No one can be compared with him except Tom Cruise
Man, you hab to respect. He is commercially an impotent person. He even got toffee from prime minister
It's nice to see the rise of an action hero at Chuk Norris's stature and hope he would come up with more of action packed movie to arrest the foreign's cultural invasion. But let's come back to the topic as it's a very significant one in BD's history. Here we go,
জামায়াতের প্রত্যাখ্যাত হরতাল ও বিএনপির দেউলিয়াত্ব
॥এম আবদুল্লাহ ॥
গত মঙ্গলবার জামায়াতে ইসলামীর ডাকে দেশব্যাপী পালিত হয়েছে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। আগের দিন জামায়াতে ইসলামীকে তাদের পূর্বঘোষিত বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে বিক্ষোভ মিছিলের অনুমতি না দেয়ায় দলটি তাত্ক্ষণিকভাবে পরদিন হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে।
প্রথমবারের মতো জামায়াত এককভাবে সারা দেশে দিনব্যাপী হরতাল আহ্বানের পরই রাজনৈতিক সচেতন সব মহল কৌতূহলী দৃষ্টি দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে মঙ্গলবার কী হয়, কেমন হরতাল হয়। অতীত অভিজ্ঞতায় হরতালের আগের সন্ধ্যায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক গাড়িতে আগুন দেয়া এক রকম রেওয়াজে পরিণত হয়েছিল। আবার হরতাল আহ্বানকারী দলটি যদি আওয়ামী লীগ হয় তাহলে দেখা গেছে গাড়িতে আগুনের পাশাপাশি ব্যাপক বোমাবাজির মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করা হয়েছে। মঙ্গলবার জামায়াতের হরতালটির ঘোষণা আসে সোমবার বিকেলে। আর সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি বাসে আগুন দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এর বাইরে হরতালপূর্ব রাতে ত্রাস সৃষ্টির মতো কোনো তত্পরতার খবর অন্তত গণমাধ্যমে চোখে পড়েনি। সোমবার গণমাধ্যম কর্মীদের গভীর রাত পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়েছে, ফায়ার সার্ভিসের কন্ট্রোল রুমে বার বার ফোন দিয়ে খোঁজ নিতে হয়েছে কোথাও গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে কিনা। শেষ পর্যন্ত প্রি-হরতাল জ্বালাও-পোড়াও ছাড়াই শুরু হয় হরতালের দিন মঙ্গলবার। তাছাড়া বাংলাদেশে হরতাল সফল করার ক্ষেত্রে একটি বড় ভূমিকা পালন করে গণমাধ্যম। হাল আমলে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো হরতাল কর্মসূচির খবরটি কতটা গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করল তা বিশ্লেষণ করে জনসাধারণ হরতালের দিনের নিজের কর্মসূচি ঠিক করে। জামায়াতের হরতাল কর্মসূচিকে অধিকাংশ টিভি চ্যানেলে ইগনোর করার প্রয়াস ছিল লক্ষণীয়। টিভি স্ক্রলে হরতালের সংবাদটি ছিল বেশ পেছনের দিকে।
এবার দেখা যাক মঙ্গলবারের চিত্র কেমন ছিল? হরতালের দিনেও বেসরকারি টিভিগুলো মনিটরিং করে দেখা গেছে, একুশে টিভি ও দিগন্ত টিভি ছাড়া বাকিরা হরতালের চালচিত্র তাত্ক্ষণিকভাবে তুলে ধরার পরিবর্তে বাংলা সিনেমাসহ অন্যান্য অনুষ্ঠান প্রদর্শনে ব্যস্ত ছিল, যা অন্যান্য হরতালের দিনের চেয়ে ব্যতিক্রম। পরদিন সংবাদপত্রগুলোতেও হরতাল সংক্রান্ত প্রতিবেদন বস্তুনিষ্ঠতা ও পেশাদারিত্বের পরিবর্তে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবেশিত হয়েছে।
