কামারুজ্জামান ১৯ বছরের ফিডার খাওয়া যুবক ছিলো। জানিনা সাকার মামলার রায়ের পর কি বলা হবে কিংবা মুজাহিদের রায়ের পর। অপরাধীর মৃত্যুর পর একটা ভুয়া গুঞ্জন উঠিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ জাগানোর সিস্টেমটা ইন্টারেস্টিং।
জামাতীদের বুদ্ধি আছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে কিভাবে গুজব রটাতে হয়, সন্দেহ জাগাতে হয় এই জিনিস তাদের যে বেশ রপ্ত করা সেটা স্বীকার করে নিচ্ছি। বাংলাদেশীরা কোন আলোচনা খাবে আর বিশ্বাস করবে এই ব্যাপার ওদের জানা না থাকলে মুক্তিযুদ্ধের এই ভয়াবহ ভূমিকা থাকবার পরেও এই দেশে তাদের ৪৪ বছর ধরে রাজনীতি করতে হোতো না।
যদিও আমাকে কথা বলতে হবে আইন ধরে ধরে, তথ্য আর উপাত্ত দিয়ে দিয়ে কিন্তু তথাপিও আমি বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে একটা সাধারণ প্র্যাকটিসের কথা না বললেই আজকে নয়। বাংলাদেশের বলতে গেলে ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ বাবা মা-ই তাঁর সন্তানের জন্মের পর নাম রেজিস্টার করেন না। জানিনা এখন কি অবস্থা, তবে আমি যেই সময় জন্মেছি তখন এই পদ্ধতির চল তেমন ছিলোনা। আর সেক্ষেত্রে আমার বাবা-মা যে সময় জন্মেছেন সে সময় জন্ম নিবন্ধন এর নাম শুনেছেন কিনা সন্দেহ আছে।
বাংলাদেশে একজন বাচ্চার জন্ম তারিখ মূলত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে ওই বাচ্চা যখন কোনো পাবলিক পরীক্ষার আগে রেজিস্ট্রেশন করে কিংবা পাসপোর্ট করতে যায়। আমাদের সময়ে যার আমাদের ক্লাসে সবার জন্ম আনুষ্ঠানিক ভাবে লিখিত হয়েছিলো মেট্রিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনের সময়। সেদিন আমাদের ক্লাসের সব ছেলেদের বয়স একসাথে ১৪ বছর হয়ে গিয়েছিলো। কেননা কি একটা যেন নিয়মের কথা শুনেছি যে মেট্রিক পরীক্ষা সবাই ১৪ বছরেই দেয়। সবচাইতে বড় ব্যাপার হচ্ছে বাবা মা এই জন্ম বয়স বাড়িয়ে দেখায় এই কারনে যে তাঁর সন্তান যেন সরকারী চাকুরী করলে তা আরো বেশী দিন করতে পারেন এই ইচ্ছাতেই। আমার ধারনা আমার এই বক্তব্যের সতত্য আপনারা বুঝতে পারছেন।
এটা যদি হিসেব করি তবে কামারুজ্জামানের বয়সের সাথে ৩-৪ বছর এমনিতেই যুক্ত হয়। যদিও কামারুজ্জামানের বয়স আদালতের রায়ে বলা হয়েছে ৪-৭-১৯৫২। যার মানে দাঁড়াচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে কামারুর বয়স ১৮ বছর ৮ মাস ছিলো এবং মুক্তিযুদ্ধের শেষে তার বয়স ছিলো ১৯ বছর ৫ মাসের মতন। আমার তত্বমতে যদি আমি কামারুর বয়স বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে আরো ৩-৪ বছর বাড়িয়ে দেই তাহলে তার বয়স গিয়ে দাঁড়ায় ২২/২৩ বছরের মতন। পাঠক এই যায়গায়, আপনারা একটু একটু চিন্তা করতে থাকেন।
এবার যদি আমি ধরেও নেই যে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিলো ১৯ বছর, সেক্ষেত্রেও আসলে কিছু আসে কিংবা যায় না। সবচাইতে মজার ব্যাপার হচ্ছে আজকে কামারুর ছোট ছেলে শাফি কিংবা আরেক ছেলে ওয়ামী তার বাবার বয়স ১৯ ছিলো, এই বয়সে কি এইভাবে কেউ খুন করতে পারে কিনা কিংবা ধর্ষন করতে পারে কিনা এসব বলে গুজব ছড়াচ্ছে, আপনারা কি জানেন যে কামারুর এই ছেলে হাসান ইমাম ওয়ামী তার বাবার মামলার একজন সাক্ষী ছিলো?
