**বাগেরহাট**
-------------
বাগেরহাট জেলায় রয়েছে অনেক বছরের প্রাচীন মঠ, মন্দির, মসজিদ ও সমাধিসৌধ। তবে যে কারনে বাগেরহাট জেলার খ্যাতি জগৎব্যাপী, তা হচ্ছে খান জাহান আলীর মাজার এবং ষাট গম্বুজ মসজিদ যার নির্মাতা ছিলেন খান জাহান আলী (রহঃ
। সময় করে ঘুরে আসতে পারেন খান জাহান আলী (রহঃ
এর বাগেরহাট থেকে, উপভোগ করতে পারেন মুসলিম স্থাপত্তের অপূর্ব নিদর্শন।
ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে বাংলাদেশে যে তিনটি স্থান আছে তার মধ্যে দুটির অবস্থানই বাগেরহাটে- একটি সুন্দরবনের সংরক্ষিত অংশ, অন্যটি খান জাহান আলী (রহঃ
এর কীর্তি। ইউনেস্কো ১৯৮৯ সালে বাগেরহাট শহরের আশেপাশে অবস্থিত সুলতানি আমলে নির্মিত পুরাকীর্তি গুলোকে বিশ্ব ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসাবে ঘোষণা করে। অনেকে শুধু মাত্র ষাটগম্বুজ মসজিদকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ মনে করলেও প্রকৃতপক্ষে খান জাহান আলী (রহঃ
এর আমলে নির্মিত সব পুরাকীর্তিই এর অন্তর্ভুক্ত।
ষাট গম্বুজ মসজিদ
ইতিহাসঃ
খান জাহান আলী (রহঃ
প্রথম জীবনে দিল্লিতে উচ্চ রাজপদে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি পনের শতকের গোড়ার দিকে রাজ্য জয়ে দক্ষিনবঙ্গে অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি দক্ষিনবঙ্গের বিশাল এলাকা জয় করে তা তৎকালীন গৌড়ের সুলতান নাসিরুদ্দিন মহমুদ শাহের সম্মানে বিজিত রাজ্যের নাম রাখেন খলিফাতাবাদ যার অর্থ প্রতিনিধির শহর। বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থাপনা খনন কালে হিন্দু ও বৌদ্ধ নিদর্শন পাওয়া গেছে যা থেকে বোঝা যায় খান জাহান আলীর আগমনের পূর্বেও এইখানে জনবসতি ছিল। এই বসতির উপরই সুলতানী শহর গড়ে তুলা হয়েছে। বাগেরহাট সুন্দরবনের অংশ। একসময় ঘন জঙ্গলে পূর্ণ ছিল, ১৫ শতকে তিনি(খান ই জাহান উলুঘ খান
উক্ত জঙ্গল পরিষ্কার করে এই শহরের পত্তন ঘটান।তিনি জীবন শুরু করেছিলেন সৈনিক হিসেবে। দেহত্যাগ করেন সুফিসাধক হিসেবে। তাকে রাজনৈতিক সন্ন্যাসী বলা হতো। এ দেশে আসা রাজ্যজয়ী শাসক কিংবা ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে আসা পীর ফকির ও দরবেশদের মধ্যে তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। তার চরিত্রে বহু গুনের সমন্বয় ঘটেছিল। রাজ্য শাসন ছিল তার দায়িত্ব, ইসলাম ধর্ম প্রচার ছিল তার কর্তব্য, সুফিসাধনা ছিল তার আধ্যাত্ম, প্রজার কল্যান ছিল তার লক্ষ্য এবং শিল্পসমৃদ্ধ স্থাপনা নির্মান ছিল তার আনন্দ। বস্তুত তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত নির্মাতা। সমগ্র দক্ষিনবঙ্গের পথে-প্রান্তরে রয়েছে তার অসংখ্য কীর্তিমাখা নির্দশন। এসব স্থাপত্যকীর্তির কোন কোনটি তাকে জগতজোড়া খ্যাতি দিয়েছে।
ভ্রমনঃ
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় সায়দাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাগেরহাটের উদ্দেশে বিভিন্ন পরিবহনের বাস ছাড়ে। এসব বাস ভাড়া ৩৫০-৫০০ টাকা। থাকবার জন্য বিভিন্ন মানের ভাল হোটেল রয়েছে বাগেরহাট শহরে।
বাগেরহাট শহরের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব পুরাকীর্তি ঘুরে দেখা নতুন কারো পক্ষে কষ্টের। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগতদের এ কাজে সহযোগিতা করে থাকে খানজাহান ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন। ঠিকানা- হরিণখানা উত্তরপাড়া, ডাকঘর- পিসি কলেজ, বাগেরহাট। ফোনঃ ০৪৬৮-৬৩২৯৪, ০১৭১১-১২০৯৯০।
ভ্রমনের জায়গা সমুহঃ
ষাট গম্বুজ মসজিদ