সরকার বিরোধী হিসেবে পরিচিত বা জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল পত্রিকার রিপোর্ট ছিল এমনহরতালে কার্যত গোটা দেশ অচল হয়ে পড়ে। রাজধানীর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ছিল বিচ্ছিন্ন। ঢাকার ভিআইপি সড়কে হাতে গোনা কিছু যানবাহন চলাচল করলেও বিপণী বিতান, দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। পুলিশ ও সরকার-সমর্থকদের সঙ্গে হরতালকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি, টিয়ার শেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটাসহ হরতাল-সমর্থকদের ইটপাটকেল নিক্ষেপের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবারের এই সর্বাত্মক হরতাল কর্মসূচি পালিত হয়। পুলিশ বিভিন্ন স্থানে হরতাল সমর্থকদের মিছিল ও পিকেটিংয়ে বাধা দেয়। পুলিশ জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালায়। পিকেটারদের ওপর সরকার-সমর্থকদের হামলায় পুলিশ প্রকাশ্যে মদত দেয়। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এ হামলায় অংশ নেয়। এ ধরনের হামলা, সংঘর্ষ, গুলি, অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর হরতাল-সমর্থকদের গ্রেফতারের ঘটনা শুধু রাজধানীতেই চলেনি, বরং একই মাত্রায় তা চলেছে সারা দেশে। জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির এই হরতাল কর্মসূচি সফল করায় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
পক্ষান্তরে কট্টর জামায়াতবিরোধী দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় বুধবার প্রকাশিত হরতাল সংক্রান্ত খবরে বলা হয়, হরতাল পালনের নামে মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চোরাগোপ্তা হামলা, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুরসহ সহিংসতা চালিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির।
হরতালের সমর্থনে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ভোর থেকেই সহিংস তত্পরতা শুরু করেন। তারা বিভিন্ন সড়কে পুরনো টায়ারে আগুন ধরিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। তারা সারা দেশে পুলিশের ওপর হামলা চালান, অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন ও গাড়িতে আগুন দেন। তারা রাস্তায় বের হওয়া সাধারণ পরিবহন পুড়িয়ে দেন ও ভাংচুর করেন। পুলিশের হিসাব মতে, সারা দেশে দিনভর ১১১টি গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতে ১৪টি গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।
রাজধানীর বাইরের হরতাল চিত্র দিতে গিয়ে এসব পত্রিকায় লিখেছে, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, বগুড়া, নাটোর, সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, সাভারসহ ২৪টি জেলা-উপজেলায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সহিংসতা চালান। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট ও ঢাকায় পুলিশের একটি করে গাড়ি ও দুটি মোটরসাইকেলে আগুন দেন। পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৬৯ জনকে আটক করা হয়েছে।
বুধবার হরতালের খবরটি অধিকাংশ পত্রিকা শীর্ষ সংবাদ হিসেবে ছাপলেও কয়েকটি পত্রিকার ট্রিটমেন্ট ছিল দায়সারাগোছের। বড় মিডিয়া হাউজের একটি পত্রিকা দুই কলামে সংবাদ শিরোনাম করেছে শিথিল হরতালে জামায়াতের তাণ্ডব। টেলিভিশনগুলোও হরতালের দিনটির দেশ চিত্র তুলে ধরতে বেশ কুণ্ঠিত ও দ্বিধাগ্রস্ত দেখা গেছে। মঙ্গলবারের চেয়ে কম ঘটনাবহুল হরতাল কর্মসূচিও বেসরকারি টিভি চ্যানেলে শীর্ষ সংবাদ হয়েছে। অথচ মঙ্গলবার দুএকটি বাদে সব চ্যানেল তিন থেকে চার নম্বর সংবাদের মর্যাদা দিয়েছে। শেয়ারবাজার লুটে আলোচিত আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এক সদস্যের মালিকানাধীন নতুন সংবাদভিত্তিক একটি চ্যানেল শিরোনামই করেছে এরকমরাজধানীতে যান চলাচল ছিল প্রায় স্বাভাবিক। যদিও ওই সংবাদটি পরিবেশনের সময় যে ফুটেজ দেখানো হয়েছে তাতে কেবল ভিআইপি সড়কে ফাঁকা রাস্তা দিয়ে এক/দুটি মিনিবাস দুরন্তগতিতে ছুটে যাওয়া এবং রিকশার একাধিপত্য দেখা গেছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, যারা হরতালকে শিথিল বা ঢিলেঢালা দেখানোর চেষ্টা করেছেন তারাই আবার হরতালে যানবাহন না থাকায় জনসাধারণের ভীষণ কষ্ট ও দুর্ভোগ নিয়ে সবিস্তারে আলাদা প্রতিবেদন প্রচার ও প্রকাশ করেছেন।
