Major 13625
FULL MEMBER
- Joined
- May 10, 2016
- Messages
- 220
- Reaction score
- -1
- Country
- Location
শ্রদ্ধেয় ড. আকবর আলি খানের
‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ বইয়ের একটা
প্রবন্ধের নাম ‘শুয়োরের বাচ্চাদের’
অর্থনীতি যেখানে তিনি বৃটিশ
আমলের আসানসোলের মহকুমা প্রশাসক
মাইকেল ক্যারিটের কথা লিখেছেন।
মাইকেল ক্যারিট তার সাথে এক
পাঞ্জাবী ঠিকাদারের কথোপকথনের
বর্ননা করেছেন এভাবে- সেই
পাঞ্জাবি ঠিকাদার বলেছিল ‘হুজুর
এদেশে তিন ধরনের মানুষ আছে। যারা
ঘুষ খায় না। যারা ঘুষ খায় এবং কাজ
করে। আর তিন নম্বর দলে আছে কিছু
শুয়োরের বাচ্চা, যারা ঘুষও খায় কিন্তু
কাজ করে দেয় না। ‘শুয়োরের
বাচ্চাদের’ অর্থনীতি হলো টাকা
নিয়েও কাজ না করার অর্থনীতি।
শত বছর আগের ঘুষ নিয়েও কাজ না করা
‘শুয়োরের বাচ্চাদের’ অর্থনীতি
আজকের বাংলাদেশে বহুদূর ও বহুস্তরে
উত্তীর্ণ হয়ে এক ভয়ংকর দানবীয় রূপ
পেয়েছে যার কিছু দিক এই লিখায় তুলে
ধরার চেষ্টা করব।
১
বিদেশী ঋণ নির্ভর উন্নয়ন প্রকল্প, আয়-
ব্যয়ের সামঞ্জস্য হীন বিশাল সাইজের
অতি স্ফীত তথাপি ভ্যালূ ও
বাস্তবায়নে অক্ষম বাজেট!
২০১২-২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলদেশের
বৈদেশিক ঋণের আউটস্ট্যান্ডিং
ছিল অনুমানিক ২২ বিলিয়ন ডলারের
মত, যা জনাব সাইফুর রহমান এবং
জনাব শাহ্ এএমএস কিবরিয়া
সাহেবদের বৈদেশিক ঋণ নূন্যতম
রাখার ঐকান্তিক চেষ্টার ফসল।
২০১৩ পরবর্তিতে একদলীয় ও
নির্বাচনহীন (জবাবদিহিতা ও
দায়বদ্ধতা হীন) সরকার ক্ষমতায়
এসে স্বাধীনতা পরবর্তি ৪২ বছরের
বৈদেশিক ঋণের স্থিতি এবং
স্থিতিশীল ক্রেডিট রেটিং
এক্সপ্লয়ট করে বর্তমানে বিলিয়ন
বিলিয়ন ডলারের বিদেশী ঋণ
নির্ভর উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করে অর্থ
লোপাটের খনি তৈরি করে
রেখেছে,প্রকল্প গুলোর কাজ ঠিক
মত শুরু না হলেও প্রায় প্রতি ৩-৬
মাস অন্তর এগুলার ব্যয় শত কিংবা
হাজার কোটি করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যেখানে আগে বাংলাদেশ সুদ
বেশি হবার কারনে, কঠিন ও অসৎ
শর্ত যুক্ত থাকায় দ্বিপাক্ষিক ঋণ
না নিয়ে কম সুদের ওয়ার্ল্ড ব্যাংক/
এডিবি/আইডিবি/জাইকা'র মত
বহুপাক্ষিক ঋণ নিত সেখানে
বর্তমানে অবৈধ ক্ষমতায়নের শর্তে
প্রায় দ্বিগুণ তিনগুণ সুদে এবং
অন্যায্য শর্তে বিশেষ কিছু দেশ
থেকে এইসব ঋণ নিচ্ছে এখন। বিশ্ব
ব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠান
বাংলদেশের দুর্বিত্ত ব্যবস্থা মেনে
নিয়েছে এবং পদ্মা সেতুতে
যেখানে ০.৫৯% সুদে ঋণ দিবার কথা
হয়েছিল, সেখানে বর্তমানে তারা
৩,৫% সুদে প্রকল্প অফার করছে, আর
সরকার সেখান থেকেও অর্থ
নিচ্ছে।
উল্লেখ্য,ঋণের সুদ দেশের নতুন
বাজেট ব্যয়ের নূন্যতম ১০.৪%। নতুন
বাজেটে (২৬,৬৮%, ১ লক্ষ ৬ হাজার
৭৭২ কোটি ) বিশাল ঘাটতি
মেটাতে ৪৬ হাজার ৪২০ কোটি
টাকার (প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার)
নতুন বৈদেশিক ঋণের টার্গেট নেয়া
হয়েছে! অন্যদিকে মোট রাজস্বের
এক চতুর্থাংশের বেশি ঘাটতি
রেখে যে বাজেট দেয়া হয়েছে,
তার রাজস্ব টার্গেট ২ লক্ষ ৯৩
হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। এই
রাজস্বের বিপরীতে সুদ গুনতে হবে
৪১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা, মানে
মোট রাজস্ব আয়ের ১৪,১১%।
এমতাবস্থায় ক্রেডিট রেটিং
এজেন্সি গুলো বাংলাদেশের দীর্ঘ
সময়ে স্থিতিশীল ক্রেডিট রেটিং
অবনমনের আশংকা দিয়েছে, ফলে
নতুন ঋণের সুদ বেশি হচ্ছে।
বৈশ্বিক আর্থিক দুর্দিনে,
অনাস্থার সামনের দিনে- এই
দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও
রাজনৈতিক নেতৃত্ব ৪০ এর নিচের
ক্রেডিট রেটিং দিয়ে কিভাবে
দেশের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত
করবে, এটা একটা বড় প্রশ্ন।
বল্গাহীন উচ্চ বৈদেশিক ঋণ
ভবিষ্যৎ ঋণের সুদকে বড্ড বেশি
বাড়াবে (যা ইতিমধ্যেই
দৃষ্টিগোচর) যার ভার ভবিষ্যৎ
প্রজন্মকে বহন করতে হবে দেশের
বাইরে বাংলাদেশের সম্পদ এবং
বিনিয়োগ প্রায় নেই। আছে এক
বিশাল শ্রমজীবী নাগরিক বেইজ,
শান্তিতে সম্ভাবনা হলেও বৈশ্বিক
সংকটে যাকি না এক বড় দায়ও বটে।
প্রশ্ন তুলেছিলাম একটি দেশে
মাত্র ৫বছরের ব্যবধানে তার
বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দ্বিগুন বা
দ্বিগুণের বেশি করতে পারে কিনা?
