দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী: পাকিস্তানের আইএসআইয়ের অর্থায়ন বিষয়ক বিতর্ক জাগানো সাংবাদিক!
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদ ও জনসমাবেশে উত্থাপিত পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ৫ কোটি রুপি অর্থায়ন বিষয়ক সংবাদে বিতর্ক জাগানো কলকাতার সাংবাদিক হলেন দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী। এ সংক্রান্ত সংবাদ উৎস অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণে সবকয়টি সূত্রের মতে সে তথ্যটি প্রকাশ পেয়েছে। এতে নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা বা এ জাতীয় স্পর্শকাতর সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে কমপক্ষে দুটি নির্ভরযোগ্য সংবাদ উৎসের সঙ্গে তুলনা করার যে নিয়মরীতি রয়েছে শুধু তাকেই উপেক্ষা করা হয়নি, বরং সরকার নিয়ন্ত্রিত বার্তাসংস্থা বাসসের পাশাপাশি দেশের দুটি অনলাইন সংবাদ উৎস বিডিনিউজ ও বাংলানিউজ এবং একই সাথে একাধিক জাতীয় দৈনিক তাদের নিজেদের ভাবমূর্তিকে অনুজ্জ্বল করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ৩ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যের সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইভিত্তিক ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের মালিকানাধীন খালিজ টাইমসের অনলাইন ভার্সনে 'আসগর খান'স পিটিশন ফাইনালি কামস আপ ফর হেয়ারিং' বা আসগর খানের আবেদনটি শুনানির জন্য উঠছে শিরোনামে সংবাদটি প্রথম প্রকাশ পায়। সেখানে যুক্ত করা হয় একটি লাইন, যাতে বলা হয় - "Another Rs50 million was allegedly paid to Bangladesh's Khalida (Khaleda) Zia to help her in polls against Hasina Wajid's (Wajed's) Awami League generally perceived by PakistanÕs security establishment as pro-India" অর্থাৎ পাকিস্তানী নিরাপত্তা সংস্থার দৃষ্টিতে মূল্যায়িত ভারতমুখী আওয়ামী লীগের হাসিনা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে বাংলাদেশের খালেদা জিয়াকে সাহায্য হিসেবে আরো ৫ কোটি রুপি দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। অথচ পরদিন অর্থাৎ ৪ মার্চ এই সংক্রান্ত সংবাদটি যথাক্রমে '১৯৯১ সালের নির্বাচনে খালেদাকে ৫ কোটি রুপি দেয় আইএসআই!' ও 'বিএনপি লিডার বিনস আইএসআই ফান্ডিং ক্লেইম অর্থাৎ আইএসআই অর্থ যোগান এই কথা বিএনপি নেতা আস্তাকুড়ে ফেলেছেন' শিরোনামে বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার প্রকাশ করে। দৈনিক প্রথম আলো তাদের পরিবেশিত ওই সংবাদে বিএনপি'র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের 'এটা মহামিথ্যা' বক্তব্যসহ পাকিস্তানের দ্য নিউজ ও প্রধান বিজনেস ডেইলি বিজনেস রেকর্ডার - এর প্রতিবেদনে 'খালেদাকে অর্থ দেওয়া হয়েছে এমন কোনো তথ্য নেই' তুলে ধরে। ৭ মার্চ তাদের প্রকাশিত 'প্রথম আলো বিএনপির পছন্দের পত্রিকা' শিরোনামের সংবাদে ৬ মার্চ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রদত্ত বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয় '৪ মার্চ প্রথম আলো পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, বিএনপি ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জেতার জন্য পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কাছ থেকে পাঁচ কোটি রুপি নিয়েছিল'। এরপর ১৪ মার্চ পল্টনে আহুত জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী সে কথাই পুর্নব্যক্ত করেন এবং ভৎর্সনায় বিরোধীদলীয় নেতাকে দেশ ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যেতে বলেন। শুরু হয় কলকাতার সাংবাদিক দীপাঞ্জন রায় চৌধুরীর অগ্রযাত্রা। পরদিন ১৫ মার্চ 'চৌধুরী' বাদ দিয়ে শুধু 'দীপাঞ্জন রায়' নামে যুক্তরাজ্যের লন্ডন ভিত্তিক পত্রিকা ডেইলি মেইল - এর 'মেইল অনলাইন ইন্ডিয়া' সংস্করণ 'পাকিস্তান আইএসআই এডমিটস সাপোটিং ইনসার্জেন্সি ইন ইন্ডিয়া'স নর্থইস্ট বা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বিদ্রোহে সহযোগিতার কথা স্বীকার করেছে পাকিস্তানের আইএসআই' শিরোনামে সংবাদ ছাপায়। সেখানে বিএনপিকে 'ন্যাশনালিস্ট (জাতীয়তাবাদী
' এর পরিবর্তে বলা হয় 'বাংলাদেশ ন্যাশনাল (জাতীয়
পার্টি' এবং অজ্ঞাত কারণে 'খালিজ টাইমস' - এর নামটি বাদ দিয়ে বলা হয় "Recently a UAE-based daily had alleged that ISI paid Rs 50 crore to BNP chairperson and former PM Khaleda Zia ahead of the 1991 elections in which the BNP won and formed the government" অর্থাৎ সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক একটি দৈনিক অভিযোগ করেছে আইএসআই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে ৫০ কোটি রুপি দিয়েছে, যে নির্বাচনে বিএনপি জিতে সরকার গঠন করেছিল।
সরকার নিয়ন্ত্রিত বার্তাসংস্থা বাসসের পাশাপাশি দেশের দুটি অনলাইন সংবাদ উৎস বিডি নিউজ ও বাংলা নিউজ এবং একই সাথে একাধিক জাতীয় দৈনিক বাসসের বরাতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এবার 'পাঁচ কোটি' নয়, বরং 'পঞ্চাশ কোটি' রুপির অভিযোগটি প্রতিষ্ঠায় নিজেদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার ব্যর্থ অপচেষ্টা নিয়োজিত হয়। এরপর ১৬ মার্চ নয়াদিল্লি থেকে দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী রচিত 'আইএসআই এডমিটস টু ফান্ডিং টু ইন্ডিয়া'স নর্থইস্ট ইনসার্জেন্সি' শিরোনামের সংবাদটি ছাপায় ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকা। তাতে এই ভিত্তিহীন সংবাদ প্রচারণা আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। কিন্তু ১৭ মার্চ দৈনিক আমাদের সময়ে 'পাকিস্তানের আইএসআই'র অর্থ নিয়েছেন খালেদা জিয়া, প্রমাণ কী?' শিরোনামে এই প্রতিবেদকের একটি নিবন্ধ ছাপা হয়। তাতে এই প্রতিবেদক অনুসন্ধানী হয়ে পাকিস্তানের আজ টিভি, দ্য নিউজ ও ডনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইয়ে অবস্থিত খালিজ টাইমসে ইমেইল ও টেলিফোনে যোগাযোগ করেন। বিশেষ করে খালিজ টাইমস তাদের সংবাদে কেন বাংলাদেশের বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গটি টেনেছে, সে বিষয়ে পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক প্যাট্রিক মাইকেলের সাথে টেলিফোনে কথা বললে তিনি উত্তর দেবার প্রতিশ্রুতি দিলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তার যে কোনো উত্তর আসেনি তা উল্লেখ করা হয়। অন্যদিকে, এই প্রতিবেদক গত ১৬ ও ১৮ মার্চ যথাক্রমে ডেইলি মেইল ও ইন্ডিয়া টুডে'র সম্পাদক পল ডেক্রে ও এম জে আকবরকে তাদের পরিবেশিত সংবাদের ভিত্তি জানতে চেয়ে ইমেইল করলেও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে, দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী সম্পর্কে তার ফেইসবুক থেকে যতটুকু জানা যায়, তিনি ভারতের কলকাতার, থাকেন নয়াদিল্লি এবং ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বর্তমান সময় অবধি কাজ করছেন মেইল টুডে'র নয়াদিল্লিস্থ বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে। অতীতে কাজ করেছেন কুয়েত নিউজ এজেন্সির (কুনা