টিভি চ্যানেলগুলোর কোনো কোনোটি প্রথম বা দ্বিতীয় প্রধান সংবাদ হিসেবে পরিবেশন করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ঘরোয়া সভার বক্তব্য। সেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণ জামায়াতের হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে। পাশাপাশি মিরপুরে ছাত্রলীগ-যুবলীগ ক্যাডাররা জামায়াত-শিবিরের মিছিলে হামলা করে ৮-১০ জন কর্মীকে রাস্তায় ফেলে পুলিশের সামনে যেভাবে বর্বর কায়দায় নির্যাতন করেছে এবং তাদের রক্তাক্ত ও মৃতপ্রায় অবস্থায় পুলিশের গাড়িতে তুলে দিয়েছে, সেই লোমহর্ষক ঘটনাকে প্রধানমন্ত্রী গণপ্রতিরোধ হিসেবে বর্ণনা করে অভিনন্দিত করেছেন এবং ভবিষ্যতেও এমনটি চালিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার হরতালের খবরের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য ছাপা হয়েছে সংবাদপত্রে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রথম অংশটি সত্য ধরে নিলে অর্থাত্ জামায়াতের হরতাল জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়েছে মানলে তার কাছে বিনয়ের সঙ্গে জানতে চাওয়া বোধকরি অন্যায় হবে না যে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত কোন কোন হরতাল জনগণ আহলান, সাহলান, মারহাবা বলে গ্রহণ করেছে। নব্বই পরবর্তী বাইশ বছরে দুই মেয়াদে বিরোধী দলে থাকাকালে আওয়ামী লীগ দেশব্যাপী হরতাল করেছে কম করে হলেও তিনশ দিন। কেবল বিএনপির ১৯৯১ থেকে ৯৬ আমলেই ১৭৩ দিন হরতালের রেকর্ড গড়েছে। সেসব হরতালের চিত্র মঙ্গলবারের হরতালের চেয়েও যে সহিংস ও ধংসাত্মক ছিল তা কোনো সত্যাশ্রয়ী অস্বীকার করতে পারবেন না। হ্যাঁ, কিছুটা আলাদা তো ছিলই। আওয়ামী লীগের হরতালে যাত্রী বোঝাই বাসে গান পাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে ডজনখানেক মানুষকে কয়লা করা হয়েছে, সরকারি কর্মকর্তাদের সচিবালয়ে যাওয়ার পথে ছাত্রলীগের সোনার ছেলে আলমের নেতৃত্বে দিগম্বর করা হয়েছে, হরতালের আগের রাত থেকে শেষ পর্যন্ত খৈয়ের মতো বোমাবাজি করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সাধারণ মানুষের প্রাণহানি এবং শত শত নীরিহ মানুষের হাত-পা উড়িয়ে দেয়ার অসংখ্য নৃশংস ঘটনা ঘটানো হয়েছে। জামায়াত-শিবির মঙ্গলবারের হরতালে খানিকটা আওয়ামী অনুকরণ করার চেষ্টা করলেও তার সিকিভাগও পারেনি। প্রহরতালের আওয়ামী স্টাইলটা পুরোপুরি রপ্ত করতে পারলে সেই হরতাল হয়তো জনগণ প্রত্যাখ্যান না করে গ্রহণ করলেও করতে পারে!
আর সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী রাজপথে পিটিয়ে বর্বর নির্যাতনকে যেভাবে বাহ্বা দিয়েছেন তাতে অবাক হওয়ার কিছু আছে বলে মনে হয় না। অন্তত ২০০৬-এর ২৮ অক্টোবর পল্টনে লগি-বৈঠা দিয়ে সাপের মতো পিটিয়ে ৭ জন তরুণকে হত্যার বীভত্স চিত্র যারা সরাসরি কিংবা ভিডিও চিত্রে দেখেছেন তাদের কাছে মঙ্গলবার মিরপুরের ঘটনাকে মামুলি এবং প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে স্বভাবজাত বলেই জ্ঞান করার কথা।
এবার হরতাল সংশ্লিষ্ট আরেকটি প্রসঙ্গে যেতে চাই। মঙ্গলবার জামায়াত আহূত হরতাল কর্মসূচির প্রতি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নৈতিক সমর্থন জানায়। এছাড়া ১৮ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক ইসলামী ঐক্যজোট, এলডিপি, জাগপা ও লেবার পার্টি জামায়াতের এই হরতাল কর্মসূচির প্রতি নৈতিক সমর্থন জানায়। এই নৈতিক সমর্থনের কথা জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের প্রচলিত আইনে নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দলকে অনুষ্ঠিতব্য শান্তিপূর্ণ জনসভা অনুষ্ঠানে সরকারি বাধা প্রদানের অন্যায়, বেআইনি ও স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের প্রতিবাদে তাদের ডাকা হরতাল কর্মসূচি যৌক্তিক ও গণতান্ত্রিক। দলটির কর্মসূচি বানচালের জন্য পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মীদের মাঠে নামানোর ন্যক্কারজনক ঘটনা দেশকে রাজনৈতিক সংঘাতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী জনগণ দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত্ নিয়ে শঙ্কিত। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আহূত হরতাল কর্মসূচির প্রতি বিএনপি নৈতিক সমর্থন জানিয়েছে।
