A good read, relevant to the thread...
জামায়াতকে নিয়ে মহাসঙ্কটে সরকার ও শাসকদল
সি রা জু র র হ মা ন
আরও অনেকে হুশিয়ারি দিয়েছে, একাধিক কলামে আমিও লিখেছি, জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করতে যাবেন না, ছাত্র-শিবিরকে বেশি ঘাঁটাবেন না, তাদের প্রকাশ্য রাজনীতি থেকে দূরে ঠেলে দেবেন না, তার পরিণতি ভয়াবহ হবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা? ‘সুখে থাকলে ভূতে কিলায়’ এক জাতের মানুষকে।
জামায়াতে ইসলামীর গায়ে গন্ধ নেই, শুঁকে দেখিনি, তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিস্তার ওঠাবসা করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের সঙ্গে, বৈঠকের পর বৈঠকে বসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার চালু করার এবং খালেদা জিয়াকে গদি থেকে সরানোর ষড়যন্ত্র করেছেন। শুধু কি তাই? ইন্দিরা রোডের এক বাড়িতে গিয়ে নির্বাচনী বিজয়ের জন্য অধ্যাপক গোলাম আজমের দোয়া নিয়ে এসেছিলেন। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভে ব্যর্থ হয়ে জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্যদের সমর্থনে সরকার গঠন করেছিলেন। মনে রাখতে হবে এসব ঘটনা ঘটেছিল ১৯৯৬ সালে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সিকি শতক পরে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার রাজনৈতিক পুঁজি হবে বলে তখন শেখ হাসিনার মনে হয়নি।
শুঁকে দেখলে এখনও হয়তো জামায়াত নেতাদের গায়ে গন্ধ পাওয়া যাবে না। কিন্তু শেখ হাসিনার রাজনৈতিক গরজ ও চাহিদার পরিবর্তন হয়েছে। স্বদেশে তার সমর্থন নেই। পিতার ভুলের পুনরাবৃত্তি করে তিনি বাকশালী স্বৈরতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে চান। সেটা বাংলাদেশের মানুষের অন্ত্রে ঘুরপাক শুরু করে, গা-বমি করে তাদের। নাইন-ইলেভেনের পর থেকে ইসলাম-ভীতি ওয়াশিংটনের প্রধান আতঙ্ক—এককালে যেমন ছিল কমিউনিজম। ইসলাম নামটা শুনলেই তারা সন্ত্রাস দেখে। ভারতের ধারণা জামায়াতে ইসলামীর প্রভাবেই বাংলাদেশের মানুষ ভারতবিদ্বেষী হয়ে উঠেছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বলেছেন সে কথা ২০১১ সালের জুলাই মাসে।
ইদানীং ভারত রাশিয়ার সঙ্গে বন্ধুত্ব শিথিল করে ওয়াশিংটনের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে। অরুণাচলের বিস্তীর্ণ এলাকার মালিকানা নিয়ে ১৯৬২ সালে চীন-ভারত প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়েছিল, কিন্তু তাতে বিরোধের নিষ্পত্তি হয়নি। চীনের সঙ্গে বিরোধে রাশিয়া ভারতকে সাহায্য দেবে না, কিন্তু ওয়াশিংটন হাত বাড়িয়েই আছে। এক কালের বিরোধিতা ছেড়ে আমেরিকা এখন পারমাণবিক ব্যাপারেও সহযোগিতা দিচ্ছে ভারতকে। বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রেসিয়া বিউটেনিস, ভারতের হাইকমিশনার বীণা সিক্রি আর বিশ্বাসঘাতক জেনারেল মইন উ আহমেদের ষড়যন্ত্রের ফসল শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রিত্বের প্রথম দিন থেকে ঋণ পরিশোধে লেগে গেছেন হাসিনা। তিনি ‘ইসলামী সন্ত্রাস’ দলন করছেন।