কামারুর পক্ষে মোট ৫ জন সাক্ষীর একজন হচ্ছে হাসান ইকবাল ওয়ামী যার জন্ম ১৯৭১ সালের পর। ১৯৭১ সালের পর জন্ম নিয়ে সাক্ষী দিতে গেছে ১৯৭১ সালের ঘটনার, এর থেকে হাস্যকর, ভেইগ, বোগাস, লেইম সাক্ষী আর কি হতে পারে পাঠক? আপনি-ই বিচার করেন।
এই ঘটনার থেকে সবচাইতে মারাত্নক তথ্য হচ্ছে এই ওয়ামী কিন্তু যখন তার বাবার পক্ষে সাক্ষী দিয়েছিলো তখন একটা বারের জন্য এই ইস্যু তোলেনি যে, আমার বাবা ১৮ বছরের নাদান ছিলো, বাবু ছিলো। তখন সে নানাবিধ বই, পুস্তক, ম্যাগাজিন নিয়ে বাবার পক্ষে সাক্ষ্যের জন্য দাঁড়িয়েছিলো। শুনলে আশ্চর্য হবেন যেই মুনতাসীর মামুন এদের চোখের বিষ, সেই মুনতাসীর মামুনের সম্পাদিত একাত্তরের বিজয় গাঁথা বইটি নিয়ে হাজির হয়েছিলো। সে দেখাবার চেষ্টা করছিলো তাদের এলাকা কেন্দ্রিক এই বইটাতে কামারুজ্জামানের নাম নেই সুতরাং সে নির্দোষ। যেন, মুনতাসীর মামুন এই বইয়ে কামারুর নাম টা দিলে সে অত্যন্ত বিশ্বাস করে সেটিকে কোলে নিয়ে বসে থাকত।
এইসব দ্বি চারিতা, মিথ্যে বক্তব্য, উৎকট যুক্তি, ফাজলামী শুধু যে ওয়ামী-ই দিয়েছে তা নয়। কামারুরু পক্ষে আব্দুর রহিম নামে এক তথাকথিত মুক্তিযোদ্ধাকে এনে দাঁড় করে দিয়েছে সাক্ষ্য দিতে যিনি আবেগের বসে বলেই ফেলেছিলেন যে একাত্তরে যে রাজাকার আর আলবদর হয়েছে এটাই তিনি জানেন না। অনেকটা আবেগের বীর্যপাত বেশী হলে যে ঘটনা হয়, আব্দুর রহিমের ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা কিভাবে বলতে পারে যে একাত্তরে রাজাকার বাহিনী নামে কোনো বাহিনীর নাম সে শুনে নি? এটা কিভাবে সম্ভব।
এইসব সাক্ষীর বাইরে কামারুর বড় ভাই কফিলুদ্দিন এই মামলাতে সাক্ষ্য দিতে এসেছিলো। সেখানেও সে দাবী করেনি যে কামারু একাত্তরে বাচ্চা নাদান ছিলো, ১৮ বছরের বাবু ছিলো সুতরাং সে অপরাধী নয়। বরং এইসব কথা বাদ দিয়ে কফিলুদ্দি ব্যাস্ত ছিলো এই কথা প্রমাণের যে কামারু ঐ সময় সেখানে ছিলো না বরং ছিলো তাদের গ্রামের বাড়ীতে। মানে কফিলুদ্দি "আলিবাই" ডিফেন্সের পথে চলে গিয়েছিলো। অথচ এই কফিলুদ্দি-ই আবার স্বীকার করেছে যে মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পর পর কামারুজ্জামান গ্রেফতার হয় এবং তার তিন থেকে চার মাস পর সে ছাড়া পায়।
এখন জেরাতে যখন তাকে জিজ্ঞেস করা হোলো যে একজন ব্যাক্তি যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় কিছুই করেনি এবং গ্রামের বাড়ীতে বসে হাঁস মুরগী পাহারা দিয়েছে সে কেন মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পর পর ঢাকাতে গিয়ে গ্রেফতার হোলো? আইন শৃংখলা বাহিনী বাংলাদেশের এত ব্যাক্তি রেখে কেন তাকেই গ্রেফতার করেছে?
এই গ্রেফতারের সূত্র ধরে আমি সকল পাঠক/পাঠিকাকে জানাই যে ১৯৭১ সালের ৩১ শে ডিসেম্বরের দৈনিক আজাদ কিংবা ৩০ শে ডিসেম্বরের দৈনিক পূর্ব দেশে কামারুজ্জামানের গ্রেফতার হবার খবরটি বেশ বড় করে প্রকাশিত হয়। সে সময় কামারুজ্জামান সহ আরো ১৪ জন রাজাকার-আলবদর গ্রেফতার হন। শুধু যে পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট-ই রয়েছে তা নয়, বরং রাষ্ট্রপক্ষ ১৯৭১ সালের সময় কামারুজ্জাম্নকে যে গ্রেফতার করা হয়েছিলো সে ঘটনার ডকুমেন্ট আদালতে হাজির করেন যেখানে দেখা যায় কামারুজ্জামানের নাম গ্রেফতারকৃত তালিকায় ২৯৭ নাম্বারে। সুতরাং এটা মানতে আমাদের আসলেই আপত্তি থাকবার কথা নয় যে মুক্তিযুদ্ধের পর পর কামারুজ্জামান নামের ১৯ বছরের ছোট্ট বাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো। এই গ্রেফতার কেন করা হয়েছিলো বা কি তার অপরাধ সেটি তো আপনারা কামারুর রায় পড়লেই জানবেন, সুতরাং নতুন করে এখানে লেখার কিছু নেই।
এই সংক্রান্ত অনেক তথ্য আপনি আপীলেট ডিভিশনের রায়ের ৪৬৮ নাম্বার পাতায় পাবেন।
আপনারা হয়ত ফেসবুকে একটি ছবি ইতিমধ্যেই দেখে ফেলেছেন যেখানে দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার একটি কপি দেখা যাচ্ছে যেখানে বলা হচ্ছে ময়মনসিংহ অঞ্চলের আলবদর প্রধান হিসেবে কামারুজ্জামানের পদের কথা ও তার প্রমাণ। উল্লেখ্য এই ধরনের এভিডেন্স ফেসবুকে পেলে সেটিকে নিয়ে সন্দেহ করবেন না। কেননা ট্রাইবুনালে যখন এগুলো দাখিল করা হয়েছিলো তখন সেটি যথাযথ ভাবে দৈনিক সংগ্রামের মূল কপি থেকে দেখে সত্যায়িত করা হয়েছিলো। উল্লেখ্য সে সময়ের দৈনিক সংগ্রামের কপি বাংলাদেশের আর্কাইভে জমা রয়েছে।