এতে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের খরচের
লাগাম অস্বাভাবিক বেড়ে
রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয়য়ের ব্যালান্স,
খরচের ট্রেন্ড ও ইকোনোমিক কিছু
ইলাস্টিসিটি নস্ট হয়।
বাংলাদেশের জিডীপি'র টু ডেবট
ভলিউম বেশি সত্য, তবে আমরা
দেখছি তার সাথে দেশীয়
কর্মসংস্থান (বেশি দেখানো) ও
জনসংখ্যার (কম দেখানো)
হিসাবের বিস্তর ফারাক রয়েছে।
বাংলাদেশের উচ্চ ঋণ এবং প্রকল্প
বাস্তবায়নে এর ধীরতা ও খরুচে হার
এর ঋণ প্রবাহে সমস্যা সৃষ্টি করছে
(পড়ুন ঋণের সুদ বাড়ছে)।
বাংলাদেশের বাজেটে অভ্যন্তরীণ
এবং বৈদেশিক ঋণের ঝোঁক বাড়ছে,
অন্যদিকে দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধিও
কর্মহীন হয়ে পড়েছে। স্পষ্টতই
দেশের কর্মসংস্থানের হার বড্ড
বেমানান ভাবে ঋণাত্মক।
ইতিমধ্যেই বাজেটে বৈদেশিক
ঋণের সুদ দেশের জাতীয় বাজেটের
২য় বৃহত্তম খাত হিসেবে আবির্ভুত
হয়েছে (যোগাযোগের পরে, শিক্ষা
ও প্রযুক্তির দুটি ভিন্ন ভিন্ন
খাতকে এক করে এটাকে ৩য়
দেখানোর দুর্বিত্ত চেস্টা করা
হয়েছে)।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে
বড় বাজেট বর্তমানেরটি, যা
ঘাটতি, দেশী বিদেশী ঋণ ও
গোঁজামিলে ভরা। এর ২৬,৬৮%
ঘাটতি। ১০% বৈদেশিক ঋণ।
অন্যদিকে ১০% এর বেশি ব্যয় ঋণের
সুদ। অন্যদিকে রাস্তা ব্রিজ
ক্লাভার্টে হাজার হাজার কোটি
ব্যয় দেখানো হলেও (১২,৫%) দেশের
রাস্তাঘাট ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট।
প্রায় ৭০ হাজার কিমি রাস্তা
মেয়াদুত্তীর্ণ। শিক্ষার অবস্থা
শোচনীয়, টানা ৬ বছর ধরে
পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস
হচ্ছে। সরকারি স্বাস্থ্য খাতে
গ্রোথ না থাকলে বেসরকারি
স্বাস্থ্য খাতেরর গ্রোথ দুই অংকে।
বেসরকারি শিক্ষা স্বাস্থ্য ও
ভোগের আমদানী খাত গুলো সহ
সেবা খাতে যত ধরণের নেগেটিভ
গ্রোথ হতে পারে তার সবখানে
প্রায় দুই অংকে গ্রোথ হচ্ছে। ফলে
দেশের জিডীপি বর্ধিত। এরই মধ্যে
অর্থমন্ত্রী তার করা বাজেটকে
বেস্ট বাজেট বলে ঘোষণা করেছেন।
কর অবকাশ সুবিধা কমিয়ে, অভ্যন্তরীণ
উৎপাদন ও সেবা খাত গুলোকে খুঁজে
খুঁজে ভ্যাটের আওতায় এনে, রাজস্ব
আয়কে টেনে বাড়ানো হয়েছে। ফলে
দেশের ম্যাক্রো ও মাইক্রো
ইকোনোমিক সম্পর্ক গুলো ক্ষতি গ্রস্ত
হয়েছে এবং বিশেষ ভাবে ম্যাক্রো
ইকোনোমিক ইলাসটিসিটি নষ্ট
হয়েছে। দেখা গেছে অনানুষ্ঠানিক ও
শ্রমঘন অর্থনীতি ২ লক্ষ ৯৩ হাজার ৮৯৪
কোটি টাকার রাজস্ব টার্গেট
জোগাতে নিদারুণ ভাবে ক্লান্ত হয়ে
পড়েছে।
যেহেতু অরি দুর্নীতি ও বেশুমার
লুটপাটের কারণে বাজেটের মান
আর্থিক ও বাস্তবায়ন ভ্যালুতে অতি
নিচে নেমে এসেছে এবং প্রকল্প খরচ
বাস্তবতার ৫ থেকে ১০ গুণে পৌঁছেছে
তাই ট্যাক্স ও ভ্যাটের আওতার অতি
বৃদ্ধিতেও সরকারের অর্থ সংকট
কাটেনি। প্রথম দিকে ব্যাপক ব্যাংক
লোন নিয়েছে সরকার। সমালোচনায়
পড়ে পরে সরকার নিজেই উচ্চ সুদে বন্ড
ছেড়ে বেসরকারি বিনিয়োগের
আমানত কেড়ে নিয়ে বিনিয়োগে
স্থবিরতা এনেছে। পরবর্তীতে
অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ঋণ ও ট্যাক্স
ভ্যাটেও কুলাতে না পেরে বল্গাহীন
বৈদেশিক ঋণের দিকে হেঁটেছে
সরকার। স্ট্যাবল ক্রেডিট রেটিং
ভাঙিয়ে বিদেশ থেকে যেভাবে পারা
গেছে উচ্চ সুদ ও কঠিক শর্তে ঋণ যোগান
দিয়েছে।
সবমিলিয়ে প্রবৃদ্ধি উচ্চ হয়েছে (প্রায়
৭%), একই সাথে ইনফ্লাশনও আকাশ
ছুঁয়েছে(প্রায় ৫.৫-৭%)। ইকোনোমিক
ইলাস্টিসিটিকে ব্রেক করতে শেয়ার
বাজারের আমানত লুট, ব্যাংকের
আমানত লুট এবং উচ্চ ইনফ্লাশন সবাই
সম্মিলিত ভুমিকা রেখেছে। ফলে
দেখা যাচ্ছে, প্রবৃদ্ধির সাথে
কর্মসংস্থান, মাথাপিছু ও
পারিবারিক আয়-ভোগ, মানসম্মত
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক
নিরাপত্তা ও জীবণ মানের ডেটা
মিলছে না।
অর্থাৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফলগুলো
যাপিত জীবনের মানের সাথে মিলছে
না।
এটাই ‘শুয়োরের বাচ্চাদের’ অর্থনীতির
প্রধান বৈশিষ্ট। এখানে আর্থিক অংক
বড় বড় দেখাবে, আসলে ভিতরে চুরির
কারণে বড় বড় ফাঁক সৃষ্ট হবে।
২
ঋণ জালিয়াতি ও খেলাফী ঋণে
ব্যাংকের মূলধন লুট হয়ে গেছে।
সরকারি ব্যাংকে বাজেট থেকে বেইল
আউট ব্যবস্থা করে ঋণ কেন্দ্রিক লুট
অব্যহত থেকেছে। বেসরকারি ব্যাংক
লুট সহজ করতে একই পরিবারের চার জন
পরিচালক নিয়োগ ক্ষমতা এবং মেয়াদ
৯ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পলিটিক্যালি মটিভেটেড বুদ্ধিবৃত্তিক
শুয়রের বাচ্চারা সরকারি ব্যাংকের
শীর্ষ পদে বসে ক্রমাগত ব্যাংক ঋণ
নিয়ে লোপাট করে ফেলেছে রাষ্ট্রীয়
ব্যাংক গুলোকে। ভুঁই ফোঁড় একক
কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ৫
হাজার কোটি টাকার ঋণ যা অনাদায়ী
থেকে গেছে। ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত
সরকারি ব্যাংগুলোকে ১৫ হাজার
কোটির বেশি বেইল আউট মানি দেয়া
হয়েছে। প্রায় সবগুলো সরকারি ব্যাংক
পলিটিক্যালি মোটিভেটেড ঋণ
জালিয়াতিতে লুট হয়ে মূলধন খুইয়েছে,
আরো ২০,৩৯৮ হাজার কোটি বেইল আউট
দেয়ার কথা হচ্ছে যা আসলে
দুর্নীতিতে লোপাট হয়েছে।
বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক
হাতিয়েছে পলিটিক্যালি
মোটিভেটেড লাইসেন্স পাওয়া
মালিকরাই। একদিকে শেয়ারবাজার
লুটের হোতাদের বিচার হয়নি।
অন্যদিকে উচ্চ সুদের ফাঁদে পা দিয়ে
আমানত রাখা গ্রাহকের টাকা
হাতিয়েছে রাজনীতির দণ্ডমুণ্ডের
কর্তারাই যারা প্রভাব খাটিয়ে
ব্যাংক লাইসেন্স বাগিয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায়ই
‘স্বচ্ছন্দ’ দেশের সর্ববৃহৎ গ্রুপ এস
আলমের। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী
ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, আল আরাফাহ
ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক
বাংলাদেশের পর এবার গ্রুপটির দখলে
আসছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ,
এমনকি এবি ব্যাংকও দখল করেছে
তারা। শুধু একক গ্রুপ “এস আলম”
হাতিয়ে নিয়েছে দেশের শীর্ষ
বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক গুলো।
গ্রুপটির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ
পাচারের গুরতর অভিযোগ উঠেছে।
ব্যাংক হলো টাকা পয়সার নিরাপদ
আশ্রয়স্থল। কিন্তু ব্যাংকের টাকা লুট
যেন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। একের
পর এক ঘটছে আর্থিক খাতের অর্থ
কেলেঙ্কারি। বিগত কয়েক বছরের অর্থ
লোপাটের কাহিনী সব ইতিহাসের
সেরা ইতিহাসে পরিণত হয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে গত কয়েক বছরে প্রায় ১৫
হাজার কোটি টাকার ঋণ
কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। অসংখ্য
মামলাও হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত
ব্যক্তিরাও চিহ্নিত। অথচ বছরের পর বছর
পেরিয়ে গেলেও বিচার হয়নি,
লুটেরারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার
বাইরে। উদ্ধার হয়নি টাকা। হবে কিনা
তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না
কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকগুলোতে ঘটে যাওয়া
এসব লুটপাটে রাজনৈতিক বিবেচনায়
নিয়োগ পাওয়া পরিচালনা পর্ষদ এবং
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশ
থাকলেও তারা স্বপদে বহাল রয়েছেন।
যে সব ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে,
তা নিয়ে কিছুটা আলোচনা হলেও
বাকিগুলো যেন ধামাচাপাই পড়ে
থাকে বছরের পর বছর। এমনই ধামাচাপা
দিয়ে রাখা এক আর্থিক কেলেঙ্কারি
প্রকাশ পেল গণমাধ্যমে।
১০ বছর আগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার
হয়েছিলেন মো. ইউনুছ বাদল, অভিযোগ
ছিল গাড়ি চুরির, ইউনুছ এখন
ব্যাংকঋণের টাকায় বড় শিল্পপতি।
এ্যাননটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা
পরিচালক ইউনুছ।এ্যাননটেক্স গ্রুপের
প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২টি। তার এই
সমৃদ্ধির আলাদীন চেরাগ বারাকাতের
হাত ধরে।
এদিকে সম্পূর্ণ দলীয় বিবেচনায়
ছাত্রলীগ সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী ও
বুদ্ধিজীবি নাম ধারী দলীয় উচ্ছিষ্ট
ভোগীদের লাইসেন্স দেয়া হয়ে
ব্যাংকের। সেখানে রাখা হয়েছে
জলবায়ু তহবিলের টাকা। উচ্চ সুদের
লোভ দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ করে ঋণ
জালিয়াতি করে ব্যাংকটির মূলধন লুটে
নিয়েছে ক্ষমতাসীন দুর্বিত্তরা। দেখা
গেছে পিটায়া রাজনৈতিক
সংস্ক্রিতি লালনকারি নাজমুলও
ব্যাংক উদ্যোক্তা!