স্নায়ু যুদ্ধের গোড়ার দিকে মার্কিন সেনেটার যোসেফ ম্যাকার্থি ঠিক এ রকমভাবেই কমিউনিস্ট দলনের অভিযান শুরু করেছিলেন। কেউ যদি ধনতন্ত্রের সামান্যতম সমালোচনাও করেছেন, বিশ্বব্যাপী মারণাস্ত্রের পাহাড় গড়ে তোলার বিরোধিতা করেছেন, উদারপন্থী কোনো বই পড়েছেন কিম্বা ছায়াছবি দেখেছেন, এমনকি না জেনেও কোনো কমিউনিস্ট সহানুভূতিশীলের সঙ্গে এক চায়ের দোকানে চা খেয়েছেন, তাত্ক্ষণিকভাবে সে ব্যক্তিকে কমিউনিস্ট অপবাদ দিয়ে তার নাম কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অখণ্ড পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা তখন ছিলেন মার্কিনিদের মিত্র। পাকিস্তানেও ম্যাকার্থিবাদের কালো ছায়া ছড়িয়ে পড়েছিল।
ক্ষুদ্র স্বার্থের তাড়নায়
সম্পূর্ণ নিরীহ আমি কীভাবে সে ছায়ার ভেতর পড়েছিলাম সে এক চমত্কার কাহিনী। ছোট বেলায় বই পড়তে ভালোবাসতাম। অনুবাদের হাতেখড়ি হয়েছিল স্কুল জীবন থেকেই। কলেজে ওঠার পর কোথাও থেকে যেন একটা পুরনো বই হাতে এলো। হওয়ার্ড ফাস্টের ফ্রিডম রোড। কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাস গিডিয়ন জ্যাকসন কী করে নিজ চেষ্টা ও অধ্যবসায়ে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য হয়েছিলেন সে কাহিনী। খুবই ভালো লেগেছিল তত্কালীন আদর্শপরায়ণ আমার। বইটি অনুবাদ করতে শুরু করলাম। কয়েক পর্ব ছাপাও হয়েছিল একটি সাময়িকীতে। পরে জেনেছিলাম অবশ্যি যে হাওয়ার্ড ফাস্ট কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন ছিলেন। কিন্তু আমি কী করে জানব সে কথা? তবু তখন থেকেই আমার পেছনে ফেউ লেগেছিল। বিবিসির চাকরি নিয়ে বিলেত আসার আগে সে মামদো ভূতের দৌরাত্ম্য কাটিয়ে উঠতে পারিনি। ম্যাকর্থিবাদের মরণ এসেছিল তার অতিমাত্রিক প্রলোভনের জন্য। বিরাট করে তিনি জাল ছড়িয়েছিলেন। এত বেশি লোককে তিনি অভিযুক্ত করেছিলেন যে শেষ পর্যন্ত কেউই আর তাকে বিশ্বাস করেনি।
শেখ হাসিনার সন্ত্রাস দলনও ম্যাকার্থিবাদের মতোই ভুয়া এবং ক্ষুদ্র স্বার্থের দ্বারা পরিচালিত। ইসলামী সন্ত্রাস দলনের নামে তিনি বাংলাদেশ থেকে ইসলামের নামগন্ধ মুছে ফেলার অভিযান শুরু করেছেন। সংবিধান থেকে বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষের ধর্মকে বাদ দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশে ফসল ভালো হলে এ দেশের প্রধানমন্ত্রী কৃতজ্ঞতা জানান মা দুর্গাকে, আল্লাহ্র নাম মুখে আনলে যদি দিল্লি কিম্বা ওয়াশিংটনে তার ইসলামী সন্ত্রাস-বিরোধী ইমেজ ফিঁকে হয়ে যায়!