ইন্ডিয়া ব্যুরো ও ইউনাইটেড নিউজ অব ইন্ডিয়ায়। তার আগ্রহের ক্ষেত্র হচ্ছে পররাষ্ট্র বিষয়, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা। শিক্ষায় চেন্নাই এশিয়ান কলেজ অব জার্নালিজমের ডিপ্লোমা, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্কে মাস্টার্স ও তাইওয়ানের ফু সিং ক্যাং কলেজের অনারারি গ্র্যাজুয়েসন। ইন্ডিয়া টুডে'তে তার রচিত নিবন্ধগুলো হচ্ছে 'ইন্ডিয়া টিপ-অফ ফয়েলস ক্যু ইন বাংলাদেশ, হেল্পিং শেখ হাসিনা ইন আওয়ার ইন্টারেস্ট এবং পিএম মনমোহন সিং অ্যাপলাউডস শেখ হাসিনা গর্ভমেন্ট'স ওয়ার অন টেরর। লক্ষণীয়ভাবে দেখা গেছে, 'মেইল অনলাইন ইন্ডিয়া' সংস্করণ আইএসআই অর্থ কেলেংকারী সংক্রান্ত তার সর্বশেষ রিপোর্টটিতে 'দীপাঞ্জন রায়' পরিচিতি দিলেও অতীতে লিখেছেন একাধিক রিপোর্ট 'দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী' নামে। এ ছাড়াও অতীতে দীপাঞ্জন রায় চৌধুরী নয়াদিল্লি থেকে একাধিক রিপোর্ট পাঠিয়েছেন দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকায় তাতে রয়েছে ২০১০ সালের ৯ ও ১০ জানুয়ারি প্রকাশিত 'শেখ হাসিনা আজ দিল্লি যাচ্ছেন' এবং 'হাসিনার সফর দ্বিপক্ষীয় সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়াকে জোরদার করবে, আশা দিল্লির'। তবে বিপজ্জনকভাবে 'বাংলাদেশ - দ্য নেক্সট আফগানিস্থান' বইটির লেখক হিরন্ময় কার্লেকারকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে তার অবদানের কথাটিও বইটিতে আছে, সেখানে তার পরিচিতিটি দৈনিক প্রথম আলোর নয়াদিল্লি প্রতিনিধি হিসেবে।
বলাবাহুল্য, পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে সাবেক এডমিরাল আসগর খানের উত্থাপিত ১৪ কোটি রুপির অর্থ কেলেংকারী সংক্রান্ত শুনানিতে আইএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লে. জে. আসাদ দুররানি যে তথ্য দিয়েছেন, তা সেখানকার প্রভাবশালী দুটি ইংরেজি দৈনিক যথাক্রমে ৯ মার্চ ডনে ও ১৪ মার্চ দ্য নিউজে বেরিয়েছে। ৯ মার্চ ডেইলি ডন - এ আসাদ দুররানির সাক্ষ্যভিত্তিক অর্থের বিবরণীতে প্রকাশ, নেওয়াজ শরীফ: ৩৫ লাখ, মীর আফজাল খান: ১ কোটি, সাংবাদিকদের জন্য লে. জে. রাফাকাত: ৫৬ লাখ, আবিদা হোসেন: ১০ লাখ, জামায়াতে ইসলামী: ৫০ লাখ, আলতাফ হোসেন কোরেশী: ৫ লাখ, গোলাম মোস্তফা জাতুই: ৫০ লাখ, জাম সাদিক: ৫০ লাখ, মোহাম্মদ খান জুনেজু: ২.৫ লাখ, পীর পাগারা: ২০ লাখ, মওলানা সালাহউদ্দিন: ৩ লাখ, হুমায়ুন মারী: ১০.৫ লাখ, জামালি: ৪০ লাখ, কাকার: ১০ লাখ, কে. বালুচ: ৫ লাখ, জাম ইউসুফ: ৭.৫ লাখ, বিজেনজো: ৫ লাখ এবং সিন্ধু প্রদেশের বিভিন্ন দল: ৫৪ লাখ রুপি। তাতে ৫ কোটি ১৮ লাখ রুপি হিসাব দেখানো হয়েছে। পক্ষান্তরে, ডনের ওই একই রিপোর্টে আরেকটি হিসাব রয়েছে, তা দিয়েছেন মেহরান ব্যাংকের সাবেক প্রধান ইউনুস হাবিব। সেই তথ্যে প্রকাশ, জেনারেল বেগের মাধ্যমে রাজনীতিকদের দেওয়া হয়েছে: ১৪ কোটি, সিন্ধু প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী জাম সাদিক আলী: ৭ কোটি, জাম সাদিকের মাধ্যমে পীর পাগারাকে: ১ কোটি ৫০ লাখ, প্রেসিডেন্ট গোলাম ইসহাক খান ও জেনারেল বেগের নির্দেশে ইউনুস মেমনকে: ৭ কোটি রুপি এবং আরো কিছু অর্থ দেওয়া হয়েছে আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টকে।
???????? ??? ??????: ??????????? ????????? ??????? ????? ?????? ?????? ????????!