বেসরকারি খাতের ফারমার্স
ব্যাংকে জমা রাখা টাকা ফেরত
পাচ্ছেন না আমানতকারীরা।
ব্যাংকটির শাখাগুলোতে টাকা তুলতে
প্রতিদিন ভিড় করছেন গ্রাহকেরা, আর
তাঁদের হতাশ করছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
অনেককে পে-অর্ডার দিয়ে শান্ত
রাখার চেষ্টা করছে, তবে ব্যাংকের
হিসাবে টাকা না থাকায় তাও
প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের
তিন দিন ব্যাংকটির মতিঝিল,
গুলশান, ধানমন্ডি শাখায় সরেজমিন
পরিদর্শনে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে টাকা ফেরত পেতে অনেক
গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকের
শরণাপন্ন হচ্ছেন। তাতেও মিলছে না
টাকা। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির
আমানতকারীদের নিয়ে বিপাকে
পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক পরিচালকদের ‘সমঝোতা ঋণ’র
পরিমাণ ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা
ছাড়াল। এর সঙ্গে তাদের শেয়ারের ৫০
শতাংশ পরিমাণ নেয়া ঋণের হিসাব
যুক্ত করলে তা দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৬
হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে
জুন পর্যন্ত মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে
৭ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এ হিসাবে পরিচালকরা যে ঋণ
নিয়েছেন তা মোট ঋণ বিতরণের প্রায়
১৪ দশমিক ২২ শতাংশ। সরকারি-
বেসরকারি খাতে বিদ্যমান ৫৭টি
ব্যাংকের বেশিরভাগ পরিচালক
এভাবে নিজেদের মধ্যে ঋণ
ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।
ব্যাংকগুলোর পরিচালকের সংখ্যা এক
হাজারের কাছাকাছি হলেও এ ধরনের
সমঝোতাভিত্তিক বড় অংকের ঋণ
বিনিময় করেন প্রায় ৫০ জন। যাদের
কয়েকজন বেশি বিতর্কিত। মূলত এদের
কাছে পুরো ব্যাংকিং খাত জিম্মি।
আসলে ব্যাংকের ঋণ গিলে খাচ্ছে
ব্যাংকের মালিকপক্ষ তথা কিছু
পরিচালক। আরও সহজ করে বলা যায়,
ব্যাংক মালিকরাই আমানত খেয়ে
ফেলছেন।
অর্থাৎ প্রথম স্টেইজে ট্যাক্স, ভ্যাট
ও ঋণ কেন্দ্রিক অনৈতিক বাজেট
তৈরি করে, দ্বিতীয় স্টেইজে দলীয়
দুর্বিত্ত সহযোগে ব্যাংক লুট করতে
দেয়া হয়েছে। এই দুই স্টেইজের
আফটার ম্যাথে তৃতীয় স্টেইজে এসে
লুট করা অর্থ পাচার করা হয়েছে
বেশুমার।
৩
১০-১১ বছরে পাচার হয়েছে ৬ লক্ষ
কোটি টাকা।
ওয়াশিংটনভিত্তিক
অর্থপাচারবিরোধী সংস্থা গ্লোবাল
ফিন্যানশিয়াল ইনটিগ্রিটির
(জিএফআই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে
বাংলাদেশ থেকে বিপুল অর্থপাচারের
ভয়াবহ তথ্য রয়েছে। শুধু ২০১৪ সালেই
বাংলাদেশ থেকে আরো প্রায় ৭৩
হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে
গেছে। ২০১৩ সালে দেশ থেকে পাচার
হওয়া অর্থের পরিমাণ ৯৬৬ কোটি ৬০
লাখ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যার
পরিমাণ প্রায় ৭৭ হাজার কোটি টাকা।
এভাবে গত ১০ বছরে দেশ থেকে পাচার
হয়ে গেছে ছয় লাখ ছয় হাজার ৭৬৪
কোটি টাকা। অর্থপাচারের দিক
থেকে ভঙ্গুর রাজনীতির দেশ
পাকিস্তানকেও বহু ধাপ পেছনে
ফেলেছে বাংলাদেশ।
১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার
হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৭ কোটি ৬০ লাখ
ডলার। টাকার অঙ্কে যা ৪ লাখ ৪১
হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এই অর্থ
এবারের বাজেটের চেয়েও ১ লাখ কোটি
টাকা বেশি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর
(এলডিসি) মধ্যে অর্থ পাচার সবচেয়ে
বেশি হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই। এর
বাইরে গত দুই অর্থবছরে সুইস
ব্যাংকসমূহে বাংলাদেশি
নাগরিকদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা
দ্বিগুণ বেড়েছে। এই অর্থও পাচার করা।
আবার মালয়েশিয়ায় ‘মাই সেকেন্ড
হোম’ কর্মসূচিতে গত ১৩ বছরে ৩ হাজার
৬১ জন বাংলাদেশি অর্থ পাঠিয়েছেন।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান
তৃতীয়। এর বাইরে অস্ট্রেলিয়া,
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করে
নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন
অসংখ্য বাংলাদেশি।
সিঙ্গাপুরে একটি বাণিজ্যিক ভবনে
প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ সিঙ্গাপুর
ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায়
৮১০ কোটি টাকা (প্রতি সিঙ্গাপুর
ডলারের বিনিময়মূল্য ৬০ টাকা ধরে)
বিনিয়োগ করেছেন দেশের
শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এস
আলম গ্রুপ। এর কর্ণধার মোহাম্মদ
সাইফুল আলম। খবর সিঙ্গাপুরের দৈনিক
দ্য বিজনেস টাইমসের। দ্য বিজনেস
টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
সিঙ্গাপুরের লিটল ইন্ডিয়া এলাকার
সেরেঙ্গন প্লাজার কাছে সেন্ট্রিয়াম
স্কয়ার নামে নতুন এ বাণিজ্যিক ভবনটি
নির্মিত হচ্ছে। ওই ভবনটির ২৭ হাজার
১৭৯ বর্গফুট বা ৪৯টি ইউনিট কেনা হয়।
বাণিজ্যিক ওই ভবনটিতে ওই পরিমাণ
জায়গা খুচরা বিক্রির জন্য বরাদ্দ ছিল।
