বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা কিংবদন্তীর ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী
Moulana Abdul Hamid Khan Vashani
[/COLOR]
@ This picture is only show off by the AL and India that Bashani also had support for this war. The fact is Bhashani fled to Assam through river Bramaputtra. There he mate his old Muslim Leaque collique. He also mate the Chief Minister of Assam and requested him to tranferred him secretly to China through Tibet. But instead of helping him they informed to Delhi. Soon RAW elements came and picked him and send to Delhi. The other leaders like Moshier Rahman(Jadu Mia), Kazi Jaffer Ahmed tried to meet him but failed and again fall back to East Pakistan. In the true sense throughout the liberation this Bhashani was closed arrest in India and never allowed to give his comment on Liberation war. He was utilize by India and AL as show piece.
১৯৭১ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ
১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করার আহ্বান জানান। ৯১ বছরের বৃদ্ধ জননেতা প্রত্যক্ষ স্বাধীনতা যুদ্ধ করার জন্য ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। কিন্তু ভারত সরকার তাকে দীর্ঘদিন গৃহবন্দি করে রাখে। ভারতের কমিউনিস্ট নেতা শ্রী জ্যোতিবসু পার্লামেন্টে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী কোথায় আছেন জানতে চাইলে ভাসানীর পরিবার ও তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা তাঁর অবস্থান জানতে পারেন।
১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে গঠিত হয় সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী তার সভাপতির দায়িত্ব পালন করে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেন।
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে মওলানা ভাসানীর চিঠি
মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী কেন লংমার্চের কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন, কি তার উদ্দেশ্য তা অবহিত করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে এক ঐতিহাসিক পত্র প্রদান করেন। এনায়েত উল্লাহ খান, সিরাজুল হোসেন খান ও আনোয়ার জাহিদ এই পত্র প্রণয়নে সহযোগিতা করেছিলেন। মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী তাঁর পত্রে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে লেখেন—তাঁর পিতা পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে নিজের ব্রিটিশ ভারতের সংগ্রামী জীবনের ঘনিষ্ঠতার কথা, একই সঙ্গে ভারতবর্ষের ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের কথা। এক সপ্তাহের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী শ্রদ্ধেয় জননেতা মওলানা ভাসানীর পত্রের উত্তর দিলেন। কিন্তু কৌশলে পাশ কাটিয়ে গেলেন পানি সমস্যা সমাধানের কথা। এই প্রসঙ্গে মজলুম জননেতা আমাদের বলেন, ইন্দিরা গান্ধী কিংবা জ্যোতিবসুর বুকের মধ্যে বাংলাদেশের জন্য কী পরিমাণ ভালোবাসা আছে তাতে কিছুই আসে যায় না। কারণ রাষ্ট্রের কোনো বন্ধু নাই, রাষ্ট্রের আছে শুধু স্বার্থ। তিনি আরও বলেন, মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ যেমন সত্য, তেমনি ভারতও এই অঞ্চলে একটি আধিপত্যবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে সেটাও আজ ঐতিহাসিক বাস্তবতা। তৃতীয় বিশ্বের মানুষের অধিকার রক্ষার জন্য সাম্রাজ্যবাদ-আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করা ছাড়া জনগণের কোনো বিকল্প নেই। পরিশেষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে হাজার হাজার প্রগতিশীল রাজনৈতিক কর্মী ১৯৭৬ সালের ১৩ ও ১৪ মে’র মধ্যে রওনা হলো রাজশাহী অভিমুখে।
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ঐতিহাসিক দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ
১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর শতাব্দীর গণমানুষের আন্দোলন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ নেতা মওলানা ভাসানী ইন্তেকাল করেন। ১৯৭৬ সালের ১৬ মে রাজশাহী মাদরাসা ময়দানেই সম্ভবত তাঁর শেষ ঐতিহাসিক ভাষণ, এরপর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ঘরোয়া বৈঠক ছাড়া কোনো বড় জনসভায় বক্তব্য রাখেননি। প্রতিজন মহান নেতার জাতির উদ্দেশে একটি দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য থাকে। ভারতের জাতির জনক করম চাঁদ গান্ধী গুলিবিদ্ধ হয়ে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগের আগে বলেছিলেন, হে রাম তুমি ভারতের হিন্দু, মুসলমানসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষকে রক্ষা কর। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণকে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ বলে গণ্য করা হয়। ঠিক তেমনি ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর জাতির উদ্দেশে তাঁর দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ হিসেবে দেশবাসী গণ্য করেছে। সাড়ে ১০টায় বক্তব্য প্রদানের জন্য মওলানা ভাসানী উঠে দাঁড়ালেন। লাখো মানুষের কোলাহলমুখর মাদরাসা ময়দানে মুহূর্তের মধ্যেই পিনপতনের নিস্তব্ধতা নেমে এলো। মওলানা ভাসানী তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের কথা দিয়ে শুরু করলেন, স্মৃতিচারণ করলেন খেলাফত আন্দোলনে মাওলানা মোহাম্মদ আলী, মাওলানা শওকত আলীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা, স্মৃতিচারণ করলেন করম চাঁদ গান্ধী, পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু, কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর কথা, শ্রদ্ধা জানালেন মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি।
অশীতিপর বৃদ্ধ জননেতা মওলানা ভাসানী যখন বক্তৃতা করছিলেন মনে হচ্ছিল রাজশাহীর মাটি যেন থর থর করে কাঁপছে, মাঠের আশপাশে তিলধারণের ঠাঁই নেই, জনতার মধ্য থেকে হাজার কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল—লও লও লও সালাম। মওলানা ভাসানীর কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল সিকিম নয়, ভুটান নয়, এদেশ মোদের বাংলাদেশ। মওলানা ভাসানী অনেক কথাই বললেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আধিপত্যবাদীরা বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ পানি, গ্যাস লুণ্ঠন করে নিয়ে যেতে চায়। তারা বাংলাদেশে নতুন করে ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির গোড়াপত্তন করতে চায়। তারা সিকিম-ভুটানের মতো বাংলাদেশকে মর্যাদাহীন, সার্বভৌমত্বহীন রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, তারা বাংলার মানুষকে প্রতারিত করার জন্য নব্য মীর জাফর আলী খান, লেন্দুপ দর্জি সৃষ্টি করতে চায়।
তিনি দেশবাসীকে উদ্দেশ করে বললেন, আধিপত্যবাদী শক্তির এসব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে হলে জনতার গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। তিনি তরুণ ছাত্র-জনতাকে সার্বভৌমত্ব নিরাপদ রাখার জন্য মীর জাফর আলী খান, লেন্দুপ দর্জি, ঘসেটি বেগমদের সম্পর্কে সজাগ থাকার আহ্বান জানান। ১১.১০ মিনিটে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মধ্যে শুরু হয় ঐতিহাসিক ফারাক্কা মিছিল, মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী একটি খোলা জিপে করে জনতার গণমিছিলে নেতৃত্ব প্রদান করেন। রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছিল ৩২ মাইল পথ লাখ লাখ মানুষ পায়ে হেঁটে চলছে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা অভিমুখে। রাস্তার দুই ধারে বৃদ্ধ নারী শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষ এসেছে পানি, মুড়ি, চিঁড়া, কাঁচা আম নিয়ে মিছিলকারীদের সহানুভূতি জানাতে। সে এক অপরূপ দৃশ্য। দূর থেকে এই আন্তরিক জনজাগরণ বোঝা যায় না। মওলানা ভাসানী সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এসে উপস্থিত হলেন, সন্ধ্যা ৭টায় ফারাক্কা লংমার্চে ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে বের হলো ঐতিহাসিক মশাল মিছিল। সব ছাত্র সংগঠনের নতাই সেই মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। মশাল মিছিলের স্লোগান ছিল—‘ফারাক্কা তোড় দেংগা, নেতিজা জোবি হোগা’। পরদিন সকাল ৮টার দিকে মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা অভিমুখে মিছিল শুরু হলো, নদীর উপরে নৌকা দিয়ে সেতু তৈরি করে দেয়া হয়েছিল। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ফারাক্কা পাদদেশ সোনামসজিদ পর্যন্ত ১৫ মাইল পথে কানসাট উপজেলায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আসরের নামাজ আদায় করলেন ঐতিহাসিক সোনামসজিদে। নামাজের পরে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করলেন। এর প্রতিক্রিয়াতে নতুন করে আস্থার সৃষ্টি হলো, দেশবাসীর মধ্যে গড়ে উঠতে শুরু করলো জাতীয়তাবাদী শক্তির মহান ঐক্য।
আজ দেশের মানুষের জান-মালের কোনো নিরাপত্তা নেই, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, নিত্যদিন অপহরণ, গুম, ছিনতাই, রাহাজানি, দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, পানি-বিদ্যুত্-গ্যাসের তীব্র সংকট, বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আজ ভূলুণ্ঠিত, শ্রমিক শ্রেণী তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত, বর্তমান সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। মওলানা ভাসানী বেঁচে থাকলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়ে হুঙ্কার ছেড়ে রাজপথে নামতেন। তাই আজ মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর খুব বেশি প্রয়োজন।
লেখক : চেয়ারম্যান, এনপিপি