একই সঙ্গে ধর্ম-নিরপেক্ষতার ঘোষণা দিলেন শেখ হাসিনা। মস্তবড় একটা ভুল করে ফেলেছিলেন তিনি। ধর্ম-নিরপেক্ষতা যে ধর্ম-বিরোধিতা নয় সে কথা তার মাথায় আসেনি। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে গেলে অন্তত কিছু সন্ত্রাসীকে জেলে পুরতেই হয়। হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে আনতে এবং নতুন রাষ্ট্রের জন্য স্বীকৃতি আদায় করতে প্রথমে ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সৈন্যকে স্বদেশে ফেরত পাঠান। জঘন্যতম যুদ্ধাপরাধী হিসেবে শনাক্ত করা ১৯৫ জনকেও জুলফিকার আলী ভুট্টোর হাতে তুলে দিয়েছিলেন তিনি। স্বদেশে তিনি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীদের জন্যে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন।
যুদ্ধাপরাধের বিচার শেখ হাসিনার একমাত্র অবশিষ্ট রাজনৈতিক পুঁজি এবং বিদেশি প্রভুদের মনোরঞ্জনের সম্বল। মাথায় সামান্য ঘিলু থাকলেও প্রতীক হিসেবে তিনি দু’ একজনের বিচার করতে পারতেন এবং জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফেরত দেয়া ১৯৫ জনের বিরুদ্ধে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার করা সম্ভব হতো। কিন্তু তার উদ্দেশ্য সাধু ছিলো না। আসলে বিচারের নামে জামায়াতে ইসলামীকে খতম করাই ছিল তার মতলব। সে উদ্দেশ্য সফল হলে অবশ্যই তিনি বিএনপির অস্তিত্ব বিলোপের চেষ্টায় হাত দিতেন।
সরকার ব্যর্থ হয়েছে এবং আরও হবে
শেখ হাসিনা জামায়াতকে ঘায়েল করতে পারেননি, পারবেনও না। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষ ধর্মভীরু মুসলমান। এই একটি ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলকে নিঃশেষ করার জন্য শেখ হাসিনার উন্মাদ একগুঁয়েমিতে তারা বিরক্ত, ক্রুদ্ধ হয়েছে। তারা দেখেছে যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে শত শত হাজার হাজার জামায়াত সমর্থককে গ্রেফতার করে জেলে পোরা হয়েছে, যাদের অধিকাংশেরই জন্ম হয়নি ১৯৭১ সালে। তারা আরও দেখেছে যে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক ‘সেকুলার ভারতে’ কট্টর হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি একাধিকবার কেন্দ্রে ও বিভিন্ন রাজ্যে শাসন করেছে। আগামী বছরের নির্বাচনেও বিজেপিই জয়ী হবে বলে অনেকে মনে করছেন এবং শোনা যাচ্ছে তেমন অবস্থায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী কট্টর মুসলিম বিদ্বেষী নরেন্দ্র মোদি, যার প্রশ্রয়ে সে রাজ্যে দু’ হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যাচার বাংলাদেশের মানুষের কাছে ধরা পড়ে গেছে। সে জন্যই জনসাধারণের সহানুভূতি চলে গেছে জামায়াতের দিকে। সেজন্যই জামায়াতের সভা-সমাবেশ ও মিছিলে এমন বহু লোক যোগ দেয় যারা এ দলের সদস্য কিম্বা সমর্থক নয়। বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়ায় হতাশ হয়ে সে দলের কিছু কর্মীও জামায়াতের কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছে। দলটিকে নিয়ে কী করবে সরকার ও শাসক দল মোটেই বুঝতে পারছে না। সরকারের টেকনিকের গোড়াতেই ভুল। হাসিনা ১৯৯৬ সাল থেকে ধরে নিয়েছেন যে বিরোধীদলকে যদি সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে দেয়া না হয় তাহলে জনসাধারণ তাদের কথা ভুলে যাবে। প্রতিক্রিয়া যে সম্পূর্ণ বিপরীত হচ্ছে সরকার সেটা এখনও বুঝে উঠতে পারছে না।
বিরোধীদের সভা কিম্বা সমাবেশ করতে দেয়া হলে নেতারা সেখানে বক্তৃতা করতেন, শ্রোতারা স্লোগান দিতেন এবং তারপর নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যেতেন তারা। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হলে সাধারণ মানুষ মনে করে যে সরকারের অবশ্যই কিছু লুকোবার আছে, সেজন্যই বিরোধীদের তারা সভা করতে দেয় না। তাদের স্বাভাবিক সহানুভূতি চলে যায় বিরোধীদের দিকে। সরকারের পুলিশ এবং শাসক দলের ক্যাডাররা যখন মিছিল-সমাবেশে তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বিরোধীরা তখন অবশ্যই প্রতিরোধ করবে। সেটা মানুষের স্বাভাবিক ধর্ম। প্রায়ই দেখা যায় যেসব পথচারী কিম্বা সাধারণ মানুষ রাজনীতিতে আগ্রহী নয় তারাও এসব প্রতিরোধে যোগ দেয়। এ সরকারের জনপ্রিয়তা বলে এখন আর কিছু অবশিষ্ট নেই।