যার পুরোটাই একসঙ্গে কিনে নিয়েছে
এস আলম গ্রুপ। প্রতি বর্গফুট জায়গা ৪
হাজার ৯৬৭ সিঙ্গাপুর ডলার বা
বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ
টাকা দামে কেনা হয়।
অর্থমন্ত্রী সহ পুরো অর্থ প্রশাসন
মাইক্রো ইকোনমিক্স বুঝে নীতি
নির্ধারণ করেনা। এরা নীতি
নির্ধারনে বাংলাদেশের গ্রামীণ
অর্থনীতির ছোট ও মাঝারি এলেমিন্ট
গুলোর ইম্প্যাক্ট বুঝার চেষ্টা করেনা।
তার শুধু ম্যাক্রো ইকোনমিক্স প্লে করে
রাষ্ট্র এর আর্থিক স্পেইসকে আওয়ামী
ব্যবসায়ী ও দেশের কথিত এলিট
ব্যবসায়ীদের লূটের জায়গা বানিয়ে
দিয়েছে, এতে করে মাইক্রো
ইকোনোমি ধ্বংস করে দিয়েছে, ঠিক
এইজন্যই বাংলাদেশের ইকোনমি তার
সাধারণ নাগরিকের জীবন মানের
সাথে সামঞ্জ্যস রাখে না।
৪
শুয়রের বাচ্চাদের অর্থনীতির কারণে
নিন্ম আয়ের মানুষ শুধু গরীব হচ্ছে। আর
সুবিধা প্রাপ্ত ও উচ্ছিষ্ট ভোগী ধনীরা
শুধুই বড়লোক হচ্ছে। ছয় বছরে সর্বো
উপরে থাকা ৫% নাগরিকের আর্থিক
শ্রেণীর শুধু মাসিক আয় বেড়েছে ৩২৪৪১
টাকা যেখানে সর্বনিন্মে থাকা ৫%
এর মাসিক আয় কমেছে ১০৫৮ টাকা।
শুয়রের বাচ্চাদের অর্থনীতির নগ্ন
বহিঃপ্রকাশ এর চের আর নীচ কি হতে
পারে।
ইউএনডিপির পর্যবেক্ষণ বলছে ১০
শতাংশের হাতে সবকিছু কেন্দ্রীভূত
হচ্ছে। দেশের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী
পরিবারের হাতে মোট আয়ের ৩৮
শতাংশ। আয় বণ্টন ব্যবস্থার এ
কেন্দ্রীভবনের জন্য রেন্ট সিকিং
(লুটপাট ও দুর্নীতি) প্রবণতাকে দায়ী
করছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি
(ইউএনডিপি)।
বিবিএসের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে
ইউএনডিপি বলছে, ২০১০ সালে
দেশে জিনি সহগের মান ছিল
দশমিক ৪৫৮। ২০১৬ সালে এসে তা
বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৮৩-এ।
একই সময়সীমায় গ্রামাঞ্চলে জিনি
সহগের মান দশমিক ৪৩ থেকে বেড়ে
দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৫-এ।
শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে এ মান ২০১০
সালে ছিল দশমিক ৪৫। ২০১৬ সালে
তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৫-এ।
আয়বৈষম্যের এ চিত্র থেকে চারটি
পর্যবেক্ষণ দিয়েছে ইউএনডিপি।
প্রথমত. দেশে আয়বৈষম্য ছয় বছরে
অনেক প্রকট হয়েছে। দ্বিতীয়ত. এ
সময়ে সবচেয়ে দরিদ্র ও নাজুক
অংশটি আরো দরিদ্র হয়ে উঠেছে।
তৃতীয়ত. সবচেয়ে ধনী অংশ দ্রুত
আরো সম্পদশালী হয়ে ওঠায় তাদের
মধ্যেই আয় আরো কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।
চতুর্থত. দারিদ্র্যের মাত্রা গ্রামীণ
দরিদ্রদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি।
বিবিএসের সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয়
জরিপের উপাত্ত ব্যবহার করে
ইউএনডিপি তাদের পর্যবেক্ষণে
বলেছে, ২০১০ সালেও জাতীয় আয়ে
সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ খানার
অংশীদারিত্ব ছিল দশমিক ৭৮
শতাংশ। ২০১৬ সালে তা আরো কমে
দাঁড়িয়েছে মাত্র দশমিক ২৩
শতাংশে। এর বিপরীতে সবচেয়ে
সম্পদশালী ৫ শতাংশ খানার আয়
অংশীদারিত্ব ২৪ দশমিক ৬ থেকে
বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯
শতাংশে। আয়ের দিক থেকে
খানাগুলো ১০ ভাগ করে দেখা
গেছে, এর মধ্যে শুধু শীর্ষ ১০
শতাংশের আয়ের অংশীদারিত্ব ছয়
বছরে ৩৫ দশমিক ৮ থেকে বেড়ে ৩৮
দশমিক ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
আয়বৈষম্যের চিত্রের পুনরাবৃত্তি
দেখা গেছে ভোগ ব্যয়েও। ভোগ
ব্যয়ের দিক থেকে খানাগুলো ১০
ভাগে ভাগ করে দেখা গেছে, ২০১৬
সালে মোট জাতীয় ভোগ ব্যয়ে
সর্বনিম্ন ১০ শতাংশের
অংশীদারিত্ব দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩
দশমিক ৭ শতাংশে; ২০১০ সালে যা
ছিল ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০১৬ সালে শীর্ষ ১০
শতাংশের ভোগ ব্যয়ে
অংশীদারিত্ব দাঁড়িয়েছে ২৬
দশমিক ৮ শতাংশে। ইউএনডিপির
পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভোগ ব্যয়ের
দিক থেকে এ সময় শহরাঞ্চলে
বৈষম্যের মাত্রা সামান্য বাড়লেও
গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে অনেকখানি।
ভোগ ব্যয় সূচকে দেশের গ্রামাঞ্চলে
জিনি সহগের মান ২০১০ সালের
দশমিক ৩ থেকে এক লাফে বেড়ে
হয়েছে দশমিক ৯। আর শহরাঞ্চলে
তা দশমিক ৩৩ থেকে বেড়ে দশমিক
৩৪-এ দাঁড়িয়েছে।
আসলে বাংলাদেশকে পরিপুর্ণ
ভাবে ‘শুয়োরের বাচ্চাদের’
অর্থনীতি পেয়ে বসেছে। আর
শুয়োরের বাচ্চাদের অর্থনীতিতে
আসল সমস্যাটাই হলো, বড় বড় বাজেট
আসে, টাকা যায়, কিন্তু কাজ হয় না।
বেপারোয়া খরচ দেখিয়ে উন্নয়ন ও
সেবা খাত থেকে হাজার হাজার
কোটি টাকা লূটে নিচ্ছে শুয়োরের
বাচ্চারা কিন্তু বলতে গেলে কোন
কাজই করছে না। শিল্প দেখিয়ে লক্ষ
লক্ষ কোটি ঋণ নিয়ে গায়েব হয়েছে,
লক্ষ লক্ষ কোটি পাচার করেছে। বছর
শেষে দেখা যাচ্ছে পুরো চার লাখ
কোটি টাকার বাৎসরিক বাজেট
শুয়রের বাচ্চাদের অর্থনীতি খেয়ে
ফেলছে, ফলপ্রসূ এবং টেকসই কোন
কাজ করা ছাড়াই।
‘শুয়োরের বাচ্চাদের’ অর্থনীতি!
