Md Akmal
SENIOR MEMBER

- Joined
- Sep 22, 2010
- Messages
- 2,114
- Reaction score
- 1
- Country
- Location
সরকারের ব্যর্থ পররাষ্ট্রনীতিতে নিঃসঙ্গ বাংলাদেশ
ডা. সুলতান আহমদ :
পাকিস্তান ভেঙে ১৯৭১ সনে বাংলাদেশের অভ্যূদয় হয়। পাকিস্তান ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুসলিম রাষ্ট্র। নাম ছিল ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান। যদিও কাজেকর্মে ইসলাম ছিল নামে মাত্রই। তবুও মুসলিম বিশ্বে পাকিস্তান একটা বিশেষ ইমেজ সৃষ্টি করেছিল। অবশ্য এজন্য তারা তখন কিছু কাজও করেছিল। যেমন ফিলিস্তিনি ইস্যু ও কাশ্মীর ইস্যুতে তারা ছিল সোচ্চার। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানের জন্ম হয়। এটা হয়েছিল এদেশ অর্থাৎ তৎকালীন বাংলার জনগণের ইচ্ছানুসারে। বলা চলে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে। তৎকালীন এদেশের সকল বড় বড় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পাকিস্তান সৃষ্টির পক্ষে ছিল।
যাহোক আমাদের সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য তৎকালীন পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতা আমাদেরকে সসস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য করে। স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের পক্ষাবলম্বন করে। ভারতের সাথে সংগ্রাম করে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল। তাই মুসলিম বিশ্বে ভারত পাকিস্তান বিরোধী হিসাবে পরিচিত ছিল। অখন্ড পাকিস্তানের ২৪ বছর ভারত সর্বক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ভারত সর্বদা ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তাই সারা মুসলিম বিশ্বে ভারত মুসলিম বিরোধী হিসাবে গণ্য ছিল।
যেহেতু ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলে। অপরদিকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের কথা প্রচার করায় বিশ্বের মুসলিম দেশ ও জনগণের সমর্থন বাংলাদেশ প্রথমদিকে মোটেই পায়নি। সমাজতন্ত্রের অনুরাগী মিসরের হুসনী মোবারক ও ইরাকের সাদ্দাম হোসেন শেষ দিকে বাংলাদেশের পক্ষাবলম্বন করে। তবে এ দু'দেশের সাধারণ জনগণের আবেগও পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। এমনকি ভারতের অধিকাংশ মুসলিম জনগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে সুদৃষ্টিতে দেখে নাই। এ কথার সাক্ষী তৎকালীন ভারত প্রবাসী বাংলাদেশী জনগণ।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশের জন্ম হয়। বাংলাদেশের নেতা মরহুম শেখ মুজিবর রহমান এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে কিছুটা উদ্যোগ নেন। তিনি ভারতের অনিচ্ছা সত্ত্বেও লাহোরের ওআইসি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশকে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা দেন। ইরাক প্রথমে বাংলাদেশকে মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। এমতাবস্থায় আরো অনেকে এ পথে অগ্রসর হয়। কিন্তু সৌদি আরবসহ আরো কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্র ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বর্তমানে একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে সুনজরে দেখেনি। তারাও এসময় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। চীনের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য।
পরবর্তীতে মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেন। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানে ‘বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম' সংযোজন করেন। যা আগে ছিল না। মুসলিম বিশ্বের সাথে বিশেষ সম্পর্ক রাখার কথা সংবিধানে সংযোজন করেন। ক্রমান্বয়ে মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্কের উন্নতি হতে শুরু করে। অন্যদিকে শুধু ভারতের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে তিনি বহুমাত্রিক কূটনৈতিক তৎপরতা চালান। বিশেষ করে আমাদের নিকট প্রতিবেশী চীনের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন করতে সক্ষম হন।
