Another seaport will be built in Chittagong......
The report published in Daily Bangladesh Protidin
চতুর্থ সমুদ্রবন্দর হবে চট্টগ্রামে চলছে সম্ভাব্যতা যাচাই । মিরসরাই-ফেনী ইপিজেডে যুক্ত হবে । চাপ কমবে বর্তমান বন্দরের রুকনুজ্জামান অঞ্জন )
আরও একটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। পায়রায় দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর চালুর পর সম্ভবত এটিই হতে যাচ্ছে দেশের চতুর্থ সমুদ্রবন্দর। এরই মধ্যে বন্দরের সম্ভাব্য স্থান চিহ্নিতকরণ এবং সুবিধা ও অসুবিধাগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বিষয়ে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক)। এরপর বন্দর নির্মাণে ডিটেইলড ফিজিবিলিটি স্টাডি বা পূর্ণাঙ্গ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চবক-কে। বলা হয়েছে চবক নিজস্ব অর্থায়নে এই সম্ভাব্যতা যাচাই করবে। গত ১০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভা হয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), পিপিপি কর্তৃপক্ষ এবং হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনার লক্ষ্যে। সেখানেই মিরসরাই-ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ঘিরে নতুন একটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়। বন্দর নির্মাণের বিষয়ে প্রাথমিক প্রতিবেদনে চবক প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে জানিয়েছে, প্রাপ্ত মিরসরাই-ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চল সংলগ্ন সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় পানির গড় গভীরতা ৬-৭ মিটার, যা ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ৮-৯ মিটারে উন্নীত করার মাধ্যমে ওই মাত্রার ড্রাফটের জাহাজ সার্বক্ষণিক বার্থিং করা যাবে। তবে প্রস্তাবিত বন্দর কার্যকর করতে হলে বহির্নোঙর থেকে প্রায় ৪৪ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত চ্যানেল ড্রেজিং করতে হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বেজা’র সচিব মোহাম্মদ আইয়ুব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রামের মিরেরসরাই ও ফেনীর দিকে সাগর ঘেঁষে প্রায় ৩০ হাজার একর জমি নিয়ে দেশের বৃহত্তম পরিকল্পিত শিল্প নগর গড়ে তোলার যে উদ্যোগ রয়েছে তাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য এই বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে কাজ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের সম্ভাব্য স্থান হবে চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বঙ্গোপসাগর সীমানায়। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ফেনীর দিকে বঙ্গোপসাগরে গভীরতা কম। এ ছাড়া সেই দিক দিয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে জমি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে ফেনীর দিকে বন্দর নির্মাণ না করে চট্টগ্রামের মিরসরাই সীমানাতেই নতুন বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। কারণ ওই দিকে সমুদ্রের গভীরতা বেশি। ফলে বড় বড় যেসব জাহাজ বর্তমানে ড্রাফটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাতে পারে না সেগুলো প্রস্তাবিত বন্দরে ভিড়তে পারবে। আর নতুন আরেকটি বন্দর হলে প্রস্তাবিত মিরসরাই-ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণও বেড়ে যাবে। এ ছাড়া বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বাড়তে থাকায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের ওপর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান ওই চাপ কমাতেও সহায়তা করবে প্রস্তাবিত সমুদ্রবন্দরটি। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনস্থ বেজার পক্ষ থেকে বিষয়টি পর্যালোচনা করে একটি মতামত দিতে গত মে মাসে চবক-কে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর চবকের সদস্য (হারবার ও মেরিন) প্রধান করে পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি সমুদ্র উপকূলীয় সংশ্লিষ্ট এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনসহ কয়েক বছরের উপকূলীয় পানির গভীরতা এবং সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে মিরসরাই-ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলের চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের দিকে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করার বিষয়ে প্রাথমিক প্রতিবেদনে ইতিবাচক মতামত দেয়। ওই প্রতিবেদনের ভূমিকায় বলা হয়, মিরসরাই-ফেনী অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য দ্রুত আমদানি-রপ্তানির স্বার্থে উক্ত এলাকায় একটি বন্দরের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য ১৯৮১ সালের তুলনায় ২০১০ সালে প্রায় ৩ দশমিক ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তার ধারাবাহিকতায় ২০১২ জিডিপিতে রপ্তানি বাণিজ্যের অবদান ছিল ২০ দশমিক ৮০ শতাংশ। যা ২০২১ সালে প্রায় ২৬ শতাংশে উন্নীত হবে মর্মে মত প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, চট্টগ্রাম বন্দরের ওপর এ চাপ হ্রাস করার জন্য হলেও মিরসরাই এলাকায় সমুদ্র উপকূলে নতুন আরেকটি বন্দর নির্মাণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সম্ভাব্য বন্দরের যোগাযোগ সুবিধা সম্পর্কে বলা হয়, প্রস্তাবিত বন্দর এলাকা ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন বিশিষ্ট মহাসড়কের ৫ কিলোমিটারের মধ্যে থাকায় যোগাযোগ খুবই সহজ হবে। তাছাড়া মহাসড়কের ৫০০ মিটার দূরত্বের মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ থাকায় সড়ক ও রেলপথে সারা দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ করা যাবে। প্রস্তাবিত সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হলে দেশীয় লাইটারেজ জাহাজ এবং বিদেশি বড় জাহাজ ওই এলাকায় বার্থিং করার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের চাপ কমে যাবে। সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ফলে পুরো এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন এবং কর্মসংস্থানের পথ উন্মুক্ত হবে এবং বেকারত্ব কমে যাবে। চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি প্রস্তাবিত সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট এবং এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপন সহজ হবে। -