পেয়ে বাংলদেশের গরীব শুধু গরীবই
হচ্ছে।
‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ বইয়ের একটা
প্রবন্ধের নাম ‘শুয়োরের বাচ্চাদের’
অর্থনীতি যেখানে তিনি বৃটিশ
আমলের আসানসোলের মহকুমা প্রশাসক
মাইকেল ক্যারিটের কথা লিখেছেন।
মাইকেল ক্যারিট তার সাথে এক
পাঞ্জাবী ঠিকাদারের কথোপকথনের
বর্ননা করেছেন এভাবে- সেই
পাঞ্জাবি ঠিকাদার বলেছিল ‘হুজুর
এদেশে তিন ধরনের মানুষ আছে। যারা
ঘুষ খায় না। যারা ঘুষ খায় এবং কাজ
করে। আর তিন নম্বর দলে আছে কিছু
শুয়োরের বাচ্চা, যারা ঘুষও খায় কিন্তু
কাজ করে দেয় না। ‘শুয়োরের
বাচ্চাদের’ অর্থনীতি হলো টাকা
নিয়েও কাজ না করার অর্থনীতি।
শত বছর আগের ঘুষ নিয়েও কাজ না করা
‘শুয়োরের বাচ্চাদের’ অর্থনীতি
আজকের বাংলাদেশে বহুদূর ও বহুস্তরে
উত্তীর্ণ হয়ে এক ভয়ংকর দানবীয় রূপ
পেয়েছে যার কিছু দিক এই লিখায় তুলে
ধরার চেষ্টা করব।
১
বিদেশী ঋণ নির্ভর উন্নয়ন প্রকল্প, আয়-
ব্যয়ের সামঞ্জস্য হীন বিশাল সাইজের
অতি স্ফীত তথাপি ভ্যালূ ও
বাস্তবায়নে অক্ষম বাজেট!
২০১২-২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলদেশের
বৈদেশিক ঋণের আউটস্ট্যান্ডিং
ছিল অনুমানিক ২২ বিলিয়ন ডলারের
মত, যা জনাব সাইফুর রহমান এবং
জনাব শাহ্ এএমএস কিবরিয়া
সাহেবদের বৈদেশিক ঋণ নূন্যতম
রাখার ঐকান্তিক চেষ্টার ফসল।
২০১৩ পরবর্তিতে একদলীয় ও
নির্বাচনহীন (জবাবদিহিতা ও
দায়বদ্ধতা হীন) সরকার ক্ষমতায়
এসে স্বাধীনতা পরবর্তি ৪২ বছরের
বৈদেশিক ঋণের স্থিতি এবং
স্থিতিশীল ক্রেডিট রেটিং
এক্সপ্লয়ট করে বর্তমানে বিলিয়ন
বিলিয়ন ডলারের বিদেশী ঋণ
নির্ভর উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করে অর্থ
লোপাটের খনি তৈরি করে
রেখেছে,প্রকল্প গুলোর কাজ ঠিক
মত শুরু না হলেও প্রায় প্রতি ৩-৬
মাস অন্তর এগুলার ব্যয় শত কিংবা
হাজার কোটি করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যেখানে আগে বাংলাদেশ সুদ
বেশি হবার কারনে, কঠিন ও অসৎ
শর্ত যুক্ত থাকায় দ্বিপাক্ষিক ঋণ
না নিয়ে কম সুদের ওয়ার্ল্ড ব্যাংক/
এডিবি/আইডিবি/জাইকা'র মত
বহুপাক্ষিক ঋণ নিত সেখানে
বর্তমানে অবৈধ ক্ষমতায়নের শর্তে
প্রায় দ্বিগুণ তিনগুণ সুদে এবং
অন্যায্য শর্তে বিশেষ কিছু দেশ
থেকে এইসব ঋণ নিচ্ছে এখন। বিশ্ব
ব্যাংকের মত প্রতিষ্ঠান
বাংলদেশের দুর্বিত্ত ব্যবস্থা মেনে
নিয়েছে এবং পদ্মা সেতুতে
যেখানে ০.৫৯% সুদে ঋণ দিবার কথা
হয়েছিল, সেখানে বর্তমানে তারা
৩,৫% সুদে প্রকল্প অফার করছে, আর
সরকার সেখান থেকেও অর্থ
নিচ্ছে।
উল্লেখ্য,ঋণের সুদ দেশের নতুন
বাজেট ব্যয়ের নূন্যতম ১০.৪%। নতুন
বাজেটে (২৬,৬৮%, ১ লক্ষ ৬ হাজার
৭৭২ কোটি ) বিশাল ঘাটতি
মেটাতে ৪৬ হাজার ৪২০ কোটি
টাকার (প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার)
নতুন বৈদেশিক ঋণের টার্গেট নেয়া
হয়েছে! অন্যদিকে মোট রাজস্বের
এক চতুর্থাংশের বেশি ঘাটতি
রেখে যে বাজেট দেয়া হয়েছে,
তার রাজস্ব টার্গেট ২ লক্ষ ৯৩
হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। এই
রাজস্বের বিপরীতে সুদ গুনতে হবে
৪১ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা, মানে
মোট রাজস্ব আয়ের ১৪,১১%।
এমতাবস্থায় ক্রেডিট রেটিং
এজেন্সি গুলো বাংলাদেশের দীর্ঘ
সময়ে স্থিতিশীল ক্রেডিট রেটিং
অবনমনের আশংকা দিয়েছে, ফলে
নতুন ঋণের সুদ বেশি হচ্ছে।
বৈশ্বিক আর্থিক দুর্দিনে,
অনাস্থার সামনের দিনে- এই
দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও
রাজনৈতিক নেতৃত্ব ৪০ এর নিচের
ক্রেডিট রেটিং দিয়ে কিভাবে
দেশের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত
করবে, এটা একটা বড় প্রশ্ন।
বল্গাহীন উচ্চ বৈদেশিক ঋণ
ভবিষ্যৎ ঋণের সুদকে বড্ড বেশি
বাড়াবে (যা ইতিমধ্যেই
দৃষ্টিগোচর) যার ভার ভবিষ্যৎ
প্রজন্মকে বহন করতে হবে দেশের
বাইরে বাংলাদেশের সম্পদ এবং
বিনিয়োগ প্রায় নেই। আছে এক
বিশাল শ্রমজীবী নাগরিক বেইজ,
শান্তিতে সম্ভাবনা হলেও বৈশ্বিক
সংকটে যাকি না এক বড় দায়ও বটে।
প্রশ্ন তুলেছিলাম একটি দেশে
মাত্র ৫বছরের ব্যবধানে তার
বৈদেশিক ঋণের স্থিতি দ্বিগুন বা
দ্বিগুণের বেশি করতে পারে কিনা?