এইসব যুক্তির পর আরেকটি গুরুত্বপূর্ন তথ্যে আমরা আসি। সেটি হচ্ছে মূল ট্রাইবুনালের রায় কিংবা আপীলেট ডিভিশানের রায় কিংবা রিভিউ পিটিশানের সময় কোনোটাতেই আমরা দেখিনি আসামী পক্ষকে যুক্তি দিতে যে কামারুজ্জামান সে সময়ে ১৯ বছরের ছিলো তাই সে অপরাধ করতে পারেনা কিংবা এই বয়সের কেউ এই ধরনের অপরাধে যুক্ত হতে পারে না। এই যুক্তির বদলে বরং তারা এই কথা প্রমাণ করতে ব্যাস্ত ছিলেন যে কামারুজ্জামান ময়মনসিংহ এর আলবদরের প্রধান ছিলো না।
উপরে আমি আপনাদের বলেছি কামারুজ্জামানের পক্ষে আসা সাক্ষীদের কথায়। এটা এখানে বলে রাখা ভালো যে সেইসব সাক্ষীরা কেউ বলেনি যে কামারুর এই বয়স সংক্রান্ত ইস্যুর কথা। ইনফ্যাক্ট এই ইস্যু তুলে কেউ যুক্তিও দেয়নি। কামারুর সাক্ষী আরশেদ আলী, আসকর আলী এর কিন্তু কেউই অস্বীকার করেন নি যে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের এলাকার তান্ডবলীলার কথা, হত্যার কথা। ইনফ্যাক্ট সে সময়ে কামারুজ্জামানের সাথে আর যারা যারা গ্রেফতার করা হয়েছিলো এদের নাম সুন্দর করে বল্লেও এরা খুবই সন্তর্পণে এড়িয়ে যায় কামারুর কথা।
কামারুকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধের পর পরই, কিন্তু আপনারা কি জানেন যে এই সময়ে মানে ১৯৭২ সালে এই কামারুর নামে একটি মামলা হয়েছিলো এবং সেই মামলায় আরো আসামীর নাম ছিলো। শহীদ বদিউজ্জামানের বড় ভাই হাসানুজ্জামান মাম্লাটি করেছিলেন। মামলাটি দায়ের করা হয় নলিতাবাড়ী থানায় এবং সেখানে আসামী হয় মোট ১৮ জন কামারু সহ। মামলার নাম্বার হচ্ছে (৫)৭২, জি আর নাম্বার ২৫০(২) ৭২। একাত্তরের পর পর কামারু যে আটক ছিলেন সেটিও প্রসিকিউশন আদালতকে জানান ও প্রমাণ দাখিল করেন। আপীলেট ডিভিশানের রায়ের ১৩ নাম্বার পাতায় এই তথ্য পাওয়া যাবে।
এখন পাঠক আপনারাই বসে বসে চিন্তা করেন যে একজন ১৯ বছরের যুবক যে কিনা ফিডার খায়, বাচ্চা, ভালো, নম্র, ভদ্র, সেই লোককে মুক্তিযুদ্ধের পর পর সরকার কেনই বা গ্রেফতার করবে, কেনইবা তার নামে মামলা হবে কিংবা কেনই বা তার নামে কোনো কারন ছাড়া এত অভিযোগ থাকবে?
এখন প্রশ্ন যদি আরো উঠে যে ১৯ বছরের একজন যুবক ( পড়ুন অরজিনাল ২৩ বছরের) কিভাবে এই ধরনের নৃশংস হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে? এইসব প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে আপনাকে কামারুর আপীলেট ডিভিশানের ৫৬৬ পাতার রায়টি পুরোটা পড়তে হবে। সেখানে আপনি দেখবেন কামারুর অপরাধের এক বিস্তারিত বর্ণনা। কামারু মুক্তিযুদ্ধের আগের থেকেই ছাত্র সংঘের সাথে জড়িত ছিলো। এলাকায় তার আধিপত্য ছিলো প্রথমত সে সেই আমলে কলেজে যেত, পড়ালেখা করেছে আবার তার উপর রাজনীতির সাথে জড়িত। ৭১ এর আগে এইসব ছাত্র সঙ্ঘের যদিও জাতীয় রাজনীতিতে পাত্তা ছিলোনা কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ছাত্র সঙ্ঘের নেতা হবার ফলে প্রতি এলাকা ভিত্তিক এই যুবকেরাই হয়ে ওঠে পাকিস্তান আর্মিদের সবচাইতে বিশ্বস্ত।
কামারুরু বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে সেগুলো সুক্ষ্ণ ভাবে পর্যবেক্ষন করলে বুঝতে পারা যায় যে কামারু যাদের নিয়ে আলবদর বাহিনী বানিয়েছে কিংবা সংগঠিত করেছে তাদের উপর কামারুরু একটা প্রভাব ছিলো আর কামারুর ছিলো ভালো নেতৃত্বগুন। ধর্মের কথা বলা, অনার্স পড়ুয়া যুবক, পাকিস্তান পন্থী তার উপর আগের থেকেই মানে প্রাক মুক্তিযুদ্ধ থেকেই কলেজের ছাত্র সঙ্ঘের নেতা, এসব সব মিলিয়ে কামারুকে আর পেছনে ফিতে দেখতে হয়নি।
আপনাদের এই কথাটিও মনে রাখতে হবে যে কামারুকে কিন্তু অনেক গুলো অপরাধে সরাসরি খুন করেছে এমনটি বলা হয়নি। হত্যার নির্দেশ, হত্যা পরিচালনা, পরিকল্পনা, অমিশন কিংবা সুপোরিয়র রেসপ্নসিবিলিটি এইসব ইস্যু পর্যালোচিত হয়েছে ও পরিশেষে বিরুদ্ধে এসেছে।
এখানে আরো কিছু কথা আমাদের বুঝতে হবে রাজনৈতিক আদলে। যেমন পুরো সেন্ট্রাল আলবদর নেতারাই আসলে জেলা ভিত্তিক ভাবে কে কে নেতা হবে সেগুলোর ব্যাপারে কলকাঠি নাড়ত এবং সে সূত্র ধরেই যখন পাকিস্তানী বাহিনী তার এলাকায় গেলো তখন তারা যে তাদের কন্টাক্ট হিসেবে কামারুকেই খোঁজ করবে এটা বলা বাহুল্য। আর মুক্তিযুদ্ধের সময় যদি কামারু তাদের যুক্তি অনুযায়ী পড়ালেখা করা ভালো ছেলেই হবে তবে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করবার পর পর কামারু কিভাবে জামাতের রাজনীতিতে অন্তর্ভূক্ত হোলো। আমরা একথা অনেকেই জানি যে জামাতের একটা সাংগঠনিক স্ট্রাকচার আছে। প্রথমে হতে হয় কর্মী, সাথী, সদস্য, আই মিন অনেক লম্বা রাস্তা। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের মাত্র ২-৩ বছরের মাথায় জামাতের নেতা হিসেবে কামারুরু আত্ন প্রকাশ এটাই প্রমাণ করে যে এই দলের সাথে তার আগের সখ্যতা হঠাত নয়।