বাগেরহাট -খুলনা মহাসড়ক থেকে ২০০ গজ দূরে উত্তর দিকে এই অতি প্রাচীনর দৃষ্টিনন্দন মসজিদটির অবস্থান। তিনি আনুমানিক ১৪৫০ সালে এই মসজিদটির নির্মাণ করেন। তিনি দিল্লি থেকে যেসব দক্ষ কারিগর সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন, তাদের দ্বারাই এই অপূর্ব মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। এতে ব্যবহৃত পাথর তিনি বহু দূর দেশ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। এই মসজিদটি নির্মান করতে সময় লেগেছিল প্রায় ২০ বছর। এই মসজিদটি বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ এবং ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলিম স্থাপত্যের সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরন। এই মসজিদটি খান জাহানের অমরকীর্তি। সাধারনত এই মসজিদকে ষাট গম্বুজ মসজিদ বললেও এতে রয়েছে মোট ৮১ টি গম্বুজ। মসজিদের ভেতরে রয়েছে ৬০ টি স্তম্ভ। পাথরের বড় বড় টুকড়া দিয়ে এই স্তম্ভগুলো নির্মান করা হয়েছে। সংস্কারের ফলে এখন এই পাথরগুলো দৃষ্টিগোচর হয় না। প্রাচীর দিয়ে এই মসজিদটি ঘেরা। ভেতরে সবুজ লন ও ফুলের বাগান দেখতে পাবেন। মসজিদের মূল প্রবেশপথটিও বেশ আকর্ষনীয়। এ মসজিদকে খান জাহান আলী (রহঃ
দরবার কক্ষ হিসাবেও ব্যবহার করতেন বলে শোনা যায়, পশ্চিম দিকের দরজাটি সে ধারনাকে সমর্থন করে। আশির দশকে ইউনেস্কো এই মসজিদটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষনা করে। মসজিদের পশ্চিম দিকেও একটা দিঘী রয়েছে, নাম ঘোড়া দিঘি।
মসজিদের খিলান
ষাট গম্বুজ মসজিদে পোড়া মাটির কারুকাজ
ষাট গম্বুজ মসজিদে পোড়া মাটির কারুকাজ
যাদুঘরে সংরক্ষিত নিদর্শন
যাদুঘরে সংরক্ষিত নিদর্শন
মাজার ও খাঞ্জেলি দীঘি
বাগেরহাট শহর থেকে ৩ কিলোমিটার দক্ষিন-পশ্চিমে এবং খুলনা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিন-পূর্বে খান জাহান আলী (রহঃ
এর মাজার অবস্থিত। দূর থেকে স্থানটি টিলার মতো উঁচু মনে হবে। ধারনা করা হয় খাঞ্জালি দিঘিটি খননের ফলে যে বিপুল মাটির স্তুপ জমা হয়, তার ওপর এই স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এই মাজারের প্রবেশপথ রয়েছে দুটি। পূর্বদিকের প্রবেশপথটি কারুকার্যময়। তবে সব সময় বন্ধ থাকে। দক্ষিনের প্রবেশপথটি সব সময় খোলা থাকে। বর্তমানে এই সমাধিটি খানজাহান আলী (রহঃ
মাজার কমপ্লেক্স নামে পরিচিত। মাজারের নিচের দিকটি পাথরে নির্মিত। এই এলাকা লবনাক্ত বলে দূরদর্শী খান জাহান আলী (রহঃ
মাজারের নিচের দিকে যাতে মরিচা না ধরে সে জন্য এমন নির্মানসামগ্রী ব্যবহার করেছেন। ভেতরে প্রবেশ করলে খান জাহান আলী (রহঃ
কবরটি কালো পাথরে নির্মিত, তাতে ফার্সি ভাষায় বিভিন্ন উদ্ধৃতি লেখা রয়েছে। এর সমাধিসৌধের পশ্চিমে রয়েছে প্রধান খাদেম তাদের ঠাকুরের সমাধি। আর এর পেছনে সমাধিসৌধের বাইরে রয়েছে এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি বিশাল মসজিদ। নির্মানকাল ১৪৫০ সাল। এই মসজিদে তিনি আলী জুমার নামাজ পড়তে আসতেন। নামাজ শেষে এখানে বিচারকাজ করতেন। খান জাহান আলী (রহঃ
এই মসজিদটি ও সমাধিসৌধটি মৃত্যুর (মুত্য ২৫ অক্টোবর, ১৪৫৯ সাল
দশ বছর পূর্বে নির্মান করেছিলেন। সমাধিসৌধটি নির্মান করে তিনি মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করেছিলেন। রাজ্য শাসন এবং ধর্ম প্রচারের জন্য এ দেশে ব্যক্তিদের মধ্যে এমন দৃষ্টিনন্দন সমাধিসৌধ আর দেখা যায়না।
খান জাহান আলী (রহঃ
মাজারের দক্ষিন দিকে রয়েছে এই বিশাল দিঘিটি। তিনি মোট ৩৬০ টি দিঘি খনন করেছিলেন, তাদের মধ্যে এই দিঘিটি সর্ববৃহৎ। প্রায় ৪০ একর জমিতে এই দিঘি খনন করা হয়েছে। খননকৃত মাটি এর চারদিকের পাড়ে ফেলায় পাড় সমতল ভূমি থেকে খুব উঁচু হয়। বিশেষ করে দক্ষিন পাড় পাহাড়ের মতো উঁচু। দিঘির দক্ষিন-পশ্চিম পাড়ে এই দরগার ফকির-খাদেমের বসতি গড়ে উঠেছে।
মাজার
খাঞ্জেলি দীঘি
এছাড়াও রয়েছেঃ
নয়গম্বুজ মসজিদ
বিবি বেগনির মসজিদ
চুনখোলা মসজিদ
সিংরো মসজিদ
এক গম্বুজ মসজিদ
দশগম্বুজ মসজিদ
বাগেরহাট জাদুঘর
অযোদ্ধার মঠ
প্রাচীন জমিদারবাড়ি
- MHJ ...