এতে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের খরচের
লাগাম অস্বাভাবিক বেড়ে
রাষ্ট্রীয় আয়-ব্যয়য়ের ব্যালান্স,
খরচের ট্রেন্ড ও ইকোনোমিক কিছু
ইলাস্টিসিটি নস্ট হয়।
বাংলাদেশের জিডীপি'র টু ডেবট
ভলিউম বেশি সত্য, তবে আমরা
দেখছি তার সাথে দেশীয়
কর্মসংস্থান (বেশি দেখানো) ও
জনসংখ্যার (কম দেখানো)
হিসাবের বিস্তর ফারাক রয়েছে।
বাংলাদেশের উচ্চ ঋণ এবং প্রকল্প
বাস্তবায়নে এর ধীরতা ও খরুচে হার
এর ঋণ প্রবাহে সমস্যা সৃষ্টি করছে
(পড়ুন ঋণের সুদ বাড়ছে)।
বাংলাদেশের বাজেটে অভ্যন্তরীণ
এবং বৈদেশিক ঋণের ঝোঁক বাড়ছে,
অন্যদিকে দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধিও
কর্মহীন হয়ে পড়েছে। স্পষ্টতই
দেশের কর্মসংস্থানের হার বড্ড
বেমানান ভাবে ঋণাত্মক।
ইতিমধ্যেই বাজেটে বৈদেশিক
ঋণের সুদ দেশের জাতীয় বাজেটের
২য় বৃহত্তম খাত হিসেবে আবির্ভুত
হয়েছে (যোগাযোগের পরে, শিক্ষা
ও প্রযুক্তির দুটি ভিন্ন ভিন্ন
খাতকে এক করে এটাকে ৩য়
দেখানোর দুর্বিত্ত চেস্টা করা
হয়েছে)।
বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে
বড় বাজেট বর্তমানেরটি, যা
ঘাটতি, দেশী বিদেশী ঋণ ও
গোঁজামিলে ভরা। এর ২৬,৬৮%
ঘাটতি। ১০% বৈদেশিক ঋণ।
অন্যদিকে ১০% এর বেশি ব্যয় ঋণের
সুদ। অন্যদিকে রাস্তা ব্রিজ
ক্লাভার্টে হাজার হাজার কোটি
ব্যয় দেখানো হলেও (১২,৫%) দেশের
রাস্তাঘাট ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট।
প্রায় ৭০ হাজার কিমি রাস্তা
মেয়াদুত্তীর্ণ। শিক্ষার অবস্থা
শোচনীয়, টানা ৬ বছর ধরে
পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস
হচ্ছে। সরকারি স্বাস্থ্য খাতে
গ্রোথ না থাকলে বেসরকারি
স্বাস্থ্য খাতেরর গ্রোথ দুই অংকে।
বেসরকারি শিক্ষা স্বাস্থ্য ও
ভোগের আমদানী খাত গুলো সহ
সেবা খাতে যত ধরণের নেগেটিভ
গ্রোথ হতে পারে তার সবখানে
প্রায় দুই অংকে গ্রোথ হচ্ছে। ফলে
দেশের জিডীপি বর্ধিত। এরই মধ্যে
অর্থমন্ত্রী তার করা বাজেটকে
বেস্ট বাজেট বলে ঘোষণা করেছেন।
কর অবকাশ সুবিধা কমিয়ে, অভ্যন্তরীণ
উৎপাদন ও সেবা খাত গুলোকে খুঁজে
খুঁজে ভ্যাটের আওতায় এনে, রাজস্ব
আয়কে টেনে বাড়ানো হয়েছে। ফলে
দেশের ম্যাক্রো ও মাইক্রো
ইকোনোমিক সম্পর্ক গুলো ক্ষতি গ্রস্ত
হয়েছে এবং বিশেষ ভাবে ম্যাক্রো
ইকোনোমিক ইলাসটিসিটি নষ্ট
হয়েছে। দেখা গেছে অনানুষ্ঠানিক ও
শ্রমঘন অর্থনীতি ২ লক্ষ ৯৩ হাজার ৮৯৪
কোটি টাকার রাজস্ব টার্গেট
জোগাতে নিদারুণ ভাবে ক্লান্ত হয়ে
পড়েছে।
যেহেতু অরি দুর্নীতি ও বেশুমার
লুটপাটের কারণে বাজেটের মান
আর্থিক ও বাস্তবায়ন ভ্যালুতে অতি
নিচে নেমে এসেছে এবং প্রকল্প খরচ
বাস্তবতার ৫ থেকে ১০ গুণে পৌঁছেছে
তাই ট্যাক্স ও ভ্যাটের আওতার অতি
বৃদ্ধিতেও সরকারের অর্থ সংকট
কাটেনি। প্রথম দিকে ব্যাপক ব্যাংক
লোন নিয়েছে সরকার। সমালোচনায়
পড়ে পরে সরকার নিজেই উচ্চ সুদে বন্ড
ছেড়ে বেসরকারি বিনিয়োগের
আমানত কেড়ে নিয়ে বিনিয়োগে
স্থবিরতা এনেছে। পরবর্তীতে
অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ঋণ ও ট্যাক্স
ভ্যাটেও কুলাতে না পেরে বল্গাহীন
বৈদেশিক ঋণের দিকে হেঁটেছে
সরকার। স্ট্যাবল ক্রেডিট রেটিং
ভাঙিয়ে বিদেশ থেকে যেভাবে পারা
গেছে উচ্চ সুদ ও কঠিক শর্তে ঋণ যোগান
দিয়েছে।
সবমিলিয়ে প্রবৃদ্ধি উচ্চ হয়েছে (প্রায়
৭%), একই সাথে ইনফ্লাশনও আকাশ
ছুঁয়েছে(প্রায় ৫.৫-৭%)। ইকোনোমিক
ইলাস্টিসিটিকে ব্রেক করতে শেয়ার
বাজারের আমানত লুট, ব্যাংকের
আমানত লুট এবং উচ্চ ইনফ্লাশন সবাই
সম্মিলিত ভুমিকা রেখেছে। ফলে
দেখা যাচ্ছে, প্রবৃদ্ধির সাথে
কর্মসংস্থান, মাথাপিছু ও
পারিবারিক আয়-ভোগ, মানসম্মত
শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক
নিরাপত্তা ও জীবণ মানের ডেটা
মিলছে না।
অর্থাৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফলগুলো
যাপিত জীবনের মানের সাথে মিলছে
না।
এটাই ‘শুয়োরের বাচ্চাদের’ অর্থনীতির
প্রধান বৈশিষ্ট। এখানে আর্থিক অংক
বড় বড় দেখাবে, আসলে ভিতরে চুরির
কারণে বড় বড় ফাঁক সৃষ্ট হবে।
২
ঋণ জালিয়াতি ও খেলাফী ঋণে
ব্যাংকের মূলধন লুট হয়ে গেছে।
সরকারি ব্যাংকে বাজেট থেকে বেইল
আউট ব্যবস্থা করে ঋণ কেন্দ্রিক লুট
অব্যহত থেকেছে। বেসরকারি ব্যাংক
লুট সহজ করতে একই পরিবারের চার জন
পরিচালক নিয়োগ ক্ষমতা এবং মেয়াদ
৯ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
পলিটিক্যালি মটিভেটেড বুদ্ধিবৃত্তিক
শুয়রের বাচ্চারা সরকারি ব্যাংকের
শীর্ষ পদে বসে ক্রমাগত ব্যাংক ঋণ
নিয়ে লোপাট করে ফেলেছে রাষ্ট্রীয়
ব্যাংক গুলোকে। ভুঁই ফোঁড় একক
কোম্পানিকে দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ৫
হাজার কোটি টাকার ঋণ যা অনাদায়ী
থেকে গেছে। ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত
সরকারি ব্যাংগুলোকে ১৫ হাজার
কোটির বেশি বেইল আউট মানি দেয়া
হয়েছে। প্রায় সবগুলো সরকারি ব্যাংক
পলিটিক্যালি মোটিভেটেড ঋণ
জালিয়াতিতে লুট হয়ে মূলধন খুইয়েছে,
আরো ২০,৩৯৮ হাজার কোটি বেইল আউট
দেয়ার কথা হচ্ছে যা আসলে
দুর্নীতিতে লোপাট হয়েছে।
বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক
হাতিয়েছে পলিটিক্যালি
মোটিভেটেড লাইসেন্স পাওয়া
মালিকরাই। একদিকে শেয়ারবাজার
লুটের হোতাদের বিচার হয়নি।
অন্যদিকে উচ্চ সুদের ফাঁদে পা দিয়ে
আমানত রাখা গ্রাহকের টাকা
হাতিয়েছে রাজনীতির দণ্ডমুণ্ডের
কর্তারাই যারা প্রভাব খাটিয়ে
ব্যাংক লাইসেন্স বাগিয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায়ই
‘স্বচ্ছন্দ’ দেশের সর্ববৃহৎ গ্রুপ এস
আলমের। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী
ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, আল আরাফাহ
ইসলামী ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক
বাংলাদেশের পর এবার গ্রুপটির দখলে
আসছে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ,
এমনকি এবি ব্যাংকও দখল করেছে
তারা। শুধু একক গ্রুপ “এস আলম”
হাতিয়ে নিয়েছে দেশের শীর্ষ
বেসরকারি ইসলামী ব্যাংক গুলো।
গ্রুপটির বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ
পাচারের গুরতর অভিযোগ উঠেছে।
ব্যাংক হলো টাকা পয়সার নিরাপদ
আশ্রয়স্থল। কিন্তু ব্যাংকের টাকা লুট
যেন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে। একের
পর এক ঘটছে আর্থিক খাতের অর্থ
কেলেঙ্কারি। বিগত কয়েক বছরের অর্থ
লোপাটের কাহিনী সব ইতিহাসের
সেরা ইতিহাসে পরিণত হয়েছে।
ব্যাংকগুলোতে গত কয়েক বছরে প্রায় ১৫
হাজার কোটি টাকার ঋণ
কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। অসংখ্য
মামলাও হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত
ব্যক্তিরাও চিহ্নিত। অথচ বছরের পর বছর
পেরিয়ে গেলেও বিচার হয়নি,
লুটেরারা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার
বাইরে। উদ্ধার হয়নি টাকা। হবে কিনা
তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না
কর্তৃপক্ষ। ব্যাংকগুলোতে ঘটে যাওয়া
এসব লুটপাটে রাজনৈতিক বিবেচনায়
নিয়োগ পাওয়া পরিচালনা পর্ষদ এবং
ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশ
থাকলেও তারা স্বপদে বহাল রয়েছেন।
যে সব ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে,
তা নিয়ে কিছুটা আলোচনা হলেও
বাকিগুলো যেন ধামাচাপাই পড়ে
থাকে বছরের পর বছর। এমনই ধামাচাপা
দিয়ে রাখা এক আর্থিক কেলেঙ্কারি
প্রকাশ পেল গণমাধ্যমে।
১০ বছর আগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার
হয়েছিলেন মো. ইউনুছ বাদল, অভিযোগ
ছিল গাড়ি চুরির, ইউনুছ এখন
ব্যাংকঋণের টাকায় বড় শিল্পপতি।
এ্যাননটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা
পরিচালক ইউনুছ।এ্যাননটেক্স গ্রুপের
প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২২টি। তার এই
সমৃদ্ধির আলাদীন চেরাগ বারাকাতের
হাত ধরে।
এদিকে সম্পূর্ণ দলীয় বিবেচনায়
ছাত্রলীগ সভাপতি, সাবেক মন্ত্রী ও
বুদ্ধিজীবি নাম ধারী দলীয় উচ্ছিষ্ট
ভোগীদের লাইসেন্স দেয়া হয়ে
ব্যাংকের। সেখানে রাখা হয়েছে
জলবায়ু তহবিলের টাকা। উচ্চ সুদের
লোভ দেখিয়ে আমানত সংগ্রহ করে ঋণ
জালিয়াতি করে ব্যাংকটির মূলধন লুটে
নিয়েছে ক্ষমতাসীন দুর্বিত্তরা। দেখা
গেছে পিটায়া রাজনৈতিক
সংস্ক্রিতি লালনকারি নাজমুলও
ব্যাংক উদ্যোক্তা!