পরিশেষে আমি কয়েকটা কথা দিয়ে শেষ করতে চাই। বাংলাদেশে যখন দালাল আইনে ১৯৭২ সালে মামলা পরিচালিত হয় তখন যদি সেসময়ের মামলা গুলো আপনি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন অসংখ্য রাজাকারের বয়স ছিলো ১৫ থেকে ২৫ বয়সের মধ্যে। এর থেকে বেশী বয়সী রাজাকার তো ছিলোই। সে সময়ে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁশুলী ছিলেন খন্দকার মাহবুব, আজ যিনি লজ্জাজনক ভাবে কামারুর পক্ষে লড়েছেন। সেই খন্দকার মাহবুব যখন এই ১৯ বছরের কথা বলে গুজব ছড়ায় তখন অবাক লাগে। এরা কোর্টে গিয়ে মিন মিন করে, চোরের মত থাকে কিন্তু বাইরে এসে নানাবিধ কথা বলে। এতই যখন ১৯ বছর নিয়ে কথা তবে কোর্টে বিচারপতিদের সামনে চোরের মতন থাকেন কেন? বলেন সেখানে? ওরা জানে যে সেখানে বললে তাকে কি ভয়াবহ যুক্তির তোড়ে পড়তে হবে। সে জন্যই ভয়ে বলে না।
বাংলাদেশে কত লক্ষ মামলা আছে প্রিয় পাঠক পাঠিকা যেখানে মূল অপরাধীদের বয়স মাত্র ১৫ গড়িয়েছে। গাজী পুরের কিশোর সংশাধানাগারে গেলে আপনার চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যাবে। কি করেনি তারা? খুন ধর্ষন রাহাজানি, সিরিয়াল কিল, সব করেছে এরা। আর সেই তুলনায় ১৯ বছর তো একটা ধাড়ি বয়স, এ কথা বলা বাহুল্য মাত্র।
,দয়া করে এইসব জামাতিদের বিভ্রান্ত হবেন না। আপনাদের ভালো মানুষী কিংবা সরল মনের সুযোগ নিয়ে এরা আপনাদের মনে এমনভাবে সন্দেহ ঢুকিয়ে দিবে যাতে করে আপনি সামান্য হলেও আপনার অবস্থান থেকে অন্যভাবে ভাবতে পারেন। অনেকটা ইবলিশ শয়তানের প্ররোচনার মত। আস্তে আস্তে করে গন্দম গাছের দিকে টেনে নিয়ে গিয়ে সটকে পড়বে। সুতরাং এসব নিয়ে কারো কথা বিশ্বাস কিংবা অবিশ্বাসের আগে আপীলেট ডিভিশানের ৫৬৬ পাতার যে রায়টি আছে সেটা মন দিয়ে পড়ুন।
আমি নিশ্চিত এই রায় পুরোটা পড়লে আপনার মনে সামান্যতম সন্দেহ আর থাকবে না।
Verdict of Applet Division:
» VerdictsICRF
************---------------*******
প্রথমত মুহাম্মদ কামারুজ্জামান একজন আলবদর কমাণ্ডার ছিলেন এই বিষয়টি বিয়ণ্ড রিজনেবল ডাউট প্রতিষ্ঠিত। ঐ সময়ে দৈনিক সংগ্রামের রিপোর্টে তাকে আলবদরে প্রধান সংগঠক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সদস্যরা প্যারা-মিলিশিয়া(আল-বদর, আল-শামস) বাহিনী গঠনের ব্যাপারে যেসকল বক্তব্য দিয়েছে সেখানেও এর সত্যতা পাওয়া যায়।
ডিফেন্স কাউন্সিল তার আল-বদরের সাথে সম্পৃক্ততার বিরুদ্ধে কোন যুক্তি উপস্থাপন করেছে বলে আমি জানি না। তাদের যুক্তি প্রধানত ছিল সোহাগপুর গনহত্যার টাইম-স্পেইস ফ্রেইমে কামারুজ্জামানকে অনুপস্থিত দাবী করা। যার ভিত্তি ছিল কিছু ডকুমেন্টারী এভিডেন্সে তার নাম উল্লেখ না থাকা। কিন্তু তার আল-বদর কমাণ্ডার হওয়ার বিষয়টিকে তারা ভুল প্রমান করতে পারেনি। ভুল প্রমানের কোন চেষ্টাও আমার চোখে পরেনি।
কামারুজ্জামানের বয়স নিয়ে তারা যেই নাটকটা করেছে সেইটার কোন আইনী ভিত্তি নেই। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্তর্ভুক্তির ন্যুনতম বয়স ছিল মাত্র ১৬। সেখানে প্যারামিলিশিয়ার মেম্বারশিপ অথবা নেতৃত্বের জন্যে ১৮ তেমন কোন কম বয়স নয়।
চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় অনেক গুলো বড় বড় নির্মমতার ঘটনা ঘটেছিল স্কুলছাত্র-ছাত্রী দিয়ে তৈরী লোকাল ব্রিগেডগুলোর মাধ্যমে। বিশেষত একটি স্কুলের শিক্ষিকাকে ঘন্টার পর ঘনটা অত্যাচারের পর হত্যার ঘটনা কুখ্যাত হয়ে আছে। আর এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল ঐ শিক্ষিকার কয়েকজন ১৫ বছর বয়সী ছাত্রী। আর একটি গেরিলাযুদ্ধে বয়স খুব কমই ম্যাটার করে। আফ্রিকায় সংগঠিত গেরিলা যুদ্ধের পক্ষে বিপক্ষের যোদ্ধাদের বয়সের দিকে তাকালেই এই ব্যাপারটা নজরে আসে।)
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট, মামলা চলাকালীন সময়ে, কোর্টরুমে ভিডিও ক্যামেরা নিষিদ্ধ করেছে অনেকদিন আগেই। এই নিয়মের পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে জাস্টিস স্কালিয়া বলেন [১]
