দিল্লীর লাড্ডুতে তুষ্ট বুদ্ধিজীবীগণ
Tazakhobor.com - 03 January 2014
দিল্লীর আয়নায় বাংলাদেশকে দেখতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গীকে গুরুত্ব দেয়া।’ ৫ জানুয়ারী অনুষ্ঠেয় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি এ আহ্বান জানান। এর প্রতিবাদ করেছেন বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা সুব্রামানিয়াম স্বোয়ামী। তিনি ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, কংগ্রেস সরকারের মদতেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার এ ধরনের একটি নজিরবিহীন নির্বাচন করার সাহস দেখিয়েছে। যা গণতান্ত্রিক ভারতের নীতির সঙ্গে যায় না। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের প্রতিবাদ বিজেপি করলেও বাংলাদেশ সরকার প্রতিবাদ করেনি। এমনকি প্রতিবাদ দূরের কথা নিন্দাও জানান নি মুক্তিযুদ্ধের ‘চেতনার’ ব্যাপারীরা। অথচ তারা দিনরাত বাংলাদেশ পাকিস্তান হয়ে গেল বলে চিৎকার করছেন।
এর অর্থ কী দাঁড়ায়? এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ কী ভারতের অঙ্গরাজ্য? দিল্লীর পুতুল সরকার কী এখন ক্ষমতায়? স্বাধীন বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি ভারতের এ আহ্বান কি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের প্রতি বন্ধুত্ব না দাদাগিরি? কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে পাকিস্তান পার্লামেন্টের প্রস্তাবে যে বিশিষ্টজনেরা তীব্র প্রতিবাদ করছেন; তারা দিল্লীর এ ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যে কেন এখন নীরব রয়েছেন? কাদের মোল্লা ইস্যুতে বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তান পার্লামেন্টের নিন্দা প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ‘মর্মাহত’ বলায় অনেকেই ক্ষিপ্ত হয়েছেন। তারা বিএনপির সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের কথা বলেছেন। শাহরিয়ার কবির গংরা আগ বাড়িয়ে বলেছেন, বেগম জিয়া পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করছেন। অথচ তারা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্য ‘না শোনার ভান করে থাকার’ রয়েছেন। এর মাজেজা কী? দিল্লীর লাড্ডুতে তুষ্ট এবং বর্তমান সরকারের তাঁবেদার শাহরিয়ার কবির গং বুদ্ধিজীবীদের নীরবতা নতুন কিছু নয়। তাদের কাছে দিল্লীর স্বার্থ ঢাকার স্বার্থের চেয়ে বড়। কোলকাতার সংস্কৃতি তাদের কাছে আদর্শ। কিন্তু যারা দেশপ্রেমী এবং কিছুটা হলেও দলনিরপেক্ষ সুশীল হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত তারা কেন এ বক্তব্যের জন্য দিল্লীর ক্ষমা প্রার্থনার দাবিতে উচ্চকন্ঠ হচ্ছেন না? নাকি তারাও কী সাম্রাজ্যবাদী ভারতের ‘র’ এর ঢাকায় অবাধ বিচরণ এবং প্রভাব প্রতিপত্তির ভয়ে গর্তে লুকিয়ে গেলেন? পাকিস্তান পার্লামেন্টের কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে নিন্দা প্রস্তাব যেমন বাংলাদেশের মানুষ তীব্র প্রতিবাদ করেছে; তেমনি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঔদ্ধত্যপূর্ণ এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করছে। নীরব শুধু টকশোর কিছু চিরচেনা বুদ্ধিজীবী; যারা সংবিধানের দোহাই দিয়ে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর ‘সমঝোতার সাইকেলে’ বিরোধী দলকে চড়ানোর জন্য জনমত গঠনের চেষ্টা করছেন। ভোটের আগে ১৫৪ আসনে নির্বাচিত হওয়ার পরও গণতন্ত্র গণতন্ত্র দাবি করছেন।