বেসরকারি খাতের ফারমার্স
ব্যাংকে জমা রাখা টাকা ফেরত
পাচ্ছেন না আমানতকারীরা।
ব্যাংকটির শাখাগুলোতে টাকা তুলতে
প্রতিদিন ভিড় করছেন গ্রাহকেরা, আর
তাঁদের হতাশ করছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
অনেককে পে-অর্ডার দিয়ে শান্ত
রাখার চেষ্টা করছে, তবে ব্যাংকের
হিসাবে টাকা না থাকায় তাও
প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের
তিন দিন ব্যাংকটির মতিঝিল,
গুলশান, ধানমন্ডি শাখায় সরেজমিন
পরিদর্শনে এমন চিত্র দেখা গেছে।
এদিকে টাকা ফেরত পেতে অনেক
গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকের
শরণাপন্ন হচ্ছেন। তাতেও মিলছে না
টাকা। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকটির
আমানতকারীদের নিয়ে বিপাকে
পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক পরিচালকদের ‘সমঝোতা ঋণ’র
পরিমাণ ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা
ছাড়াল। এর সঙ্গে তাদের শেয়ারের ৫০
শতাংশ পরিমাণ নেয়া ঋণের হিসাব
যুক্ত করলে তা দাঁড়ায় প্রায় ১ লাখ ৬
হাজার কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে
জুন পর্যন্ত মোট ঋণ বিতরণ করা হয়েছে
৭ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকার বেশি।
এ হিসাবে পরিচালকরা যে ঋণ
নিয়েছেন তা মোট ঋণ বিতরণের প্রায়
১৪ দশমিক ২২ শতাংশ। সরকারি-
বেসরকারি খাতে বিদ্যমান ৫৭টি
ব্যাংকের বেশিরভাগ পরিচালক
এভাবে নিজেদের মধ্যে ঋণ
ভাগাভাগি করে নিয়েছেন।
ব্যাংকগুলোর পরিচালকের সংখ্যা এক
হাজারের কাছাকাছি হলেও এ ধরনের
সমঝোতাভিত্তিক বড় অংকের ঋণ
বিনিময় করেন প্রায় ৫০ জন। যাদের
কয়েকজন বেশি বিতর্কিত। মূলত এদের
কাছে পুরো ব্যাংকিং খাত জিম্মি।
আসলে ব্যাংকের ঋণ গিলে খাচ্ছে
ব্যাংকের মালিকপক্ষ তথা কিছু
পরিচালক। আরও সহজ করে বলা যায়,
ব্যাংক মালিকরাই আমানত খেয়ে
ফেলছেন।
অর্থাৎ প্রথম স্টেইজে ট্যাক্স, ভ্যাট
ও ঋণ কেন্দ্রিক অনৈতিক বাজেট
তৈরি করে, দ্বিতীয় স্টেইজে দলীয়
দুর্বিত্ত সহযোগে ব্যাংক লুট করতে
দেয়া হয়েছে। এই দুই স্টেইজের
আফটার ম্যাথে তৃতীয় স্টেইজে এসে
লুট করা অর্থ পাচার করা হয়েছে
বেশুমার।
৩
১০-১১ বছরে পাচার হয়েছে ৬ লক্ষ
কোটি টাকা।
ওয়াশিংটনভিত্তিক
অর্থপাচারবিরোধী সংস্থা গ্লোবাল
ফিন্যানশিয়াল ইনটিগ্রিটির
(জিএফআই) প্রকাশিত প্রতিবেদনে
বাংলাদেশ থেকে বিপুল অর্থপাচারের
ভয়াবহ তথ্য রয়েছে। শুধু ২০১৪ সালেই
বাংলাদেশ থেকে আরো প্রায় ৭৩
হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে
গেছে। ২০১৩ সালে দেশ থেকে পাচার
হওয়া অর্থের পরিমাণ ৯৬৬ কোটি ৬০
লাখ ডলার, বাংলাদেশি টাকায় যার
পরিমাণ প্রায় ৭৭ হাজার কোটি টাকা।
এভাবে গত ১০ বছরে দেশ থেকে পাচার
হয়ে গেছে ছয় লাখ ছয় হাজার ৭৬৪
কোটি টাকা। অর্থপাচারের দিক
থেকে ভঙ্গুর রাজনীতির দেশ
পাকিস্তানকেও বহু ধাপ পেছনে
ফেলেছে বাংলাদেশ।
১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার
হয়েছে ৫ হাজার ৫৮৭ কোটি ৬০ লাখ
ডলার। টাকার অঙ্কে যা ৪ লাখ ৪১
হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এই অর্থ
এবারের বাজেটের চেয়েও ১ লাখ কোটি
টাকা বেশি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর
(এলডিসি) মধ্যে অর্থ পাচার সবচেয়ে
বেশি হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই। এর
বাইরে গত দুই অর্থবছরে সুইস
ব্যাংকসমূহে বাংলাদেশি
নাগরিকদের ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা
দ্বিগুণ বেড়েছে। এই অর্থও পাচার করা।
আবার মালয়েশিয়ায় ‘মাই সেকেন্ড
হোম’ কর্মসূচিতে গত ১৩ বছরে ৩ হাজার
৬১ জন বাংলাদেশি অর্থ পাঠিয়েছেন।
এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান
তৃতীয়। এর বাইরে অস্ট্রেলিয়া,
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করে
নাগরিকত্ব নেওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন
অসংখ্য বাংলাদেশি।
সিঙ্গাপুরে একটি বাণিজ্যিক ভবনে
প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লাখ সিঙ্গাপুর
ডলার বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায়
৮১০ কোটি টাকা (প্রতি সিঙ্গাপুর
ডলারের বিনিময়মূল্য ৬০ টাকা ধরে)
বিনিয়োগ করেছেন দেশের
শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান এস
আলম গ্রুপ। এর কর্ণধার মোহাম্মদ
সাইফুল আলম। খবর সিঙ্গাপুরের দৈনিক
দ্য বিজনেস টাইমসের। দ্য বিজনেস
টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,
সিঙ্গাপুরের লিটল ইন্ডিয়া এলাকার
সেরেঙ্গন প্লাজার কাছে সেন্ট্রিয়াম
স্কয়ার নামে নতুন এ বাণিজ্যিক ভবনটি
নির্মিত হচ্ছে। ওই ভবনটির ২৭ হাজার
১৭৯ বর্গফুট বা ৪৯টি ইউনিট কেনা হয়।
বাণিজ্যিক ওই ভবনটিতে ওই পরিমাণ
জায়গা খুচরা বিক্রির জন্য বরাদ্দ ছিল।
যার পুরোটাই একসঙ্গে কিনে নিয়েছে
এস আলম গ্রুপ। প্রতি বর্গফুট জায়গা ৪