"For every ten people who sat through our proceedings, gavel to gavel, there would be 10,000 who would see nothing but a 30-second take-out from one of the proceedings"
প্রতিটি মামলার বিবরণ যেহেতু সকলের জন্য উন্মুক্ত, এমনকি যেকোন নাগরিক মামলা চলাকালীন সময়ে উপস্থিত থাকতে পারেন, সেহেতু সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিরা, ক্যামেরা নিষিদ্ধের পেছনে যে চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে সেটি অবশ্যই গোপনীয়তা নয়। বিচারপতিরা ভাবছেন কেউ যদি আউট অফ কনটেক্সট ছোট একটি ভিডিও দেখেন তাহলে সুপ্রীম কোর্টের বিচারাধীন মামলা সম্পর্কে ভুল ধারনা তৈরী হবার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।
যেকোন মামলা একটি জটিল এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুর্বোধ্য প্রক্রীয়া। মামলা বোঝার জন্যে তাই শ্রম এবং একাগ্রতা প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রের বিচারপতিরা তাই কোর্টরুমে কাগজ কলম ছাড়া আর কোন কিছুই এলাউ করেন না। কাগজ কলম নিয়ে মনোযোগ দিয়ে মামলা শোনা ছাড়া রিপোর্টারদের তাই আর কোন কিছু করার নেই।
সুতরাং একটি বিচারাধীন মামলা একটি জটিল প্রক্রীয়া। একে খুব সহজেই প্রশ্নবিদ্ধ করা যায়, ভুলব্যাখ্যা কিংবা আউট অফ কনটেক্সট উদ্ধৃতি দিয়ে।
যেসকল দেশে জুরি ব্যবস্থা প্রচলিত আছে, সেখানে অনেক মনোযোগ দেয়া হয় যাতে জুরিরা কোর্টে উপস্থাপিত তথ্য প্রমাণাদির বাইরে কোন তথ্য দ্বারা প্রভাবিত না হন। তাদেরকে উপদেশ দেয়া হয় যাতে তারা নিজেরা এই ব্যাপারে স্বতপ্রনোদিত ভাবে কোন রিসার্চ না করে, পত্রিকা বা ইন্টারনেটে মামলা সংক্রান্ত খবর না দেখে, ইত্যাদি। কিন্তু সবসময়, বাস্তব সমস্যার জন্যেই এই ব্যবস্থা কাজ করে না।
দেখা যায় জুরিরা তাদের মামলা নিয়ে ইন্টারনেটে রিসার্চ করছেন।[২] এর ফলশ্রুতিতে অনেকসময় জুরিদের উপর কোর্ট বহির্ভূত প্রভাব পরে।
গনসংযোগ ক্যাম্পেইন(পি আর ক্যাম্পেইন) সাধারনত অভিযুক্ত আইনজীবির নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। কারন জনগনের মতামতের একটি পরোক্ষ প্রভাব বিচার প্রক্রীয়ায় থেকেই যায়। অন্যদিকে সরকারী প্রসিকিউটরদের কখোনো পি আর ক্যাম্পেইন চালাতে দেখা যায় না। পৃথিবীর সকল সরকারী কর্মচারীদের একটি সাধারন প্রবণতা হচ্ছে নিজেদের কাজের কোন “মার্কেটিং” না করা।
সরকারী কর্মচারীদের যে পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয়, তা “মার্কেটিং” এর জন্যে উপযোগী নয়। এছাড়াও সরকারী কর্মচারীদের আসলে “মার্কেটিং” এর কোন ইনসেন্টিভ নেই। তাদের পেশাগত সাফল্য নিজেদের কাজের মার্কেটিং এর উপর নির্ভর করে না। একারনে অনেক বিখ্যাত মামলায় দেখা যায় অভিযুক্ত পক্ষ হতে একপাক্ষিক প্রচারণা চলছে।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের ক্ষেত্রেও এই ব্যাপারটি সত্য। প্রধানত অভিযুক্ত এবং তার সহমর্মীরাই একপাক্ষিকভাবে বিভিন্ন প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারী পক্ষ থেকে পালটা প্রচারণার কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের সমর্থক যারা, অনেক সময়েই তারা মামলার টেকনিক্যাল ডিটেইলগুলো বেশী চিন্তিত নন। অবশ্যই এর গুরুত্বপূর্ণ ব্যতিক্রম আছে। কিন্তু যদি অভিযুক্তদের প্রচারণার
পরিধি বিচার করা হয় তাহলে আসলেই এ পর্যন্ত পালটা প্রচারণা অথবা বিভ্রান্তির অবসান করার জন্যে তেমন কিছুই করা হয়নি।
পত্রিকায় নিয়মিত মামলার প্রসিডিংস প্রকাশিত হয়। সেগুলোতে নজর রাখলে বেশ কিছু বিষয় চোখে পরে। যেমন প্রসিকিউটরদের আশ্চর্যরকম অদক্ষতা। নিয়মিতভাবে দেখা যায় সম্মানিত বিচারকরা , প্রসিকিউটরদের ভর্তসনা করছেন তাদের বিভিন্ন “ট্রিভিয়াল” ভুলের জন্যে। এত গুরুত্বপূর্ণ মামলা অবহেলায় চলছে এমনটা বললে অতিরঞ্জিত হবে কিনা সেটি নিয়ে নিশ্চিত হবার সুযোগ কমেই ক্রমে আসছে।
সুতরাং তদন্তকারী সংস্থা/প্রসিকিউটরদের বিভিন্ন দক্ষতার অভাব এর সাথে অভিযুক্তদের বিরামহীন বিভ্রান্তিকর প্রচারণা মিলে অনেক মানুষের মনেই বিভিন্ন প্রশ্ন তৈরী হচ্ছে। এই প্রশ্নসমূহ অভিযুক্ত এবং তাদের রাজনৈতিক দল/মিত্রদের দাবীর লেজিটিমেসি তৈরী হবার ক্ষেত্রে সৃষ্টি করছে।