জিয়াউর রহমানের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। ভারত নির্ভরশীলতা কমে আসে। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশে স্বমহিমায় আবির্ভূত হতে শুরু করে। বেশ কিছু সফলতা অর্জন করে। জিয়াউর রহমানের পর প্রেসিডেন্ট এরশাদ আমলেও বাংলাদেশ অনেকটা একই পথে এগুতে থাকে। পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়ার আমলে এ ধারা অব্যাহত থাকে। বিশ্বে বাংলাদেশ ব্যাপক সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জনে সক্ষম হয়।
মাঝে ১৯৯৬ হতে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে তারা ব্যাপক পরিবর্তনের চেষ্টা করেনি। অবশ্য এক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতাও ছিল। কিন্তু এবার ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়। এবার তাদের কর্মকান্ড দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়। দেশপ্রেমিক জনগণ তাদের বিভিন্ন তৎপরতায় শংকিত হয়। দেশ ও জাতির স্বার্থের চেয়ে তারা দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে। নিজ দেশের চাইতে ভারতের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তারা।
সরকার চালাতে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে বাম নেতৃবৃন্দের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন নেতারা সর্বক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ইসলামী প্রভাব খর্ব করার সূক্ষ্ম কৌশল চালু রয়েছে। ভারতপ্রীতি তো রয়েছেই। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে ভারত বস্তা বস্তা টাকা দিয়েছে। ভবিষ্যতেও যাতে দেয় তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এসব কিছুর প্রভাব আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিফলিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি এককভাবে ভারতঘেঁষা হয়ে যাচ্ছে। পরন্তু মুসলিম বিশ্ব ও মার্কিন বন্ধুত্বে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা ইতোমধ্যেই বিভিন্নভাবে প্রকাশ হতে শুরু করেছে। যার ভোগান্তি জনগণকেই বহন করতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও কতদূর গড়ায় দেখা যাক।
ভারতের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ক্ষমতা স্থায়ী করার চেষ্টায় আওয়ামী লীগ কতটা সফল হবে সেটা আগামীতে দেখা যাবে। তবে গত কয়েক বছরের ভারত প্রীতির বদলা সন্তোষজনকভাবে আদায় করতে ব্যর্থ সরকার। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ তো হয়নি বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে ভারত যত যুক্তি দেখাক না কেন তাতে বাংলাদেশের জনগণের মন ভরছে না। বাংলাদেশ সরকারের সাফাই গাওয়াও এক্ষেত্রে দেশেবাসীকে খুশী করতে পারছে না। সীমান্ত চুক্তির নামে আমাদের জমি ভারত নিয়ে যাচ্ছে এটা কোন দেশপ্রেমিক নাগরিক কানে নিতে পারে না। ছিটমহল সমস্যারও সন্তোষজনক সমাধান হচ্ছে না। তিস্তা ও টিপাইমুখে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করার প্রচেষ্টা হতে ভারত বিরত হচ্ছে না। বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ করে আনা হল। দেয়া হল অযাচিত সম্মান। কিন্তু সব বিফলে গেল। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারত মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক রাখে শুধু নামে। বাণিজ্যিক ও অন্যান্য স্বার্থ এখানে মুখ্য। ইসরাইলের সাথে ভারতের সম্পর্ক আন্তরিক। ট্রানজিট করিডোরসহ সকল ভারতীয় স্বার্থ রক্ষার চুক্তি করে নিয়েছে। বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছুই পাচ্ছে না। পাবেও না। অতীত ইতিহাস তাই বলে। কাশ্মীরের ইতিহাস একই কথা বলে। যদি নবাব সলিমুল্লাহর মুসলিম লীগ না হত আর না থাকত জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব তাহলে বাংলাদেশ আর একটা কাশ্মীর হত।
চীনের সাথে বাংলাদেশের সস্পর্ক বর্তমানে খুবই শীতল। অতি ভারতপ্রীতি চীন ভাল চোখে দেখছে না। এতদ্বাঞ্চলে ভারত ও চীন বিভিন্ন ক্ষেত্রে একে অন্যের প্রতিদ্বনদ্বী। ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলোকে এটা বুঝে চলতে হয় ভারসাম্য বজায় রেখে। কিন্তু বাংলাদেশ সে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। চীনের সাহায্যে নির্মিত আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টার এর নাম পাল্টে ফেলা হয়েছে। এটা চীন সরকার সহজভাবে নেয়নি। যদিও ব্যাপারটা এমন কিছু নয়। তবুও এটা না করলেও চলত। সব মিলিয়ে চীনকে বৈরী বানিয়ে শুধু ভারতকে খুশী করলে চলবে না। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তা নিয়ে ভাবছে বলে মনে হয় না।
পৃথিবীর বর্তমান একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রতি খুব সন্তুষ্ট নয়। ১৯৭১ সনে আমেরিকা অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। তখন থেকেই বাংলাদেশের প্রতি খুব রহমদিল নয় আমেরিকা। মাঝে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। মৌলবাদীদের উত্থানের কথা বলে এবং তাদের দমনের নামে আমেরিকার সহানুভূতি লাভের জোর চেষ্টা চালায় আগের বারের আওয়ামী লীগ সরকার। এরপরও সে প্রচেষ্টা জারি আছে। তবে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে আমেরিকার কাছে ব্যাপারটা ততো গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ তাদের ভাষায় যারা মৌলবাদী তাদের উত্থান হচ্ছে সারা মুসলিম বিশ্বে। তাই আমেরিকা বর্তমানে মৌলবাদীদের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার কাজে নিয়োজিত। অন্যদিকে যদিও বর্তমানে ভারতে মার্কিন পছন্দের সরকার তবুও বাংলাদেশের অধিক মাত্রায় ভারতপ্রীতি আমেরিকা সুনজরে দেখছে না। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কার্যাবলী আমেরিকাকে রুষ্ট করেছে। ড. মোহাম্মদ ইউনুস আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিন্টনের পারিবারিক বন্ধু। ড. ইউনুসকে গায়ে পড়ে নাজেহাল করাটা তাই কোন মতেই আমরিকা মেনে নিতে পারছে না। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফসহ সকল আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কলকাঠি নাড়ে এককভাবে আমেরিকা। এক্ষেত্রে আমেরিকার বিরূপ মনোভাব ইতোমধ্যেই প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। খোদ জাতিসংঘও আমেরিকার তাবেদারী করতে বাধ্য। তাই এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন অপরিপক্ক পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য আরও কত ক্ষতির কারণ হয় তা দেখার জন্য খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে হয় না।
মুসলিম বিশ্বের সাথে বর্তমানে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই শীতল। অবশ্য বর্তমান সরকারও মনে হচ্ছে তাই চায়। কারণ ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র যে সরকারের মূলনীতির অন্যতম তাদের পক্ষে মুসলিম বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক রাখার আগ্রহ না থাকারই কথা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস অংশটুকু উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। মুসলিম বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা এ অংশটুকুও বাদ দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় দেশের ইসলামপ্রিয় জনগণকে খুশী করার জন্য মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। তবে এ যেন ঠিক গাছের গোঁড়া কেটে আগায় পানি ঢালার মত অবস্থা। নানা কারণে সারা দুনিয়ায় ধর্মীয় প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু ইসলাম ও মুসলিম ছাড়া অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রেও একথা বাস্তব সত্য। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র মুসলিম বিশ্ব হতে আজ বিতাড়িত। অথচ বর্তমান সরকার সেই ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের জয়গান গাইতে শুরু করেছে। এতে করে দুনিয়ার ইসলামপ্রিয় কোটি কোটি মুসলিম জনতার বিরাগভাজন হচ্ছে সরকার। মুসলিম বিশ্বের অনেকগুলো রাষ্ট্র আজ দুনিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। দুনিয়ার পরাশক্তিগুলো পর্যন্ত এদের গুরুত্ব দিতে বাধ্য। বাংলাদেশও অনেক ক্ষেত্রে এসব দেশের ওপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হচ্ছে জনশক্তি রফতানি। এক্ষেত্রে সৌদি আরব হচ্ছে সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ। কিন্তু বিগত কয়েক বছর যাবৎ সৌদিআরবে বাংলাদেশী জনশক্তি রফতানি বন্ধ। বাংলাদেশ বহু চেষ্টা করেও জনশক্তি রফতানি পুনরায় চালু করতে পারছে না। নানা কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মতৎপরতা। অনুরূপ অবস্থা বিরাজ করছে আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতারসহ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও। শুধু জনশক্তিই নয় অন্যান্য নানা ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ আরব তথা মুসলিম দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
প্রায় সব মুসলিম দেশেই আজ ইসলামী শক্তি ক্ষমতায় আসছে বা ক্ষমতার কাছাকাছি রয়েছে। সেক্ষেত্রে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশ কেন ইসলামকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাচ্ছে তা বোধগম্য নয়। সরকার যতভাবে বুঝানোর চেষ্টা করুক তারা ইসলাম দরদী একথা প্রমাণ করতে সক্ষম হচ্ছে না। বরং ইসলামবিরোধী হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধীর বিচারও একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ সরকারের বাইরেও একটা জনমত আছে যা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাকে ইসলাম বৈরী বলেই চিহ্নিত করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে নমনীয় হওয়ার জন্য দুনিয়ার সেরা সেরা ওলামাগণ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে। এক কথায় মুসলিম বিশ্বের জনমত এখন বাংলাদেশ সরকারের বিপক্ষে।
সরকারি শক্তির জোরে অনেক কিছু করা যায় বা যাবে। কিন্তু কাজ করতে হয় পরিণাম চিন্তা করে। ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ একঘরে হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও হওয়ার সম্ভাবনা। কারণ মুসলিম বিশ্বে আজ ইসলামী শক্তির পুনরুত্থান চলছে। একসময় তুর্কী ছিল মুসলিম বিশ্বে ধর্মনিরপেক্ষতার শক্ত রক্ষাকবচ। আজ তুর্কীরা ধর্মনিরপেক্ষতা ছুড়ে ফেলেছে। ইসলামী ঝান্ডা নিয়ে সামনে এগিয়ে চলছে। মিসর, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, ইরাক, সৌদি আরব, ইয়েমেনসহ সর্বত্র ইসলামী শক্তি সংহত হচ্ছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই, মালদ্বীপ, বসনিয়া সর্বত্র একই অবস্থা। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার যদি গোঁয়ারতুমি করে ধর্ম নিরপেক্ষতা ও অচল সমাজতন্ত্রের ঝান্ডা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করে তবে তা ব্যর্থ হতে বাধ্য নয় কি?
দেশে বিদেশে জাতি আজ বিভক্ত। অবশ্য আওয়ামী লীগও তাই চাচ্ছে বলে মনে হয়। জামায়াতে ইসলামীসহ সকল ইসলামী দলকে তারা ঘায়েল করতে চায়। এমনকি বিএনপিসহ সকল ডানপন্থী দলকে তারা একইভাবে পরাজিত করতে চায়। তবে সেটা কি এত সহজ? জামায়াত বিএনপিসহ আওয়ামী বিরোধী জোটের প্রতি অন্তত: শতকরা ৫০% ভাগ জনসমর্থন রয়েছে। মনমোহন সিং নিজেই বলেছেন, বাংলাদেশে শতকরা ২৫% ভাগ জনসমর্থন জামায়াতের আছে। অন্যান্য ইসলামীদলের সমর্থনও মন্দ না। তদুপরি সরকারি জন সমর্থন দ্রুত কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিরোধী শিবিরের পাল্লা ভারী হচ্ছে। এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগ যা চায় তা কি আদৌ হওয়া সম্ভব? তাছাড়া নির্যাতন করে আদর্শিক আন্দোলন সাময়িক দুর্বল করা যায় কিন্তু নির্মূল করা যায় না। দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দেশ ও জাতির ক্ষতি করা হচ্ছে। এটা কোন দেশপ্রেমিক ব্যক্তি, দল তথা সরকারের কাজ হতে পারে না। এখনও এ পথ পরিহার করার সময় আছে। বিভেদ নয় ঐক্যই কাম্য হওয়া উচিত সবার। তাতেই দেশ ও জাতির কল্যাণ। গান্ধী, নেলসন মেন্ডেলার মত হতে হবে। ঐক্যই শক্তি- একথা মনে রাখতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
ডাঃ সুলতান আহমেদ একজন সমাজ সেবক ও চিকিৎসক
ডা. সুলতান আহমদ :