বিএনপির এই নৈতিক সমর্থন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সরকার দলীয় নেতারা সমালোচনা ও তির্যক মন্তব্যের খই ফুটিয়েছেন। বিএনপির নৈতিক সমর্থনকে অনৈতিক বলে মন্তব্য করেছেন তারা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বিএনপির এমন সমালোচনা করবেন এটাই স্বাভাবিক। কারণ আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন সরকারি দলের সামনে টপ প্রায়োরিটি হচ্ছে বিএনপি জোট থেকে জামায়াতকে আলাদা করা। হরতালে বিএনপি কোনো রকম সমর্থন না দিলে তাতে ভুল বুঝাবুঝি সৃষ্টির সুযোগ হতো এবং জোটে টানাপড়েনের গল্প কোনো কোনো পত্রিকায় পড়ে সুখানুভূতি লাভ করতে পারত সরকারি দলের নীতিনির্ধারকরা। তারা মঙ্গলবারের হরতালকে যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধের জন্য এবং সেই হরতালে বিএনপির নৈতিক সমর্থন একই দাবির প্রতি সমর্থন হিসেবে চিত্রিত করেন। মির্জা ফখরুল নৈতিক সমর্থনের যে কারণ লিখিতভাবে জানিয়েছেন তা সরকার আমলে নেয়নি বোধগম্য কারণেই। সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব তো তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার পুনর্বহালসহ অন্যান্য জনদাবিতে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঘোষিত ৯ ডিসেম্বরের রাজপথ অবরোধ কর্মসূচিকেও যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধের কর্মসূচি হিসেবে চিত্রিত করে কঠোর সমালোচনা করছেন। বিজয়ের মাসে এই কর্মসূচি ঘোষণার কারণে নাকি দেশের সম্ভ্রম আর স্বাধীনতা বলে আর কিছু অবশিষ্ট থাকল না।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব বর্তমান শাসনের প্রথমভাগে বিরোধী দলের সব কর্মকাণ্ডে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের রক্ষার চেষ্টা হিসেবে বিরামহীন গলাবাজি করেছেন। ওই হত্যার রায় কার্যকর করার পর সব কিছুতেই তারা দেখতে পাচ্ছেন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা। এই পর্ব কোনো এক সময় শেষ হলে নতুন কি উপসর্গ তারা আবিষ্কার করবেন সেটা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে।
অবশ্য এখানে প্রসঙ্গটির অবতারণা করেছি অন্য কারণে। হরতালের আগের রাতে টিভির সামনে বসে রিমোট টিপতে টিপতে সময় টিভির টকশোতে গিয়ে থামলাম। আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের মালিকানাধীন চ্যানেলটিতে তখন জামায়াতের হরতাল এবং বিএনপির নৈতিক সমর্থন নিয়ে কথা বলছিলেন অন্যতম টকশো তারকা সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান। কোন পত্রিকার সম্পাদক সেটা এ লেখার সময় নিশ্চিত না হয়ে উল্লেখ করতে পারলাম না। কারণ তিনি নতুন নতুন পত্রিকা প্রকাশ করেন আর তা বিক্রি করে আরেকটি প্রজেক্ট ধরেন। আমার অগ্রজ এবং বিশেষত নতুন পত্রিকা প্রকাশে অনন্য প্রতিভার অধিকারী নাঈমুল ইসলাম খান টকশোতে বলেনও দারুণ ভঙ্গিমায়। তার কোনো বক্তব্য নিয়ে সমালোচনা করার যোগ্যতা যে আমার নেই সে ব্যাপারে আমি পুরোপুরি সচেতন। সে ধরনের প্রয়াস ধৃষ্টতা হিসেবেও অনেকে গণ্য করতে পারেন। নাঈমুল ইসলামের হাত ধরে সাংবাদিকতায় আসা আমার সহকর্মী বন্ধুর সংখ্যাও অনেক। তিনি গণমাধ্যমের আলোচিত ব্যক্তিত্ব। ওয়ান-ইলেভেনের সময়সহ বাংলাদেশের রাজনীতির বাঁকে বাঁকে তার ভূমিকা আলোচনার কেন্দ্রে ছিল।