উদাহরন হিসেবে কামারুজ্জামানের রায় উচ্চ আদালতে বহাল থাকার পর, দোষীর পক্ষে যেসকল প্রচারণা চালানো হয়েছে সেগুলো অনেকের মনে সন্দেহ তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে। দোষীদের প্রচারনার প্রধান কৌশল ছিল বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন anecdot উল্লেখ করে মামলাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়া।
এটি অত্যন্ত পুরোনো প্রক্রীয়া। প্রথমে দেখা যাক দোষী পক্ষের কিছু অভিযোগের নমুনা। আপিল বিভাগে চুড়ান্ত রায় প্রকাশের পরপরই কামারুজ্জামানের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়। সেখানে সোহাগপুর ঘটনার সাথে কামারুজ্জামানের কোন সম্পৃক্ততা নেই এই দাবী করে তার ছেলে হাসান ইকবাল বলেন[৩]
‘এই মামলার মুল সাক্ষীর তালিকায় ৪৬ জনের নাম ছিলো। তাদের মধ্যে ১০ জন সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়ার পর নতুন করে তিনজন মহিলাকে অতিরিক্ত সাক্ষী হিসেবে প্রসিকিউশন আদালতে উপস্থাপন করেন। ওই সাক্ষীরাও তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে প্রদত্ত জবানবন্দিতে গণহত্যার সময় আমার বাবা উপস্থিত ছিলেন এমন দাবি করেননি।’
মোটামুটি নির্দোষ দেখতে এই দাবীটির মাঝে বেশ কয়েকটি প্যাচ আছে। প্যাচগুলো একটি একটি করে আলোচনা করা যাক। প্রথমত সোহাগপুরের ঘটনার জন্যে রাষ্ট্রপক্ষ ঠিক কি ধরনের সম্পৃক্ততার অভিযোগ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে এনেছিল তা দেখা যাক।
রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপির(ট্রাইবুনালের রায়) ২৯১ অনুচ্ছেদ থেকে আমরা জানি [৪]
"Muhammad Kamaruzzaman has been charged for participating, substantially facilitating and contributing to the commission of
offences of ‘murder as crime against humanity’ or in the alternative for
‘complicity to commit such crime"
চার্জের প্রধান গুরুত্ব ছিল “সহোযগিতার”। এই ব্যাপারটি ডিফেন্স কাউন্সিলও তাদের যুক্তিতে উল্লেখ করেছে [৫]
"the accused has been indicted for providing ‘advices’to his accomplices in launching the attack and it does not describe that the accused accompanied the principal perpetrators"
কামারুজ্জামানের সহযোগিতা প্রধানত প্রমান হয় ততকালীন সময়ের আলবদর সদস্য এবং আলবদর ক্যাম্পের গার্ড মনোয়ার মুন্সির সাক্ষ্যে [৬]
"Md.Monwar Hossain Khan @ Mohan Munshi (63), a member of Al-Badar wasattached to the camp set up at Suren Saha’s house as a guard as directed by the accused Muhammad Kamaruzzaman and in this way he worked at the camp for the period of 4-5 months and not exceeding 07 months. It has also been proved that accused Muhammad Kamaruzzaman used to attend meetings on the first floor of the Al-Badar camp and he [P.W.2] and his ‘sir’ Kamaruzzaman [accused] had fled together from the camp two days before
Sherpur was liberated. As regards the event of Sohagpur massacre P.W.2 does not claim to have witnessed the event"
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে মনোয়ার মুন্সীর কিন্তু দাবী করেনি সোহাগপুরেরে গনহত্যা প্রতক্ষ্য করার। এখন প্রশ্ন এসে যায় কেন এই সাক্ষীর গুরুত্ব বেশী, তা বোঝার আগে এই সাক্ষীর ব্যাপারে ডিফেন্স কাউন্সিল কি বলেছে একবার দেখা যাক। [৭]
"the learned defence counsel has submitted that
the event of Sohagpur massacre is not disputed. But the witnesses who have deposed in support of the charge implicating the accused are not credible. P.W.1 and P.W.2 are hearsay witnesses"
সুতরাং ডিফেন্সের প্রধান যুক্তি ছিল, মনোয়ার মুন্সি(PW2) ঘটনা (সোহাগপুরের গনহত্যা) নিজে দেখেনি(hearsay witness). মনোয়ার মুন্সির সাক্ষ্য সম্পর্কে দুই নম্বর চার্জের ক্ষেত্রে ডিফেন্স কাউন্সিলের যুক্তি ছিল [৮]
"He has submitted that P.W.3 cannot be relied upon as he stated inconsistent date of the event. Statement made by P.W.2 and P.W.14 on some particulars is inconsistent. Due to such inconsistencies it is immaterial to see whether the statement made by them could be impeached by the defence through cross-examination.