পাকিস্তান ভেঙে ১৯৭১ সনে বাংলাদেশের অভ্যূদয় হয়। পাকিস্তান ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মুসলিম রাষ্ট্র। নাম ছিল ইসলামিক রিপাবলিক অব পাকিস্তান। যদিও কাজেকর্মে ইসলাম ছিল নামে মাত্রই। তবুও মুসলিম বিশ্বে পাকিস্তান একটা বিশেষ ইমেজ সৃষ্টি করেছিল। অবশ্য এজন্য তারা তখন কিছু কাজও করেছিল। যেমন ফিলিস্তিনি ইস্যু ও কাশ্মীর ইস্যুতে তারা ছিল সোচ্চার। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানের জন্ম হয়। এটা হয়েছিল এদেশ অর্থাৎ তৎকালীন বাংলার জনগণের ইচ্ছানুসারে। বলা চলে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে। তৎকালীন এদেশের সকল বড় বড় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পাকিস্তান সৃষ্টির পক্ষে ছিল।
যাহোক আমাদের সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য তৎকালীন পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতা আমাদেরকে সসস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য করে। স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের পক্ষাবলম্বন করে। ভারতের সাথে সংগ্রাম করে পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল। তাই মুসলিম বিশ্বে ভারত পাকিস্তান বিরোধী হিসাবে পরিচিত ছিল। অখন্ড পাকিস্তানের ২৪ বছর ভারত সর্বক্ষেত্রে পাকিস্তানের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। ফিলিস্তিনি ইস্যুতে ভারত সর্বদা ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তাই সারা মুসলিম বিশ্বে ভারত মুসলিম বিরোধী হিসাবে গণ্য ছিল।
যেহেতু ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলে। অপরদিকে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের কথা প্রচার করায় বিশ্বের মুসলিম দেশ ও জনগণের সমর্থন বাংলাদেশ প্রথমদিকে মোটেই পায়নি। সমাজতন্ত্রের অনুরাগী মিসরের হুসনী মোবারক ও ইরাকের সাদ্দাম হোসেন শেষ দিকে বাংলাদেশের পক্ষাবলম্বন করে। তবে এ দু'দেশের সাধারণ জনগণের আবেগও পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। এমনকি ভারতের অধিকাংশ মুসলিম জনগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে সুদৃষ্টিতে দেখে নাই। এ কথার সাক্ষী তৎকালীন ভারত প্রবাসী বাংলাদেশী জনগণ।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশের জন্ম হয়। বাংলাদেশের নেতা মরহুম শেখ মুজিবর রহমান এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে কিছুটা উদ্যোগ নেন। তিনি ভারতের অনিচ্ছা সত্ত্বেও লাহোরের ওআইসি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশকে দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা দেন। ইরাক প্রথমে বাংলাদেশকে মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। এমতাবস্থায় আরো অনেকে এ পথে অগ্রসর হয়। কিন্তু সৌদি আরবসহ আরো কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্র ১৯৭৫ সালের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। বর্তমানে একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে সুনজরে দেখেনি। তারাও এসময় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। চীনের ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য।
পরবর্তীতে মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধি করেন। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সংবিধানে ‘বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম' সংযোজন করেন। যা আগে ছিল না। মুসলিম বিশ্বের সাথে বিশেষ সম্পর্ক রাখার কথা সংবিধানে সংযোজন করেন। ক্রমান্বয়ে মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্কের উন্নতি হতে শুরু করে। অন্যদিকে শুধু ভারতের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে তিনি বহুমাত্রিক কূটনৈতিক তৎপরতা চালান। বিশেষ করে আমাদের নিকট প্রতিবেশী চীনের সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন করতে সক্ষম হন।
জিয়াউর রহমানের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ বিশ্বে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। ভারত নির্ভরশীলতা কমে আসে। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে বাংলাদেশে স্বমহিমায় আবির্ভূত হতে শুরু করে। বেশ কিছু সফলতা অর্জন করে। জিয়াউর রহমানের পর প্রেসিডেন্ট এরশাদ আমলেও বাংলাদেশ অনেকটা একই পথে এগুতে থাকে। পরবর্তীতে বেগম খালেদা জিয়ার আমলে এ ধারা অব্যাহত থাকে। বিশ্বে বাংলাদেশ ব্যাপক সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জনে সক্ষম হয়।
মাঝে ১৯৯৬ হতে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে তারা ব্যাপক পরিবর্তনের চেষ্টা করেনি। অবশ্য এক্ষেত্রে তাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতাও ছিল। কিন্তু এবার ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ স্বমূর্তিতে আবির্ভূত হয়। এবার তাদের কর্মকান্ড দেশে-বিদেশে সমালোচিত হয়। দেশপ্রেমিক জনগণ তাদের বিভিন্ন তৎপরতায় শংকিত হয়। দেশ ও জাতির স্বার্থের চেয়ে তারা দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে শুরু করে। নিজ দেশের চাইতে ভারতের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে তারা।
সরকার চালাতে আওয়ামী লীগ সম্পূর্ণভাবে বাম নেতৃবৃন্দের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন নেতারা সর্বক্ষেত্রে প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। ধর্ম নিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ইসলামী প্রভাব খর্ব করার সূক্ষ্ম কৌশল চালু রয়েছে। ভারতপ্রীতি তো রয়েছেই। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে ভারত বস্তা বস্তা টাকা দিয়েছে। ভবিষ্যতেও যাতে দেয় তা নিশ্চিত করতে সরকার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এসব কিছুর প্রভাব আমাদের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রতিফলিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে আমাদের পররাষ্ট্রনীতি এককভাবে ভারতঘেঁষা হয়ে যাচ্ছে। পরন্তু মুসলিম বিশ্ব ও মার্কিন বন্ধুত্বে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এমতাবস্থায় পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা ইতোমধ্যেই বিভিন্নভাবে প্রকাশ হতে শুরু করেছে। যার ভোগান্তি জনগণকেই বহন করতে হচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও কতদূর গড়ায় দেখা যাক।
ভারতের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ক্ষমতা স্থায়ী করার চেষ্টায় আওয়ামী লীগ কতটা সফল হবে সেটা আগামীতে দেখা যাবে। তবে গত কয়েক বছরের ভারত প্রীতির বদলা সন্তোষজনকভাবে আদায় করতে ব্যর্থ সরকার। সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা বন্ধ তো হয়নি বরং বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে ভারত যত যুক্তি দেখাক না কেন তাতে বাংলাদেশের জনগণের মন ভরছে না। বাংলাদেশ সরকারের সাফাই গাওয়াও এক্ষেত্রে দেশেবাসীকে খুশী করতে পারছে না। সীমান্ত চুক্তির নামে আমাদের জমি ভারত নিয়ে যাচ্ছে এটা কোন দেশপ্রেমিক নাগরিক কানে নিতে পারে না। ছিটমহল সমস্যারও সন্তোষজনক সমাধান হচ্ছে না। তিস্তা ও টিপাইমুখে বাঁধ দিয়ে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিণত করার প্রচেষ্টা হতে ভারত বিরত হচ্ছে না। বহু ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ করে আনা হল। দেয়া হল অযাচিত সম্মান। কিন্তু সব বিফলে গেল। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভারত মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক রাখে শুধু নামে। বাণিজ্যিক ও অন্যান্য স্বার্থ এখানে মুখ্য। ইসরাইলের সাথে ভারতের সম্পর্ক আন্তরিক। ট্রানজিট করিডোরসহ সকল ভারতীয় স্বার্থ রক্ষার চুক্তি করে নিয়েছে। বিনিময়ে বাংলাদেশ কিছুই পাচ্ছে না। পাবেও না। অতীত ইতিহাস তাই বলে। কাশ্মীরের ইতিহাস একই কথা বলে। যদি নবাব সলিমুল্লাহর মুসলিম লীগ না হত আর না থাকত জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্ব তাহলে বাংলাদেশ আর একটা কাশ্মীর হত।
