ট্রানজিটের পক্ষে ওকালতি করতে যৌথ টিম
এমএ নোমান
ভারতকে নৌ ও সড়ক পথে নিয়মিত ট্রানজিট দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান নৌ-প্রটোকলের আওতায় বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত তাদের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো থেকে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় পণ্যসামগ্রী আনা-নেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ টিম স্থল ও নৌবন্দরসহ অন্যান্য অবকাঠামো পরিদর্শন শেষে সবকিছুই ট্রানজিটের অনুকূলে বলে মত দিয়েছে। বাংলাদেশের বিদ্যমান পরিস্থিতি ও অবকাঠামোগত অন্যান্য বিষয়াদি পরিদর্শন শেষে ভারতীয় টিমের সদস্যরা বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের কাছে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। যৌথ টিমের পরিদর্শনের ফলে ট্রানজিটের পথে সব বাধা দূর হয়েছে বলে মনে করছেন টিমের সদস্যরা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে ভারত তাদের পশ্চিমাঞ্চল থেকে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় পণ্য আনা-নেয়ার সুবিধা পাচ্ছেএটা ধরে নিয়েই আগরতলাসহ পূর্বাঞ্চলীয় অন্য রাজ্যগুলোয় বাংলাদেশী পণ্য আমদানির ৭০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। এতে করে ৩০০ কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হাতছাড়া হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশ থেকে ভারতের
পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় ৬০ ক্যাটাগরির পণ্য রফতানি করা হয়। প্রতিদিন এসব পণ্যবাহী ২০০ থেকে ২৫০ ট্রাক আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আগরতলায় যায়। গত কয়েক মাস ধরে ভারত প্রতিদিন ওই স্থলবন্দরে ৬০ থেকে ৭০টি ট্রাকের মালামাল খালাস করতে দিচ্ছে। অবশিষ্ট ট্রাকগুলো সিরিয়াল ধরে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় থাকে। একটি ট্রাকের সিরিয়াল পেতে এখন ৬/৭ দিন পর্যন্ত বন্দরে অপেক্ষা করতে হয়। ধীরে ধীরে বাংলাদেশ থেকে আগরতলা দিয়ে পণ্য রফতানি বন্ধ হওয়ার পথে বলে মনে করছেন তারা। তারা বলেন, বর্তমানে সড়ক যোগাযোগসহ অন্য অবকাঠামোগুলো ট্রানজিটের জন্য মোটেও উপযোগী নয়। এখন বাংলাদেশী পণ্যবাহী ট্রাকই চলতে পারছে না। এসব সড়ক দিয়ে ভারতের পণ্যবাহী বিশাল ট্রাকগুলো কীভাবে চলবে, তা বোঝা মুশকিল।
ওকালতি করতে যৌথ টিম : সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতকে দেয়া ট্রানজিটের রুট পরিদর্শন করে সুপারিশ তৈরি করায় উভয় দেশ একটি যৌথ টিম গঠন করে। সম্প্রতি এ টিম আখাউড়া স্থলবন্দরসহ ট্রানজিট রুট সরেজমিনে পরিদর্শন করে। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট ভারতীয় টিমের নেতৃত্ব দেন ভারতের স্থলবন্দর বিভাগের পরিচালক ইন্দিরা মূর্তি এবং বাংলাদেশ টিমের নেতৃত্ব দেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোকাব্বির হোসাইন। ভারতের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সে দেশের ১২ জন সাংবাদিক থাকলেও ৫ সদস্যবিশিষ্ট বাংলাদেশ টিমের সঙ্গে জাতীয় পত্রিকার কোনো সাংবাদিককে তো নেয়া হয়ইনি এমনকি স্থানীয় সাংবাদিকদের এ টিমের কাছাকাছি যেতে দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল সূত্র জানিয়েছে, সরকারের ওপর মহল থেকে এ টিমের ওপর বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করে দেয়া হয়েছে। পরিদর্শনকালে ভারতীয় টিম বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ও স্থলবন্দরের নানা অবকাঠামো দেখে এক্ষুনি ট্রানজিট শুরু করা যায় বলে তাদের মতামত জানিয়ে দিয়েছে। ভারতীয় টিম নিয়মিত ট্রানজিটের বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের আন্তরিকতায় সন্তোষও প্রকাশ করেছে বলে জানান টিমের একজন সদস্য।
যৌথ পরিদর্শন শেষে বাংলাদেশ টিম গতকালই ঢাকায় ফিরেছে।
টিমের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে জানান, পরিদর্শনকালে আমরা যা কিছুই দেখি না কেন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে ট্রানজিটের পক্ষে মতামত দেয়া। যদিও আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের সড়ক অবকাঠামো এতটাই নাজুক যে আমাদের নিজস্ব যানবাহনও চলাচল করতে পারছে না। সেখানে ভারতের পণ্যবাহী বিশাল বিশাল ট্রাকগুলো কীভাবে চলবে তা আমাদের বুঝে আসছে না। আমার দেশকে পাল্টা প্রশ্ন করে তিনি বলেন, আমরা আইনকানুন ভঙ্গ করে জাতীয় স্বার্থের তোয়াক্কা না করেই তিতাস নদীর বুকের ওপর বাঁধ দিয়ে ভারতের লরি চলাচলের রাস্তা করে দিয়েছি। এখন আমরা কেন নিজেদের যানবাহন ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে ভারতকে রাস্তা ছেড়ে দেব না? এদিকে টিমের প্রধান মোকাব্বির হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আমার দেশকে জানান, আমরা সবেমাত্র পরিদর্শন করে ঢাকায় ফিরেছি। সবকিছু যাচাই-বাচাই করেই সংশ্লিষ্ট দফতরে সুপারিশ পেশ করা হবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ভারতকে নিয়মিত ট্রানজিট দেয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে এ যৌথ টিম গঠনের আগে সরকার গত ২০ মে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. আলাউদ্দিনকে আহ্বায়ক করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, রেলওয়ে মন্ত্রণালয়, যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, জাতীয় রজস্ব বোর্ড, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ, শিপিং ডাইরেক্টরেট, বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, মঙ্গলা বন্দর কর্তৃপক্ষের একজন করে প্রতিনিধির সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করে। এ কমিটি গঠনের বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জলপথ, নৌবন্দর, সমুদ্রবন্দর, স্থলবন্দর ইত্যাদি ব্যবহার করে ভারত যাতে নির্বিঘ্নে তাদের পণ্য আনা-নেয়া করতে পারে, তা তদারকি করবে এ কমিটি। ট্রানজিটের আওতায় বাংলাদেশের স্থলবন্দর, নৌবন্দর ও সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে স্থলপথ, নৌপথ ও রেলপথে ভারতের পণ্য আনা-নেয়ার ক্ষেত্রে কর, শুল্ক, ফি বা অন্য কোনো অবকাঠামোগত অসুবিধার সৃষ্টি না হয়, তাও নিশ্চিত করার দায়িত্ব এ কমিটির।
৩০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হাতছাড়া হচ্ছে : বর্তমানে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোয় বাংলাদেশ প্রায় ৩০০ কোটি টাকার পণ্য রফতানি করে থাকে। বাংলাদেশের ৬০টি পণ্যের একচ্ছত্র বাজার হচ্ছে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো। প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশ পণ্যবাহী ট্রাক আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের আগরতলায় যায়। সেখানে মালামাল খালাস করা হয়। ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ট্রানজিট পেতে যাচ্ছেএ কথা বলেই এখন আখাউড়া থেকে পণ্যবাহী সব ট্রাক ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আর আগরতলায় যেতে দিচ্ছে না। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫০ থেকে ৬০টি ট্রাক প্রবেশ করতে দেয়া হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, আগে যেখানে পণ্যবাহী একটি ট্রাক সিরিয়াল পেতে একদিন দেরি হতো এখন ৫ থেকে ৬ দিন লেগে যাচ্ছে। পণ্য রফতানি এরই মধ্যে ৭০ শতাংশ কমে এসেছে।
ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ : নিয়মিত ট্রানজিট দেয়ার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে আখাউড়া স্থলবন্দর আমদানি ও রফতানিকারক সমিতির সাবেক সভাপতি শফিকুল ইসলাম আমার দেশকে জানান, কয়েকদিন আগে ভারত ও ঢাকার একটি যৌথ টিম ট্রানজিট নিশ্চিত করতে আখাউড়া স্থলবন্দর পরিদর্শনে আসে। এ বিষয়টি বাংলাদেশের একটি প্রাণীকেও জানানো হয়নি। অথচ ভারতের সাংবাদিকসহ প্রচুর লোকজন এসেছেন। আমরা খবর পেয়ে তাদের কাছে গিয়ে ট্রানজিটের অযৌক্তিক দিকগুলো তুলে ধরেছি। তিনি বলেন, বর্তমানে যে অবকাঠামোগত অবস্থা রয়েছে তাতে আমাদের একটি ট্রাক চালাতেই হিমশিম খেতে হয়। বর্তমানে পণ্যবাহী ৪০০টি ট্রাক বন্দরে অপেক্ষমাণ। আমরা শত শত ব্যবসায়ী আগরতলাসহ ওইসব রাজ্যের ব্যবসায়ীদের কাছে লাখ লাখ ডলার পাওনা রয়েছি। এ অবস্থায় ভারতকে একতরফা ট্রানজিট সুবিধা দিলে আমাদের পণ্য রফতানি বন্ধ তো হবেই, উপরন্তু আমরা পথে বসব। বর্তমানে যে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে, তা কোনো অবস্থায়ই ট্রানজিটের উপযোগী নয় বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রমণ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ১৯৭২ সালের নভেম্বর মাসে একটি প্রটোকল সই হয়। ওই প্রটোকল অনুসরণ করে গতবছর ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ নিজ দেশের পক্ষে ট্রানজিট চুক্তি শর্ত সংবলিত ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টে স্বাক্ষর করেন। এই ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্টের আওতায়ই ভারত এখন নিয়মিত ট্রানজিট সুবিধা পেতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।
Daily Amardesh -????, ?????? ?? ??? ????, ? ???? ????, ?? ??? ???? ?????
BTW awami propaganda outlets Prothom baler alo and Daily farting star is yet to report on this issue. This is the most interesting part: