প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ গুরুত্বের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তবে বিষয়টিতে বিশেষ গতি আসে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসা মহাজোট সরকারের আমলে।
সাগরে তেল-গ্যাস ব্লক নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সে সময় বাংলাদেশ উপলব্ধি করে দেশ দুটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় আর কাজ হচ্ছে না, প্রয়োজন আইনি লড়াই। ফলে এককভাবে এরকম কৃতিত্ব নেওয়াটা ঠিক না।
আওয়ামী লীগের উৎসাহ না দেখানোর কারণ কি
গেলবার মিয়ানমারের সাথে বিরোধের সমাধান হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকার যে উৎসাহ দেখিয়েছে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার সেই উৎসাহ কেন দেখাচ্ছে না নাগরিক হিসেবে এ প্রশ্নটি থাকতেই পারে।
সরকার ও আওয়ামী লীগ চুপ থাকার কারণেই বিএনপি জামাত খানিটকা দ্বন্ধের মধ্যে থেকেছে প্রথম দিকে, এরপর তারা তারস্বরে চেচানো শুরু করেছে যে বাংলাদেশ হেরেছে ভারতের সাথে। কিন্তু আমার মতটা ভিন্ন।
আওয়ামী লীগ বান্ধব ভারতের কংগ্রেস সরকার এখন আর নেই। মোদি যে খুব পছন্দ করেন হাসিনাকে, এটা ভাবারও কারণ নেই। এর মধ্যে যদি বাংলাদেশ বিশাল সাফল্য বলে চিল্লানো শুরু করেন তাহলে তার ফল ভারত সরকারের জন্য ভালো হবে না। অপ্রস্তুত হবে মোদি সরকার। মোদিকে চটাতে চায়নি হাসিনা। এ কারণেই চুপ আছে। এটা এমন হয়েছে, ‘ঝিনুক নিরবে সহ’।
কেন মার্কিন তথ্যের ওপর আস্থা রাখবো
মার্কিনীদের আমি খুব পছন্দ করি, এ কারণে তাদের দেওয়া তথ্যে আমি খুব আস্থাশীল এমন করে কেউ আশাকরি ভাববেন না। তেল-গ্যাস বা হাইডো কার্বন নিয়ে সারা দুনিয়ায় মার্কিনীদের কাছে সব তথ্যই আছে বলে আমি মনে করি। তাদের দেওয়া তথ্যগুলো বেশ খানিকটা নির্ভূল। তাদের দেওয়া তথ্যগুলো বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হুবহু মিলে গেছে, এ কারণে তাদের দেওয়া তথ্যের ওপর আস্থা রাখছি।
সারা পৃথিবীতে কতখানি তেলগ্যাস আছে তার হিসেব রাখার জন্য আমেরিকার একটি প্রতিষ্ঠান আছে নাম 'us geological survey', তারা ২০০১ সালে একবার বলেছিলেন বাংলাদেশে ৩২.১ টিসিএফ গ্যাস আছে। এর মধ্যে স্থলভাগে আছে ২৩.৩ টিসিএফ আর সাগরভাগের ২০০ কিলোমিটারর মধ্যে আছে ৮.৮ টিসিএফ।
এত গ্যাস আছে এই অজুহাতে তখন বাংলাদেশ থেকে ভারতে গ্যাস বিক্রির কথা আসে। তখনই একপ্রকার টাউট বুদ্ধিজীবী দেশে ছড়াতে থাকেন বাংলাদেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে। মাটির নিচে রেখে লাভ কি বেচে দেওয়াই ভাল।
জাতীয় কমিটির বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ে কিন্তু ভারতে গাস পাচার হয়নি। সে আরেক কথা। কিন্তু আমেরিকার 'us geological survey'র করা জরিপে (এই জরিপ পেট্টোবাংলা ও তারা মিলে করেছে) ও হিসেবে যেখানে যেখানে যে পরিমান গ্যাসের কথা বলা হচ্ছে সেখানে সেই পরিমাণ গ্যাসের আধার/ট্রেস পাওয়া যাচ্ছে।
১০ ও ১১ নম্বর ব্লকটি দেওয়া হয়েছিলো মার্কিন কোম্পানি কনকো-ফিলিপসকে। ২০০’শ কিলোমিটার সাগরের মধ্যে এখান থেকে us geological survey অনুযায়ী গ্যাস থাকার কথা ৮.৮ টিসিএফ। সম্প্রতি কোম্পানি জানিয়েছে যে, সেখানে ৭ টিসিএফ গ্যাস টু ডি’র মাধ্যমে চিহ্নিত করা গেছে।
click here