চীনের সাথে বাংলাদেশের সস্পর্ক বর্তমানে খুবই শীতল। অতি ভারতপ্রীতি চীন ভাল চোখে দেখছে না। এতদ্বাঞ্চলে ভারত ও চীন বিভিন্ন ক্ষেত্রে একে অন্যের প্রতিদ্বনদ্বী। ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলোকে এটা বুঝে চলতে হয় ভারসাম্য বজায় রেখে। কিন্তু বাংলাদেশ সে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। চীনের সাহায্যে নির্মিত আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টার এর নাম পাল্টে ফেলা হয়েছে। এটা চীন সরকার সহজভাবে নেয়নি। যদিও ব্যাপারটা এমন কিছু নয়। তবুও এটা না করলেও চলত। সব মিলিয়ে চীনকে বৈরী বানিয়ে শুধু ভারতকে খুশী করলে চলবে না। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তা নিয়ে ভাবছে বলে মনে হয় না।
পৃথিবীর বর্তমান একক পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রতি খুব সন্তুষ্ট নয়। ১৯৭১ সনে আমেরিকা অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে ছিল। তখন থেকেই বাংলাদেশের প্রতি খুব রহমদিল নয় আমেরিকা। মাঝে অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। মৌলবাদীদের উত্থানের কথা বলে এবং তাদের দমনের নামে আমেরিকার সহানুভূতি লাভের জোর চেষ্টা চালায় আগের বারের আওয়ামী লীগ সরকার। এরপরও সে প্রচেষ্টা জারি আছে। তবে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে আমেরিকার কাছে ব্যাপারটা ততো গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ তাদের ভাষায় যারা মৌলবাদী তাদের উত্থান হচ্ছে সারা মুসলিম বিশ্বে। তাই আমেরিকা বর্তমানে মৌলবাদীদের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার কাজে নিয়োজিত। অন্যদিকে যদিও বর্তমানে ভারতে মার্কিন পছন্দের সরকার তবুও বাংলাদেশের অধিক মাত্রায় ভারতপ্রীতি আমেরিকা সুনজরে দেখছে না। এছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কার্যাবলী আমেরিকাকে রুষ্ট করেছে। ড. মোহাম্মদ ইউনুস আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিন্টনের পারিবারিক বন্ধু। ড. ইউনুসকে গায়ে পড়ে নাজেহাল করাটা তাই কোন মতেই আমরিকা মেনে নিতে পারছে না। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আইএমএফসহ সকল আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কলকাঠি নাড়ে এককভাবে আমেরিকা। এক্ষেত্রে আমেরিকার বিরূপ মনোভাব ইতোমধ্যেই প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। খোদ জাতিসংঘও আমেরিকার তাবেদারী করতে বাধ্য। তাই এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের গৃহীত বিভিন্ন অপরিপক্ক পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য আরও কত ক্ষতির কারণ হয় তা দেখার জন্য খুব বেশিদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে মনে হয় না।
মুসলিম বিশ্বের সাথে বর্তমানে বাংলাদেশের সম্পর্ক খুবই শীতল। অবশ্য বর্তমান সরকারও মনে হচ্ছে তাই চায়। কারণ ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র যে সরকারের মূলনীতির অন্যতম তাদের পক্ষে মুসলিম বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক রাখার আগ্রহ না থাকারই কথা। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস অংশটুকু উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। মুসলিম বিশ্বের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা এ অংশটুকুও বাদ দেয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় দেশের ইসলামপ্রিয় জনগণকে খুশী করার জন্য মুসলিম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। তবে এ যেন ঠিক গাছের গোঁড়া কেটে আগায় পানি ঢালার মত অবস্থা। নানা কারণে সারা দুনিয়ায় ধর্মীয় প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু ইসলাম ও মুসলিম ছাড়া অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রেও একথা বাস্তব সত্য। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র মুসলিম বিশ্ব হতে আজ বিতাড়িত। অথচ বর্তমান সরকার সেই ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের জয়গান গাইতে শুরু করেছে। এতে করে দুনিয়ার ইসলামপ্রিয় কোটি কোটি মুসলিম জনতার বিরাগভাজন হচ্ছে সরকার। মুসলিম বিশ্বের অনেকগুলো রাষ্ট্র আজ দুনিয়ার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। দুনিয়ার পরাশক্তিগুলো পর্যন্ত এদের গুরুত্ব দিতে বাধ্য। বাংলাদেশও অনেক ক্ষেত্রে এসব দেশের ওপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত হচ্ছে জনশক্তি রফতানি। এক্ষেত্রে সৌদি আরব হচ্ছে সবচেয়ে বড় আমদানিকারক দেশ। কিন্তু বিগত কয়েক বছর যাবৎ সৌদিআরবে বাংলাদেশী জনশক্তি রফতানি বন্ধ। বাংলাদেশ বহু চেষ্টা করেও জনশক্তি রফতানি পুনরায় চালু করতে পারছে না। নানা কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সরকারের ইসলামবিরোধী কর্মতৎপরতা। অনুরূপ অবস্থা বিরাজ করছে আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতারসহ অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও। শুধু জনশক্তিই নয় অন্যান্য নানা ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ আরব তথা মুসলিম দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল।
প্রায় সব মুসলিম দেশেই আজ ইসলামী শক্তি ক্ষমতায় আসছে বা ক্ষমতার কাছাকাছি রয়েছে। সেক্ষেত্রে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম দেশ বাংলাদেশ কেন ইসলামকে দূরে সরিয়ে রাখতে চাচ্ছে তা বোধগম্য নয়। সরকার যতভাবে বুঝানোর চেষ্টা করুক তারা ইসলাম দরদী একথা প্রমাণ করতে সক্ষম হচ্ছে না। বরং ইসলামবিরোধী হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধীর বিচারও একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ সরকারের বাইরেও একটা জনমত আছে যা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাকে ইসলাম বৈরী বলেই চিহ্নিত করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ক্ষেত্রে নমনীয় হওয়ার জন্য দুনিয়ার সেরা সেরা ওলামাগণ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে। এক কথায় মুসলিম বিশ্বের জনমত এখন বাংলাদেশ সরকারের বিপক্ষে।
সরকারি শক্তির জোরে অনেক কিছু করা যায় বা যাবে। কিন্তু কাজ করতে হয় পরিণাম চিন্তা করে। ক্রমান্বয়ে বাংলাদেশ একঘরে হয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে আরও হওয়ার সম্ভাবনা। কারণ মুসলিম বিশ্বে আজ ইসলামী শক্তির পুনরুত্থান চলছে। একসময় তুর্কী ছিল মুসলিম বিশ্বে ধর্মনিরপেক্ষতার শক্ত রক্ষাকবচ। আজ তুর্কীরা ধর্মনিরপেক্ষতা ছুড়ে ফেলেছে। ইসলামী ঝান্ডা নিয়ে সামনে এগিয়ে চলছে। মিসর, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, ইরাক, সৌদি আরব, ইয়েমেনসহ সর্বত্র ইসলামী শক্তি সংহত হচ্ছে। মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই, মালদ্বীপ, বসনিয়া সর্বত্র একই অবস্থা। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার যদি গোঁয়ারতুমি করে ধর্ম নিরপেক্ষতা ও অচল সমাজতন্ত্রের ঝান্ডা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করে তবে তা ব্যর্থ হতে বাধ্য নয় কি?
দেশে বিদেশে জাতি আজ বিভক্ত। অবশ্য আওয়ামী লীগও তাই চাচ্ছে বলে মনে হয়। জামায়াতে ইসলামীসহ সকল ইসলামী দলকে তারা ঘায়েল করতে চায়। এমনকি বিএনপিসহ সকল ডানপন্থী দলকে তারা একইভাবে পরাজিত করতে চায়। তবে সেটা কি এত সহজ? জামায়াত বিএনপিসহ আওয়ামী বিরোধী জোটের প্রতি অন্তত: শতকরা ৫০% ভাগ জনসমর্থন রয়েছে। মনমোহন সিং নিজেই বলেছেন, বাংলাদেশে শতকরা ২৫% ভাগ জনসমর্থন জামায়াতের আছে। অন্যান্য ইসলামীদলের সমর্থনও মন্দ না। তদুপরি সরকারি জন সমর্থন দ্রুত কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিরোধী শিবিরের পাল্লা ভারী হচ্ছে। এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগ যা চায় তা কি আদৌ হওয়া সম্ভব? তাছাড়া নির্যাতন করে আদর্শিক আন্দোলন সাময়িক দুর্বল করা যায় কিন্তু নির্মূল করা যায় না। দলীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে দেশ ও জাতির ক্ষতি করা হচ্ছে। এটা কোন দেশপ্রেমিক ব্যক্তি, দল তথা সরকারের কাজ হতে পারে না। এখনও এ পথ পরিহার করার সময় আছে। বিভেদ নয় ঐক্যই কাম্য হওয়া উচিত সবার। তাতেই দেশ ও জাতির কল্যাণ। গান্ধী, নেলসন মেন্ডেলার মত হতে হবে। ঐক্যই শক্তি- একথা মনে রাখতে হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
ডাঃ সুলতান আহমেদ একজন সমাজ সেবক ও চিকিৎসক