Inconsistencies between statements of two witnesses by itself renders them
unreliable and tutored."
ডিফেন্স কাউন্সিল ঐ আলবদর ক্যাম্পে কামারুজ্জামানের উপস্থিতি ছিল না সেটি কি প্রমান করতে পেরেছে? সংবাদ সম্মেলনে বারবার হাসান ইকবাল সাহেব বিভিন্ন বই/প্রবন্ধের উল্লেখ করছিলেন যার মধ্যে কামারুজ্জামানের নাম নেই। নাম থাকা আর না থাকা সমান গুরুত্বের অধিকারী নয়। একটি গবেষণামূলক বইয়ে যদি একজনের বিরুদ্ধে কিছু তথ্য প্রমান উপস্থাপন করা হয় তাহলে তার অপরাধের “প্লজিবিলিটি” তৈরী হয়। কিন্তু কারও নাম উল্লেখিত না থাকা মানে এই না সে অপরাধ করেনি। কারন এটাও হতে পারে সে অপরাধ করেছে, কিন্তু “ডকুমেন্টেড” হয়নি। এই ক্ষেত্রে কামারুজ্জামানের পক্ষে এমন কোন শক্ত এলিবাই কি ডিফেন্স কাউন্সিল দাড়া করাতে পেরেছে যার ফলে প্রমান হয় কামারুজ্জামান ঐ টাইম ফ্রেইমে ঐ আল বদর ক্যাম্পে অবস্থান অসম্ভব ছিল? আমার মনে হয় না পেরেছে। তাদের প্রধান কৌশল ছিল প্রসিকিউশনের সাক্ষীদের রিলায়েবিলিটি নষ্ট করা। যেমন একজন সাক্ষীর রিলায়েবিলিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলার কারন হিসেবে ডিফেন্স কাউন্সিল উল্লেখ করেছে,[৯]
"The learned defence counsel next argued on charge no.2. He has submitted that P.W.3 cannot be relied upon as he stated inconsistent date of the event"
সমস্যা হচ্ছে আমার জীবনে খুব বড় ঘটনার তারিখ জিজ্ঞেস করলেও আমি ভুলভাল বলতে পারি। ডিফেন্স যেটি পারত তা হচ্ছে, ঐ সাক্ষীর, ঐ ঘটনা প্রত্যক্ষ দেখার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে প্রমান উপস্থাপন করতে পারত। সেটি ডিফেন্স কাউন্সিল কি পেরেছে?
হাসান ইকবাল খুব জোর দিয়েছেন, সোহাগপুরে তার বাবার অনুপস্থিতিকে। যেহেতু কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে গনহত্যার “সহোযোগিতা”র অভিযোগ আনা হচ্ছে, হত্যাকাণ্ড সংগঠনের সময় তার উপস্থিতি কতটুকু জরুরী? যুক্তরাষ্ট্রের স্টিফেন র্যাপের বিবৃতিটি অনেক জোরে শোরে বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে ছাপা হয়েছে/প্রচার হয়েছে। বাশেরকেল্লায় সম্ভবত একাধিকবার শেয়ার করা হয়েছে খবরটি। মজার ব্যাপার হচ্ছে, স্টিভেন র্যাপের বিবৃতিটিতে কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে যায় এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা রয়েছে।
ডেভিড বার্গম্যানের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, [৯]
"He stated that international law required in such aiding and abetting offences, that the Jamaat leader, knew that the [Al Badr] group was committing atrocities, that he provided assistance to the group with that knowledge. It was not necessary that he attend, but that the assistance that he provided needed to be substantial and in fact something that caused the atrocities committed"
সুতরাং হাসান ইকবালের প্রধান দাবীটি, কামারুজ্জামান সোহাগপুরে উপস্থিত ছিলেন না, অপ্রয়োজনীয় হয়ে পরে। যেহেতু সোহাগপুরের গনহত্যার পরিকল্পনা আল বদর ক্যাম্পে হয়, (ডিফেন্স এর কোন বিরোধীতা করেনি), সেহেতু কামারুজ্জামানের এই চার্জ থেকে বাচার জন্যে একমাত্র এস্কেইপ হচ্ছে , তিনি সেখানে কোনভাবেই উপস্থিত ছিলেন না, এই ধরনের কোন প্রমান দাখিল করা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল বহির্বিশ্বে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে। এর অন্যতম কারন অবশ্যই দোষী এবং অভিযুক্ত পক্ষের প্রচারণা। কিন্তু আমার মনে হয়না অভিযুক্ত পক্ষের প্রচারণা এককভাবে দায়ী। নিজেদের বিভিন্ন লিমিটেশন গুলোকে স্বীকার করেই বলতে হয়, অন্যতম প্রধান কারন হচ্ছে প্রাণদণ্ড। বর্তমান পৃথিবী প্রাণদণ্ডের ব্যাপারে অনেক সেন্সিটিভ হয়ে গিয়েছে। বিশ্বের অধিকাংশ দেশ, হয় প্রাণদণ্ড আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করেছে, অথবা প্রাণদণ্ডদানে বিরত আছে।[১০] এই কারনেই বহির্বিশ্বে এই বিচার নিয়ে ঋণাত্নক মনোভাব তৈরী হচ্ছে। এই সমস্যাটি নুরেমবার্গ কিংবা আইখম্যানের বিচারের সময় ছিল না।
বঙ্গবন্ধু হত্যামামলায় অনেক দোষীকে কখনই দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে না কারন তাদের প্রাণদণ্ড দেয়া হয়েছে। অধিকাংশ দেশ , প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত অপরাধীদের ফেরত দেয় না। বুদ্ধিজীবি হত্যাকাণ্ডের প্রধান পরিকল্পনাকারী চৌধুরী মাইনউদ্দিন কিংবা আশরাফুজ্জামানকেও দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না তাদের প্রাণদণ্ড হয়েছে বলেই।
