Qamrul Islam
9 hrs ·
সন্ত্রাসবাদ দমনে ভারতের সাথে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করতে যাচ্ছে হাসিনার সরকার। তার মানে বাংলোদেশে সন্ত্রাস দমন করতে ভারতের বাহিনী ঢুকতে পারবে। প্রতিরক্ষা চুক্তিকে দেখছেন ভারতের হায়দরাবাদ দখলে “অপারেশন পোলো’র মত ষড়যন্ত্র হিসাবে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন রাজ্য হায়দ্রারবাদ দখলে অভিযান চালানোর আগে ভারত ঐ এলাকায় হিন্দু ও মুসলিম গুপ্তহত্যা করায়। এক হিসাব মতে প্রায় দু’হাজার মানুষ তাদের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। অতপর নির্যাতিতদের রক্ষার অযুহাতে ভারতীয় বাহিনী চারদিকে দিয়ে একযোগে হামলা চালায় হায়দরাবাদে। চারদিনের অসম যুদ্ধে পতন ঘটে হায়দরাবাদের, যেটি এখন ভারতের তিনটি রাজ্যের মধ্যে বিভক্ত।
হায়দ্রাবাদ দখলের গল্প-
১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান ভাগের সময় ৫৬৫টি ছোট ছোট দেশীয় রাজ্য ছিল, যাদেরকে বলা হত প্রিন্সলি স্টেট। তাদের বলা হল- হয় ভারতে যোগ দাও, না হয় পাকিস্তানে অথবা নিজেরাই স্বাধীন থাক। হায়দ্রাবাদ, কাশ্মির, সিকিম সহ কিছু রাষ্ট্র নিজেরাই স্বাধীন থাকতে চেয়েছিল, থেকেছিলও কিছু দিনের জন্য। কিন্তু ভারত একে একে সবাইকেই বিভিন্ন অজুহাতে দখল করে নেয়। কারো ক্ষেত্রে অযুহাত তোলা হল, যেমন হায়দ্রাবাদ মুসলমান শাসক কর্তৃক নির্যাতিত হিন্দুদের বাঁচাতে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রবেশ করেছে। অথচ ২০০ বছরেরও বেশী সেখানে মুসলমান শাসক ছিল এবং রাজ্যটি ছিল সবদিক দিয়ে সমৃদ্ধ। উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী দলগুলোর ইন্ধনে হায়দ্রাবাদের অভ্যন্তরে হিন্দু কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে মুসলিম জমিদার ও উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গুপ্তহত্যা শুরু করে ভারত। এক হিসাব মতে প্রায় দু’হাজার মানুষ তাদের হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়। এ পরিস্থিতিতে নিযাম স্থানীয় যুবকদের নিয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী বাহিনীকে দায়িত্ব দেন হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধের। এরা কমিউনিস্টদের পাকড়াও অভিযান শুরু করে, অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কমিউনিস্টরা সবাই ছিল হিন্দু, সুতরাং এ সুযোগকে কাজে লাগাল ভারত সরকার। বহুল প্রতীক্ষিত হায়দ্রাবাদ দখলের অজুহাত এখন তাদের হাতে; তারা প্রচার করলো উগ্র মুসলিম রাজাকারেরা পাইকারী হারে হিন্দুদের হত্যা করছে! ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৪৮ ভারতীয় বাহিনী চারদিকে দিয়ে একযোগে হামলা চালায় হায়দরাবাদে। ‘অপারেশন পোলো’ নামে লক্ষাধিক ভারতীয় সৈন্যের বিপরীতে হায়দ্রাবাদের ট্রেনিংপ্রাপ্ত প্রফেশনাল সৈন্যের সংখ্যা ছিল মাত্র ছয় হাজার, আর ২০ হাজার স্বচ্ছাসেবক বাহিনী। এ অসম লড়াইয়ে চারদিন প্রতিরোধ করে অবশেষে পরাজয় মানে হায়দ্রাবাদ বাহিনী। ১৭ সেপ্টেম্বর সকালে সিকান্দারাবাদে ভারতীয় মেজর জেনারেল জয়ন্ত নাথ চৌধুরীর নিকট আত্মসমর্পণ করেন হায়দ্রাবাদের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল সাইয়েদ আহমেদ এল এদরুস, অবশ্য সেনাপ্রধান এদরুস ছিলেন ভারতেরই কেনা গোলাম। অতপর স্বাধীনতা হারিয়ে হায়দ্রাবাদ ভারতের একটি প্রদেশে পরিণত হয়। হায়দ্রাবাদ দখলের পরপরই গণহত্যার খবর আসতে থাকে। এ জি নুরানি ও অন্যান্য গবেষকদের মতে এ সংখ্যা দুই লাখ বা তার থেকেও বেশী। কমিটির রিপোর্টে দেখা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ভারতীয় সেনাবাহিনী এ সকল গণহত্যায় সরাসরি জড়িত ছিল। শুধু হত্যা আর লুটই নয়, অসংখ্য মুসলিম মহিলা সশস্ত্র হিন্দু মিলিশিয়াদের হাতে ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।
............................................
ঠিক হায়দরাবাদ ফরমুলা অনুসরন করে এক যুগ ধরে ভারতের অস্ত্রশস্ত্রে ও সহায়তায় বাংলাদেশে নানা জঙ্গিবাদী কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে। বিএনপির আমলে দেশের ৬৩ জেলায় একযোগে জেএমবির বোমা হামলা, জেএমবি প্রধান শায়খ আবদুর রহমানের কাছে পাওয়া অস্ত্র, বা গুলশান হামলার সব অস্ত্র ভারতীয়। এখানে হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দিরে হামলা করে আ’লীগের লোকেরাই, আবার দিল্লি থেকে তার জন্য চিৎকার করে হুমকি দেয় মোদি। ইনুর বাহিনী খুন খারাবি চালিয়ে বিশ্বব্যাপি আলোচনায় আনে বাংলাদেশকে। গুলশানে পরিকল্পিত হামলা করে আইএস ম্যাপে নামও ঢোকায়। আবার সেই কৃত্রিম জঙ্গিবাদ দমনের নামে প্রতিরক্ষা চুক্তিও করতে যাচ্ছে ভারত। তার মানে, চুক্তির আওতায় সৈন্য ঢোকানোর পায়তারা। তাহলে কি হাদ্রাবাদের ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ?
হায়দ্রাবাদের ইতিহাস থেকে বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষা হলো- ‘অপারেশন পোলো’ অভিযানের আগে ভারত কম্যুনিষ্টদের সাহায্যে হায়দ্রাবাদ জুড়ে যেভাবে গুপ্তহত্যা শুরু করেছিল ভারত, ঠিক একই কায়দায় তারা এদেশে চালাচ্ছে সন্ত্রাসী ও সাম্প্রদায়িক সংঘাত। হাসিনার সাথে ভারত করতে যাচ্ছে গোপন চুক্তি, সেজন্য পাইকর আসছে ঢাকায়, যে কিছুুদিন আগেও বাংলাদেশ দখল করার হুমকি দিয়েছিল! তবে কি এভাবেই ঘুরিয়ে পেচিয়ে হায়দরাবাদ ফরমুলায় তারা এ দেশটা দখল করার আয়োজন করেছে?
বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক নাগিরকদের চিন্তাভাবনা করে দেখতে হবে- কি ঘটছে, আর ঘটতে পারে। সে অনুযায়ী দুশমনদের খতম করতে হবে, আর সেটা শুরু করতে হবে মাথা থেকেই।