জামায়াতে ইসলামী ৩০ জানুয়ারি বুধবার বায়তুল মোকাররমে সমাবেশ করতে চেয়েছিল। তাদের সে সমাবেশ করতে দিলে সরকারের সিংহাসন কী করে উল্টে যেত বুঝতে পারছি না। কয়েকশ’ পুলিশ দূরে থেকে পাহারা দিতে পারত যাতে কোনো প্রকারে শান্তিভঙ্গ না হয়। কিন্তু আমাদের ধর্মীয় ঐতিহ্যেই বলে, বিধাতা যাদের ধ্বংস করতে চান আগে তাদের উন্মাদ করে দেন। বায়তুল মোকাররমের সে সমাবেশ নিষিদ্ধ করাকে ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় সর্বনাশা ১৪৪ ধারা জারির সঙ্গে তুলনা করা যায়।
সরকারের সিদ্ধান্তের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে! জামায়াত পরদিন দেশজোড়া হরতাল ডেকেছে। সারা দেশের মানুষ তাতে সাড়া দিয়েছে, তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছে। পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ আর হাসিনার ক্যাডাররা হরতালকারীদের ঠেকাতে গিয়ে পরিস্থিতিকে আরও বিস্ফোরক করে তুলেছে। পুলিশসহ অনেকে খুন-জখম হয়েছে, যানবাহন ভাংচুর ও অগ্নিদগ্ধ হয়েছে, দেশের সম্পত্তি ও অর্থনীতির অপরিমেয় ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু জামায়াতের হরতাল তারা ঠেকাতে কিংবা ভণ্ডুল করে দিতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রী ও সরকার ধরে নিতে পারেন যতই তারা সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করবেন এবং হরতালে বাধা দেয়ার চেষ্টা করবেন পরিস্থিতি ততই তাদের সামালের বাইরে চলে যাবে।
দিশেহারা সরকার ও পুলিশ
সরকারের এবং শাসক দলের নেতাদের অসংলগ্ন কথাবার্তা থেকে এর মধ্যেই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে তারা কী করছেন আর কী করবেন মোটেই বুঝে উঠতে পারছেন না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাজধানীর পুলিশ প্রধান বলেছেন জামায়াতিরা ভোল পরিবর্তন করে এবং জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে ঝটিকা মিছিল বের করছে, পুলিশ তাদের চিনে উঠতে পারছে না। শিবির কর্মী ভুল করে ছাত্রলীগ যে বিশ্বজিত্ দাসকে খুন করেছিল সে কথা মানুষ ভুলে যায়নি।
এমতাবস্থায় রাজধানীর পুলিশ কমিশনার যখন পুলিশকে বলেন ‘শিবির দেখলেই গুলি করবা’ তখন কি তিনি মস্তিষ্কের কাছ থেকে ছুটি নিয়েই বলেছিলেন কথাটা? ঠিক তার পরদিন একই পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ সংসদীয় কমিটিকে বলেছেন, ‘জামায়াত-শিবির তাদের বেশ-ভূষা এবং আক্রমণের ধরন পরিবর্তন করায় তাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’ জামায়াত-শিবিরকে যদি চিহ্নিত এবং শনাক্ত করাই না গেল তাহলে কাকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার পুলিশ বাহিনীকে? বিশ্বজিত্ দাসের মতো সাধারণ মানুষ এবং সাধারণ পথচারীকে?
আওয়ামী লীগের স্থূলবুদ্ধি নেতারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার জন্য তড়পাচ্ছেন। একজন হচ্ছেন মোহাম্মদ নাসিম, যিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন বিচারপতিদের ভয় দেখানোর জন্য গজারি কাঠের লাঠি নিয়ে মিছিল বের করেছিলেন। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার বিরুদ্ধে খুন প্রভৃতি দুষ্কর্মের মামলাগুলো বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তুলে নিয়েছিল। জামায়াত-শিবির দেখলেই গণধোলাই দেবে কী করে? আওয়ামী লীগ নেতাদের তড়পানি শুকনো জলাশয়ের বিপন্ন পুঁটি মাছের তড়পানির কথা মনে করিয়ে দেয় নাকি আপনাদের?
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল আলম হানিফ কখন কী বলেন হয়তো নিজেই বোঝেন না। তিনি ‘জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে’ জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে চান। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মানুষই এখন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধী। তারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে অভিমত দেবে না। সরকার ও তার ক্যাডারদের বক্তব্যকেই হানিফ জাতীয় ঐকমত্য বলে গোঁজামিল দিতে চান!