তার মানে আমেরিকা বলেছিলো যে ওখানে ৮.৮ টিসিএফ গ্যাস আছে সেখানে ইতিমধ্যে ৭ টিসিএফের খবর পেয়েছে কনকো-ফিলিপস। এ কথার অর্থ হলো আমিরকার কাছে সারা পৃথিবীর তেল গ্যাসের হিসেব আছে। দেখুন মার্কিনীরা আমাদের তেল গ্যাস সম্পর্কে কি বলছে।
click here
ঠিক এ কারণে ভারতের তেল গ্যাস নিয়ে ভারত সরকারের পরেই আমি আমেরিকার তথ্যকে গুরুত্ব দিবো। আমেরিকা তাদের অনুসন্ধানে এরকম কিছু বলছে না। ভারত সরকার কোথাও বলেনি যে নিউমুর বা তালপট্টিতে তাদের ১০০ টিসিএফ গ্যাস আছে।
ভারতের কোন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী কি প্রেসকে এরকম তথ্য দিয়েছে যে আমাদের এখানে ১০০ টিসিএফ গ্যাস আছে? আমি অন্তত জানি না। কিন্তু আমার দেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ আমাকেসহ আরো দুটি প্রেসকে সচিবালয়ে বলেছে যে সাগরের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে ৭ টিসিএফ গ্যাস কনকো-ফিলিপস পেয়েছে।
যদি সত্যিই ১০০ টিসিএফ তারা পায় তাহলে তারপাশে আমাদের এসএস ১ ব্লক আছে, একদম কোলঘেষে, আমরা অন্তত ৫০ টিসিএফ পাবো মনে রাখবেন। নিশ্চিত করেই মনে রাখেন আমরা সেখানে পাবই।
শেষ বক্তব্য, আমরা আমাদের যে অংশ পেয়েছি সেখানে যতই তেল গ্যাস পাই তাতে কি লাভ আছে? লাভ নেই যদি মালিকানা থাকে আমিরকার হাতে।
তালপট্টি নিয়ে হারানো সুর না গেয়ে বরঞ্চ যা পেলাম সেখান থেকে তেল গ্যাস যা পাবো তা আমাদের থাকবে কিনা তাই নিয়ে লড়াইটা প্রয়োজন। পিকিংপন্থি মুক্তিযোদ্ধা, ইপিসিপিএমএল এর গুরুত্বপূর্ন নেতা এবং সমুদ্র বিষয়ক প্রথম লড়াকু যোদ্ধা ও বিশেষজ্ঞ নূর মুহাম্মদের ফেলোম্যান হিসেবে তিনি আমাদের এটাই শিখিয়েছেন, এই সাগরের ওপর যে অধিকার আমরা পেলাম তাকে কাজে না লাগোতে পারলে কোন বিজয় অর্থবহ হবে না।
ভারত দুটি ব্লক হারিয়েছে
ভারতের ৩২ টি ব্লকের মধ্যে এই বিরোধ নিস্পত্তির পর ভারত ২০ ও ২১ নম্বর ব্লকটি হারিয়েছে সম্পূর্ণভাবে। ব্লক দুটি এখন বাংলাদেশের মধ্যে পড়েছে। শুনে আশ্চর্য্য হচ্ছেন? এ বিষয়ে সকালের খবর পত্রিকার প্রতিবেদনটি পড়ুন। আর পাশেল ম্যাপটি মিলিয়ে দেখুন।
click here
ছাগলে কাঠালপাতাই খায় না, গ্যাস ও খায়। আমি জানি ছাগলে যা পায় তাই খায়। কিন্তু ঢাকায় এসে জানলাম সে শুধু কাঠাল পাতা খায়। এ কারণে নাকি মগবাজার এলাকাতে কোন কাঠাল গাছ নাই সেই ৭১ এর আগে থেকে।
যা হোক, আমি আমার পরিচিতদের বলি ছাগলে যা পায় তাই খায়। এমন কী যদি ফ্রিতে গ্যাসও পায়। দেশে ছাগলের সংখ্যা সংখ্যাগতভাবে বাড়ছে। তালপট্টির গ্যাস যদি তারা খেয়ে ফেলে তাতে আশ্চায্য হবার কিছু নেই।
ছাগলগুলোকে অপারেশন করলে পেট চিরেই হয়তো কেবল ১০০ টিসিএফ গ্যাস বের করা সম্ভব। তা না হলে দেড় বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ১০০ টিসিএফ গ্যাস পৃথিবীর আর কোন ধরাধাম রাখতে পারবে না। সম্ভবও না। এটা একমাত্র ব্লাক বেঙ্গল গোট দ্বারাই সম্ভব।
ওহে আদম ও ইভ জাতি, ন্যায় সংগ্রামের জন্য মিথ্যা কথা বলার দরকার নেই। ফটোশপে ছবি কাটাকুটি করার দরকার নেই। ন্যায় সংগ্রামের জন্য একটি শব্দই যথেষ্ট। পৃথিবীর কোন ন্যায় সংগ্রাম মিথ্যা দিয়ে পরিচালিত হয়নি, সম্ভবও না।
বরং তোমাদের মত চারপায়ে জীবেরা এইসব ঝাড়ফুক তুকতাক তথ্যের কারণে ন্যায় সংগ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের সক্ষমতায় তেল গ্যাস আমরাই তুলবো। বিদেশীদের দিবো না এই চেতনার জন্য মিথ্যা, ভন্ডামির আশ্রয় নেওয়ার দররকার নাই। বোঝা গেলো?
আরিফুজ্জামান তুহিন: সাংবাদিক
সৌজন্যে: ইস্টিশন ডটকম