হাজার ৯৬৭ সিঙ্গাপুর ডলার বা
বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ
টাকা দামে কেনা হয়।
অর্থমন্ত্রী সহ পুরো অর্থ প্রশাসন
মাইক্রো ইকোনমিক্স বুঝে নীতি
নির্ধারণ করেনা। এরা নীতি
নির্ধারনে বাংলাদেশের গ্রামীণ
অর্থনীতির ছোট ও মাঝারি এলেমিন্ট
গুলোর ইম্প্যাক্ট বুঝার চেষ্টা করেনা।
তার শুধু ম্যাক্রো ইকোনমিক্স প্লে করে
রাষ্ট্র এর আর্থিক স্পেইসকে আওয়ামী
ব্যবসায়ী ও দেশের কথিত এলিট
ব্যবসায়ীদের লূটের জায়গা বানিয়ে
দিয়েছে, এতে করে মাইক্রো
ইকোনোমি ধ্বংস করে দিয়েছে, ঠিক
এইজন্যই বাংলাদেশের ইকোনমি তার
সাধারণ নাগরিকের জীবন মানের
সাথে সামঞ্জ্যস রাখে না।
৪
শুয়রের বাচ্চাদের অর্থনীতির কারণে
নিন্ম আয়ের মানুষ শুধু গরীব হচ্ছে। আর
সুবিধা প্রাপ্ত ও উচ্ছিষ্ট ভোগী ধনীরা
শুধুই বড়লোক হচ্ছে। ছয় বছরে সর্বো
উপরে থাকা ৫% নাগরিকের আর্থিক
শ্রেণীর শুধু মাসিক আয় বেড়েছে ৩২৪৪১
টাকা যেখানে সর্বনিন্মে থাকা ৫%
এর মাসিক আয় কমেছে ১০৫৮ টাকা।
শুয়রের বাচ্চাদের অর্থনীতির নগ্ন
বহিঃপ্রকাশ এর চের আর নীচ কি হতে
পারে।
ইউএনডিপির পর্যবেক্ষণ বলছে ১০
শতাংশের হাতে সবকিছু কেন্দ্রীভূত
হচ্ছে। দেশের শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনী
পরিবারের হাতে মোট আয়ের ৩৮
শতাংশ। আয় বণ্টন ব্যবস্থার এ
কেন্দ্রীভবনের জন্য রেন্ট সিকিং
(লুটপাট ও দুর্নীতি) প্রবণতাকে দায়ী
করছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি
(ইউএনডিপি)।
বিবিএসের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে
ইউএনডিপি বলছে, ২০১০ সালে
দেশে জিনি সহগের মান ছিল
দশমিক ৪৫৮। ২০১৬ সালে এসে তা
বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৮৩-এ।
একই সময়সীমায় গ্রামাঞ্চলে জিনি
সহগের মান দশমিক ৪৩ থেকে বেড়ে
দাঁড়িয়েছে দশমিক ৪৫-এ।
শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে এ মান ২০১০
সালে ছিল দশমিক ৪৫। ২০১৬ সালে
তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দশমিক ৫-এ।
আয়বৈষম্যের এ চিত্র থেকে চারটি
পর্যবেক্ষণ দিয়েছে ইউএনডিপি।
প্রথমত. দেশে আয়বৈষম্য ছয় বছরে
অনেক প্রকট হয়েছে। দ্বিতীয়ত. এ
সময়ে সবচেয়ে দরিদ্র ও নাজুক
অংশটি আরো দরিদ্র হয়ে উঠেছে।
তৃতীয়ত. সবচেয়ে ধনী অংশ দ্রুত
আরো সম্পদশালী হয়ে ওঠায় তাদের
মধ্যেই আয় আরো কেন্দ্রীভূত হচ্ছে।
চতুর্থত. দারিদ্র্যের মাত্রা গ্রামীণ
দরিদ্রদের মধ্যে তুলনামূলক বেশি।
বিবিএসের সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয়
জরিপের উপাত্ত ব্যবহার করে
ইউএনডিপি তাদের পর্যবেক্ষণে
বলেছে, ২০১০ সালেও জাতীয় আয়ে
সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ খানার
অংশীদারিত্ব ছিল দশমিক ৭৮
শতাংশ। ২০১৬ সালে তা আরো কমে
দাঁড়িয়েছে মাত্র দশমিক ২৩
শতাংশে। এর বিপরীতে সবচেয়ে
সম্পদশালী ৫ শতাংশ খানার আয়
অংশীদারিত্ব ২৪ দশমিক ৬ থেকে
বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯
শতাংশে। আয়ের দিক থেকে
খানাগুলো ১০ ভাগ করে দেখা
গেছে, এর মধ্যে শুধু শীর্ষ ১০
শতাংশের আয়ের অংশীদারিত্ব ছয়
বছরে ৩৫ দশমিক ৮ থেকে বেড়ে ৩৮
দশমিক ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
আয়বৈষম্যের চিত্রের পুনরাবৃত্তি
দেখা গেছে ভোগ ব্যয়েও। ভোগ
ব্যয়ের দিক থেকে খানাগুলো ১০
ভাগে ভাগ করে দেখা গেছে, ২০১৬
সালে মোট জাতীয় ভোগ ব্যয়ে
সর্বনিম্ন ১০ শতাংশের
অংশীদারিত্ব দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩
দশমিক ৭ শতাংশে; ২০১০ সালে যা
ছিল ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০১৬ সালে শীর্ষ ১০
শতাংশের ভোগ ব্যয়ে
অংশীদারিত্ব দাঁড়িয়েছে ২৬
দশমিক ৮ শতাংশে। ইউএনডিপির
পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, ভোগ ব্যয়ের
দিক থেকে এ সময় শহরাঞ্চলে
বৈষম্যের মাত্রা সামান্য বাড়লেও
গ্রামাঞ্চলে বেড়েছে অনেকখানি।
ভোগ ব্যয় সূচকে দেশের গ্রামাঞ্চলে
জিনি সহগের মান ২০১০ সালের
দশমিক ৩ থেকে এক লাফে বেড়ে
হয়েছে দশমিক ৯। আর শহরাঞ্চলে
তা দশমিক ৩৩ থেকে বেড়ে দশমিক
৩৪-এ দাঁড়িয়েছে।
আসলে বাংলাদেশকে পরিপুর্ণ
ভাবে ‘শুয়োরের বাচ্চাদের’
অর্থনীতি পেয়ে বসেছে। আর
শুয়োরের বাচ্চাদের অর্থনীতিতে
আসল সমস্যাটাই হলো, বড় বড় বাজেট
আসে, টাকা যায়, কিন্তু কাজ হয় না।
বেপারোয়া খরচ দেখিয়ে উন্নয়ন ও
সেবা খাত থেকে হাজার হাজার
কোটি টাকা লূটে নিচ্ছে শুয়োরের
বাচ্চারা কিন্তু বলতে গেলে কোন
কাজই করছে না। শিল্প দেখিয়ে লক্ষ
লক্ষ কোটি ঋণ নিয়ে গায়েব হয়েছে,
লক্ষ লক্ষ কোটি পাচার করেছে। বছর
শেষে দেখা যাচ্ছে পুরো চার লাখ
কোটি টাকার বাৎসরিক বাজেট
শুয়রের বাচ্চাদের অর্থনীতি খেয়ে
ফেলছে, ফলপ্রসূ এবং টেকসই কোন
কাজ করা ছাড়াই।
‘শুয়োরের বাচ্চাদের’ অর্থনীতি!
পেয়ে বাংলদেশের গরীব শুধু গরীবই
হচ্ছে।