প্রাণদণ্ডের একটি “ইমোশোনাল এপিল” আছে। ৭১ সালের গনহত্যা/ধর্ষণ ইত্যাদি আমাদের সমষ্টিক স্মৃতিতে একটি দগদগে ঘা। এই ঘায়ের মধ্যে স্বল্প সময়ের জন্যে হলেও প্রলেপ দিতে পারে প্রাণদণ্ড। প্রাণদণ্ড প্রতিশোধমূলক শাস্তি। কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর অনেকেই প্রতিশোধ প্রবনতাকে রাষ্ট্রের ক্ষমতার কাতারে ফেলতে চান না। রাষ্ট্রকে প্রতিশোধ প্রবণতার উর্ধে দেখতে চান। সেই কারনেই প্রাণদণ্ড ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে পৃথিবী জুড়ে।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে, জামাত এবং অন্যান্য রাজাকার/আলবদর ইত্যাদির যেসকল অপরাধ করেছে তার প্রায় সমান গুরুত্বের দাবী রাখে এইসকল অপরাধের পেছনে যে মতাদর্শ কাজ করেছে। যেই ফ্যাসিবাদ প্রভাবিত রাজনৈতিক “থিওক্র্যাসি”তে জামাত এবং অন্যান্যরা আস্থা রাখত তা কোনক্রমেই কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। নিজের দেশের মানুষের উপর নেমে আসা এই মর্মান্তিক ধ্বংস, হত্যা, ধর্ষণের সময়ে যারা ঠাণ্ডা মাথায় পশ্চিম পাকিস্থানের পক্ষ নিতে পেরেছে, তাদের অপরাধের অংশীদারত্ব গ্রহন করেছে, তাদের সাইকোলজি অনেক ভয়ংকর এবং রাষ্ট্রের ভবিষ্যতের জন্যে ক্ষতিকারক। সুতরাং তাদের অপরাধের শাস্তির সাথে সাথে তাদেরকে দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মতাদর্শিকভাবে ধ্বংস করে দেয়া আমাদের জন্যে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্যে প্রয়োজন ছিল জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ঐক্যমত্য।
আবারো বলছি বিভিন্ন রাজনৈতিক কারন এবং নেগেটিভ প্রচারণার মাঝেও আমার মনে হয়, আমরা যদি প্রাণদণ্ড অপশনটি টেবিল থেকে সরিয়ে নিতাম, তাহলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ঐক্যমতে পৌছানো আমাদের জন্যে অনেক বেশী সহজ হত। কিছু বৃদ্ধ রাজাকারকে ফাসিতে ঝুলিয়ে যে তাতক্ষণিক আনন্দ পাওয়া যাবে, তার চেয়ে জাতি হিসেবে আমাদের ইতিহাসের সাথে শেষবারের মত বোঝাপড়া করা অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা আন্তর্জাতিক ভাবে অনেক সমর্থন পেয়েছি। এর অন্যতম কারন ছিল, ন্যায় এবং ন্যায্যতা আমাদের পক্ষে ছিল।
ন্যায় এবং ন্যায্যতার দাবী এখন পরিবর্তিত বিশ্বপরিস্থিতিতে প্রাণদণ্ড ঢেকে ফেলছে বলেই আমার মনে হয়। এ প্রসঙ্গে অকালে চলে যাওয়া অধ্যাপক জালাল আলমগীরের বছর কয়েক আগে বলা কথাগুলো পুনরাবৃত্তি করছি[১১]
"We should recognise honestly that after decades of complexities, secret deals, and depraved politics, justice, though necessary and urgent, will be limited. Such limited justice can be morally justified only by a long-term commitment to truth. To prioritise truth, we must de-prioritise capital punishment. In 1941, years before the Nuremberg trials, Winston Churchill planned summary executions for fifty top Nazis at war’s end. He considered this punishment a political decision, not a legal matter. But Harry Truman, the American president, wanted a tribunal. Josef Stalin cast the deciding vote. As the human rights scholar Geoffrey Robertson explained, Stalin “loved show trials as long as everyone was shot in the end.”
And so a severely flawed tribunal was held at Nuremberg. It punished crimes against humanity by using inhuman standards: twelve Nazis were hanged first and then burnt in the ovens of Dachau, one of the German concentration camps.
Nuremberg’s moment of success was not in the verdict but in the courtroom, when the Nazis were shown reels of the horrors that they had created. Some of them wept and sat stunned, as they came to grips with the truth. The punishment from exposing openly and publicly what they had done to humanity was far more compelling than what Churchill’s planned executions might have produced. It is from this public record that the world’s aversion to genocide began and Nazism, as an ideology, received its death penalty.
সুত্রঃ
[১]
http://www.economist.com/…/de…/2014/03/cameras-supreme-court
[২]
http://news.bbc.co.uk/2/hi/8519995.stm
[৩]
http://www.banglanews24.com/beta/fullnews/bn/339310.html
[৪]Article 291 of the verdict , accessed at :
http://www.ict-bd.org/ict2/ICT2%20judgment/MKZ.pdf
[৫]Article 81, ibid
[৬]Article 255, ibid
[৭]Article 267, ibid
[৮]Article 80, ibid
[৯]
http://newagebd.net/…/us-calls-for-halt-to-kamaruzzaman-e…/…
[১০]
Death Penalty | Amnesty International USA
[১১]
Forum