দেরিতে হলেও রেহমান সোবহান, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাইয়িদ, ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন, ব্যারিষ্টার রফিক উল হক, ব্যারিষ্টার শাহদীন মালিক, মাহফুজ আনাম, ড. আকবর আলী খান. ড. বদিউল আলম মজুমদার, মাহমুদুর রহমান মান্না, ড. হোসেন জিল্লুর রহমান, অধ্যাপক পিয়াস করিম, নুরুল কবির, স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, ড. তুহিন মালিক, আসিফ নজরুলসহ দেশের প্রবীণ ব্যক্তি ও দল নিরপেক্ষ সুশীলরা ৫ জানুয়ারীর পাতানো নির্বাচনের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছেন। পাতানো নির্বাচন বাতিলের দাবিতে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের উচ্চকন্ঠ ধারণ করায় কূটনীতিকরা আবার সক্রিয়। সরকার কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। সরকার এতোদিন সংবিধানের দোহাই দিয়ে ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন ইস্যুতে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করলেও সুশীল সমাজ সরকারের এ দাবির ‘মুখোশ’ খুলে দিয়েছেন। তারা তুলে ধরেছেন ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন বাতিল করেও সংবিধানের মধ্যে থেকেই সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন করা সম্ভব। সুশীল সমাজের এসব উজ্জ্বল নক্ষত্রদের কথায় সরকার কার্যত বেকায়দায় পড়ে গেছে। ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া, প্রধানমন্ত্রীর সমঝোতা করে আসন ভাগের বক্তব্য ও ভোটের পরিবেশ না থাকার পরও নির্বাচন কমিশনের বাগড়াম্বরের মধ্যে পরিষ্কার ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন যে সংবিধান পরিপন্থী তা মানুষ বুঝে গেছেন। সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে হবে। অথচ ১৫৪ আসনের ভোটাররা ভোট দেয়ার সুযোগ পাননি। এ নির্বাচন যে সংবিধান অনুযায়ী হচ্ছে না তা সুশীলরা জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন।
৫ জানুয়ারীর পাতানো নির্বাচন নিয়ে ভারত ছাড়া গোটা বিশ্ব বাংলাদেশের জনগণের বিপক্ষে। দিল্লী চায় বাংলাদেশে আবার আওয়ামী লীগকে যেকোনো ভাবেই হোক ক্ষমতায় আনতে হবে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এসে দিল্লীর অবস্থান জানিয়ে গেছেন। দিল্লী সরকারের এ অবস্থানের কঠোর সমালোচনা করেছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)।
তারা বলেছে বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চায় ভারতের জনগণ। কিন্তু কংগ্রেস আওয়ামী লীগকে অন্যধরনের নির্বাচনের মাধ্যমে ঢাকার ক্ষমতায় আনতে চায়। কংগ্রেসের এই নীতি ভারতের জনগণের নয়। দিল্লীর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ভারতের প্রতিবাদ হচ্ছে অথচ বাংলাদেশে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, সুশীল এবং বিদ্যাজীবীরা প্রতিবাদ করছেন না। দাদারা অখুশি হতে পারেন সে জন্যই নীরব রয়েছেন। ওই বুদ্ধিজীবীরা কথায় কথায় পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা এআইএস নিয়ে সমালোচনা করেন, কিন্তু বাংলাদেশে ‘র’ এর সরব উপস্থিতি নিয়ে ‘টুঁ’ শব্দ করেন না।
সম্প্রতি সিপিবির উপদেষ্টা মঞ্জুরুল আহসান খান টকশোতে বলেছেন, ঢাকায় ‘র’ এর কয়টি অফিস আছে তা প্রকাশ করতে হবে। কারণ ‘র’ এর উপস্থিতি নিয়ে সমাজে বিতর্ক রয়েছে। নিউ এইজ সম্পাদক নুরুল কবির টকশোতে বলেছেন, শুনেছি বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের গাড়ী ঢাকায় ভারতের ‘র’ ব্যবহার করছে। এটা কিসের আলামত জাতি জানতে চায়। এ নিয়ে সরকারের বক্তব্য তিনি প্রত্যাশা করেন। ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসিতে অবরুদ্ধ থেকে পুলিশের উদ্দেশ্য করে বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের অনেকের চেহারা অপরিচিত। এরা কারা? বেগম খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যের পর সারাদেশে শুরু হয় তোলপাড়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন তৃতীয় মাত্রা টকশোতে বলেছেন, বাংলাদেশের বিশেষ বাহিনীতে অনেকের চেহারা অপরিচিত। এরা কারা? এদের পরিচয় কী? বাংলাদেশের আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর কী আস্থা হারিয়ে এসব অপরিচিতদের আনা হয়েছে? ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ যখন মার্কিন কূটনীতিককে বলেন, ‘এটা আমাদের অঞ্চল; এই এলাকার ভালমন্দ আমরাই বুঝি।’ তখন কোথায় থাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আজকে জামায়াতে ইসলামীর ভয় দেখায়, পাকিস্তানের ভয় দেখায়। এগুলো বলে দেশকে একটি সিভিল ওয়ারের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। সালমান খুরশিদের বক্তব্যে সরকারের নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, ওনারা (আওয়ামী লীগ) বলেন এটা পাকিস্তান হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ কখনো ভারতের কোন রাজ্য হবে না; পাকিস্তানও হবে না। এরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে এসেছে। মুক্তিযুদ্ধ তো সবাই মিলে করেছি। এখন এর মধ্যে নিয়ে আসছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আর বিপক্ষের শক্তি। সিভিল ওয়ার সৃষ্টি করার একটা বুদ্ধি। যারা ’৭১ এ ভারত চলে গেছে তারাই শুধু মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো? যুদ্ধে মারা গেলাম আমরা এখন তারা হয়ে গেল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা! তারা বাংলাদেশ রক্ষা করতে পারবে নাকি। দেশ রক্ষা করবে দেশের জনগণ। এটা মুসলিম কান্ট্রি, মুসলিম হিসেবেই টিকে থাকবে। যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিচার ভিন্ন জিনিস। এই মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে আপনি জামায়াতে ইসলামকে আনছেন। ৪২ বছর ধরে যারা এদেশে রাজনীতি করে আসছে, তাদের টেনে আনছেন। এ সমস্ত ইস্যু তো নির্বাচনের ইস্যু নয়। এভাবে বোঝানো হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি সৃষ্টি করা যায় তাহলে সবাই আওয়ামী লীগের পিছনে জড়ো হয়ে যায়। জয়বাংলা সেøাগানটা আমি বুঝি না। জয়বাংলা কোন দেশ? আমার দেশ হলো বাংলাদেশ আপনি ‘জয় বাংলাদেশ বলেন’। ’৭১ সালে আমরা পাকিস্তানের বিরোধী অবস্থান থেকে ‘জয়বাংলা’ বলেছি। এখন তো বাংলাদেশ হয়ে গেছে। এগুলো চালাকি করা হচ্ছে। ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেনের এ বক্তব্যের জবাব সরকার কী দিতে পারবে?
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক কেমন? বন্ধুত্বের না দাদাগিরির? ৪২ বছরে ভারত কি এমন কোনো নজীর সৃষ্টি করতে পেরেছে যা দিল্লীর সঙ্গে ঢাকার বন্ধুত্বের সম্পর্ক নির্দেশনা দেয়? ’৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ভারতকে বেরুবাড়ি দিয়েছে। কিন্তু তিনবিঘা কী বাংলাদেশকে দেয়া হয়েছে? তিন বিঘা দেয়ার প্রস্তাব ভারতের লোকসভা যে ৪০ বছর ঝুলিয়ে রেখেছে তার নিন্দা করার মুরোদ নেই এই বুদ্ধিজীবীদের। পাকিস্তান পার্লামেন্ট যে অন্যায় করেছে সে অন্যায় করেছে ভারতের লোকসভাও। দীর্ঘ দিনেও ভারত তিস্তার পানি দেয় নি, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করে নি; অথচ শেখ হাসিনার সরকার ভারতকে ট্রানজিট দিয়ে দিয়েছে। তিস্তার পানি চুক্তি নামে দুই বছর থেকে যে নাটক করা হয়েছে তা দেশের মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি প্রটোকল ভঙ্গ করে তিস্তা চুক্তির জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার পায়ের কাছে গিয়ে ‘দিদি’ ‘দিদি’ বলে গলা ফাটিয়েছে। দেশের জন্য এসব লজ্জাকর ঘটনায় বুদ্ধিজীবীরা শব্দ করেন না। কারণ, দিল্লীর ঝোলাগুড় বন্ধ হয়ে যাবে। ফেলানীরা যখন কাঁটাতারে ঝুলে থাকে তখন আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় ব্যক্তি সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, সীমান্তে যারা মারা যায় তারা মানুষ নয় চোর। গরুচোর মারা গেছে। এধরনের ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি ঘটাবে না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দিন খান আলমগীর দিল্লীর পক্ষ নিয়ে দাবি করেন সীমান্তে হত্যাকা- বন্ধ হয়ে গেছে। সীমান্তে বাংলাদেশীদের বিএসএফের হত্যাকে ‘গরুচোর’ বলার মাজেজা কী? চোর শব্দতো দেশের মানুষের কাছে এখন অনেক আলোচিত বিষয়। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মুসা টেলিভিশনের কয়েকটা টকশোতে বলেছিলেন, মহাজোট সরকার হলো লুটেরা সরকার। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের দেখলেই বলবেন ‘চোর’ যায়। কারণ তারা পদ্মা সেতু থেকে শুরু করে ডেসটিনি, হলমার্ক, শেয়ারবাজারের চুরি করে ফুলে ফেঁপে উঠেছেন। প্রবীণ সাংবাদিক মুসাকে এ বক্তব্যের জন্য অপমান হতে হয়েছে। ক্ষমতার শীর্ষে থেকেও গালিগালাজ করা হয়েছে। অথচ কয়েকমাস পর তার কথার প্রতিফলন মানুষ দেখেছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী এমপিদের হলফনামায় সম্পদের যে উল্লেখ হয়েছে তাতে দেশের মানুষ সেটাই দেখছে। ২০ বিঘা জমির মালিক প্রতিমন্ত্রী ৫ বছরের ২৮শ’ বিঘার মালিক হয়েছেন। মন্ত্রী এমপি এবং তাদের স্ত্রী-সন্তানদের সম্পদ ৫ বছরে বেড়েছে একশ’ গুণ থেকে দুই হাজার গুণ। নিন্দুকেরা বলেন, এই সম্পদ আরো বেশি। সীমান্তে বিএসএফের হাতে নিহত গরু ব্যবসায়ীরা যদি মানুষ না হয়ে চোর হয় তাহলে এদের কী নামে ডাকবে মানুষ?
দিল্লীর স্বার্থকে অধিক গুরুত্ব দেয়ায় ভারত এতোদিন পর্দার আড়াল থেকে আওয়ামী লীগকে সহায়তা করে বাংলাদেশে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করলেও এখন প্রকাশ্যে করছে। তারা কূটনীতির রীতিনীতি ভঙ্গ করে তারা সরাসরি আওয়ামী লীগের পক্ষে নেমেছে। নিউইয়র্কের হিউম্যান রাইটস ফোরামের পরিসংখ্যান অনুসারে গত কয়েক বছরে ৯০০ বাংলাদেশিকে বিএসএফ হত্যা করেছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুসারে ২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে বিএসএফ গুলি ও শারীরিক নির্যাতনে হত্যা করেছে ৪২৪ বাংলাদেশীকে। অন্য একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায় ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত বিএসএফ সীমান্তে ৩শ’ ১২ বার হামলা চালানো হয়। এতে ১২৪ বাংলাদেশী নিহত হয়। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালে ১৩০টি হামলায় ১৩ জন নিহত, ‘৯৭ সালে ৩৯টি ঘটনায় ১১, ’৯৮ সালে ৫৬টি ঘটনায় ২৩, ৯৯ সালে ৪৩টি ঘটনায় ৩৩, ২০০০ সালে ৪২টি ঘটনায় ৩৯ জন নিহত হয়। দুই দফায় আওয়ামী লীগের শাসনামলে এসব হত্যাকা- নিয়ে তেমন প্রতিবাদ করেনি আওয়ামী লীগ। এখন অবশ্য বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে ঠুটো জগন্নাথ করে রাখা হয়েছে। তাদের নাকি গুলি ছোঁড়ায়ও বাধানিষেধ আছে। আওয়ামী লীগের এই দুই শাসনামলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কার্যত দিল্লীকে খুশি করতে ব্যস্ত থেকেছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর ভাষায় বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্র নীতি হলো দিল্লীর পায়ের নীচে বসে থাকা নীতি। দেশের স্বার্থের বদলে ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ায় দিল্লী এখন আওয়ামী লীগকে আবার ক্ষমতায় বসানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের সরকারে থেকে ভারতের স্বার্থে এসব কর্মের জন্য শেখ হাসিনাকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে ‘দেশিকোত্তম’ সম্মাননা দেয়া হয়েছে। কোলকাতায় সম্মাননা দেয়া ওই অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের ‘মুখ্যমন্ত্রী’ হিসেবে সম্বোধন করা হয়। অথচ তিনি এর প্রতিবাদ করেননি। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এসে বলেছেন, আওয়ামী লীগের বদলে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশে জঙ্গির উত্থান ঘটবে। যা বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে ভারতের শান্তি বিঘœ ঘটাবে। প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে জঙ্গী উত্থানের তথ্য তিনি কোথায় পেলেন? বাংলাদেশের কিছু দিল্লীর ঝোলাগুড় খাওয়া বুদ্ধিজীবী দাবি করেন শেখ হাসিনা ৫ বছরে দেশে জঙ্গী দমনে সফলতা দেখিয়েছেন। সে জন্যই ভারত নাকি শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন হলো কোথায় জঙ্গী দমন করেছেন শেখ হাসিনা? বাংলাদেশের মানুষ এবং মূল ধারার ধর্মীয় দলগুলো কখনোই জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দেয় না। আর জেএমবির সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাই ও শায়খ আবদুর রহমানের বিচার করেছে বিগত বিএনপি সরকার। তারাই বিচার করে ফাঁসি দিয়েছে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার সে রায় কার্যকর করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার কতজন জঙ্গীর ফাঁসি দিয়েছে? ‘র’ এর নীল নকশা অনুযায়ী কিছু উগ্র ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে ‘কুমিরের ছানার’ মতো বার বার মিডিয়ায় দেখানোর ঘটনা মানুষ দেখেছে। ভারত দাবি করেছে বাংলাদেশের জঙ্গীরা ভারতের শান্তি শৃংখলা বিনষ্ট করবে। তারা ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র দেবে। ভারতের এধরনের দাবি ও অভিযোগের কোনো প্রতিবাদ করছে না বাংলাদেশ সরকার। তথাকথিত প্রগতিশীল বুদ্ধিজীবী এবং দেশপ্রেমী শাহরিয়ার কবির গংরাতো দিল্লীর এ অভিযোগে ‘মারহাবা’ ‘মারহাবা’ বলে দিল্লীর সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন। অথচ ভারত বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে যে অশান্তির সৃষ্টি করেছিল; জোতিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমার শান্তিবাহিনীকে অস্ত্র সরবরাহ করে বাংলাদেশের শান্তি বিনষ্ট করেছিল। বছরের পর বছর পার্বত্য জেলায় অশান্তি সৃষ্টি করেছে এ নিয়ে ভারতকে দায়ী করেন না। এরা নাকি দেশপ্রেমী এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কী শুধু দিল্লীর তাঁবেদারী করা? সম্প্রতি এক আলোচক টকশোতে বলেছেন, বাংলাদেশ মর্ডারেট মুসলিম কান্ট্রি। এদেশে জঙ্গীবাদ কখনোই প্রশ্রয় পায়নি। বরং জঙ্গীবাদের চেয়ে বাংলাদেশে এখন সমস্যা গণতান্ত্রিক ফ্যাসিবাদ। গণতান্ত্রিক সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণে দেশের মাটি রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে।
বাংলাদেশের পাতানো নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চলমান রাজনৈতিক সংকট ভারতের পররাষ্ট্রনীতি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছে ভারতের প্রভাবশালী পত্রিকা দ্যা হিন্দু। ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে গঠিত সরকার বৈধতা পাবে না বলেও পত্রিকাটি উল্লেখ করে। নতুন যে সরকার সমস্যাসঙ্কুল পথে ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে তার সঙ্গে নয়াদিল্লির সম্পর্ক হয়ে পড়বে আরও জটিল। ভারতের সুশীল সমাজও বাংলাদেশের একতরফা নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন। অথচ বাংলাদেশের মুখচেনা বুদ্ধিজীবীরা শেখ হাসিনার পাতানো নির্বাচনের কীর্তন গেয়েই যাচ্ছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা ধিক্কার জানায় এদেশের কোটি কোটি মানুষ। তারা সালমান খুরশিদের বক্তব্যের প্রতিবাদ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় করবে কিনা তা জানতে চায়। কারণ, এদেশের মানুষ পি-ির শৃংখল ভেঙ্গেছে দিল্লীর দাসত্বের জন্য নয়। - ইনকিলাব
দিল্লীর লাড্ডুতে তুষ্ট বুদ্ধিজীবীগণ-Tazakhobor.Com Bangla Version