নাঈমুল ইসলামের সঙ্গে আমার ২৬ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে কখনও কাজ করা হয়নি। পেশাগত জীবনের প্রথম দিকে তিনি মরহুম মাওলানা আবদুল মান্নানের প্রতিষ্ঠিত দৈনিক ইনকিলাবে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ও পরে জুনিয়র স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেছেন। আবার পরে আজকের কাগজ ও ভোরের কাগজ প্রকাশ করে সেই মাওলানা মান্নানকে মুক্তিযুদ্ধকালে ঘাতক চিত্রিত করে হেন সমালোচনা নেই যা করেননি। তিনি ইনকিলাব ছাড়ার পর আমি সেই হাউজে যোগ দেই।
প্রসঙ্গে ফেরা যাক। সোমবারের টকশোতে নাঈমুল ইসলাম খান যেন কিছু সময়ের জন্য উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। তিনি জামায়াতের হরতালে বিএনপির নৈতিক সমর্থনে এতটাই ব্যথিত হয়ে পড়েছিলেন যে, কঠোর সমালোচনার এক পর্যায়ে বললেন, জামায়াতের হরতালে বিএনপির সমর্থনে তাদের দেউলিয়াত্ব প্রকাশ পেয়েছে। এটা তার নিজস্ব বিশ্লেষণ হতে পারে। কিন্তু আমি বিস্মিত হয়েছি, একজন তারকা সাংবাদিক হয়েও তিনি যখন বার বার বলছিলেন যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য ডাকা হরতালের প্রতি বিএনপি সমর্থন দিয়েছে। কী কারণে বিএনপি সমর্থন দিয়েছে তা দলটির মহাসচিব লিখিতভাবে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দেয়ার পরও নাঈমুল ইসলাম খানের মতো বোদ্ধা ও সচেতন ব্যক্তি বিকৃতভাবে বিষয়টিকে বার বার উপস্থাপন করে টিভি দর্শকদের যেভাবে বিভ্রান্ত করেছেন তা তার একজন অনুজ গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে আমাকে খুবই আহত করেছে। তাত্ক্ষণিকভাবে ডাকা হরতালের কারণ হিসেবে জামায়াতও পরিষ্কারভাবে বলেছে যে, গণতান্ত্রিক অধিকার অনুযায়ী তাদের পূর্বঘোষিত সমাবেশ করতে না দেয়ায় এই কর্মসূচি। তার সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক পুনর্বহাল, দ্রব্যমূল্য কমানোসহ অন্যান্য ইস্যু যেমন যুক্ত করা হয়েছে সেখানে দলটি তাদের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিও তুলেছে।
নাঈমুল ইসলাম খান টকশোতে প্রায় বলেন যে, তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয়। সেই তর্কের খাতিরে যদি আমি ধরে নেই যে, যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধের জন্যই হরতাল, সে ক্ষেত্রেও বিএনপি তাদের মিত্র দলের হরতালে সমর্থন দিতে বাধা কোথায়? বিএনপির দুই সিনিয়র নেতাও তো যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায়। বিএনপি বরাবরই বলে আসছে সত্যিকারের যুদ্ধাপরাধের বিচারে বিএনপির দ্বিমত নেই। কিন্তুু বিচারের নামে যদি প্রহসন হয়, প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে ঘায়েল করার জন্য, আগামী নির্বাচনে কিছু নেতাকে অযোগ্য করার দূরভিসন্ধি থেকে যদি বিচারের নামে প্রহসন হয় তার বিরুদ্ধে বিএনপি তো বরাবরই সোচ্চার। তাতে হরতালে বিএনপির সরাসরি সমর্থন দেয়ারই কথা। আর নৈতিক সমর্থন দেয়াতেই বিএনপির দেউলিয়াত্বের প্রমাণ পেয়ে গেলেন বিজ্ঞ রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাঈমুল ইসলাম। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য আওয়ামী লীগ যখন নূর হোসেন, ডা. মিলনসহ বহু হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপকর্মের মহানায়ক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে গলাগলি করেন, বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে জুতো বানানোর হুঙ্কার যে জাসদ দিয়েছিল সেই জাসদকে নৌকায় তুলে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করেন তখন আওয়ামী লীগের দেউলিয়াত্বের প্রমাণ পান না টকশো তারকারা। একচোখা মানসিকতা থেকে যদি বেরিয়ে আসতে না পারি তাহলে জাতিকে নীতিবাক্য শোনানো থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।
লেখক : সিনিয়র সহকারি মহাসচিব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক (বিএফইউজে
NewsMediaBD.Com