রাজনৈতিক দলের মোকাবিলা রাজনীতি দিয়েই করতে হয়—পুলিশ-ক্যাডারদের খুনখারাবি দিয়েও নয়, কোনো দলকে নিষিদ্ধ করেও নয়। ব্রিটিশরা ভারতীয় কংগ্রেসকে নিষিদ্ধ করেছিল। পাকিস্তানিরা নিষিদ্ধ করেছিল যুক্তফ্রন্টকে। তাতে কোনো লাভ হয়েছে তাদের? শেষ পর্যন্ত তাদের থোঁতা মুখ ভোঁতা হয়ে যায়নি? সেসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হয়নি তারা? জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশে নির্বাচন করছে ১৯৫৪ সাল থেকে। কিন্তু কত আসন পেয়েছে তারা? এখন সে দলের ভয়েই আতঙ্কিত শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার। সে জন্য দায়ী তারা নিজেরা। তারা প্রথম কিস্তিতেই এক ডজন আলেম-ওলামাকে সন্দেহজনক ও বিতর্কিত পন্থায় কাঠগড়ায় তুলেছে, আরও ছয়শ’ জনের বিরুদ্ধে বিচারের আয়োজন শুরু করেছে। এমনিতেই সরকারের মতলব সম্বন্ধে সারা দেশে সন্দেহ অত্যন্ত প্রবল। তার ওপর এ দেশের ধর্মভীরু মানুষ আলেম-ওলামাকে ভক্তিশ্রদ্ধা করে। তাদের ফাঁসি দিতে সরকারের অধৈর্য কেউই ভালো চোখে দেখছে না।
এ থলিতে কেউটে আছে, ছোবল মারবে
নির্যাতন দিয়ে রাজনীতিকে নিস্তব্ধ করে দেয়া যায় না। ধর্মীয় রাজনীতি আরও সাংঘাতিক। বহু দৃষ্টান্ত সাম্প্রতিক ইতিহাসেও আছে। আলজেরিয়ায় ১৯৯২ সালের নির্বাচনে একটি ইসলামী দল গরিষ্ঠতা পেয়েছিল। কিন্তু সেনাবাহিনী নির্বাচনী ফলাফল নাকচ করে দলটিকে নিষিদ্ধ করে দেয়। তারপর থেকে ইসলামী সন্ত্রাস আলজেরিয়ায় লেগেই আছে। প্রায় সোয়া লাখ মানুষ মারা গেছে সে সন্ত্রাসে। মাত্র গত মাসে পূর্ব আলজেরিয়ায় যে সন্ত্রাসীরা গ্যাস ক্ষেত্র অবরোধ করে বিভিন্ন দেশীয় বহু কর্মীকে পণবন্দী এবং অর্ধ শতাধিক কর্মীকে হত্যা করেছিল তারাও সে ইসলামী আন্দোলনেরই ফসল।
মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক মুসলিম ব্রাদারহুড দলকে নিষিদ্ধ করেছিলেন। পরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হলেও এ দলকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেয়া হয়নি। তার পরিণতি কি মোবারক কিংবা মিসরের জন্য ভালো হয়েছে? গণআন্দোলনের ঢেউয়ে ‘সর্বশক্তিমান’ মোবারক খড়কুটোর মতো উত্খাত হয়েছেন। মিসরে গণভোট হচ্ছে, নির্বাচন হচ্ছে, সবকিছুতেই বিরাট জয় হচ্ছে ইসলামী ব্রাদারহুডের। সেকুলারিস্টরা আজকের মিসরে হালে পানি পাচ্ছেন না। তিউনিসিয়ায়ও মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করে রাখা হয়েছিল, কিন্তু সে দেশেও এখন সে ইসলামী দলই শাসন করছে।
নিষিদ্ধ করার রাজনীতি অচেনা থলির মতো। সে থলিতে সাধারণত কাল নাগিনী লুকিয়ে থাকে। নিষিদ্ধ করা হলে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবির গা-ঢাকা দেবে, আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে। ভোল পাল্টে এবং হয়তো জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে হঠাত্ তারা ছোবল মারবে, মোক্ষম আঘাত হানবে সরকার ও শাসক দলকে। সেসব আঘাত কখন কোত্থেকে আসবে সরকারের মন্ত্রিসভা এবং পুলিশের কমিশনার বেনজির আহমেদ টেরই পাবেন না। সামনের চেনা শত্রু পেছনের অচেনা শত্রুর চাইতে অনেক বেশি নিরাপদ—এ কথা মনে রাখলে সবাই ভালো করবেন।
(লন্ডন, ০৩.০২.১৩
serajurrahman34@gmail.com
????????? ???? ????????? ????? ? ??????